এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আনা পেরাইলের মৃত্যু

    পাপাঙ্গুল লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৫৯ বার পঠিত
  • সম্প্রতি, কোচির ছাব্বিশ বছরের তরুণী আনা পেরাইল, চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট হবার পর এবছর মার্চ মাসে পুনেতে একটি বিগ ফোর অডিট ফার্মে চাকরি পেয়েছিলেন। জুলাইয়ে তার আকস্মিক মৃত্যুর পর আনার মা অনিতা অগাস্টিন সেই কোম্পানির ভারতীয় চেয়ারম্যানকে চিঠি লেখার পর বিষয়টি তিনদিন আগে জনসমক্ষে আসে। সেই চিঠিতে অনিতা অভিযোগ করেন কাজের চাপ, গভীর রাত পর্যন্ত কাজ, ছুটির দিনেও কাজ ইত্যাদি বিষয়ে। তার ম্যানেজার দিনের বেলা ক্রিকেট ম্যাচ থাকলে মিটিং পিছিয়ে দিয়ে দিনের শেষে কাজ করতে দিতেন। বাবা মা তাকে কাজের এত চাপ নিতে বারণ করলেও আনা নিজেই বলতেন তিনি শিখতে চান।

    চীন জাপান ভারত কোরিয়ার মত এশিয়ার দেশ গুলিতে কাজের পরিবেশ এরকম কেন? শুধুই কি কর্মীসংখ্যা বহু এবং সজলভ্য বলে? নব্বইয়ে মুক্ত অর্থনীতির যুগ শুরু হবার পর আমেরিকা তার কারখানার কাজগুলি আউটসোর্স করতে শুরু করে চিনে, কাপড়ের কারখানা বাংলাদেশে, সাদা কলার ব্যাক অফিস কাজগুলি ভারতে। কারণ উপযুক্ত শ্রম আইন, ঘন্টার হিসেবে টাকা, সর্বোচ্চ কত ঘন্টা কাজ করা যাবে, তার বেশি কাজ করলে ওভারটাইম এসমস্ত আইনের অনুপস্থিতি বা থাকলেও সেবিষয়ে কর্মীদের সচেতনতার অভাব। অধুনা চীন থেকে কারখানার কাজ ভিয়েতনাম বা ভারতে সরিয়ে আনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। কোভিড পরবর্তী কালে উত্তরপ্রদেশে বারো ঘন্টা কাজ আইনসম্মত করা হয়েছে। তামিলনাড়ুর স্যামসাংয়ের কারখানায় শ্রমিকরা ইউনিয়ন করতে দেবার দাবীতে বনধ শুরু করেছেন। শুধু বিদেশী ফার্মের আউটসোর্স করা কাজই নয়, বহু দেশজ মালিকের ছোট বড় কোম্পানি শ্রম আইনের তোয়াক্কা করে না। চা বাগানের শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড থাকে না।

    তাদের তুলনায় কর্পোরেটরা নানারকম সুবিধা দেয়। আগে ছিল অনসাইট, এখন তার বদলে এথিক্স হেল্পলাইন, অফিসে ফুসবল বা ফ্রীতে দুপুরের খাবার এসব 'কুল' ওয়ার্কপ্লেসের উপাচার থাকে। কিন্তু সামনে মূর্তিপুজোর প্রতিমা হিসেবে রাখা হয় দিনে চারঘন্টা ঘুমোনো সিইও দের অথবা যারা সপ্তাহে ষাটঘন্টা কাজ করলে তবেই দেশ এগোবে এইরকম সব নিদান দেন। অর্থাৎ মুখোশটা খুলে ফেললে আড়ালে কর্মচারীরা শুধুই 'রিসোর্স'। ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স, ডাইভার্সিটি, ইনক্লুশনের কথা বললেও কর্পোরেটরা দিনের শেষে মুনাফা বাড়ানো এবং বোর্ড, শেয়ারহোল্ডারদের খুশি করা ছাড়া অন্য কিছুতে বিশ্বাসী নয়, এই বোধ যারা সেখানে নতুন কাজে যোগ দেয় তাদের সচেতন ভাবেই দেওয়া হয় না। ফলে তারা ভুল করে সেই কাজকে তাদের পেশা না ভেবে নিজেদের 'আইডেন্টিটি'র অংশ ভাবতে শুরু করে।

    www.aol.com/news/no-no-pay-samsung-warns-093045659.html




    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Suvasri Roy | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩৭537880
  • কোম্পানিগুলো এইভাবে শোষণ করছে! আমাদের শিক্ষিত তরুণতরুণীরা প্রতিবাদটুকুও করে না। সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে বলেও মনে হয় না। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ।  
  • পাপাঙ্গুল | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৪৬537887
  • @শুভশ্রী রায় ,  একটা বড় সমস্যা হচ্ছে এই শোষণ অনেক সময়েই মৌখিক। কাজেই কোনো প্রমাণ থাকে না। গতবছর এই নিচের ঘটনাটা নিয়ে কিছুদিন চেঁচামেচি হয়েছিল -
     
  • | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:২৬537911
  • অ্যানার খবর দেখেই আমার HDFC র সেই ম্যানেজারের কথা মনে হয়েছিল।  
    মুর্তি যখন সপ্তাহে ৭০ ঘন্টা কাজের দাওয়াই দেয় তার প্রায় সাথে সাথেই তার  নাতিকে দেওয়া বিশাল শেয়ারের খবর আসে। অর্থাৎ জন্মে নাতিসাহেব এক ঘন্টাও কাজ না করে অন্যের কাজের ফলটা টপাস করে পেয়ে গেল। 
     
    ভারতের অনেক অধিবাসী স্বভাবে টক্সিক। আগে যেটা ইস্কুল পাঠশালায় ছিল বেধড়ক মার সেটাই স্থান পাত্র বদলে কর্পোরেটে গেছে। ওই যে 'বড়ে কো মানতে হ্যায়' ওইতেই গন্ডগোল। বয়সে বড় যত না ক্ষমতায় বড় মানেই তার সামনে নি:শর্তে মাথা ঝুকইয়ে থাকে অধিকাংশ লোক। 
  • পাপাঙ্গুল | 49.36.***.*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:৪১537913
  • হ্যাঁ এই টক্সিক ব্যাপারটা তো আছেই। এশিয়ার বাইরেও আছে হয়তো ,  শুধু লসুটের ভয়ে করে না। আইন না ​​​​​​​থাকলেই ​​​​​​​ভসভসিয়ে ​​​​​​​বেরিয়ে ​​​​​​​আসত। 
     
    আমি ​​​​​​​অন্য ​​​​​​​কথা ​​​​​​​ভাবছিলাম , ঘন্টা ​​​​​​​হিসেবে ​​​​​​​টাকা ​​​​​​​ইত্যাদি ​​​​​​​হলে ​​​​​​​কেউ ​​​​​​​সত্তর ​​​​​​​ঘন্টাও কাজ করতে ​​​​​​​পারে ,  শুধু ​​​​​​​কন্ট্র্যাক্টে ​​​​​​​সই ​​​​​​​করতে ​​​​​​​হবে ​​​​​​​যে ​​​​​​​স্বেচ্ছায় ​​​​​​​করছি ,  কিছু ​​​​​​​হলে ​​​​​​​কোম্পানি ​​​​​​​দায়ী ​​​​​​​নয় ​​​​​​​ইত্যাদি। ​​​​​​​আর ​​​​​​​কেউ ​​​​​​​চাইলে ​​​​​​​কুড়ি ​​​​​​​ঘন্টা ​​​​​​​কাজ করবে। 
     
    চাপ দেওয়া ব্যাপারটা মনে হয় সবথেকে বেশি ক্ষতিকর। চাকরিতে যোগ দেবার সময় এমনিই স্পষ্ট করে বলে দেওয়া উচিত কোনো চাপ নিতে হবে না ,  কোনো কারণে কাজ না হলে তিনমাস বাদে টাটা। রিলিজ লেটারে খারাপ কিছু লেখা হবেনা। এটা যারা প্রথম কাজে ঢোকে তাদের বোঝানোই হয় না। উল্টে ম্যাক ইত্যাদি 'কুল' জিনিসের গাজর ঝোলানো হয়। 
     
    কয়েকদিন আগে অস্ট্রেলিয়া একটা আইন পাশ করেছে। কাউকে 'বিশেষ পরিস্থিতি' ছাড়া কাজের সময়ের বাইরে ফোন /ইমেল করা যাবেনা।  
     
  • কৌশিক সাহা | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৮538013
  • মাথা ফাটবে জেনেও ন্যাড়া মাথা মুড়োয়, বেলতলায় যায়, মাথা ফাটে কিন্ত পড়া বেলটি কুড়িয়ে আনার কথা ঠিক মনে রাখে।  পরদিন আবার যায় এবং দিনের পর দিন পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। 
    মানুষের সীমাহীন লোভ আর উচ্চাকাঙ্খা পুঁজিবাদের ভিত্তিপ্রস্তর। পুঁজিবাদে resource ছাড়া অন্য কিছুর জায়গা নেই। অতএব Annaর resource হওয়া নিয়ে আপত্তি যুক্তিসঙ্গত নয়। এবং Anna যদি এক বছর চাকরি করার পর BMWর বেল কুড়োবার আকাঙ্খা রেখে থাকে তাহলে মাথা ফেটে মরার সম্ভাবনা থেকেই যায়। Literally and figuratively. 
    একটি ২৫-২৬ বছরের যুবক/যুবতীকে শুধু সুন্দর মুখ ও মধুর ব্যক্তিত্বের জন্য মাসে ৫-৬ লক্ষ মাইনে দেয় না। পুঁজিবাদী কড়ি ফেলে থাকলে তেল মাখবেই। কারো না পোষালে বেল কুড়োতে আসার দরকার নেই।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন