এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • গ্লোব প্রেক্ষাগৃহের পুনরুজ্জীবন ঘটল

    Subhadeep Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ অক্টোবর ২০২৪ | ৩৭২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • গ্লোবের পুনরুজ্জীবন ঘটেছে! কয়েকদিন আগে খবরটা পড়ে প্রায় দুদশকেরও আগের অনেক স্মৃতি হুড়মুড় করে এসে পড়তে লাগলো। সত্যি বলতে গ্লোব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ঠিক কবে জানা নেই, কিন্তু গ্লোবও বন্ধ হয়ে গেছে, এরকম শুনেছিলাম। সিঙ্গেল স্ক্রিনের প্রতিনিয়ত গঙ্গাপ্রাপ্তির দিনে খবরটা তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু বলে মনে হয় নি। নিউ মার্কেটের দিকেও পরবর্তী কালে খুব যে একটা যাওয়া হত এমন নয়। জামাকাপড় কিনতে হলে দক্ষিণ কলকাতাতেই আর কখনো ঐ অঞ্চলে ছবি দেখতে গেলে নিউ এম্পায়ারে (লাইট হাউসও ততদিনে বন্ধ হয়ে গেছে), এই ছিল মোটামুটি ব্যাপারটা। তথাপি হগ সাহেবের মার্কেটের দিকে যে দুয়েকবার গেছি, খুঁজে দেখেছি মার্কেটের উল্টো দিকের সেই সরু বিল্ডিং-পথ, যার আরেকটি মাথা শেষ হত গ্লোবের ডান দিকের দরজায়। আমরা যারা গড়িয়ার মিনিবাসে বা বৈষ্ণবঘাটার মিনিবাসে মেয়ো রোডে নেমে কোনাকুনি মাঠ ও প্রেসক্লাব পেরিয়ে ধর্মতলায় আসতাম তাদের কাছে ঐ বিল্ডিং-পথই ছিল গ্লোবের গোপুরম! যদিও ছবির টিকিট-কাটার জন্য লাইন দিতে হলে হগ মার্কেটের উল্টো দিকের গলির গ্লোবের মূল প্রবেশদ্বারেই গিয়ে দাঁড়াতে হত। ঐ বিল্ডিং-পথের আরেকটি আকর্ষণ ছিল শেষ মাথার গ্লোবের দরজার ঠিক আগের বাঁ-হাতের কেক-প্যাটিস-পেস্ট্রির দোকানটি। স্মৃতি নিরন্তর ছলনা করে। তবুও শেষ যে প্যাটিসটি খেয়েছিলাম তার দাম সম্ভবত ছিল দশ টাকা। সুস্বাদু নয় একেবারেই, কিন্তু খেতাম। আমার সঙ্গে যেত চন্দ্রশেখর, আমার সঙ্গে যেত তন্ময়, এবং আরো অনেকের সঙ্গে আমি যেতাম। গ্লোবে দেখা শেষ ছবি ছিল সম্ভবত 'চোখের বালি'! হ্যাঁ, ঋতুপর্ণ ঘোষের 'চোখের বালি'। গ্লোব আর 'টাইটানিক', ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। আমিও দেখেছি, বন্ধুরা মিলে। একটা লোক কি একটা কেমিক্যাল আবিষ্কার করেছে যাতে মানুষ সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যায়! তখনি একজন বলেছিল, নির্ঘাত 'মিঃ ইন্ডিয়া' থেকে হলিউড ঝেড়েছে। এইসব আবিষ্কারকের অসম্ভব সুন্দরী প্রেমিকা থাকত এবং বিশেষ করে হলিউডের ছবিতে অবধারিতভাবে থাকবে একজন, যাকে শুধুমাত্র আবিষ্কারকের প্রেমিকাকে কামনা করার জন্য আমাদের ভিলেন ভাবতেই হবে। প্রেমিকাটি ছিলেন হলিউডের প্রখ্যাত অভিনেত্রী এলিজাবেথ স্ এবং ছবির নাম 'দা হলো ম্যান'। এইটুকু মনে আছে শুধু। 'কন এয়ার' বলে একটি ছবি দেখেছিলাম মনে পড়ে। নিকোলাস কেজ ছিলেন হিরো। এসবই ছিল হলিউডীয় জগঝম্পের চূড়ান্ত।
     
    অন্যধারার বেশ কিছু ছবিও দেখি এই গ্লোবেই। সিনে সেন্ট্রালের বিখ্যাত 'ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম অফ নিউ সিনেমা' নয় সম্ভবত, কারণ তাতে ১৯৭২ সালে নির্মিত ইঙ্গমার বার্গম্যানের 'ক্ৰাইস এন্ড হুইস্পারর্স' দেখানো হবে কেন! এটা সম্ভবত ছিল 'কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব'-এর সমান্তরালে অনুষ্ঠিত সিনে সেন্ট্রালের ফেস্টিভ্যালটি। চার বোনের গল্প, বহুল প্রসিদ্ধ ছবি। সেই প্রথম বুঝেছিলাম ঘড়ির টিকটিক, মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ, ফিসফিস, দূর থেকে ভেসে আসা কান্না ও গোঙানির শব্দ - শুধুমাত্র আবহ তৈরি করে থেমে থাকেনি, হয়ে উঠেছে অনুপম চিত্রভাষার অনিবার্য অংশ! লার্স ভন ট্রায়ারের 'দা ইডিয়টস'ও দেখেছিলাম এখানেই। 'ডগমি ৯৫' ম্যানিফেস্টোর মূল রূপকার ছিলেন দুজন - লার্স ভন ট্রায়ার ও থমাস ভিন্টেরবার্গ। ম্যানিফেস্টোটি ইন্টারনেটে উপলব্ধ, পড়ে দেখতে পারেন। 'দা ইডিয়টস' ছিল এই 'ডগমি ৯৫' অনুযায়ী তৈরি ছবি। আদিম মানুষের মানসিক রোগ তেমন ছিল না, কারণ তখনও সামাজিক কারণে মানুষ বাধ্য হত না তার ইচ্ছে-কামনাকে অবদমিত করতে, মনস্তত্ত্বে শুনেছি এরকম ধরনের কথা বলে হয়ে থাকে। কিন্তু আজকের কোপেনহেগেন শহরে একদল মানুষ যদি এই অবদমনকে অস্বীকার করে যা ইচ্ছে তাই করতে শুরু করে তাহলে ব্যাপারটা কিরকম হয়! অনেকটা এই বিষয় নিয়েই লার্সের ছবি 'দা ইডিয়টস'। গদারের 'ফাস্ট নেম - কারমেন' দেখি এখানেই, সৌজন্যে বলা-বাহুল্য 'সিনে সেন্ট্রাল'। এই ছবিটি গদারের অন্যান্য ছবির থেকে সহজবোধ্য তথাপি দারুণ উপভোগ করেছিলাম বললে সত্যের অপলাপ হবে। এছাড়াও আরো কত ছবি, এপাশে-ওপাশে হাটতে হাটতে কখনো 'যমুনা'য় কখনো 'নিউ এম্পায়ারে' কত ছবি দেখতে যাওয়া, কত রকম স্ট্রিট-ফুড খাওয়া ! 'গ্লোব' বন্ধ হয়ে যাওয়া নয়, 'গ্লোব'-এর পুনরুজ্জীবন আমাদের প্রজন্মের কাছে তাই একটা খবর বৈকি। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন