এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হাশাশিন : ইতিহাসের ভয়ংকরতম গুপ্তঘাতক গোষ্ঠী

    AR Barki লেখকের গ্রাহক হোন
    ১২ অক্টোবর ২০২৫ | ২০ বার পঠিত
  •  
    হাশাশিন ছিল মধ্যযুগের ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় এবং ভয়ংকর গুপ্তঘাতক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অন্যতম। মূলত তারা ছিল শিয়া ইসলামের নিজারি ইসমাইলি মতবাদের একটি শাখা, যারা একাদশ শতকে পারস্য (ইরান) এবং সিরিয়া অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম চালাত। 
     
    এই গোষ্ঠীটি ইতিহাসে তাদের চরম গুপ্ত হত্যার কৌশল এবং অন্ধ আনুগত্যের জন্য সুপরিচিত। ইংরেজি শব্দ অ্যাসাসিন (Assassin) এই আরবি শব্দ 'হাশাশিন' থেকেই এসেছে।
     
    উৎপত্তি ও নেতৃত্ব :
    হাশাশিন গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হাসান আল সাবাহ। ১০৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি উত্তর পারস্যের আলবুরজ পর্বতমালায় অবস্থিত দুর্ভেদ্য আলমুত দুর্গ দখল করেন এবং সেটিকে তাদের সদর দপ্তর হিসেবে গড়ে তোলেন। 
     
    হাসান সাবাহ তাঁর অনুসারীদের মধ্যে চরম ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক আদর্শের বীজ বপন করেন। তাঁর অনুগত গুপ্তঘাতকদের বলা হতো 'ফেদায়ীন' বা আত্মউৎসর্গকারী, যারা নিজেদের জীবনের বিনিময়েও নেতার আদেশ পালন করতে প্রস্তুত ছিল। হাসান সাবাহ এবং পরবর্তী নেতারা পশ্চিমা বিশ্বে 'শাইখুল জাবাল' বা 'পাহাড়ের বৃদ্ধ ব্যক্তি' নামে পরিচিত ছিলেন।
     
    কার্যপদ্ধতি ও কুখ্যাতি :
    হাশাশিনরা সরাসরি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে না গিয়ে বরং তাদের শত্রুদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করতে পরিকল্পিত গুপ্তহত্যাকে প্রধান কৌশল হিসেবে বেছে নেয়। তারা মাস বা বছর ধরে তাদের লক্ষ্যের গতিবিধি অনুসরণ করত এবং অপ্রত্যাশিতভাবে দিনের আলোয় অথবা কঠিন নিরাপত্তার মধ্যেও উচ্চপদস্থ মন্ত্রী, সুলতান, খলিফা এবং ক্রুসেডার নেতাদের হত্যা করত। তাদের এই কৌশলের মূল উদ্দেশ্য ছিল মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ (Psychological Warfare) সৃষ্টি করা।
     
    কথিত আছে, তাদের এই চরম ভক্তির পিছনে 'হাশিশ' নামক এক প্রকার মাদকের ভূমিকা ছিল। এই মাদক সেবনের কারণেই তাদের হাশাশিন (হাশিশ সেবনকারী) নামে ডাকা হতো বলে প্রচলিত আছে
     
    পতন :
    প্রায় দুই শতাব্দী ধরে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব বিস্তার করার পর, ত্রয়োদশ শতকে হাশাশিনরা এক বিশাল হুমকির মুখে পড়ে। ১২৫৬ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গল নেতা হালাকু খান তাদের আলমুত দুর্গ দখল করেন এবং তাদের শক্তিকে চূর্ণ করে দেন। এই আক্রমণের ফলেই নিজারি ইসমাইলিদের এই বিশেষ সামরিক শাখাটি বিলীন হয়ে যায়।
     
    হাশাশিনদের ইতিহাস মধ্যযুগের এক অন্ধকার অধ্যায়কে তুলে ধরে, যেখানে ধর্মীয় বিশ্বাস, রাজনীতি এবং চরম সন্ত্রাসবাদ একে অপরের সাথে মিশে গিয়েছিল। তাদের কিংবদন্তী আজও সাহিত্য, ভিডিও গেম এবং জনশ্রুতিতে টিকে আছে।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন