এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জ্যাকসন

    abhisek bose লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ জুন ২০২৪ | ১৭০ বার পঠিত
  • আমাদের জুতো ছিল জ্যাকসনের আর ঘুষি মারতাম বাইসনে। 

    মানে, আমরা মানে ঠিক আমরা নই, আমরা যাদের পোস্টারে দেখতাম। বাম হাত দিয়ে টুপিটা এমন করে ধরতে যাচ্ছে , যেন সামনে ঝোঁকানো মাথা থেকে এক্ষুণি খুলে পড়ে যাবে। অথচ পায়ের আঙুলের ভরে এমন অনায়াসে দাঁড়িয়ে আছে, দেখে মনে হবে, একটা ফ্ল্যামিঙ্গো জলে মাছ ধরতে নেমেছে। ডান হাতটা পেছনে রেখে তর্জনীটা এমন ভাবে রাখা, যে মনে হচ্ছে, 'আমার পেছনে এসো।' ও'রম লম্বা কোঁকারানো চুল আমাদের আশেপাশের কারো মাথায় দেখিনি। মাইকেল জ্যাকসন। বিদেশিদের নাম এ'রমই হয়। মাইকেল, পিটার, জনসন, জ্যাকসন। কিন্তু একে ঠিক বিদেশিদের মতো দেখতে নয়। বিদেশ মানেই আমেরিকা । আর ওখানে সবাই ফর্সা।

    ওর মতো আর একজন ছিল। ওর মতো গায়ের রঙের বিদেশি। তবে মাথায় ছোট্ট করে ছাঁটা চুল। মুখটা ইস্পাতের মতো কঠিন। ঠোঁট দুটো এমনভাবে চেপে রেখেছে, যেন মুখ দিয়ে কেউ জোর করে কিছু খাইয়ে দিতে না পারে। ভ্রু আর চোখদুটো ওপরের দিকে তোলা। আদুল গায়ে আইকনিক কালো শর্টস আর লাল বক্সিং গ্লাভস। একটা হাত চিবুকের নিচে ধরে রাখা। পাথরের মতো চেহারাটায় এমন একটা ভঙ্গি, মনে হচ্ছে বলছে, 'রিং-এ নেমেছি ঠিকই কিন্তু না নামলেই উলটো দিকের লোকটার ভালো হতো।' মাইকেল টাইসন। মাইক টাইসন। ঘুষি মেরে নাকি আস্ত বাইসনের পাঁজর ভেঙে দিতে পারে। বাড়িতে পোষা বাঘ রেখেছে। এ'রম ছেলেবেলায় আমরা বিকেলে টাইসন আর সন্ধ্যায় জ্যাকসন।

    আরেকজন ছিল। এদের সাথে দূর দুরান্তের কোনো সম্পর্ক ছিলনা। আমাদের পাড়ায় ওর মামা বাড়ি। ঘুরতে আসতো। গদাই মামা টাইসন বলে ডাকতো। ওকে সামনে ডেকে গম্ভীর গলায় বলত —টাইসনকে দেখেছিস? মাটিতে ঘুষি মেরে পি‍ঁপড়ে মারে। 
    ওর আসল নাম কোনোদিন জানা হয়নি।

    পোস্টার খুব বেশি ছিলনা। তাই মুখগুলো মনে গেঁথে থাকতো। ভালো বল করলে কপিল, ক্যাচ ধরলে জন্টি, ফুটবল খেললে মারাদোনা, নাচলে মিঠুন/শ্রীদেবী  আর গাইতে পারলে কিশোর /লতা।আর কেউ কিছু না করে শুধু ধেড়ে লম্বা হলেই বচ্চন। সব্বাই আলাদা। কারো সাথে কারো কোনো মিল নেই। একটাই মিল, এরা সবাই আমাদের স্বপ্নের হিরো ছিল, যাদের ছুঁয়ে দেখা যায়না।

    সময় বদলাতে সময় লাগেনা। হঠাৎ করে দুনিয়াটা 
    কেমন একরকম হয়ে গেল। সব্বাই কেমন একই দেখতে। একই রকম চুলের ছাঁট। তপোবনের ঋষিদের মতো একই রকম দাড়ি। একই রকম চিন্তাভাবনা। মনে হয় যেন বেশিরভাগ মানুষ একটাই ফ্যাক্টরি থেকে বেরিয়ে এসেছে। কথাবার্তা, চলাফেরা, আদব কায়দা অবিকল এক। কাউকে আর আলাদা করে চেনা যায়না। আমাদের পাড়ার টাইসনের যেমন আসল নামটা জানা হয়নি। এখনকার হিরোদের নামটাই মনে রাখার কথা মাথায় আসেনি । এখন আর কোনো হিরো খুঁজে পাওয়া যায়না। ট্রেন্ডিং কিম্বা ভাইরাল কন্টেন্ট পাওয়া যায়। ভাইরাল জ্বরের মতোই সাত দিনে গায়েব হয়ে যায়। 

                                 ___________

    এইটুকু না লিখলেই নয়। 

    পাঁজর ভেঙে দেওয়া মানুষটার চোয়ালটা ঝুলে গেছে। ছলছল চোখে গোটা দুনিয়ার সামনে বলছে, "প্রতিবার রিং-এ নামার আগে আমি কাঁদতাম।" উলটো দিক থেকে বিস্মিত সঞ্চালক জিজ্ঞেস করছে — মাইক টাইসন, যে রিং-এ নামলে বিপক্ষকে পিষে খুন করে দেওয়ার মতো মানসিকতা নিয়ে নামতো, সে কিনা ফাইটের আগে কাঁদতো! কী জন্য?

    ফ্ল্যামিঙ্গোর মতো পায়ের কায়দা ছিল যে লোকটার, সে একের পর এক ঘটনা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে, ঘুমের ওষুধ আর অ্যানাস্থেটিক ওষুধ খেয়ে চির ঘুমের দেশে চলে যাচ্ছে। স্বপ্নের মতো অধরা মানুষগুলো ধূসর ধুলো মেখে এক এক করে হারিয়ে যাচ্ছে। আর তার সাথে হারিয়ে যাচ্ছে সব্বার থেকে আলাদা হিরোরা। 

    — অভিষেক বোস
     
    ( আজকের ফেসবুক পোস্ট ) 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন