তাপ্পর তো হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে ব্যস্ত বড়বাজারের রকমারি ভিড় ঠেলে একে গুঁতিয়ে তার গুঁতো খেয়ে লোহার ভ্যানের ঠোক্কর বাঁচিয়ে মুটের ধাক্কা সামলে আমরা কম্বলের দোকান খুঁজতে লাগলাম।
গুটিকয় কথা খোলসা করে বলি, যবে থেকে কম্বল দেওয়ার কথা হয়েছে, আমরা ভেবেই চলেছি আমাদের সীমিত ক্ষমতায় ভালো কি দেওয়া যায়। দলের লোকজন এদিকওদিক দেখে শুনে আসছে, কিন্তু মনোমত হচ্ছে না। এই সময় হঠাৎ মনে হল, আমাদের ছেলেবেলায় কম্বল বলতে ভেড়ার লোমের ঝুলমুলি দেওয়া বিলিতি কম্বলকেই জানতাম।
রাঢ় অঞ্চলের দূর্জয় ঠান্ডা কে কাবু করতে ওই কম্বলের জুড়ি ছিল না। কিছু ছিল বড্ড কুটকুটে কিন্তু শীতের দিনে পেতে বসতে ভারী আরামদায়ক। আজকাল যদিও চাইনিজ কম্বলের বাজার। ওই সাবেকি জিনিস কি পাওয়া যাবে! তখন ঠিক হল বড়বাজার যাওয়া। আর তারপর এই অভিযান।
অতঃপর মনোমত কম্বল কেনা হল, ক্যানিং স্ট্রীটে ঢুকে খাতা পেন পেন্সিল সব কিনে মুটের মাথায় মাল চাপিয়ে গাড়িতে তুলে অয়নের বাড়িতে সেসব গেল। গত শুক্রবার অয়নের বাড়ি গিয়ে সকলে মিলে সেসব বেঁধে ছেঁদে রেখে আসা হল।
গতকাল ২৩ সে নভেম্বরের রোব্বার⁸, পৌনে পাঁচটায় উঠে তৈরি হয়ে সাড়ে পাঁচটায় বেরিয়ে পড়লাম। বাইরে তখন ভেপার ল্যাম্পের নরম আলোয় কুয়াশা মাখা মহানগরীর নিঝুম রাজপথ শীত চাদর মুড়ি দিয়ে পড়ে আছে। একাকি ভোরের নৈঃশব্দ গায়ে মেখে লম্বা পায়ে বড় রাস্তায় এসে দাঁড়াতেই ক্যান্টনমেন্টের বাস। ছয়টা বাজার আগেই স্টেশন পৌঁছে টিকিট কেটে ওভার ব্রিজ পার হয়ে বসলাম। কোন ট্রেনের ঘোষণা নেই। ইতিউতি লোকজন অপেক্ষায়। একটি ডাউন ট্রেন যাওয়ার পর বনগাঁ লোকালের খবর হল, কিন্তু ২ নম্বর প্লাটফর্মে না দিয়ে ৩ নম্বরে দিল, আর তখনি লোকমুখে জানা গেল বিরাটিতে একটি মালগাড়ি খারাপ হয়েছে, ফলে আমাদের ট্রেনটি তো বটেই আপের কোন ট্রেন এখন ছাড়বে না। খবরটি শোনার পর অনেকে নেমে চলে গেল। আমি গার্গীকে আমার সাম্প্রতিক স্ট্যাটাস জানিয়ে দিয়ে বসে রইলাম। এও বলে দিলাম আমি যদি নাও পৌঁছতে পারি সময় মত, ওরা যেন রওনা দিয়ে দেয, বনগাঁ গিয়ে দেখা হবে। বসে আছি, বসেই আছি। ট্রেন ছাড়ল ৭:১০ য়ে। নবব্যারাকপুরে ট্রেন ঢুকছে, শর্মিলীর ফোন, “দিদি কোথায়” বললুম আসছি। একটু বাদে বারাসাত নেমে শর্মিলির কাছে দাঁড়ালাম। ওদিকে অয়ন গার্গী মিঠি চির ঝুমা মিঠু রিমি অতনু বাবু ওরা সব্বাই মিলে হাতে হাতে ওভার ব্রিজ পার করে মাল পত্তর এনে রাখল। এবার সবাই মিলে সে সব বয়ে নিয়ে বারাসাত লোকালে তুলে দুগ্গা দুগ্গা বলে রওনা দেওয়া গেল।
বামুনগাছি দত্তপুকুর পেরোতেই আমি চোখ বন্ধ করলাম। ওদিকে অতনুর শরীরটা বেশ খারাপ। অয়ন - চির ওর শুশ্রূষা করে মাথায় মুখে জল দিয়ে একটু সুস্থির করে বসিয়ে দিল।
ট্রেন ছুটছিল, বেশ লম্বা বিরতির পর একটা করে স্টেশন আসছিল। মাঠে মাঠে ধান কেটে গাদা করে রাখছে। দেখেই মন ভালো হয়ে যায়!
দেখতে দেখতে বনগ্রাম এসে পড়ল। প্রান্তিক স্টেশন তাই তাড়াহুড়ো ছিল না। ধীরে সুস্থে মাল পত্তর গুণে গেঁথে নামিয়ে আবার হাতে হাতে নিয়ে হাঁটা দিয়ে লাইন পেরিয়ে ওপারে গিয়ে দুটি অটো ভাড়া করে তাতে সব রেখে আমরা কিছু খেয়ে নিয়ে অতনুর জন্যে “ও আর এস” নিয়ে রওনা দিলাম।
রাস্তা এতই খারাপ যে, দুপাশের মনোরম নয়ন ভোলানো দৃশ্যপট দেখার মত অবস্থায় ছিলাম না। নিত্যদিন আপিস যাতায়াতের রাস্তায় অটো টোটোয় দুবেলা হাড় মাংস আলাদা হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়, তাই ছুটির দিনেও সেই এক অভিজ্ঞতা মোটেই সুখপ্রদ হচ্ছিলনা। যাই হোক এই ভাবেই একসময় হেলেঞ্চা পৌঁছে গেলাম। আম্বেদকর কলেজের উজ্জ্বলদা আর সৌরভ দা আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে সকলে একটু চা খেয়ে অতনুকে সৌরভদার বাড়িতে পাঠিয়ে আমরা আবার রওনা দিলাম।
বাকিটা আবার কাল বলব।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।