এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কম্বল কথকতা২

    Luna Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৬ নভেম্বর ২০২৫ | ৪৯ বার পঠিত
  •  
    তাপ্পর তো হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে ব্যস্ত বড়বাজারের রকমারি ভিড় ঠেলে একে গুঁতিয়ে তার গুঁতো খেয়ে লোহার ভ্যানের ঠোক্কর বাঁচিয়ে মুটের ধাক্কা সামলে আমরা কম্বলের দোকান খুঁজতে লাগলাম।
    গুটিকয় কথা খোলসা করে বলি, যবে থেকে কম্বল দেওয়ার কথা হয়েছে, আমরা ভেবেই চলেছি আমাদের সীমিত ক্ষমতায় ভালো কি দেওয়া যায়। দলের লোকজন এদিকওদিক দেখে শুনে আসছে, কিন্তু মনোমত হচ্ছে না। এই সময় হঠাৎ মনে হল, আমাদের ছেলেবেলায় কম্বল বলতে ভেড়ার লোমের ঝুলমুলি দেওয়া বিলিতি কম্বলকেই জানতাম। 
    রাঢ় অঞ্চলের দূর্জয় ঠান্ডা কে কাবু করতে ওই কম্বলের জুড়ি ছিল না। কিছু ছিল বড্ড কুটকুটে কিন্তু শীতের দিনে পেতে বসতে ভারী আরামদায়ক। আজকাল যদিও চাইনিজ কম্বলের বাজার। ওই সাবেকি জিনিস কি পাওয়া যাবে! তখন ঠিক হল বড়বাজার যাওয়া। আর তারপর এই অভিযান।
    অতঃপর মনোমত কম্বল কেনা হল, ক্যানিং স্ট্রীটে ঢুকে খাতা পেন পেন্সিল সব কিনে মুটের মাথায় মাল চাপিয়ে গাড়িতে তুলে অয়নের বাড়িতে সেসব গেল। গত শুক্রবার অয়নের বাড়ি গিয়ে সকলে মিলে সেসব বেঁধে ছেঁদে রেখে আসা হল।
    গতকাল ২৩ সে নভেম্বরের রোব্বার⁸, পৌনে পাঁচটায় উঠে তৈরি হয়ে সাড়ে পাঁচটায় বেরিয়ে পড়লাম। বাইরে তখন ভেপার ল্যাম্পের নরম আলোয় কুয়াশা মাখা মহানগরীর নিঝুম রাজপথ শীত চাদর মুড়ি দিয়ে পড়ে আছে। একাকি ভোরের নৈঃশব্দ গায়ে মেখে লম্বা পায়ে বড় রাস্তায় এসে দাঁড়াতেই ক্যান্টনমেন্টের বাস। ছয়টা বাজার আগেই স্টেশন পৌঁছে টিকিট কেটে ওভার ব্রিজ পার হয়ে বসলাম। কোন ট্রেনের ঘোষণা নেই। ইতিউতি লোকজন অপেক্ষায়। একটি ডাউন ট্রেন যাওয়ার পর বনগাঁ লোকালের খবর হল, কিন্তু ২ নম্বর প্লাটফর্মে না দিয়ে ৩ নম্বরে দিল, আর তখনি লোকমুখে জানা গেল বিরাটিতে একটি মালগাড়ি খারাপ হয়েছে, ফলে আমাদের ট্রেনটি তো বটেই আপের কোন ট্রেন এখন ছাড়বে না। খবরটি শোনার পর অনেকে নেমে চলে গেল। আমি গার্গীকে আমার সাম্প্রতিক স্ট্যাটাস জানিয়ে দিয়ে বসে রইলাম। এও বলে দিলাম আমি যদি নাও পৌঁছতে পারি সময় মত, ওরা যেন রওনা দিয়ে দেয, বনগাঁ গিয়ে দেখা হবে। বসে আছি, বসেই আছি। ট্রেন ছাড়ল ৭:১০ য়ে। নবব্যারাকপুরে ট্রেন ঢুকছে, শর্মিলীর ফোন, “দিদি কোথায়” বললুম আসছি। একটু বাদে বারাসাত নেমে শর্মিলির কাছে দাঁড়ালাম। ওদিকে অয়ন গার্গী মিঠি চির ঝুমা মিঠু রিমি অতনু বাবু ওরা সব্বাই মিলে হাতে হাতে ওভার ব্রিজ পার করে মাল পত্তর এনে রাখল। এবার সবাই মিলে সে সব বয়ে নিয়ে বারাসাত লোকালে তুলে দুগ্গা দুগ্গা বলে রওনা দেওয়া গেল।
    বামুনগাছি দত্তপুকুর পেরোতেই আমি চোখ বন্ধ করলাম। ওদিকে অতনুর শরীরটা বেশ খারাপ। অয়ন - চির ওর শুশ্রূষা করে মাথায় মুখে জল দিয়ে একটু সুস্থির করে বসিয়ে দিল। 
    ট্রেন ছুটছিল, বেশ লম্বা বিরতির পর একটা করে স্টেশন আসছিল। মাঠে মাঠে ধান কেটে গাদা করে রাখছে। দেখেই মন ভালো হয়ে যায়! 
     
    দেখতে দেখতে বনগ্রাম এসে পড়ল। প্রান্তিক স্টেশন তাই তাড়াহুড়ো ছিল না। ধীরে সুস্থে মাল পত্তর গুণে গেঁথে নামিয়ে আবার হাতে হাতে নিয়ে হাঁটা দিয়ে লাইন পেরিয়ে ওপারে গিয়ে দুটি অটো ভাড়া করে তাতে সব রেখে আমরা কিছু খেয়ে নিয়ে অতনুর জন্যে “ও আর এস” নিয়ে রওনা দিলাম।
     
    রাস্তা এতই খারাপ যে, দুপাশের মনোরম নয়ন ভোলানো দৃশ্যপট দেখার মত অবস্থায় ছিলাম না। নিত্যদিন আপিস যাতায়াতের রাস্তায় অটো টোটোয় দুবেলা হাড় মাংস আলাদা হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়, তাই ছুটির দিনেও সেই এক অভিজ্ঞতা মোটেই সুখপ্রদ হচ্ছিলনা। যাই হোক এই ভাবেই একসময় হেলেঞ্চা পৌঁছে গেলাম। আম্বেদকর কলেজের উজ্জ্বলদা আর সৌরভ দা আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে সকলে একটু চা খেয়ে অতনুকে সৌরভদার বাড়িতে পাঠিয়ে আমরা আবার রওনা দিলাম।
    বাকিটা আবার কাল বলব।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন