আর-সিপিআই বা রেভোল্যুশনারি কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইণ্ডিয়ার একটি ছোট তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস আছে। দমদম-বসিরহাট অভ্যুত্থান! এই দলটি স্থাপনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের দাদা দ্বিজেন ঠাকুরের নাতি সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। গত শতাব্দীর তিরিশের দশকে।
যতদূর শুনেছি উনি জার্মানি হয়ে রাশিয়া গিয়ে লেনিনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ফিরে এসে কমিউনিস্ট ইস্তাহারের বাংলা অনুবাদ করেছিলেন। আর এনেছিলেন দ্য ইন্টারন্যাশনাল গানের লিরিক। যার প্রথম বাংলা অনুবাদ করে নিজস্ব সুর দিয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
দুটো লেখাই নজরুল 'লাঙল' পত্রিকায় ছেপেছিলেন।
এব্যাপারের সঠিক বলতে পারবেন শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়, যিনি সীমানা নাম দিয়ে নজরুলকে কেন্দ্র করে গুরুর পাতায় গবেষণা ভিত্তিক উপন্যাস লিখেছেন।
সে যা হোক, স্তালিনের লাইনের বিরুদ্ধে ট্রটস্কি সমর্থন করায় ভারতের অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে মতভেদ হওয়ায় সৌমেন ঠাকুর কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বেরিয়ে আর সি পি আই গঠন করেন।
কিন্তু ১৯৪৮ নাগাদ তাঁর সহকর্মী পান্নালাল দাশগুপ্তের সঙ্গে মতভেদ হয়।
দল দু'ভাগ হলে পান্নালাল দাশগুপ্তের সংগঠন প্রভাবশালী হয়।
পান্নালালের মতে তখন ভারত সশস্ত্র গণ অভুত্থানের জন্য তৈরি, সোমেন ঠাকুরের মতে এটা প্রি-ম্যাচিওর।
পান্নালালের নেতৃত্বে ওনার সঙ্গঠন অস্ত্র জোগাড় করে দমদম এবং বসিরহাটের পুলিশ থানা আক্রমণ করে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র দখল করে । বেশ কয়েকজন পুলিশ এনকাউন্টারে মারা যায়। নিজের দলেরও কয়েকজন মারা যায়।
জেসপ এবং গান শেল ফ্যাক্টরিও আক্রান্ত হয়। জেসপের ইংরেজ ম্যানেজারকে কারখানার জ্বলন্ত বয়লারে ফেলে দেয়া হয়!
কিন্তু কয়েকদিন পর আরও বড় ফোর্স এলে পান্নালাল সমেত দলের জনা তিরিশেক বন্দী হন। ওনার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
ওদিকে আসামেও 'আর সি পি আই' অনুরূপ আন্দোলন করে, তবে ওখানে কৃষকদের নিয়ে। ওদের শ্লোগান ছিল কমিউনিস্ট পার্টির মতই--লাঙল যার, জমি তার!
পান্নালাল ষাটের দশকের গোড়ায় জেল থেকে মুক্তি পান। কিন্তু তখন তিনি আর সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বাসী নন। বরং গান্ধী এবং নেহেরুর ভক্ত। দলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করলেন।
তারপর উনি ওদের পুরনো ঘাঁটি বীরভূমে গিয়ে কিছু গ্রামে কৃষকদের জমির অধিকার এবং ফসলের অধিকার নিয়ে শান্তিপূর্ণ অহিংসক আন্দোলন, কৃষকদের সমবায় ইত্যাদি শুরু করে এক অন্য পথের পথিক হলেন।
উল্লেখযোগ্য, বিধানসভার প্রাক্তন স্পীকার আব্দুল হালিমের ছেলে (সিপিএম) বিপ্লব হালিমও সত্তরের দশকের নকসাল সমর্থনের লাইন ছেড়ে পান্নালাল দাশিগুপ্তের সঙ্গে বীরভূমে যোগ দিয়ে আওন্তর্জাতিক মানের কাজ করলেন।
আর সিপি আইয়ের সুধীন কুমার বামফ্রন্টের আহ্বায়ক হলেন।
আসামে একটা এবং বঙ্গে দুটো বিধায়ক হল। দলটি ক্রমশঃ স্বতন্ত্র অস্তিত্ব হারিয়ে সিপিএমের লেজুড় হয়ে রইল। আজ প্রায় অস্তিত্বহীন।