উনিশশ’ পাঁচে বঙ্গ-ভঙ্গ হয়েছিল। মামনুর রশিদের লেখা নাটক ‘ভঙ্গ বঙ্গ’। কাস্টমস আর ইমিগ্রেশনের সময়। বেনাপুল, হরিদাসপুরের কথা। স্মাগলার রাজা আর যৌনকর্মী মালিনীর কাহিনী। দেশভাগের সঙ্গেই এসেছে কাঁটাতার। বর্ডার। স্মাগলিং। মেয়েরা দেহব্যবসাতে নেমেছে। এই কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে, ঘুরে বেড়াতে চায় এক আশ্চর্য মানুষ। যদি নদীকে, বাতাসকে দু’ভাগ করা না যায়, যদি পাখি সব আকাশে ঘুরে বেড়াতে পারে, তবে মানুষ কেন পারে না? কেউ আটকাতে পারে না তাকে। সে চলে যায় সীমানা পার হয়ে। ইমিগ্রেশন আউট অব কন্ট্রোল। এইখানে যুক্ত হয় রক্তকরবীর রাজা, রঞ্জন, নন্দিনী। সেই আশ্চর্য মানুষ, নিয়মভাঙা মানুষ রক্তকরবী খুঁজছে। ... ...
আজ আমাদের অগ্রজ মনোজ মিত্রর জন্মদিন। তিনি ৮০ সম্পূর্ণ করে ৮১-তে পা দিলেন। ভারতীয় নাটক, নাট্য সাহিত্যে তাঁর অবদান পাঠক এবং নাটকের দর্শক মূল্যায়ণ করবেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে দূরের পাঠক হয়ে তাঁর নাটক পড়ি। এবং উচ্চ মানের সাহিত্য পাঠের স্বাদ পেয়ে থাকি। অসামান্য বহুমাত্রিক সংলাপ পড়ে মুগ্ধ হই। সেই ১৯৫৯ সালের মৃত্যুর চোখে জল একাঙ্ক থেকে চাকভাঙা মধু, পরবাস, সাজানো বাগান, গল্প হেকিম সায়েব, রাজদর্শন, যা নেই ভারতে, অশ্বত্থামা, আশ্চর্য ফান্টুসি, ভেলায় ভাসে সীতা, অলকানন্দার পুত্র কন্যা......তালিকা বাড়াব না। ১৯৭৫-৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে নরক গুলজার নাটকের সেই গান, ' কেউ কথা বলো না, কেউ শব্দ করো না, ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন, গোলযোগ সইতে পারেন না' তিনিই লিখেছিলেন। সেই গান এখন ভেসে বেড়ায় সব রকম সেনসরশিপের বিরুদ্ধে। ... ...
১৯৪৬ সালে জাঁ পল সার্ত্র L'Engrenage নামে একটি চিত্রনাট্য লেখেন। প্রথমে নাম দেওয়া হয়েছিল --'নোংরা হাত'। তখনো একই নামের সার্ত্রের অতিবিখ্যাত নাটকটি প্রকাশিত হয়নি। যাই হোক, সিনেমাটা আর হয়নি। এবং সার্ত্রের অন্যান্য রচনার তুলনায় এই রচনাটা একদম-ই জনপ্রিয় হয়নি। ফ্রান্স এবং জার্মানীতে এটার নাট্যরূপ মঞ্চস্থ করা হয়, এবং খুব তাড়াতাড়ি-ই বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা সমালোচনায় ফালাফালা করে ছাড়েন নাটকটাকে। তার কারণ-ও ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার মুখে সার্ত্র এমন একটা চিত্রনাট্য লিখলেন যা গোটা বিপ্লব-প্রক্রিয়াটাকেই প্রশ্ন করে বসেছিল। তখন সোভিয়েতের আকাশচুম্বী সাফল্য এবং বিপ্লব স্টালিন সাম্যবাদ এসবের লোককথা প্রায় অতিকথায় পরিণত হয়েছে। ফ্রান্সের বামপন্থী হেজিমনিতে (সার্ত্র নিজেও যার অঙ্গ ছিলেন) স্বভাবতই তখন এমন একটি শিল্পপ্রয়াস বেশ অস্বস্তিকর যা ইঙ্গিত করেছিল যে বিপ্লব তার সন্তানদের গিলে খাচ্ছে। বর্তমান নাটকটি L'Engrenage থেকে বহুলাংশে অনুপ্রাণিত। নাটকটা লেখার জন্য মার্ভিন সেভিলের করা মুল রচনার ইংরেজি অনুবাদ 'In the Mesh'-এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে। ... ...
নান্দীমুখ: যেখানে "দি এলিফ্যান্ট প্রজেক্ট" ছাড়া অন্যদের কথা। থিয়েটার মানে হল চৌকো, গোল বা বিশেষ জ্যামিতি-বিহীন রঙ্গবেদীতে আচরিত একটি সজীব শিল্প -- যে রঙ্গবেদী কখনও দর্শকের থেকে দূরে কিছুটা উচ্চতায় রাখা, কখনও দর্শকের হাঁটু-গোড়ালির সঙ্গে মেশামেশি করে নেওয়া। ... ...
মেহিকো দেশে যে কল্পগাথাটি প্রচলিত আছে : তখন কেহই ছিলো না ........ সন্ধ্যামুখীন সীসারঙের আকাশ আর বুনো ঘাসঝোপ ঘিরে না জোনাকিপোকা, না ঝিঁঝিপোকা। রোগা নদীটির নাবাল জমিতে নেই বুনো কুকুর-পরিবার ও তাদের তন্ময় হলুদ চোখ, ক্যাকটাস-ঝোপের গর্তে নেই সাবলীল সাপ। নিস্পন্দ অন্ধকারের দিকে পাশ ফিরে তাকানো বৃক্ষশাখায় নেই একটিও ঘুমন্ত কাক। এমনই প্রাণীশূন্য সন্ধ্যাবাতাস স্পর্শ করে সামনে এসে দাঁড়ায় এক জরতী স্ত্রী-মূর্তি। কোঁচড় হাতড়ে সে বার করে কয়েকটি অস্থি-অবশেষ। সেগুলো সে মাটিতে সাজায়,মন্ত্র পড়ে, চিত্ত অভিনিবেশ করে সৃজন প্রক্রিয়ায়। ... ...
রঙ্গকর্মীর প্রথমদিকের নাটক যখন ঊষা গাঙ্গুলী পরিপূর্ণভাবে ঊষা গাঙ্গুলী হয়ে ওঠেন নি, বা রঙ্গকর্মীও পুরোপুরি রঙ্গকর্মী হয়ে ওঠে নি। শিশির মঞ্চে টিকিট দেখিয়ে ঢোকার মুখে দেখি বাইরের নুড়িবাঁধানো চত্বরে একদল দেহাতী মানুষ পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে বসে। গ্রীনরুম থেকে এ পালার নটনটীরা বেরোয় না। বাবুদের এ সি হলের বাইরে বসে অপেক্ষা করে। নাটক শুরু হলে আস্তে আস্তে স্টেজে ওঠে। নাটকের গল্প বিহারের গ্রামের চিরাচরিত শোষণের গল্প। ... ...
গ্রুপ থিয়েটারের বড়দা নান্দীকারের দুইটি ছোটো নাটক - "পাতা ঝরে যায়" এবং "বড়দা"। প্রথমটি বুদ্ধদেব বসুর লেখা। দ্বিতীয়টি মুন্সী প্রেমচন্দের ছোটো গল্প অবলম্বনে। প্রথমটিতে যুগ্ম অভিনয়ে রুদ্রপ্রসাদ এবং স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। দ্বিতীয়টিতে একক অভিনয়ে গৌতম হালদার। "পাতা ঝরে যায়" নাটকটি মঞ্চস্থ করার কি খুব দরকার ছিল? দুই বৃদ্ধবৃদ্ধার শেষ জীবনের স্মৃতিচারণ যেখানে ছেলেমেয়ে অনেক দূরে। ... ...
আমরা বুঝতে পারি, এ জাদু কেবল প্রাচ্যেই সম্ভবে। গঙ্গাহৃদি বঙ্গভূমে সম্ভবে। ভাঙ্গা দেউলময় সাপের চলাচল, বিগ্রহকে আড়াই পাকে জড়িয়ে ধরেছে গুল্মরাজি, গরান-গেঁও-সুন্দরী বৃক্ষরাজির শ্বাসমূল জনিত দুর্গমতা কামাতুরা হরিণীর বিচরণভূমি এ কর্দমরাষ্ট্রে - এই যদি হয় আগামী বাংলার প্রত্নপ্রতিম মুখচ্ছবি - যদি বাঘ এসে চেটে খায় ভগ্ন স্থাপত্যের শ্যাওলা মাখানো নুন, কেওড়ার ফল ভেসে যায় হেড়োভাঙ্গা-রায়মঙ্গলের ঘোলা স্রোতে-কালপ্রবাহের এই জঙ্গমতার মধ্যে জেগে থাকবে মেঘনাদ মাইকেল, মেঘনাদ গৌতম হালদার। বঙ্কিম ঘনশ্যামল ঘনদল যে মঠচূড়ায় বিরাজে নিরন্তর। ... ...