এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নিঃসঙ্গ পৃথিবী.......

    Rajat Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ জুলাই ২০২৪ | ১৬৫ বার পঠিত
  • বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি। শ্বশুর শ্বাশুড়ি ননদ কিংবা দেওর মিলিয়ে ব্যস্ত পরিবারের অংশ। অথবা পরমাণু পরিবার। স্বামী স্ত্রী আর একটি সন্তান। স্বামী অফিসে। সন্তান স্কুলে। তাই সারাটা দিন একাকিনী। বাবার বাড়ি, ভাইবোনের সঙ্গ। স্কুল কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। সবই অতীতের সুখস্বপ্ন। 
     
    অনেক পরিশ্রম করার পর চাকরি পেয়েছিলেন। সকাল আটটায় কোনক্রমে নাকে মুখে গুঁজে বেরিয়ে পড়েন। বাড়ি ফেরার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। অক্লান্ত পরিশ্রমে দেহমন ভারী। বাড়ি ফিরে ফের কোনরকমে ডিনার সেরেই ঘুমের দেশে। রোববার সংসারের কাজ সারতে সারতেই রাত চলে আসে। পাড়ার কিংবা স্কুলের বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ আড্ডা হয় স্বপ্নে।
    কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝেই সকলের সাথে দেখা হয় সামাজিক মাধ্যমে। টুকটাক কথাও হয় কমেন্টের দ্বারা। সুখ দুঃখের কথা... ইনবক্সে। অনেকেই নিজেদের লুকিয়ে থাকা প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটায় এই সামাজিক মাধ্যমে। কেউ গান শোনায়। কেউ কবিতা লেখে তো কেউ গপ্প। কেউ আবার নেচে উঠে বোঝাতে চায় আমি এখনও ফুরিয়ে যাইনি।
     
    গত দশ বারো বছরে পৃথিবী বড়ই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে। সকলেরই পার্থিব জগৎ আজ ভীষণ ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে যাচ্ছে। আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব থেকেও নেই। কিংবা বহুদূরে। স্মার্টফোন আসার আগের পৃথিবী আর আজকের পৃথিবীতে কয়েক যোজন তফাৎ। সেদিন আত্মীয় স্বজনরা হঠাৎ করেই যেকোনো দিন এসে উপস্থিত হতেন। না কোনো জড়তা ছিল। না থাকত কোনো ইতস্তত বোধ। কেউ সকালে এসে রাতের আগে বাড়ি ফিরে যেতেন। কেউ কেউ আবার দু তিনদিন থেকেও যেতেন। সবচেয়ে বড় কথা, তখন কেউ কারোর বাড়িতে বেড়াতে গেলে তাঁকে এই বাক্যবন্ধগুলো শুনতেই হত, "কতদিন আসোনি?" কিংবা "আজকের দিনটা থেকে কাল খাওয়াদাওয়া করে বিকেলে বেরিয়ে যেও" ইত্যাদি। আর বন্ধুদের কথা বলতে গেলে শেষ হবে না। এমনকি সেই সময়ে বন্ধুদের দূরবর্তী আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে যাওয়াও বাদ যেত না। বিশেষ করে গ্রামের বাড়ি। অথবা ভিন রাজ্যে নিকটাত্মীয়দের বাড়ি। সেসব ছিল নিতান্তই সহজ সরল জল ভাতের মতোই বিষয়। 
     
    আত্মীয়স্বজনদের আনাগোনা আটকে গেল কাজে কর্মে নিমন্ত্রণ রক্ষার তাগিদে। যেমন বিয়ে, শ্রাদ্ধ, অন্নপ্রাশন ইত্যাদিতে নিমন্ত্রণ হলে তবেই একে অপরের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। তাও পরিবার শুদ্ধ নিমন্ত্রণ থাকলে এক থেকে দুজন উপস্থিত হয়। আগে কোনো আত্মীয় পরিজনের বিয়ে হলে, নিকটাত্মীয়রা সপ্তাহ খানেক কিংবা অন্ততপক্ষে তিন চারদিন আগে এসে আনন্দে শামিল হতেন। এখন দিনের দিন, পারলে অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র খাওয়ার সময়টুকুতে যাওয়াকেই অনেকে দস্তুর ভেবে নিয়েছেন। 
    দিন বদলাতে শুরু করল। ধীরে ধীরে মানুষ মানুষের খোঁজখবর রাখা বন্ধ করে দিল। বিশেষত নতুন প্রজন্ম। তাদের কাছে আত্মীয় স্বজনের কোনো গুরুত্বই নেই। জেন ওয়াইয়ের কাছে বন্ধুত্বের সংজ্ঞাও পাল্টে গেছে। সে প্রসঙ্গ যদিও ভিন্ন। অন্য কোনো পরিসরে বলার জন্য তোলা রইল। যারা সত্তর থেকে নব্বইয়ের দশকের মাঝখানে জন্মেছি, তাদের কাছে সম্পর্কের স্বাদ হয়ে গেল নোনতা। না ঘর কা। না ঘাট কা। আমরা না আগেকার মত ভাবনা চিন্তায় চলতে পারছি। না এখনকার নিয়মকে আপন করতে পারছি। সর্ব সময়ই তাই বোধহয় ইতিহাসকে মনের দেওয়ালে এঁকে জাবর কাটছি। 
     
    একদা বিজ্ঞানের আশীর্বাদ স্বরূপ আমাদের কাছে এসে উপস্থিত হয়েছিল সামাজিক মাধ্যম। এক ভার্চুয়াল জগত। বায়বীয় দুনিয়া। অদ্ভুত রহস্যময় ক্রমাগত বদলাতে চাওয়া এক অবাক কান্ডের বিস্ফোরণ। যেখানে পুরোনো হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরা যেমন আছে। তেমনি অগুনতি নতুন নতুন বন্ধুদের সাথে আলাপিত হওয়ার সুযোগ। সকলেই সকলের কাছে নিজেদের জমিয়ে রাখা আকাঙ্ক্ষা মেলে ধরছে। 
     
    হ্যাঁ, জীবনের পথে আমাদের মত আপাত নিঃসঙ্গ অভিযাত্রীদের প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার ইন্ধন যুগিয়ে চলেছে এই সামাজিক মাধ্যম। যাদের কাছে জীবন চালানোর রসদ নিতান্তই কম। বলা যায় তলানিতে। ইচ্ছে করলেই যাঁরা কাশ্মীর কি কন্যাকুমারিকা বেরিয়ে পড়তে পারেন না। নিদেন পক্ষে দীপুদাও(দীঘা, পুরী ও দার্জিলিং)যাঁদের কাছে বিলাসিতার নামান্তর। যাঁদের শিল্প কর্ম তেমন কোথাও মর্যাদা পায়নি। খুব ভাল গান গাওয়া স্বত্তেও কেউ অনুষ্ঠানে ডাকেনি। খুব ভাল লেখা স্বত্ত্বেও কোনো বড় পত্রিকায় কদাপি সুযোগ পাননি। খুব সুন্দর আঁকার হাত। কিন্তু তাঁর আঁকা ছবি কোনো আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শিত হওয়ার কথা কেউ ভাবেনি। ছোটবেলায় আবৃত্তি শিখেছিলেন। বিয়ের পর সেই প্রতিভা ধুয়ে মুছে সাফ হওয়ার পথে। সেই হারিয়ে যাওয়া আবৃত্তিকার ফের নিজ প্রতিভাকে বিচ্ছুরণ করার সুযোগ পেয়েছেন, এই সামাজিক মাধ্যমে।
     
    সামাজিক মাধ্যম। সব প্রতিভার বিকশিত হওয়ার মঞ্চ। বিজ্ঞাপিত করার মঞ্চ। এখানে নিজের প্রতিভা বিকশিত করতে কারোর অনুমতি লাগেনা। কাউকে ঘুষ দিতে হয় না। কাউকে তৈল মর্দন করতে হয়না। নাহ্! কোনো চার্জ লাগেনা। যদি কেউ কিছু করতে না জানে, তাহলে? কুছ পরোয়া নেহি। তাঁরা পাঠক বা দর্শক হয়ে প্রতিভাবানদের বিচারক হন। লাইক কমেন্টের মাধ্যমে রায় দেন। এক কথায়, আজ সকল নিঃসঙ্গ ও বঞ্চিতদের একমাত্র মঞ্চ সামাজিক মাধ্যম।
    ______________
    © রজত দাস

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন