এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আমাদের দাবী হোক

    সুবিমল লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০৯ বার পঠিত
  • শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে কোনটা শিখব, লোভ না সততা?
    (তিনটি পর্ব একত্রে)

    পর্ব: ১

    ভারতের আদর্শ শিক্ষক বলতে একজনই ছিলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়। ভারতে শিক্ষক দিবস তো তাঁর জন্মদিন ২৬শে সেপ্টেম্বরেই হওয়ার কথা। 'শিক্ষক দিবস'ই বলতে হবে কেন? শিক্ষিকা নয়ই বা কেন? কেন 'শিক্ষক-শিক্ষিকা দিবস' হতে পারে না? তাহলে ইংরেজিতে 'টিচার্স ডে' শব্দটাই ভাল।

    তখন ৫০ টাকা বেতনে বিদ্যাসাগর মহাশয় অধ্যাপনার কাজ করতেন। সেই সময় সংস্কৃত কলেজে ব্যকরণের প্রথম শ্রেণীর অধ্যাপকের পদ শূন্য হয়৷ মার্শাল সাহেব বিদ্যাসাগরকে ওই পদ গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন৷ ওই পদের বেতন ৮০ টাকা৷ যে কোনও মানুষের পক্ষে বেশি টাকার চাকরি লোভনীয় সুযোগ, কিন্তু বিদ্যাসাগর ছিলেন সত্যিকারের ঈশ্বর৷ বেতন বেশি হলেও তিনি ওই পদ গ্রহণে সম্মত হলেন না৷ সেই সময় তারানাথ তর্কবাচস্পতির একটা চাকরির ভীষণ দরকার ছিল৷ তাই সংস্কৃত কলেজের ওই পদে তিনি তারানাথ তর্কবাচস্পতিকে নিয়োগের অনুরোধ করেন৷ তাঁর অনুরোধে মার্শাল সাহেবও অবাক হয়েছিলেন৷ তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বিদ্যাসাগরের এই অনুরোধে রাজি হয়েছিলেন। তারানাথ তর্কবাচস্পতি কালনায় থাকতেন৷ চিঠি পাঠালে তিনি সময়ে মতো নাও পেতে পারেন তাই বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রায় ২৪-২৫ ক্রোশ অর্থাৎ প্রায় ৫০ মাইল রাস্তা পায়ে হেঁটে তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে সঙ্গে করে এনে সংস্কৃত কলেজের চাকরিতে যুক্ত করিয়ে দিয়েছিলেন৷

    একজন নিজের ছাত্রর থিসিস চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া রাষ্ট্রপতির জন্মদিনটা এত ঘটা করে উদযাপন করার চেয়ে, বরং যে ঈশ্বর ভেবেছিলেন তাঁর নিজের বেতনের থেকে অন্য একজনের চাকরির প্রয়োজন বেশি এবং তার জন্য সততার সঙ্গে প্রায় ৫০ মাইল হেঁটে গিয়ে তাঁকে ধরে এনে সসম্মানে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তাঁর জন্মদিনটা আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

    একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকার কাছে কোনটা শিখব, লোভ না সততা? আমাদের কাছে অত্যন্ত লজ্জার বিষয় এটাই, পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জন্মদিনটা কোনও দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় না এই দুর্ভাগা দেশে।

    পর্ব: ২

    "আমার জন্মদিন আলাদাভাবে উদযাপন করার পরিবর্তে, এটি আমার গর্ব হবে। বিশেষাধিকার, যদি ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করা হয়।"

    কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র যদুনাথ সিংহের গবেষণার থিসিস কপি করে নিজের নামে "ইণ্ডিয়ান ফিলজফি" বইটির দ্বিতীয় খণ্ডে কয়েকটি অধ্যায় প্রকাশ করেছিলেন। এই নিয়ে দীর্ঘদিন কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলেছিল।

    ডঃ যদুনাথ সিংহ ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। পরবর্তী সময়ে তিনি মর্ডান রিভিউ পত্রিকায় রাধাকৃষ্ণণের এই চৌর্যবৃত্তির ইতিবৃত্ত তুলনামূলক ভাবে প্রকাশ করেন। যদুনাথ সিংহ মরিসন রিভিউ পত্রিকার মাধ্যমে ও কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে রাধাকৃষ্ণণের মতো মানুষের প্রকৃত মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট এই মামলাটির রায় বের না করেই মামলার স্থগিতাদেশ দিয়ে দেন।

    ১৯৬২ সালে মে মাসে উপরাষ্ট্রপতি থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার কয়েকমাস পরেই সেপ্টেম্বরে রাধাকৃষ্ণানের জন্মদিন। তাঁর ছাত্ররা জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠান করতে চাইলে সেই সুযোগে তিনি স্বইচ্ছায় নিজের জন্মদিনে শিক্ষক দিবস উদযাপন করিয়েছিলেন, নিজের ছাত্রদের দিয়ে। তারপর থেকে সারা ভারতে ৫ই সেপ্টেম্বর দিনটায় শিক্ষক দিবস হিসাবে উদযাপন করা শুরু হয়।

    বিদ্যাসাগরের দেশে জন্মগ্রহণ করে আমরা সেটাই মেনে নিয়ে চলেছি এখনও। এরজন্য কই আমাদের কারোর লজ্জা করে না তো?!

    আমরা কি শিখেছি? কি শিখছি? আর কি শিখব? লোভ না সততা? আমরা বিদ্যাসাগরের অবদান ভুলে থাকি! যিনি ভারতবর্ষ উপমহাদেশটাকে শিক্ষিত করার জন্য চেষ্টা করেছিলেন স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে।

    পর্ব: ৩

    তখন রাষ্ট্রপতির আমল ছিল না। ছিল বৃটিশ আমল। আমাদের তখন জন্ম হয়নি। সেই সময় ভারতবর্ষে স্কুল-কলেজ শিক্ষা ব্যবস্থা তেমন ছিল না, মেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থা তো ছিলই না। ১৮২০ সালে জন্মানো একটা লোক ভারতে প্রথম শিক্ষার প্রসার ঘটাতে চেষ্টা করেছিলেন, স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা তিনিই প্রথম ভেবেছিলেন। সেই সময়ে তিনি আধুনিক শিক্ষার প্রসারে ভারতবর্ষে নবজাগরণ এনে দিয়েছিলেন। তিনি নিজে কলেজের একজন অধ্যক্ষ ছিলেন। আসলেই তিনি জাতির শিক্ষক। স্কুল-কলেজ ছাড়াও তিনি যা যা করেছিলেন তাঁর প্রতিটা কাজ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।

    ১৮২০ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বরে জন্মেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে দিনটা শিক্ষক দিবস হিসাবে স্বীকৃতি পায়নি! বাংলাতেও না!

    ১৮৮৮ সালে আরেকজন জন্মগ্রহন করেছিলেন,— তিনি একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। পরবর্তী সময় ভারত স্বাধীন হলে তিনিই প্রথম শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন এবং তিনিও বেশ কিছু আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি তাঁরই প্রতিষ্ঠা। তিনি আবুল কালাম মহিউদ্দিন আহমেদ। আমরা অনেকেই জানি না, তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে ১১ই নভেম্বর ভারতের জাতীয় শিক্ষা দিবস। কিন্তু সেটা কী উদযাপন হয়? আমরা তাঁর কথা কতজন জানি?

    আমাদের দাবী হোক,– ২৬শে সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-এর জন্মদিনে শিক্ষক-শিক্ষিকা দিবস উদযাপন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কাছে চির ঋণী হয়ে থাকতেই হবে এই দেশটাকে। শুধু তাঁর মর্যাদা তিনি যেন পান। তাঁর পরিচিতি আমাদের সব্বারই জানা উচিত। আমরা কি একবারও ভেবেছি তিনি না জন্মালে তাঁর উত্তরসূরি আমাদের এখনও অন্ধকারেই থাকতে হতো।
    ____________
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন