এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ধুইন - দ্বারভাঙার কিয়ারোস্তামি

    Subhadeep Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৬ মার্চ ২০২৩ | ৮৭৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৪ জন)
  • [ ‘ধুইন’ ছবিটি বর্তমানে MUBI-তে দেখানো হচ্ছে - https://mubi.com/films/dhuin ]

    পঙ্কজ বিহারের দ্বারভাঙার ছেলে। ছোট একটি নাটকের দলে সে অভিনয় করে। ছবি শুরু হয় তাদের দলের একটি পথ-নাটিকা দিয়ে। অভিনয়ের জন্য সে প্রাত্যহিক অর্থ পায়। পঙ্কজের বাবা তেমন কিছু করেন না। সাংসারিক টানাপোড়েনের মধ্যেও পঙ্কজের স্বপ্ন মুম্বাইতে গিয়ে বড় অভিনেতা হওয়ার। মৈথিলী ভাষায় নির্মিত অচল মিশ্রর (Achal Mishra) ছবি 'ধুইন'-র (Dhuin) এই হল বিষয়বস্তু। 'ধুইন' পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রও নয়, আবার ছোট ছবিও নয়। পঞ্চাশ মিনিটের এই ছবিকে আমরা বরং বড় গল্পের মত বড় ছবি আখ্যা দিতে পারি।



    ছোট শহরের একজন নাটকের শিল্পীর জীবনের যে পর্ব এই ছবিতে চিত্রিত হয়েছে তা বাস্তবিকই এহেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রত্যেকটি অভিনেতার জীবনের কথা বলে। ছবিতে এক জায়গায় দেখানো হয় পঙ্কজের বাবা ক্ষমতাশালী একজনকে ধরে মুজাফ্ফরপুরে একটি কাজের ব্যবস্থা করছেন। ঐ ভদ্রলোক পঙ্কজকে বলেন পরশু যেন সে তার বাবাকে মুজাফ্ফরপুর নিয়ে যায়। এর ঠিক পরের দৃশ্যে আমরা দেখি পঙ্কজ গ্লিসারিন ব্যবহার না করে কান্নার অভিনয় অভ্যাস করছে। এই দুটি দৃশ্য-ভাবনার একটা কালমিনেশান হিসেবে আসে পরের দৃশ্যটি - পঙ্কজ বন্ধুর বাইকে করে বাবাকে মুজাফ্ফরপুর পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারটি প্রত্যাখ্যান করে এবং বাবাকে বাসে করে চলে যেতে বলে। অভিনয়ের মত অনিশ্চিত পেশায় যাওয়ার ইচ্ছে যাদের থাকে পরিবার সচ্ছল না হলে অভিভাবকের সঙ্গে এ-ধরণের বিরোধ একটা অবশ্যম্ভাবী ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এয়ার-পোর্টের সন্নিকটে একটি গাছের উঁচু ডালে পঙ্কজের ফটো-সেশন ও কাছ দিয়ে এরোপ্লেন উড়ে চলে যাওয়া, পঙ্কজের স্বপ্নের উড়ানের প্রতীক যেন। বন্ধ উঁচু গেট টোপকে পঙ্কজের সিগারেট আনতে যাওয়ার  দৃশ্য, মাঠের মধ্যে হেড-লাইট জ্বালিয়ে একটি গাড়ির ক্রমাগত পাক খেয়ে চলা - এইসব দৃশ্য নান্দনিক ভাবে ইরানের ছবির মত একটা অনুভূতির সঞ্চার করে! এই ভাবনা যে অমূলক নয় বোঝা যায় যখন মুম্বাই থেকে আসা ছোট-ছবির নির্মাতা ভদ্রলোকের সঙ্গে পঙ্কজ ছাড়া বাকিরা ইরানের আব্বাস কিয়ারোস্তামির ছবির নান্দনিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে কথা বলে। কিয়ারোস্তামির ছবির প্রতি ভালবাসা দেখে 'দ্বারভাঙার কিয়ারোস্তামি' বলে একজনকে ঠাট্টা করে ডাকাও হয়। জনগোষ্ঠীর মূল স্রোতের কথা মাথায় রাখলে পঙ্কজের মত মফস্বলের একজন অভিনেতার সঙ্গে কিয়ারোস্তামির ছবির নৈকট্যের চাইতে অনেক বেশি স্বাভাবিক বলিউডের ছবির নৈকট্য। এই ছবির পরিচালক অচল মিশ্রর জন্মও এই দ্বারভাঙাতেই। পঙ্কজের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও  কিয়ারোস্তামি পরিপন্থী নয়, কিন্তু ভালো ছবি করার বাসনা নিয়ে ছোট শহর থেকে অচলের মত যারা ছবি করতে আসে কিয়ারোস্তামির পার্থিব অথচ কাব্যময় নির্মাণশৈলী যে তাদের ভীষণ আকৃষ্ট করবে পঙ্কজের গল্প বলা 'ধুইন' তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। অথচ অনুকরণ নয় কোনো ভাবেই, এখানেই হতবাক হয়ে যেতে হয়। এ হল নান্দনিক বৈশিষ্ট্যের আত্তীকরণ এবং তারপর তাকে দেশজ বাস্তবতার জমিতে বুনে দেওয়া! ছবির ঐ 'দ্বারভাঙার কিয়ারোস্তামি' ছেলেটি যেন আসলে পরিচালক অচল মিশ্রই।

    বাবা জানতে পারেন নতুন কাজের জন্য প্রদত্ত অর্থের জোগান করেছে পঙ্কজই। এই টাকাটা অভিনয় করে সে জমিয়ে ছিল মুম্বাইতে যাবে বলে। কিন্তু সে ভাবনা আপাতত স্থগিত। শেষ দৃশ্যে, কুয়াশা ঢাকা ভোরে হাইওয়েতে বাইকের উপর দেখতে পাই পঙ্কজ ও তার বাবাকে। 'বাতাস আমাদের বহন করবে', কিয়ারোস্তামির এই জীবন ও নান্দনিক বোধ অচল মিশ্র আশ্চর্য দক্ষতায় সম্পূর্ণ দেশজ করে ধরেছেন তাঁর এই 'ধুইন' ছবিটিতে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন