সাধনপদ্ধতি হিসাবে কীর্তনের প্রয়োগ সম্ভবতঃ ভক্তিধর্মের উত্থানের একদম গোড়ার দিক থেকেই। বৌদ্ধ সহজিয়া সাধনাতেও সমবেতভাবে আধ্যাত্মিক গান গাওয়ার প্রচলন ছিল (উদাঃ চর্যাগীতি)। বাংলায় বিভিন্ন আকর গ্রন্থে (চৈতন্যমঙ্গল, চৈতন্য চরিতামৃত) ‘সংকীর্তনদাতা’ বা ‘সংকীর্তনপ্রবর্তক’ হিসাবে শ্রীচৈতন্যের নাম পাওয়া যায়। অর্থাৎ, একভাবে মনে করা হয়, তিনি উপাসনার বিশেষ পদ্ধতি হিসেবে কীর্তনের প্রচলন করেন। জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গলে দেখি, শ্রীচৈতন্য বলছেন-
কীর্ত্তন সকল কর্ম্ম কীর্ত্তন সকল ধর্ম্ম
কীর্ত্তন সকল ব্রহ্মজ ... ...
খ্রিস্টীয় ৬২২ সালে হজরত মহম্মদ মক্কা থেকে ইয়াথ্রিব বা মদিনায় যান। সেই বছর থেকে শুরু হয় ইসলামিক বর্ষপঞ্জী ‘হিজরি’। হিজরি সন ৯৬৩ থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু করেন মুঘল সম্রাট আকবর। হিজরি ৯৬৩-র মহরম মাসকে ৯৬৩ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাস ধরে শুরু হয় ‘ তারিখ ই ইলাহি’, যে বর্ষপঞ্জীর উদ্দেশ্য ছিল বাংলার কৃষিবর্ষকে হিসেবে রেখে খাজনা আদায়ের দিনগুলি নির্ধারণ করা। বাংলার আকাশে তারা দেখে মাস নির্ধারণ করা হত। হিজরির চান্দ্রমাসের চলনকে ধরে রেখে তারা-ঝিকমিকি মাসগুলিকে পঞ্জিকায় ঢুকিয়ে ফেলেন ফারসি-ভাষী জ্যোতির্বিদ ফাতুল্লাহ ... ...
কালিকাপ্রসাদের প্রয়াণের পর প্রায় সপ্তাহ ঘুরে গেল, এখনও ঘটনার শক কাটছে না। এরকম নয় যে আমি তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনতাম, কিন্তু শিল্পী, বিশেষতঃ একজন সঙ্গীত শিল্পী, যাঁর কন্ঠ আমাদের জীবনের বিভিন্ন ওঠাপড়ার মুহূর্তের সঙ্গে জড়িয়ে যায়, তাঁর চলে যাওয়ায় আত্মীয়বিয়োগের ব্যথা তো বাজবেই। আর তার সঙ্গেই ঘুরেফিরে আসছে, কালিকাপ্রসাদ ও তাঁর কর্মকাণ্ডের স্মৃতিগুলি। কালিকা সম্ভবতঃ ১৯৯৭-৯৮ নাগাদ কলকাতায় আসেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশুনো করতে। কিছুদিনের মধ্যেই দোহার গানের দলটি গড়ে ওঠে। নব্বইয়ের শেষভাগ ক ... ...
সিঙ্গুরের ঘটনাপুঞ্জ তার বৃত্ত সম্পূর্ণ করলো এই সপ্তাহে। এইখানে বৃত্ত লিখতে তবুও একটু বাঁধছে, কারণ, গত দশ বছর আগে কোনও ভাবেই ভাবতে পারিনি যে শেষটা এইখানে হবে। প্রথমে তো বেশ ভালোই লাগছিল, অফিসে কম্পিউটার আর প্রাথমিকে ইংরেজি বর্জনকারী সিপিএম অবশেষে রাজ্যে ইন্ডাস্ট্রি আনা নিয়ে সিরিয়াসলি কিছুটা এগোচ্ছে দেখে। চাকরি বাকরি বাড়বে, ক্যাশ ফ্লো বাড়বে, অর্গানাইজড লেবার ক্লাস তৈরি হবে--- ইত্যাদি মিলিয়ে সে বেশ ভালো ব্যাপার মনে হচ্ছিল। তারপর সেই ফোর্থ ইয়ার থেকে জেনেছি কোর জব করতে হলে বাড়ি ছাড়তে হবে, এই শিল্পা ... ...
পার্লামেন্টে সাম্প্রতিক জেএনইউ বিতর্কের শুরুর দিন স্মৃতি ইরানি জেএনইউর ছাত্রদের প্রচারিত একটি লিফলেট থেকে পড়ছিলেন, যেখানে দুর্গাকে একজন বেশ্যা হিসেবে দেখানো হয়েছে যিনি মূলবাসী রাজা মহিষাসুরকে ছলনা করে বধ করেন। স্মৃতিজি পড়ছেন যখন সংসদ জুড়ে শেম শেম ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এরপর তিনি বলেন যে, এই কী বাক্ স্বাধীনতা, কলকাতার রাস্তায় কেউ এরকম বলতে পারবে? পুরাণেতিহাসের এই ভিন্নতর ভার্সন নিয়ে আলোচনার অবকাশ আছে। একটি মত শুনছি কোনো জনজাতির মধ্যে নাকি এইরকম লোকগাথা আছে। দুর্গাপ্রতিমা গড়তে বাংলায় বেশ্ ... ...
এমন করেই ছড়িয়ে গেছে মাটির থেকে জলে
সমুদ্র তার স্রোতের পথে অজানা অঞ্চলে,
মানুষ দিয়ে জড়িয়ে রাখে আমার দেশের টান
সেইখানেই তো নদীর তীরে মাটির থেকে ধান-
সোনার মতন আকাশ, নীচে ঘর খুঁজে পায় লোক
তখনও তার বনদেবতার হস্তীর মস্তক।
এমনি করেই নগর এবং বন্দর সভ্যতা
যে সভ্যতায় কেউ ভাবেনি অস্ত্রশালার কথা-
আবার যখন মরুভূমি মুছল নগর, নদী
নতুন করে শিখছে শ্রুতি সন্তান সন্ততি,
আমার দেশে সব মানুষই দেবতা হয়, একা-
সেই জেনেছে একান্তকে অনেকভাবে দেখা।
বিশ্বজয়ী গ্রিক সেনানীর রক্ত ... ...
(৫)
শার্ঙ্গক পক্ষীর স্তব
========
(“এই পঞ্চদশ দিনের মধ্যে তত্রস্থ সমস্ত জীবজন্তুই সেই প্রচণ্ডানলে দগ্ধ হইল; কেবল অশ্বসেন, ময় ও চারিটি শার্ঙ্গক রক্ষা পাইয়াছিল”)
প্রণম্য অগ্নি তুমি পিতৃমাতৃঘাতী, তবু
তোমাকেই স্তুতি করি কারণ বাঁচতে চাই আরও
স্বর্গমর্তব্যাপী তোমার যশোকীর্তি স্মারক
দেখে যেতে পারি যেন অধম দাসের চোখে প্রভু
প্রণম্য অগ্নি তুমি, আমরা তো পক্ষীশাবক
এতদিন এই বনে গাছে ও গুহায় বেড়ে উঠি
কীটভূক, উঞ্ছবৃত্তি শস্যদানা খাব বলে খুঁটি
কিম্বা ফলট ... ...
শব্দরা ধনী। অর্থের বিত্তই তার সম্পদ। ধ্বনির শরীর থেকে উঠে আসে শব্দ। আওয়াজেরা মারা যায়, যৌথ আওয়াজে উঠে আসে মানে, দ্যোতনা, খোদাই করে রাখা অমরত্বের নিশানা। হিরণ্যগর্ভের আভাস পেয়ে ব্যক্তি মানব চিৎকার করে ওঠে - শৃণ্বন্তু। গোষ্ঠীর স্মৃতিতে থাকে অমৃতের অধিকার। আক্রান্ত গোষ্ঠীর নিশ্চিন্ততম মানুষটি শব্দের ইশারায় কেঁপে ওঠে। বিদেশ থেকে ফিরে আসে জাহানারা ইমামের সন্তান, চিরপরিচিত শব্দের মায়ায়, মর্যাদায়, শব্দের মধ্যেই ডুবে যায় একাত্তরের রুমি, একাত্তরের দিন ... ...
এসো স্মৃতি এসো সংকেত ভেদ করে এই পথমাঝে
রূপের গভীর থেকে মূর্তির মত চিনে নেওয়া ঘ্রাণে
আরতির ধোঁয়া এসে স্বয়ং উদিত হও ঘটের বিরাজে
যেরকম কুয়াশার থেকে মিশে গ্যাছো আশ্বিনের ধানে
এসো পথ এসো স্তবের বিচার থেকে স্মৃতির সকালে
রৌদ্র মেঘের ফাঁকে রেখে যাক পখি ওড়ানোর গান
ঢাল তুলে যেরকম বন্যা থামিয়ে দিতে নদীর কপালে
শিউলির হাসি দিয়ে নিয়ে সেজে যেত বিষাদবাগান
এসো রৌদ্র এসো বর্ষা কুয়াশার কাছে এসো ভুলপথ
মাঠের নবীন বাহু তালগাছ দুটি সিগন্যালে স্থিত
ভোরের রসের মত ঘুমের পর্দা তুলে ... ...
কুকুরের মাস শেষে এসে গেলে; যাকে বলি ঘ্যাম
ঘামের বিষাদ মেখে ট্রাফিকের বিস্তর জ্যাম
চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে সিগন্যাল থেকে, যেন জল
রেলিং-এর নীলসাদা হলুদ আর সিকির অচল
পাতায় নতুন করে ঘ্রাণ নিই নতুন বাঁধাই
যেরকম মহালয়া এসে গেলে এস এম এস পাই
সাতদিন রোববার সপ্তাহে ছুটি ছুটি মেনু
রেডিওয় আলো জ্বলে কীভাবে যে বেজে যেত বেণু!
আলোয় শব্দ বাজে রঙ ঠুকে যায় কাঁচে কাঁচে
বাঁশের কাঠামো থেকে গান বাজে আনাচে কানাচে
গানেরও শরীর থাকে মায়াবিনী সমারোহ সাজ
মাস গুণে তিথি মেনে ঠিকরিয়ে ... ...