এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সব কান্ড কাল্পনিক #২

    Prasun Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৯৮ বার পঠিত
  • |
    চোখে চোখে 

    ছেলেবেলা থেকেই আমার হেব্বি পাওয়ার। না, সেটা কব্জির নয়, চশমার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার খাতার নম্বর বাড়ুক না বাড়ুক, চশমার পাওয়ার তাল মিলিয়ে বেড়েছে। এই জায়গায় আমি কোনভাবেই বেতাল হইনি। চশমার সঙ্গে যে প্রথম থেকেই আমার প্রেম-প্রীতি-ভালবাসার সম্পর্ক ছিল তা নয় বরং শুরুর দিকে সেটা ছিল আদায় কাঁচকলায়। আস্তে আস্তে আমাদের বোঝাপড়া বাড়লো; মান-অভিমান পেরিয়ে আমরা হয়ে উঠলাম একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এখন চশমা ছাড়া আমার এক দন্ডও চলে না, মানে, আমি চলতেই পারি না। আক্ষরিক অর্থেই অন্ধ বলা চলে।

    তবে, চশমা যে অতি ভীষম বস্তু, সেটা এই বুড়ো বয়সে আবার নতুন করে বুঝলাম। চশমার পাওয়ার যে কত বড় ক্ষমতাবান সেটা চোখে আঙুল চালিয়ে বোঝানো হলো আমাকে। অবিশ্যি চোখের পাওয়ার যত বেশি হয় পকেটের পাওয়ার ততই কমে। পকেট ততই হালকা হয় যে।

    এক জনপ্রিয় চশমা কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপনে জাহির করেছে অমুক অফারটা নিলে একটি চশমার সঙ্গে আরেকটি চশমার ফ্রি! সত্যিই, এই চশমা কোম্পানিগুলির বাণিজ্যিক উৎকর্ষতা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। এইসব কোম্পানিগুলো যে অন্তর্যামী তা আমি চোখে চোখে বুঝতে পেরেছি। না হলে, তারা কি করে আমার ঘষা কাঁচের যন্ত্রণা বুঝতে পারল! আমি দীর্ঘদিন ধরে চশমার সেই ঘষা কাঁচ নিয়ে ঘষটাতে ঘষটাতে কাজ চালাচ্ছি অমনি আমার চশমার সামনে ঝলসে উঠল তাদের সেই অফার - একটি নিলে একটি ফ্রি।
    সেই অমোঘ আকর্ষণ ভোগ করতে আমি তৎক্ষণাৎ চললাম সেই বিপণন কেন্দ্রে। কিন্তু তখন কে জানত সেই ভোগ অপেক্ষা করছে ভোগান্তি হয়ে। 
    দোকানের শান্ত স্নিগ্ধ ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকে এমনিতেই চোখ জুড়িয়ে এলো। দেওয়ালে রাখা র‍্যাকের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রংবেরঙের চশমা গুলি যেন তারার মতো ঝিকিমিক করছে। দেখে চোখে ঝিলমিল লেগে যায়। এইখানেতেই মজা। পি সি সরকারের ম্যাজিক এর মত আমাকে হিপনোটাইজ করে, আমার গোল গোল চোখ গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলল, "আছে যা পাওয়ার, পকেট করতে হবে হালকা।"
    আমি বললাম "অগত্যা"।
    চশমার লেন্স নিয়ে আমাকে অনেকক্ষণ ধরে বোঝানো হলো। পৃথিবীর কোন কোন প্রান্ত থেকে কোন কোন জড়িবুটি থুড়ি টেকনোলজি দিয়ে তৈরি হয়েছে এইসব লেন্স। শুনে তো আমার চক্ষু চড়ক গাছ। 
    চোখে তখন আমার রঙিন স্বপ্ন! কত কিছু দেখতে পাবো এই লেন্স দিয়ে। যেন লোকটি আমাকে বলতে চাইল; দুঃখ-কষ্ট আর কি দেখবেন, সবই তো দেখেছেন, এখন এই লেন্স দিয়ে শুধু সুখ শান্তি দেখুন!

    অবশেষে, সঠিক দিনে সেই লেন্স চলে এলো বাড়িতে। দুরু দুরু উত্তেজনায় মনে এক অদ্ভুত আনন্দ।
    চশমা চোখে দিয়ে তো আমি হতবাক। 
    একি দেখছি?
    মানে, এই ভাবে বলা ভালো, কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না। প্রায় ঝাপসা সবকিছু। আমার ভবিষ্যতের মতই। সবকিছুই আঁকাবাঁকা, ঢেউ খেলছে চারিপাশে।

    দৌড়ে গেলাম। আর্তনাদ করে উঠলাম, কিছুই তো দেখা যায় না এতে। 
    গম্ভীর হয়ে তারা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালালো, তারপর বলল, চশমা ঠিকই আছে। আপনার দেখার ধরনে কিছু সমস্যা আছে। আমি চোখ পিট পিট করলাম, "কি বলতে চাইছেন!" 
    মানে আর কিছুই না, এটা অতি উচ্চমানের লেন্স, আপনার ওই নিচু মানের চোখের সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে। এই আর কি। কয়েকদিন ধৈর্য ধরুন। চশমার সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা দৃশ্যমান হবে তখন।
    আমি বললাম, "আর কতদিন অপেক্ষা করা যায় বলুন তো? আমি মোবাইল কম্পিউটার কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না। "
    সে বলল, "সেটা তো ভালই, আপনার স্ক্রিন টাইম কমছে। কত উপকার করছে বলুন তো এই লেন্স। তাছাড়া আমরা এই দৌড়ো-দৌড়ির জীবনে ধৈর্য ধরতেই ভুলে গেছি। সেটাও নতুন করে ফিরে পাচ্ছেন আপনি।" সত্যিই, কি আধ্যাত্মিক লেন্স রে বাবা।

    চশমাঘাতে জর্জরিত হয়ে বাড়ি ফিরলাম।  বউ বলে দিল, খবরদার বাড়ির বাইরে বেরিও না। ঠিক করে দেখতে পাচ্ছ না, তারপর কার না কার বাড়িতে ঢুকে পড়বে। মজা করে বললাম, হ্যাঁ তারপর কার না কার হাত ধরে টানাটানি করব। শুনে বউ প্রচন্ড রেগে গিয়ে গুম হয়ে গেল। বউয়ের রক্তচক্ষু  দেখে আমি বুঝলাম, মজাটা বেশি হয়ে গেছে। এবারে যদি ওদিক থেকে উড়ন্ত কিছু আমার দিকে আগত হয় তাহলে তাকে ড্রিবল করা আমার এই অর্ধচক্ষু অবস্থায় খুব কঠিন হয়ে যাবে।
    অগত্যা বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে নিজেকে বন্দী করে রেখেছি।
    মন খারাপ করে রেডিওটা চালিয়ে দিতেই হেমন্ত বাবু গেয়ে উঠলেন, "খিড়কি থেকে সিংহ দুয়ার এই তোমাদের পৃথিবী...."। কি নিষ্ঠুর রসিকতা!

    তবে একটা কথা বলতে পারি, চক্ষুর সমস্যা হওয়ায়, যেন আমার জ্ঞানচক্ষু আমার খুলে গেছে। চোখ কান দিয়ে জগতের অনেক ময়লা এসে জমে মনে। যদি বন্ধ চোখে কিছুটা শান্তি পাওয়া যায় এবং মনের জানালাটা খুলে রাখা যায়, তাহলে সেই মনের ময়লা কিছুটা পরিষ্কার হয়।

    তাই, আশা রাখি, আমার এই সদ্য প্রস্ফুটিত জ্ঞানচক্ষু দিয়ে কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক, কোনটা ভোগ কোনটা ভোগান্তি সেটা যেন মরমে মরমে বুঝতে পারি.....

    প্রসূন 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    |
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন