সবচেয়ে জরুরি বিষয়গুলোয় সর্বাধিক নীরবতা দেখা যায় আমাদের দেশে। এই বিলে ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক (ধরে নেয়া যায় আধার) বাধ্যতামূলক করার কথা এসেছে। কিছুদিন আগেই ভারতের বসবাস সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে আধার বাতিলের কথা শুনেছি। এবারে এই সম্প্রচার আইনের খসড়া বিল হলে কোনো ব্যক্তির বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে একই ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। আমাদের আর শুধু একটা একটা বিল নিয়ে আপত্তি করলে হবে না, গোটা ব্যবস্থাটার বিরুদ্ধে বলতে হবে, বিষবৃক্ষের শিকড় নষ্ট করতে আধার বাতিল করার কথা বলতে হবে।
সংশোধন: "... ভিত্তিতে আধার নিষ্ক্রিয় করার কথা শুনেছি।" "... আধার প্রকল্পটি বাতিল করার কথা বলতে হবে।"
dc | 2401:4900:7b8b:cf29:d9b2:7284:4ec:50a1 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৭
আধার বাতিল করা বেশ মুশকিলের ব্যপার। সাবসিডি ইত্যাদি তো আছেই, তার থেকেও বড়ো কথা পুরো ফিনটেক ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়িয়ে আছে আধার এর উপর। আধার বাতিল হলে প্রচুর সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাবে, বা সার্ভিস ডেলিভারিতে অনেক বেশী দেরি হবে, বা পুরনো দিনের মতো সার্ভিস প্রোভাইডারের দোকানে গিয়ে লাইন দিতে হবে, সাথে কাগজপত্র নিয়ে যেতে হবে। সে অনেক ঝামেলা।
ডিসি, ছোট উত্তর হল – স্বাধীনতার থেকে বড় কিছু হয় না। আর বাকি সব তার পরে। তুমি স্লেভ হয়ে যাও নাহলে জীবনে প্রচুর কষ্ট পাবে এইরকম হয়ে যায় আধার-এর পক্ষের যুক্তিগুলো। প্রত্যেক বাজে কাজের পেছনে একটা করে কারণ খাড়া করা হয়। আধার-এর পেছনে প্রথমে সন্ত্রাসবাদ ও তারপর আরও মাস স্কেলে বাধ্য করার জন্যে এগুলোকে খাড়া করা হয়েছে। ওই সাবসিডি ইত্যাদি "জঘন্য "ফ্রি-বি'স"" কতদিন থাকে দেখুন। আধার হলো একটি foundation project, তা যে ব্যবস্থার ফাউন্ডেশন সেই দাস ব্যবস্থাটি চাই না।
শুধু সরকার কেন আজকাল প্রায় সব বড় দোকানে আর প্রচুর বাড়িতেও সিসিটিভি লাগানো থাকে। এমনকি আমাদের এই মফস্বলেও। কোন্নগর কানাইপুরের ৮ বছরের বাচ্চা খুনের ক্ষেত্রে দুটো দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশকে সাহায্য করেছে খিদিরপুরের মেয়েটিকে ধরতে। প্রায় প্রত্যেকের হাতে ক্যামেরা ফোন আর লোকে অকাতরে ছবি তুলে যায় অনুমতির তোয়াক্কা না করেই। এছাড়া বড় শহরগুলোতে রাস্তায় রাস্তায় সিগনালে এবং ক্রুশিয়াল পয়েন্টে সিসিটিভি লাগানো। আমার তো ধারণা আমাদের প্রায় সবারই মুখের কোটি কোটি ছবি এদিক ওদিক ছড়িয়ে রয়েছে।
বায়োমেট্রিক ডেটা সরকারের তরফে কালেক্ট করায় তত সমস্যা দেখি না যতটা আধার ইমপ্লিমেন্টেশান আর ডেটা ম্যানেজপমেন্টে দেখি। এ পুরো বাঁদরের হাতে খন্তা কেস। কোন কোন ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক ভ্যালিডেশান দরকার, ডেটা সিকিউরিটি কীভাবে রাখা হচ্ছে এইগুলো জরুরী বিষয়। আর এইখানে এথিকাল দিকটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
dc | 2401:4900:7b8b:cf29:d9b2:7284:4ec:50a1 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:০৩
আরেকটা নতুন ট্রেন্ড হলো, মুদির দোকান থেকে মাংসের দোকান, জামাকাপড়ের দোকান থেকে বেকারি, প্রায় সর্বত্র আজকাল ফোন নম্বর জানতে চায়। অনেক দোকানে ইন্সেনটিভ থাকে, এক হাজার না কতো টাকার যেন পয়েন্ট যোগাড় হলে একশো টাকা ফ্রি। আমার পুরনো একটা নম্বর আছে যেটা বহুকাল আগে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে, সেটা আমি আর বৌ সব জায়গায় দিয়ে বেড়াই। তাতে করে সবজি আর মুদির দোকানে মাঝে মাঝে একশো টাকার ছাড় পাই। দুঃখের ব্যপার, বেশীর ভাগ লোক কোন ভাবনাচিন্তা না করে তাদের আসল ফোন নম্বর দিয়ে দেয়।
মাঝে মাঝে মজাও হয়। কিছুদিন আগে ডেকাথলনে গেছি, বিলের কাউন্টারে বলে ফোন নং আর নাম বলুন। আমি বললাম ওগুলো ছাড়াই বিল করে দিন। তখন বলছে ওগুলো মাস্ট, না হলে বিল হবে না। তো আমি বললাম আচ্ছা ফোন নং লিখুন ৯৮৭৬৫৪৩২১০। একটি মেয়ে সিরিয়াস মুখে পুরোটা এন্ট্রি করে বললো, (অমুক) নাম? বুঝলাম অন্যরাও তাহলে এই পদ্ধতি নিয়েছে! আমি ঘাড় নেড়ে দিলাম, মেয়েটিও বিল করে দিল।
ডিসি, আপনি ছোট করে যা লিখলেন তাতে পরিষ্কার যে আধার-এর আসল ব্যবহার নিয়ে আপনার তর্কের জায়গা নেই। এদিকে আমি প্রায় একযুগ (২০১২) থেকে এর বিরুদ্ধে লেগে আছি, কিন্তু আমার ধারণা হয়েছিল কেউ সমস্যাটা ঠিকঠাক বোঝেই না। প্রথমে টুকরো টুকরো লিখে লাভ না হওয়ায় অনেক দেরি করে হলেও (এর মধ্যে আমার নিজের ধারণা আরও পরিষ্কার হয়েছে আর সরকারও তার পরিকল্পনা পরিষ্কার করে ফেলেছে) গত বেশ কয়েক মাস ধরে প্রায় "অ আ ক খ" করে বোঝানোর মতন করে আমি একটি লেখা লিখে চলেছি, সেটি গুরুতে দেব বলেই এখানে আসা, কিন্তু লেখকের গুণ আমার নেই, শুধু ছোট হয় আবার বড় হয়, কাটা হয় ছাঁটা হয় আবার জোড়া হয়, কিন্তু শেষ আর হয় না। এখন দেখছি বহু লোকেই অনেকটাই বুঝচ্ছে, এমনকি ভিডিও করেটরে ফেলছে, কী মুশকিল, ক্রেডিট পাওয়া তো দূরস্থান জলেই গেলো বোধহয় পরিশ্রমটা! কোনোদিন শেষ করতে পেরে লেখাটি দিলে শুনতে হবে এতো সবাই জানে বলার কি আছে! :-)
যাই হোক, বহুদেশেই আছে এই যুক্তিগুলো কেন দেন? থাকুক না, বহুদেশেই এর বিরুদ্ধে বহুলোকেই দাঁড়িয়েছে বা আপত্তিও করছে, সেই দিকটাও তো আছে। কোনটাকে স্রোত ধরবো? যদিও আমার মনে হয় 'আধার' এই ধরণের প্রজেক্টে প্রায় পথিকৃৎ, এতো বাজে আর এতো শক্তিশালী কিছু ওই চীন বাদে আর কোথাও এর আগে হয়তো নেই। ইউকে ২০০৭এ এরকম কিছু একটা বিল এনে শুরু করে ২০০৯ (বোধহয়) বন্ধ করে দেয় (এখন হয়তো আবার চেষ্টা করছে)। আমেরিকার 'সোশ্যাল সিকিউরিটি' টিও ভালো কিছু নয়, তবে প্রকারে আধার এর মতো ঠিক নয় হয়তো। হলেও ওই প্রথম বিশ্বের মানুষের ওপর প্রভাব আর তৃতীয় বিশ্বের 'শোষণের জন্যে সমর্পিত' মানুষের ওপর প্রভাব এক নয়। 'সবাই মানুষ' ঠিকই, 'কিন্তু নয়'।
এবার আটকানোর কী ভাবে যাবে – যেমন ভাবে যেকোনো কিছু আটকানো যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে আটকানোর কোন চেষ্টাটা করেছি বলুন তো? এই ক্ষেত্রে এই আটকানোর প্রচেষ্টার শুরুটা করার দায়িত্ব তো আমাদের, অর্থাৎ প্রযুক্তির সঙ্গে জুড়ে থাকা লোকেদেরই ছিল (আপনিও তাই তো বোধহয়)। অথচ প্রথম নির্দেশেই আমরা ছুটে গিয়ে 'কমপ্লাই' করেছি, অন্যরা অনেক পরে, আমরা নেতৃত্ব দিয়েছি ব্যবস্থাটির প্রচলনা বাড়াতে, আটকানোর পরিবর্তে। অথচ আইন কিন্তু পক্ষেই ছিল বহুদিন, এমনকি আজও দু একটি ক্ষেত্র বাদে আধার কোথাও বাধ্যতামূলক নয়। হয়তো ওই গল্পটার মতো ভেবেছি, গল্পটা কিছুটা এইরকম – "দশটা লোক জঙ্গলে যাবে, কিন্তু জঙ্গলে বাঘ আছে। একজনের বাড়ির লোক বললো, যে বাঘে তাড়া করলে কি করবে? লোকটি বললো, কেন দৌড়ে পালাবো। তখন বাড়ির লোক বললো, কিন্তু বাঘ তো অনেক জোরে দৌড়োয়? লোকটি বললো, আরে আমাকে তো আর বাঘের থেকে জোরে দৌড়োতে হচ্ছে না, আমাকে শুধু সবার মধ্যে অন্তত একজনের থেকে জোরে দৌড়োতে হবে।"
আমাদের কাছে এখনও সময় আছে কথা শুরু করার, যতদিন মুক্ত স্বাধীন ভাবে বলা যায়, খুব বেশিদিনও আর সময় আছে বলে মনে হচ্ছে না। রোদ থাকতে ধান শুকিয়ে ফেলা দরকার, এরপর আর কিছু করার থাকবে না। প্রযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো থেকেই শুরু করতে হবে, যোগযোগ তৈরী করে প্রথমে আলোচনা করে ব্যাপারটা সহজ করে লিখে ফেলতে হবে। তারপরে আইন সংবাদ মাধ্যম ও নাগরিক সমাজের লোকেদের একসঙ্গে করতে হবে, সমস্যাটি সহজ ভাবে তুলে ধরে। তারপর নিরন্তর প্রচার প্রতিবাদ তৈরী করতে হবে, সেগুলো কিভাবে করা যায় সেটা বলার জন্য আরো উপযুক্ত লোক নিশ্চয় আছেন। তবে দক্ষ লোকেদের সাহায্য নিয়ে ভিডিও তৈরী করলে জনগণের মধ্যে চেতনা ছড়াতে সুবিধে হবে। আপনি চাইলে, এবং বা অন্য আরও কেউ চাইলে শুরু হতে পারে। কিছু না করলে কি করে কিছু হবে। আমরা অপেক্ষা কোথাও স্ফুলিঙ্গ জ্বলে ওঠার, আসলে মনে করতে হবে আমিই সেই স্ফুলিঙ্গ আমাকেই শুরু করতে হবে। এইভাবে ভাবলে তবেই হবে, নাহলে "আর কেউ তো কিছু করছে না" এর যুক্তির চক্রে সব বাধা পড়ে যায়।
আমার আর ডিসির মধ্যের এই কথোপকথন, অর্থাৎ আধার ও তথ্য জুড়ে দিয়ে রাষ্ট্রের-কর্পোরেটের নলেজ মাইনিং এনালাইসিস প্যাটার্ন তৈরী এইগুলো ঠিক না বোঝা গেলে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন, যদিও খারাপ-ভালো ভারসাম্য রেখে তৈরী, চীনের উদাহরণে – ডয়েচে ভ্যালের তথ্যচিত্র "চায়না'স ব্রেন"।
এসবির মূল লেখার নির্দিষ্ট বিষয় থেকে থেকে সরে যাচ্ছি, দুঃখিত।
দ, সিসিটিভি'র আমি খুব বিরোধী, যদিও বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া যেমন মিউজিয়ামে। ডিসি, ফোন নাম্বার নেওয়া অনেক পুরোনো জিনিস, এখন ঐসব বস্তাপচা হয়ে গেছে, ছোটোখাটো স্ক্যাম বা মার্কেটিংয়ে কাজে লাগে তার বেশি নয়। হ্যাঁ আমিও ফোন নাম্বার দিই না, বলে স্যার তাহলে ফেরত দিতে হলে অসুবিধে হবে, আমি বলি নিজেরটা দিয়ে দাও, তুমি তো থাকবে আর আমার কাছে থাকবে বিল। হেসে রাজি হয়ে যায়, ফোন ছাড়াই করে দেয় বেশির ভাগ জায়গায়। যেখানে তাও করে না, আমি বেরিয়ে আসি সাধারণত।
একটা জায়গায় আপত্তি করছি। আধার চালু হয়েছিল ২০০৩ অর্থাৎ বিজেপি, বাজপেয়ী আমল (নাম ছিল UID বা Universal ID)। এরপর কংগ্রেস সেটিকে এগিয়ে নিয়ে যায় (নন্দন নিলেকানি এর সহযোগে ), নাম হয় আধার। এই ব্যাপারে প্রত্যেকে ধাপে ধাপে একই লক্ষ্যে এগিয়েছে, কংগ্রেস ভালো উদ্দেশ্যে করেছিল আর বিজেপি সেটাকে সার্ভেইল্যান্স টুল বানিয়েছে বললে ঠিক বলা হবে না।
dc, "সার্ভেল্যান্স ক্যাপিটালিজম কথাটা কয়েন করেছিলেন প্রফ শোসানা জুবফ। এ নিয়ে ওনার একটা বই আছে, The Age of Surveillance Capitalism: The Fight for a Human Future at the New Frontier of Power (বইটা পড়ে দেখতে পারেন, আর কিছু না হলেও ওনার অসাধারন গদ্যের জন্য)। কথাটা উনি ব্যবহার করেছিলেন কিভাবে কর্পোরেটরা আমাদের নিজেদের ডেটা, বিহেভিয়ার, চিন্তাভাবনা কে কমোডিফাই করে আর সেটা কেনাবেচা করে বোঝানোর জন্য। এই থিওরির একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, কর্পোরেটরা ডেটা কালেক্ট করতো শুধুমাত্র ট্রেন্ড বোঝার জন্য না, বরং মানুষের বিহেভিয়র আর থট প্রসেস প্রেডিক্ট করার জন্য।"
জানি আপনাদের কোন কিছুতেই চৈতন্যোদয় হবে না, যদিও জানেন যে কিভাবে ফেসবুক, গুগল, একস, ইত্যাদিরা আপনাদের ডাটা নিয়ে নিজেদের লাভের হিসেব করছে, কিভাবে আপনাদের attention কে, আপনাদের ব্যক্তিসত্তাকে নির্লজ্জের মতন ব্যবহার করছে, আপনাদের শুষছে, এসব জেনেশুনেও আপনারা করপোরেট মিডিয়ার কাছে নিজেদের ডাটা সমর্পন করবেন, আর নানান রকম আজগুবি ব্যক্তিগত "সুবিধার" দোহাই দিয়ে করপোরেট সোস্যাল মিডিয়া চালিয়ে যাবেন, ফেসবুক একাউন্ট ডিলিট করতে পারবেন না, X এ দিনের পর দিন পোস্ট করে যাবেন, চিটেগুড়ে আটকানো মাছির মতন।
জানি |
তাহলেও কিছু কথা লিখে যেতেই হয়, বলে যেতেই হয় ফাটা রেকর্ডের মতন, যদি ভুল করেও কারো এতটুকু মানবিক বোধোদয় হয়।
আমরা আলোচনায় "আধার তথ্য" ইত্যাদি জায়গায় এগিয়ে গেছি। তবে কিছু গোড়ার কথা আরও এগোনোর আগে বলে নেওয়া ভালো, যাতে বোঝা যায় "আধার তথ্য" আসলে কি, কিভাবে আধার সাধারণ ডিজিটাল তথ্য যুক্ত করে এই "আধার তথ্যভাণ্ডার" নির্মাণ করে এবং কেন আধার (অন্য পরিচয়ের থেকে) এই কাজে বেশি উপযোগী।
আগের আলোচনায় আমি বলা চেষ্টা করেছি রাষ্ট্র একটি 'সার্বিক ব্যক্তি পরিচয়' তৈরী করতে চায় রাষ্ট্রীয় স্বার্থে। আধার (Universal ID, আধার এর প্রথম নাম) এমনই একটি সার্বিক পরিচয়। এর বিশেষত্য গুলো এখানে দেখবো।
# আধার-এর বিশেষত্ব #
আধার-এর বিশেষত্ব গুলো তাকে তার পূর্ববর্তী পরিচয়পত্র বা পরিচয়গত শংসাপত্রের থেকে আলাদা করে। গঠনগত দিক থেকে এর বিশেষত্ব হলো যে, এটি ব্যক্তির ‘বায়োমেট্রিক তথ্য’ (বাংলা করলে হয়তো ‘জৈবিক-পরিমাপন তথ্য’) সংরক্ষণ করে এবং এটি একটি ‘ডিজিটাল ও অনলাইন’ পরিচয়পত্র। প্রয়োগগত দিক থেকে আধার-এর বিশেষত্ব বা বলা যায় অভিনবত্বটি হলো যে এর একটি ‘আবশ্যিক ও সর্বাত্মক’ পরিচয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা।
# জৈবিক শনাক্তকরণ
বায়োমেট্রিক কি? কোনো ব্যক্তির জৈবিক তথ্য যা ডিজিটাল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব। কাগজে কালী দিয়ে আঙুলের ছাপ সেই অর্থে বায়োমেট্রিক নয়। বায়োমেট্রিক হতে পারে ব্যক্তির মুখের ডিজিটাল ইমেজ (ফেস রিকগনিশন), আঙুলের ছাপের বা চোখের মণির (আইরিশ বা রেটিনা) ডিজিটাল ইমেজ, গলার আওয়াজের ডিজিটাল ইমেজ (ইমেজ মানে সবসময় আক্ষরিক অর্থে ছবি নয়) বা ডিএনএ।
‘জৈবিকভাবে অন্যন্য ও নির্ভুল’ (biometrically unique and error free): বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবহারের সাহায্যে "জৈবিক শনাক্তকরণ" নিশ্চিতভাবে কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে সক্ষম, কারণ প্রত্যেক ব্যক্তির বায়োমেট্রিক তথ্য ‘অনন্য’। পরিচয় সংক্রান্ত নথিতে শনাক্তকরণের জন্যে প্রথমে আলাদা ব্যবস্থা ছিল না, ব্যক্তির নাম, ঠিকানা ব্যবহার করা হত ভৌগোলিক পরিসরে কাউকে নির্দিষ্ট বা চিহ্নিত করতে। পরে পরিচয়পত্রে ফটোগ্রাফের (হারকপি, ভৌত) সংযুক্তি ব্যক্তি শনাক্তকরণের উপায় তৈরী করে, কিন্তু মানুষের দ্বারা। কিন্তু যান্ত্রিক সাহায্যে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক নির্ভর শনাক্তকরণ অনেক বেশি নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য।
‘স্থায়ী ও নিরবচ্ছিন্ন’ (permanent and undisassociated): মানুষের বায়োমেট্রিক-এর, আঙুলের ছাপ বা চোখের মণির ছাপ বা ডিএনএ, এদের বৈশিষ্ট্য হলো যে এগুলো ‘অপরিবর্তনীয়’ (**), তাই তারা পরিচয় শনাক্তকারক হিসেবে ‘চিরস্থায়ী এবং নিরবচ্ছিন্ন’। অবশ্য সময়ের সঙ্গে কিছু বদল/তারতম্য হতে পারে, সেই জন্য প্রতি দশ বছর অন্তর আধার-এ এই তথ্যগুলো নবীকরণ করার নির্দেশ আছে, এক্ষেত্রে ব্যক্তির স্ব-উদ্যোগ কাম্য। আরেকটি কার্যকরী পদ্ধতি হলো ‘অভিযোজন ব্যবস্থা’ (adaptive system) যেখানে প্রতিনিয়ত (অর্থাৎ যখনই মেলানো হয়) তখন বায়োমেট্রিকের সামান্য তারতম্যগুলো অভিযোজিত, বলা যায় অন্তর্ভুক্ত, করে নেওয়া হয়, ফলে সেই বায়োমেট্রিক তথ্য কখনো পুরোনো বা অকেজো (stale) হয় না।
>> (**) এটা ঠিক কতটা পরিবর্তন করে সেটা সম্পর্কে খুব বেশি টেকনিক্যাল ধারণা নেই, এতটাই কি যে শনাক্তকরণে অসুবিধে হতে পারে? অর্থাৎ স্থায়িত্ব ও নির্ভরযোগ্যতা কতটা এটা আমি জানতে চাই। হয়তো এবি কিছুটা বলতে পারবেন।
‘সম্মতি অনির্ভর’ (consent non-dependent): জৈবিক শনাক্তকরণ এতই নির্ভুল যে আলাদা করে ব্যক্তির প্রামাণীকরণের (সই বা পাসওয়ার্ড/পিন) আর দরকার হয় না। আগে বলেছিলাম যে সই বা পাসওয়ার্ড/পিন যেহেতু মানুষের স্মৃতিতে জমা থাকে এইসব ক্ষেত্রে যেমন ব্যক্তির সম্মতি ও সক্রিয় সহযোগিতার দরকার হয়। জৈবিক শনাক্তকরণ এর ক্ষেত্রে তা আর ততটা আবশ্যিক নয়, অর্থাৎ সম্মতি অথবা সহযোগিতার ওপরে নির্ভরশীল নয়। এমনকি কোনো ব্যক্তির অজ্ঞাতেও তার শনাক্তকরণ সম্ভব।
** তাই ব্যক্তির পরিচয়জ্ঞাপন বা শনাক্তকরণের ওপর আমাদের কতৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ থাকে না, রাষ্ট্রীয় কতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ কায়েম হয়।
# ডিজিটাল অস্তিত্ব এবং অনলাইন লব্ধতা
‘রাষ্ট্রের অধীন ও নিয়ন্ত্রিত’ (state owned and controlled): আধার একটি পরিপূর্ণ ডিজিটাল পরিচয়পত্র। আধার-এর পরিচয়পত্রটির প্রকৃত অবস্থান পরিচয় প্রদত্তকারী সংস্থা UIDAI বা রাষ্ট্রের কম্পিউটার সার্ভারে, একটি ডিজিটাল দস্তাবেজ হিসেবে। আধার কার্ড বা হার্ডকপিটি নেহাতই প্রতিলিপি।
‘অবস্থা প্রতিপালন যোগ্যতা’ (status maintainability): যেহেতু আধার রাষ্ট্রের অধীনস্ত একটি ডিজিটাল দস্তাবেজ তাই এর একটি ‘অবস্থা’ (status) সংক্রান্ত তথ্য ধরে রাখা যায় যেমন 'সক্রিয় (active/operative), অক্রিয় (deactive/inoperative), নিষ্ক্রিয় (locked/suspended) রাখা যায়। শুধু একটি অবস্থা নয়, প্রয়োজনে এর সঙ্গে নানান ডাইমেনশনে বা ক্ষেত্র ভিত্তিক অবস্থা রাখা সম্ভব; যেমন ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যগত অবস্থা, কর দাখিল অবস্থা বা ঋণ পরিশোধ অবস্থা এইরকম।। ডিজিটাল দস্তাবেজ হওয়ায় এই অবস্থা গুলো বা যেকোনো পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য সহজেই পরিবর্তন করা যায়।
‘ঘটমান লব্ধতা’ (real-time availability এর বাংলা করছিলাম, আরো সজল উপযুক্ত কিছু থাকলে জানাবেন): এটি যেহেতু আধার একটি অনলাইন পরিচয়পত্র তাই এর ঘটমান লব্ধতা রয়েছে। অর্থাৎ যেকোনো সময়ে যেকোনো জায়গা থেকে এই পরিচয়পত্রের সাম্প্রতিকতম অবস্থা (সেই মুহূর্তের) ও তথ্য দেখা বা পরীক্ষা করে নেওয়া সম্ভব, তার জন্যে আর কোনো আলাদা আয়োজন লাগে না। আধার-এর বায়োমেট্রিকের এই ধরণের ‘লকড’ (locked) ও ‘আনলকড’ রাখার ব্যবাস্থা ইতিমধ্যেই আছে, যেখানে লকড অবস্থায় আধার অচল হয়ে পড়ে।
সাধারণ হার্ডকপি পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রে কোনো তথ্য পাল্টালে প্রতিটা জায়গায় ব্যক্তিকে আবার করে গিয়ে সেই তথ্য পাল্টাতে হয়। রাষ্ট্র কোনো পরিচয়পত্রকে নিষ্ক্রিয় করতে চাইলে তাও সম্ভব ছিল একমাত্র ব্যাপক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যা একাধিক পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রে করতে গেলে বাস্তবে অসম্ভব। আমরা কিছুদিন আগেই উদাহরণ দেখেছি কত সহজেই কয়েকশ মানুষের আধার নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া গেছিলো (এবং তার সঙ্গে নানান পরিষেবা আটকে গেছিলো সংযুক্তিটার জন্যে, সেগুলোয় আসবো)
** অর্থাৎ ডিজিটাল অনলাইন বিশেষত্বের জন্যে ব্যক্তির পরিচয়টি/পরিচয়পত্রটির বস্তুত রাষ্ট্রের অধীনে এবং নিয়ন্ত্রণে থাকে।
‘সন্দেহাতীত অকৃত্রিমতা’ (undoubting authenticity): আধার-এর ডিজিটাল সার্ভার কপিটটাই আসল এবং এর অনলাইন লব্ধতার কারণে এর অকৃত্রিমতা নিয়ে কোনো সংশয়ের অবকাশ থাকে না। এটি কোনো হার্ডকপি নয় যার কৃত্রিম উপায় প্রতিলিপিকরণযোগ্য, অনলাইনে সরাসরি প্রকৃত পরিচয়পত্রটিই লব্ধ।
‘কর্মচারী অনির্ভর’ (employee independent): ডিজিটাল অনলাইন পরিচয়পত্র হওয়ার জন্যে, সরাসরি সফটওয়ারের ব্যবহারে শনাক্তকরণ সম্ভব, কর্মচারী অনির্ভর এবং ভুল ত্রুটির সম্ভাবনা কম।
‘দূরস্থিত পরিচালন’ (remotely managed): আধার-এর পরিচয় অনলাইনে প্রাপ্ত হয়য়ায় যেকোনো জায়গা থেকে এর লভ্যতা যেমন প্রাপ্ত হয়, তেমনই দূরবর্তী স্থান থেকে এই পরিচয়কে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই পরিচয়ের লভ্যতা কিংবা ‘অবস্থা’ পরিবর্তনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য বা সহযোগিতার প্রয়োজন হয় না। এটি কোনো দূরস্থিত প্রশাসন কেন্দ্র, যেমন রাজধানী বা পরিচয় প্রতিপালক সংস্থার প্রধান দপ্তর, থেকে পরিচালিত হতে পারে।
** অর্থাৎ পরিচয়/পরিচয়পত্রের শনাক্তকরণ, তার রক্ষনাবেক্ষন পরিচালন ইত্যাদি কাজে শুধু ব্যক্তির নয়, কোনো মানুষ বা কর্মচারী বা ভৌগোলিক স্থানিকতার ওপর নির্ভরশীলতা থেকে রাষ্ট্রের বেরিয়ে আসছে। আর তা সত্ত্বেও এই কাজকর্মে যন্ত্রের সহায়তায় নির্ভুল নির্ভরশীল ভাবে করতে পারছে, অর্থাৎ শক্তিশালী ব্যবস্থা তৈরী করছে।
# চিরস্থায়ী পরিচয় নির্দেশক সংখ্যা
এটি আধার-এর গঠনগত বৈশিষ্ট্য হলেও, বিশেষত্ব সে অর্থে নয়। আধুনিক যেকোনো পরিচয়পত্রের সঙ্গে একটি করে 'সর্বজনীনভাবে অনন্য' (universally unique) সংখ্যা জুড়ে দেওয়া থাকে – যাদের চলতি কথায় বলি আইডি নাম্বার। যেমন প্যান কার্ডের প্যান নম্বর, তেমনই আধার-এর রয়েছে আধার নম্বর, যা একটি নির্দিষ্ট পরিচয়কে বা ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে। এই সংখ্যাটি বদলায় না, একটি ব্যক্তির সঙ্গে এই সংখ্যা পাকাপাকিভাবে জুড়ে থাকবে চিরকাল।
পরিচয়কে সংখ্যার দ্বারা চিহ্নিত করতে পারলে তার সঙ্গে তথ্য জুড়ে রাখার কাজ অনেক সহজ হয়। সংখ্যার দ্বারা চিহ্নিত তথ্যরাশির তালিকাভুক্তিকরণ, সংযুক্তিকরণ, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ ও অনুসন্ধান, বিশেষ করে কম্পিউটারের ব্যবহারে, অনেক সুবিধাজনক এবং দ্রুত।
** অর্থাৎ রাষ্ট্র সমগ্র জনগোষ্ঠীর পরিচয় এর নানান organization, এবং statistical processing করতে বস্তুত রাষ্ট্রের অধীনে এবং নিয়ন্ত্রণে থাকে।
** সবমিলিয়ে অর্থাৎ ব্যক্তির পরিচয় সৃষ্টি, তার শনাক্তকরণ, রক্ষনাবেক্ষন ইত্যাদি সমস্ত কাজে রাষ্ট্র নিজের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার এবং সেই কাজ নির্ভুল ভাবে করার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে।
>>> এইখানে ভাষা বড্ড খটমট হয়ে গেছে, সহজ করতে হবে এবং প্রত্যেক বাক্য হয়তো ঠিক মতন গঠন করা হয়নি, মোটামুটি স্পষ্ট আন্দাজ পাওয়া যাবে আশা করি। তবে এই অগস্হতির আরো সম্পাদনা করার প্রয়োজন রয়েছে।
এর পরে ডিজিটাল জগতের উপর একটা ছোট অংশ আধার তহত্য সংযুক্তির জায়গাটা আলোচনা করবো।
আমার আরো তিনটে লেখা (ডিজিটাল জগতের তাৎপর্য, আধার/অনন্য পরিচয়ের সাহায্যে এর তথ্য সংযুক্তির ক্ষমতা এবং কার্যকারিতা ) অবধি আধার তথ্য ও তার রাষ্ট্রীয় ব্যবহার , নিয়ন্ত্রণ নজরদারী সংক্রান্ত বিষয় গুলো (আমরা ডিসি ও এবির মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে প্রায় ঢুকেই পড়েছি) একটু hold করতে অনুরোধ করছি। তাহলে একসাথে আলোচনা করতে সুবিধে হয়।
যেগুলো বলছি সেগুলো খুব সহজ কথা, এতো বিশদে হয়তো বলার দরকার নেই, তবু কেউ যদি একেবারেই কম্পিউটার সায়েন্স, ডেটাবেস, স্ট্যাটিসটিক্স এর গোড়ার কথা না জানেন, তাহলে তাদের সুবিধে হবে।
এক কথায় আধার-কে বলা যায় সার্বিক (প্রশাসনিক, আর্থিক এবং সামাজিক) ডিজিটালাইজড ব্যবস্থার মধ্যে কোনো ব্যক্তির 'পরিচিতি চিহ্নিতকারী' – a person's identifier in the comprehensive digitalized system or the digital empire। পরিচয় না বলে 'পরিচিতি' বললাম তার কারণ আধার আমাদের নাম ধাম নয়, বরং ডিজিটাল জগতে আমাদের সমস্ত ক্রিয়াকর্ম ও ব্যবহারগত তথ্যগুলো যুক্ত করে আমাদের পরিচয়ের সঙ্গে জড়িত পরিচিতিটি নির্মাণ করতে সাহায্য করে।
আধার বা এই ধরণের পরিচয় গঠন ব্যবস্থা ছাড়া সামগ্রিক ডিজিটাল অনলাইন ব্যবস্থা অসম্ভব, আবার উল্টো দিকে এই ডিজিটাল ব্যবস্থা ও অত্যাধুনিক শক্তিশালী গণন ক্ষমতা (computing power) ছাড়া আধার অনেকটাই নির্বিষ। অর্থাৎ এরা পরস্পর পরিপূরক।
# ডিজিটাল ব্যবস্থার তাৎপর্য #
কোনো ব্যবস্থায় ডিজিটাল মাধ্যমের ভূমিকা হল বার্তার আদান প্রদানে অর্থাৎ কমিউনিকেশনে মধ্যস্থতা করা। কেউ কিছু বলতে চাইলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে সেই বক্তব্য প্রেরণ, কিছু কিনতে চাইলে বিক্রেতার কাছে সেই ইচ্ছে পৌঁছে দেওয়া, কাউকে টাকা পাঠাতে চাইলে ব্যাংকের কাছে সেই নির্দেশ পাঠানো, এই কাজ গুলোই ডিজিটাল মাধ্যম করে থাকে।
অর্থাৎ ডিজিটালাইজেশন দুটি ব্যক্তি বা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগাযোগের বা কাজকর্মের ক্ষেত্রে মাঝে একটি করে যন্ত্র বসিয়ে দেয়।এখন সমগ্র প্রশাসনিক, আর্থিক, সামাজিক ব্যবস্থা ‘সম্পূর্ণভাবে’ ডিজিটাল মাধ্যমে স্থানান্তরিত হলে তৈরী হয় ‘ডিজিটাল ব্যবস্থা’। ফোন, চ্যাটিং অ্যাপ, সমাজ মাধ্যম এইগুলোর ব্যবহারে আমাদের জীবনের মানুষের মধ্যে কথাবার্তার বেশ অনেকটা অংশ যেমন এই ডিজিটাল ব্যবস্থার মধ্যে ধরা পড়েছে, তেমনি খুচরো কেনাকাটার তথ্যও এখন ডিজিটাল ব্যবস্থার সংরক্ষিত হচ্ছে। জনজীবনের এই micro activity যা সরাসরি হয়ে থাকতো বলে রাষ্ট্রের/ব্যবস্থার নজরের বাইরে ছিল তা এখন নজরবন্দি হওয়ার উপায় তৈরী হয়েছে।
এই মধ্যস্থতাকারী ডিজিটাল ব্যবস্থা কয়েকটি অবধারিত ক্ষমতা অর্জন করে। প্রথমটি হলো তার মধ্যে দিয়ে চলাচল করা সমস্ত কথাবার্তা ও কার্যকলাপ সংক্রান্ত তথ্য দলিলভূক্ত বা সংরক্ষণ করতে পারা। এর ফলে যে বিপুল তথ্যরাশি জমা হচ্ছে নানান ডেটা সেন্টারে তাকেই আমরা বলছি ‘বিগ ডেটা (big data)’। আর দ্বিতীয় হলো দরকারে কোনো কোনো কাজের (কথাবার্তা বা লেনদেন) অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা। অর্থাৎ সেন্সরশিপ, যা আমরা উপদ্রুত অঞ্চলে হতে দেখে থাকি। তৃতীয় হলো ডিজিটালা ব্যবস্থা অনলাইন হওয়ায় এর পরিচালনা যেকোনো দূরবর্তী স্থান থেকে remotely করা সম্ভব।
# স্থায়ী ডিজিটাল পরিচয় আধার-কে ডিজিটাল ব্যবস্থার পরিপূরক বলেছি তার অন্যতম কারণ, আজকের ফেসবুক, গুগল, অ্যামেজন বা এক্স এবং অন্য সমস্ত ডিজিটাল ব্যবস্থায় যে বিপুল তথ্য বিগ ডেটা তৈরী করছে সেগুলো অনেকক্ষেত্রে বাস্তব জগতের ব্যক্তির সঙ্গে যুক্ত নয়। যদিও নাম পরিচয় ছাড়া অ্যানোনিমাস মানুষের তথ্য থেকেও এই বড় কোম্পানিগুলো অনেক কিছুই জেনে ফেলতে পারে এবং ব্যক্তির শনাক্তকরণ অবধি করে ফেলতে পারে, কিন্তু সেটা গ্যারেন্টেড নয়। প্রত্যেক তথ্যের সঙ্গে তার সাবজেক্ট অর্থাৎ ব্যক্তি পরিচয়টি জোড়া থাকলে "তথ্যের ব্যবহারিক (বাণিজ্যিক বা প্রশাসনিক বা অন্যান্য) মান বা মূল্য" বাড়ে অনেকটাই। আধার একটি ডিজিটাল আইডেন্টিটি হিসেবে সেই কাজে অত্যন্ত উপযুক্ত যা এর আগের কোনো পরিচয়পত্র হতে পারতো না।
(২) আমাদের তথ্য সমস্ত জায়গায় সংগৃহিত হচ্ছে, আধার নিয়ে আপত্তি করে কি লাভ? – এই প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত উপরের অংশে পাওয়া যাচ্ছে।
# তথ্য সংযুক্তি বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন তথ্যভাণ্ডারে ব্যক্তির অভিন্ন পরিচয় হিসেবে আধার-কে ব্যবহার করলে একই ব্যক্তির আলাদা আলাদা ক্ষেত্রের তথ্য গুলো সংযুক্ত হয়ে পড়ে। একেক জায়গায় একেকটি পরিচয় যেমন ফোন নাম্বার, প্যান নম্বর বা ভোটার আইডি নম্বর ব্যবহার করলে সেটা হয় না। ছোট ছোট তথ্যের (data) সংযুক্তির ফলে কি ধরণের সোশ্যাল ইনফরমেশন তৈরী হয় এরপরেই আলোচনা করবো।
লক্ষ্য করে থাকবেন আর্থিক ক্ষেত্রে এমন একটি আইডি নাম্বার ‘প্যান’ চলে আসার পরেই ব্যাংক গুলোতে একই গ্রাহকের বিভিন্ন খাতা বা অ্যাকাউন্ট গুলো সংযুক্ত করা শুরু করা গেল, স্টেট ব্যাঙ্কে যার নাম ‘কোর ব্যাঙ্কিং পরিষেবা’। ভারতের আয়কর দপ্তরও বলা বাহুল্য এরপরেই বিভিন্ন ব্যক্তির আয়করের হিসেব এক করে দেখতে সক্ষম হলো।
# নিরবচ্ছিন্ন তথ্য ইতিহাস ব্যক্তির পরিচয় যদি স্থায়ী না হয়, তা বদলে যায় তাহলে তার সম্পর্কে ধরে রাখা পুরোনো তথ্যের সঙ্গে নতুন তথ্যের যোগসূত্র নষ্ট হয়ে যাবে, তথ্য ইতিহাসে বিচ্ছিন্নতা তৈরী হবে। তাই পরিচয় শুধু অন্যন্য হলেই হবে না, তাকে স্থায়ী হতে হবে। অর্থাৎ নাম-ধাম বা ফোন নাম্বারের মতন ব্যক্তির ইচ্ছেয় পরিবর্তন সাপেক্ষ বস্তু নয়, ব্যক্তির ইচ্ছে অনির্ভর কোনো স্থায়ী পরিচয়। এখানেই বায়োমেট্রিকের 'স্থায়িত্বের' উপযোগিতা। এমনকি ভবিষ্যতে আধার পরিচয়পত্র হিসেবে অপ্রচলিত হয়ে পড়লেও ব্যক্তির বায়োমেট্রিক যেহেতু অপরিবর্তনযোগ্য তাই তার সাহায্যে সেই সংরক্ষিত পুরোনো তথ্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
# ব্যবস্থার সংযুক্তি যখন রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিভিন্ন অঙ্গ যেমন সরকারি দপ্তর এবং নানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একটি অভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করা শুরু হয় তখন এই অভিন্ন পরিচয়ের সাহায্যে একটি সংযুক্ত ব্যবস্থার জন্ম হয়। আর সেই পরিচয়টি, যা আমরা আগে বলেছি রাষ্ট্রের অধীনে ও নিয়ন্ত্রণে থাকে, একটি একক কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের উপকরণ হয়ে পরে। সেই ডিজিটাল অনলাইন পরিচয়ের অবস্থা (status) পরিবর্তন করে যদি locked করে দেওয়া হয়, আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখেছি একটি ব্যক্তির জীবন স্তব্ধ হয়ে পড়ে (**)। তাই এর নিয়ন্ত্রণ শক্তি অনুমান করা শক্ত নয়। এটিকে mass controlling instrument হিসেবে সহজেই ব্যবহার করা যায়।
কোনো হার্ডকপি পরিচয়পত্র নিষ্ক্রিয় (inactive) বা নিশ্চল (suspended, locked) করার দরকার হয় তাহলে একমাত্র উপায় হল ব্যাপক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে সমস্ত কাজকর্মে অবৈধ করে দেওয়া, কিন্তু সে সহজ কাজ নয়; এমন প্রয়োজন সংখ্যায় একাধিক হলে এই কাজ এক কথায় অসম্ভব।
(**) বহু ব্যক্তি সাম্প্রতিক নাগরিকত্ব বিষয়ে আধার নিষ্ক্রিয়করণে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সমস্যা দেখেছেন, কিন্তু তারা আধার-এর ক্ষমতার জায়গাটা লক্ষ্য করেন নি। শুধু নাগরিকত্ব নয় যেকোনো বিষয় নিয়েই এমন রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন নেমে আসতে পারে।
আধার এর সাহায্যে ব্যক্তি তথ্যের (individual data) সংযুক্তির কথা এসেছে। এই সংযুক্ত তথ্য তৈরী করে "জ্ঞান" (knowledge)। আমি প্রধানত তিনটি প্রকারের সামাজিক নলেজ দেখতে পাচ্ছি, হয়তো আরো থাকতে পারে।
# ব্যষ্টিক অবয়ব (individual profile): কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য ও নানান ক্রিয়াকলাপের তথ্য আধার সংযুক্তির দ্বারা একত্রিত ভাবে তার একটি ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরী করে – একে তার ব্যষ্টিক অবয়ব বলা যেতে পারে।
# সামষ্টিক অবয়ব (collective profile) – একজন ব্যক্তি নানান সমষ্টির অঙ্গ। যেমন আর্থিক দিক থেকে সে হয়তো নিম্ন মধ্যবিত্ত, ধর্মের দিক থেকে হয়তো বাহাই বা জাতির দিক থেকে বুলগেরিয়ান, লিঙ্গের দিক থেকে হয়তো মহিলা আবার পেশাগত দিক থেকে হয়তো সাংবাদিক। আবার নানান বিষয় যোগ করে তেমনি যৌগিক সমষ্টি হতে পারে, যেমন কুড়ি থেকে পঞ্চাশের মধ্যে বয়সের বাংলাভাষী বামপন্থী চিন্তাধারার চাকুরীজীবি মানুষ যারা বর্ধমান জেলায় থাকেন – এইরকম। এবারে কোনো সমষ্টির মধ্যে যারা পড়ছেন সেই ব্যক্তিবর্গের ব্যষ্টিক তথ্য গুলোই, বা তার মধ্যে মিলযুক্ত তথ্য গুলো, ওই সমষ্টির সম্পর্কে তথ্য নির্মাণ করতে পারে, অর্থাৎ সামষ্টিক অবয়বটি তৈরী করতে পারে।
# সামাজিক সম্পর্কগত অবয়ব (social relational profile) ব্যক্তির ও তার বাবা-মায়ের আধার পরিচয়-গুলোকে যদি সম্পর্কের ভিত্তিতে সংযুক্ত করা হয় তখন একটি পারিবারিক সম্পর্ক নথিবদ্ধ হয়। একটি পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের মধ্যে এই সন্তানের ও বাবা মায়ের সম্পর্কগুলোকে নথিবদ্ধ করলে পরিবারের সদস্যদের যে সম্পর্কগত তথ্যের সংগঠনটি তৈরী হয় তাকেই আমরা বংশতালিকা বা ইংরেজিতে ‘ফ্যামিলি ট্রি’ বলি। এবার পরিবারের কোনো সদস্য যখন অন্য একটি পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তখন দুটি পরিবার আন্তঃপরিবারিক সম্পর্কে যুক্ত হয়। বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ ব্যক্তিদ্বয়ের পরিচয় দুটির মধ্যে সম্পর্কগত সংযোগটি নথিভুক্ত করলে, দুটো বংশতালিকার মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়।
যখন আধার মানুষের বিবাহ এবং জন্ম শংসাপত্রের সঙ্গে যুক্ত করার প্রচলন হচ্ছে তখন প্রতিটি আন্তঃপরিবারিক ও আন্তঃপরিবারিক সম্পর্কগুলো আধার-এর দ্বারা সংযুক্ত হয়ে পুরো সমাজের পারিবারিক সম্পর্কের নেটওয়ার্ক তৈরী হয়। প্রত্যেক দুটি ব্যক্তির পরিচয়ের মধ্যে বংশগত বা বর্ধিত পরিবারগত সম্পর্ক, তা সে যত দূরেরই হোক, ধরা পরে।
একই ভাবে অন্যান্য সামাজিক সম্পর্ক গুলোও, যেমন – প্রতিবেশী বা একই এলাকার অধিবাসী, ফোন বা সমাজমাধ্যমে যোগাযোগ, স্কুলের সহপাঠী বা কর্মস্থানের সহকর্মী, ইত্যাদি সম্পর্কগুলোকেও নথিবদ্ধ করলে পুরো সামাজিক সম্পর্কের অবয়বটি তৈরি হয়ে ডেটা সেন্টারে জমা হয়। এই সম্পর্কগত তথ্য গুলো আধার-কে ফোন, সমাজমাধ্যম, স্কুলের অ্যাডমিশন ইত্যাদি ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করলেই চলে আসে। আর ঠিকানা তো আধার-এ রয়েইছে, ভোটার তথ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করলে ওয়ার্ড ভিত্তিকভাবে জানা যাবে।
এই ধরণের তথ্য সংগঠনকে বা ‘ডেটা স্ট্রাকচার’ কে "ম্যাথেমেটিকাল গ্রাফ" বলা হয়। যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি হল এক একটি নোড (node) এবং তাদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক গুলো রেখার দ্বারা যুক্ত, সেগুলোকে বলা হয় এজ (edge)। অর্থাৎ দুটো ব্যক্তির মধ্যে পারিবারিক বা অন্য সম্পর্ক থাকলে সেই দুটো ‘নোড’ একটি ‘এজ’-এর মাধ্যমে যুক্ত করা থাকে। সম্পূর্ণ চিত্রটা হয় একটা পরস্পর সংযুক্ত জালের বা নেটওয়ার্কের মতন। একটি ম্যাথেমেটিক্যাল গ্রাফ সমাজ সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে, প্রভাব বা তথ্যের চলন বুঝতে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং আরো অন্যান্য কাজে অত্যন্ত শক্তিশালী কার্যকার তথ্য-সংগঠন।
শুরুতে যে জিনিসগুলো বলার ছিল সেটা মোটামুটি বলেছি। দেখানোর চেষ্টা করেছি ডিজিটাল ব্যবস্থায় আধার এর মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র নাগরিক ও সমাজ সম্পর্কে কতটা শক্তিশালী তথ্য ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম। এই ক্ষমতার অপব্যবহারে রাষ্ট্র নাগরিক ক্ষমতার ভারসাম্যের মারাত্মক রদবদল হয়ে পড়তে পারে। কি ধরণের (অপ)ব্যবহার সম্ভব ও তার কি প্রভাব সেই সম্পর্কে কিছু বলিনি। সেটা সবার সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসবে। কোনো মন্তব্য বা প্রশ্ন থাকলে জানাবেন।
এখন আমার আর কিছু লেখার নেই, প্রয়োজন মতো মন্তব্য করবো। ডিসির শেয়ার করা ভিডিওটা দেখতে শুরু করেছি, তারপর এবির শেয়ার করা ভিডিওটা দেখবো। আপনারা আলোচনা চালিয়ে যান।
প্যান বা পাসপোর্ট কী করে আধারের মত হল সে মোটেই পরিস্কার হল না। প্যান রাষ্ট্রকে ব্যক্তির আর্থিক লেনদেনের উপরে নজর রাখতে দেয়। সেজন্যই তৈরি। নাহলে ব্যক্তি যে উপযাচক হয়ে রাষ্ট্রকে সব জানাবে না তা তো বলাই বাহুল্য। আর না জানানোর ফলেই এত কালোটাকার রমরমা। রাষ্ট্র কর আদায়ের জন্য নেটওয়ার্ক বানিয়েছে অবশ্যই। কর আদায়ের বিকল্প কী? বিভিন্ন প্রকল্প চালাতে, আর্থিক দুর্বলশ্রেণীকে ভর্তুকি দিতে প্রয়োজনমত সরকার হু হা নোট ছাপাবে?
প্যান কিছু দুর্নীতিকে সরাসরি বন্ধ করেছে। একটা হল ট্যাক্স রিফান্ডের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য যে চক্র কাজ করত সেটা এখন আর খুব বড় ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য সাধারণ চাকুরে বা ছোট ব্যবসায়ীর ঘাড় মটকাতে পারে না। রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে যাতে ব্যক্তিমানুষকে অহেতুক ঘুষ দিতে না হয়, হয়রানি না হয় সেটা দেখা।
পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদিরও নাম র্দিষ্ট ফাংশান আছে।
আরেকটা কথা বলা দরকার মনে হল। ৮৪র দিল্লির শিখ গণহত্যা হয়েছিল বাড়ি ও দোকানের মালিকানা রেকর্ডের তথ্য নিয়ে (ভূমিরাজস্ব দপ্তরের ডেটা)। ২০০২ এর গুজরাট জেনোসাইড হয়েছিল গ্যাস কানেকশানের ডেটা নিয়ে। আধার ছাড়াই টার্গেটেড কিলিং রমরমিয়ে হয়েছে।
তাই বলে কি আধার নিয়ে আপত্তির কিছু নেই? অবশ্যই আছে। ডিসি এর নৈতিক আর ইমপ্লিমেন্টাশানাল সমস্যাজনিত দুরকম আপত্তির কথা লিখেছেন, ওইগুলো ভ্যালিড।
পাসপোর্ট নিয়ে বা অন্য কোনো শংসাপত্র নিয়ে আপত্তি তো করিনি। আমার লেখার প্রথম অংশটা খুব কনফিউশন তৈরী করেছে।
প্যান নিয়েও করিনি (এমনকি আধার যদি শুধু আর্থিক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতো, এতো আপত্তি হয়তো করতাম না)। যদিও আর্থিক দিক থেকেও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সীমার ব্যাপারে আমার কিছু কথা আছে, কি/কতটা দেওয়ার জন্যে কি/কতটা হরণ করছে (ও তাদের প্রভাব), যেটা দিচ্ছে সেটা আরো কম কিছু হরণ করে দেওয়া যায় কিনা এই প্রশ্ন গুলো চলে আসবে। কিন্তু টপিক থেকে সরে যাবো।
যখন আধার নিয়ে আপত্তির দিক থেকে গঠনগত কারণগুলো খুঁজতে শুরু করি তখন কিছু বৈশিষ্ট পাই (সর্বজনীন অনন্য নাম্বার, সার্বিক ব্যবহার, রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ইত্যাদি) যা প্যানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আসলেই আমি এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলাম, একজন আমায় প্রশ্ন করেছিল "প্যান কিভাবে আলাদা?" সেই উত্তর খুঁজতে গিয়ে কিছু মিল পাই, সেটাই নথিভুক্ত করলাম, একটা objective দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, আর প্যান-এর সঙ্গে অমিল গুলোই বস্তুত "আধার এর বিশেষত্ব" অংশে স্থান পেয়েছে।
"পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদিরও নাম র্দিষ্ট ফাংশান আছে।" – হ্যাঁ, আছে তো। এটা বুঝলাম না। "আধার ছাড়াই টার্গেটেড কিলিং রমরমিয়ে হয়েছে।" – তাহলে কি সেই ক্ষমতাকে আরও বাড়াতে দেওয়াটা আপত্তির নয়?
ড্রাইভিং লাইসেনস তো একটি "লাইসেনস", একটি ছাড়পত্র যে অন্য একটি সংস্থা, বা তার আধিকারিকেরা আপনাকে পরীক্ষা করে দেখেছে যে আপনি মোটর-দেওয়া দ্রুত গতির যানবাহন কে নিয়নত্রণ করতে সক্ষম যেমন আমার ডাকতারির লাইসেনস যে আমাকে পরীষা করে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে যে আমি মানুষের ওপর অস্ত্রোপচার ইত্যাদি করতে পারি। এখন সেখানে "আপনার" সম্বন্ধে কিছু তথ্য যদি রাখা থাকে, তাকে অন্যান্য জায়গায় আপনার পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে | কিনতু তার মানে এই নয় যে সে জিনিস "আপনি" কে, তার পরিচয়পত্র, আপনার লাইসেনস কেড়েও নেয়া হতে পারে, তাতে আপনার পরিচয় লুপ্ত হবে না, আপনি গাড়ি চালাতে পারবেন না এইমাত্র। পাসপোর্ট যেমন আপনার "নাগরিকত্বের" পরিচয়। তাতে "আপনি" কে, তার একটা আংশিক পরিচয় পাওয়া যায় মাত্র | সেইরকম "আধার" পরিচয়পত্র দিয়ে কিসের পরিচয় পাওয়া যায়, এবং তাতে কার কি আসে যায়, এইটা নিয়ে অরিত্র যদি আলোচনা করেন তো ভাল হয়। তখন ওজর আপত্তিগুলো বেশ বোঝা যেতে পারে |
অর্বাচীনের মত হয়ত বলব। আধার জিনিসটা আমি দেখিনি কখনও। তবে মনে হচ্ছে ওটা ভারতীয় নাগরিকের আইডেনটিটি কার্ড। দুনিয়ার অনেক দেশেই এইরকম আইডেন্টিটি কার্ডের প্রচলন আছে। এমনকি বাংলাদেশেও আছে বলে শুনেছি। তহে সেই কার্ডে কতটা ব্যক্তিগত তথ্য জমা করা থাকছে সেটা নির্ভর করছে দেশের প্রশাসন কত বেশি তথ্য জমা রাখতে চায়, তার ওপর।
যতদূর জানি, আধারের সঙ্গে যাবতীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
ইস্তক রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, সবই সংযুক্ত রাখা হয়েছে। এটা হয়ত জাল রেশন কার্ড, জাল ভোটার কার্ড, জাল জব কার্ড, এসবের থেকে জটিলতা কমাতে।
কিন্তু কতটুকু ব্যক্তিগত তথ্য জমা থাকছে সেটাই আশঙ্কার কারণ।
এ অনেকটা শাঁখের করাত।
আর এতসব কার্ডের দরকারই বা কী? একটা কার্ডই কি যথেষ্ট নয়? ভোটার কার্ড জিনিসটারই বা দরকার কেন? আধার থাকলেই তো নাগরিকত্বের প্রমাণ রইল।
তবে, দুনিয়ার নানান দেশে নানান নিয়ম।
রাষ্ট্র সব সময়েই তার নাগরিকদের কন্ট্রোলে রাখতে চায়। সেভাবে দেখলে রাষ্ট্র একটা মস্ত জেলখানা। ফিংগার প্রিন্ট থেকে শুরু করে সমস্ত বায়োমেট্রিক তথ্য তার ডেটাবেসে থাকবে। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান যত উন্নত হবে, তত এইসব ডেটা নিয়ে ইচ্ছে মত রাষ্ট্র ব্যবহার করতে পারবে। সাধারণ মানুষ খুঁটিতে বাঁধা। সে ভাবছে সে মুক্ত, কিন্তু দড়িটা বাঁধা আছে।
"এইসব ডেটা নিয়ে ইচ্ছে মত রাষ্ট্র ব্যবহার করতে পারবে। সাধারণ মানুষ খুঁটিতে বাঁধা। সে ভাবছে সে মুক্ত, কিন্তু দড়িটা বাঁধা আছে।"
এদের এই "মামুর কলে" লেখাকে রঙ করার উপায় থাকলে ওপরের কথাগুলোকে "সোনার" রঙে রাঙিয়ে দিতাম।
এই যে রাষ্ট্র "ইচ্ছেমত ব্যবহার" করতে "পারে", এই ইচ্ছের এবং তজ্জনিত ব্যবহারের ব্যাপারটাতেই যত গোলমাল। সে ইচ্ছা যদি সদিচ্ছা হয়, তাহলে এক রকম, তার বাসনা যদি অন্যরকমের হয়, তাহলে আরেক রকম ব্যাপার। একেক জনগোষ্ঠীর জন্য রাষ্ট্র যদি একেক রকমের বাসনা পোষণ করেন, সে আবার আরেক রকমের সমস্যা। দড়িতে "বাঁধা" আছে, সে একরকম ব্যাপার, অনেক সময়ে বাঁধা থাকার একটা ব্যবহারিক তাৎপর্য থাকে, যে Welfare State তার নিয়ন্ত্রিত নাগরিকদের সামাজিক সুরক্ষার একটা বন্দোবস্ত করতে পারে, সেক্ষেত্রে তার জানা প্রয়োজন যে কার জন্য সে কতটা ব্যয় করবে বা কি ধরণের সুবিধার বন্দোবস্ত করবে | কিন্তু এই বন্ধনটাই যখন দানবীয় অত্যাচারের কারণে ব্যবহৃত হয়, সে তখন গলার ফাঁস বই আর কিছু নয়। এখন সচেতন নাগরিকদের নিজেদের স্থির করতে হবে যে তারা কি চায়। এবং অবশ্যই, একই কাজের উদ্দেশ্যে "অত" কার্ডের ব্যবস্থা যে দেশে রয়েছে, এবং যেখানে এই কার্ড সমূহের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই, এ থেকে বোঝা যায় যে সে দেশের শাসন ব্যবস্থা অত্যন্ত অগোছালো এবং দুর্নীতিগ্রস্ত |
dc | 2401:4900:7b8c:6d4e:f41c:c428:c543:***:*** | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৪০742396
"একটা জায়গায় আপত্তি করছি। আধার চালু হয়েছিল ২০০৩ অর্থাৎ বিজেপি, বাজপেয়ী আমল (নাম ছিল UID বা Universal ID)। এরপর কংগ্রেস সেটিকে এগিয়ে নিয়ে যায় (নন্দন নিলেকানি এর সহযোগে ), নাম হয় আধার। এই ব্যাপারে প্রত্যেকে ধাপে ধাপে একই লক্ষ্যে এগিয়েছে, কংগ্রেস ভালো উদ্দেশ্যে করেছিল আর বিজেপি সেটাকে সার্ভেইল্যান্স টুল বানিয়েছে বললে ঠিক বলা হবে না। "
অরিত্র ঠিক ধরেছেন। কংগ্রেস আমলে চালু হয়েছিল লিখেছিলাম, সেটা আমার ভুল। আসলে নিলেকানিবাবুই প্রথম ইমপ্লিমেন্টেশানের প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন বলে আমার ওরকম একটা আবছা ধারনা রয়ে গেছিল। আর কংগ্রেস ভালো উদ্দেশ্যে করেছিল, তা কিন্তু বলিনি। আসলে আমাদের দুর্ভাগ্য যে বহু খারাপ কাজ কংগ্রেসই শুরু করেছিল, যেমন টাডা আইন, আধার, ইত্যাদি, সেগুলো প্রধানসেবক সম্পূর্ণ করেছে।
কাজের চোটে কদিন লিখতে পারছিনা, এই উইকএন্ডে লিখবো। আধারের শুরুটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা দরকার, কারন নিলেকানির সময় থেকেই আধার আদৌ দরকার কিনা, এর পক্ষে আর বিপক্ষে অনেক ডিবেট হয়েছিল। জাজ পুট্টাস্বামী কেস এও অনেকগুলো পয়েন্ট উঠে এসেছিল, যা সরকার ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছিল।
"আধার জিনিসটা আমি দেখিনি কখনও" – আমাকেও না দেখতে হলে খুশি হতাম। :-)
তবে যোষিতা বলেছেন, "একটা কার্ডই কি যথেষ্ট নয়?" এবিও বলেছেন, "এবং অবশ্যই, একই কাজের উদ্দেশ্যে "অত" কার্ডের ব্যবস্থা যে দেশে রয়েছে, এবং যেখানে এই কার্ড সমূহের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই, এ থেকে বোঝা যায় যে সে দেশের শাসন ব্যবস্থা অত্যন্ত অগোছালো এবং দুর্নীতিগ্রস্ত |"
আমার কিন্তু মনে হয় এই একটি মাত্র কার্ড, মানে "সিঙ্গেল ইউনিভার্সাল আইডেন্টিটি" তৈরির করাটাই একটা সমস্যা।
একটা সময়ে আমি এই হরেকরকম সার্টিফিকেট আর অ্যাটেস্টেশন করতে করতে বিরক্ত হয়ে চাইতাম যে সব কিছু নিয়ে একটা সিঙ্গেল কার্ড থাকা উচিৎ। কিছুদিন পরেই যখন UID শুরু হলো আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। পরে ২০১০-১১, কম্পিউটার সায়েন্সের আডভান্সড টপিকগুলো, ডেটা মাইনিং, মেশিন লার্নিং, NLP এর সেন্টিমেন্ট এনালাইসিস ইত্যাদি, জানছি, যদিও বেসিকটুকুই। তখন ফার্মভিল অ্যাডিক্ট (একটা খুব জনপ্রিয় গেম ছিল ফেসবুক থেকে খেলা যেত), তবে এই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরতো যে এতো সুন্দর গেম ফ্রিতে কেন খেলতে দেয়!
একদিন হঠাৎই মাথায় কারণটা এলো। ওদের মূল উদ্দেশ্য বিহেভিয়ার এনালাইসিস করার জন্য ডেটা নেওয়া। গেমটায় থাকতো নানান রকম জিনিস নানান রঙের, নানান রকম ক্রপস, কোনটা পছন্দ করছি, কেমন ভাবে ব্যবহার করছি / সাজাচ্ছি, সুন্দর করে নাকি সবচেয়ে ইকোনোমিক্যালি বা অন্য কো প্লেয়ারদের সঙ্গে কিরকম ভাবে ইন্টারাক্ট করছি, শুধুই সাহায্য নিচ্ছি নাকি সাহায্য করছিও। ইত্যাদি। হয়তো জায়েঙ্গা কোম্পানিটা কোনো রিসার্চ প্রজেক্টের জন্যেই এটা করছিল, সেই ফান্ডিং থেকেই গেম ডেভেলাপ করেছিল। হয়তো ফেসবুকই ফান্ড করেছিল। সঙ্গে সঙ্গেই বুঝলাম বাস্তবের জীবনেও যদি আমাদের বিহেভিয়ারাল ডেটা নিতে চাওয়া হয় তাহলে কোনো একটা সার্বিক ও একক আইডি হিসেবে UID/আধার ব্যবহার করলে সুবিধে হবে। তখনও আধার-এর বিরোধী ঠিক নই। কংগ্রেস positive rewarding পদ্ধতিতে আধার-কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে খুব ধীরে। এরপর মোদী এসে যখন negative punishment পদ্ধতি গ্রহণ করে aggresively আধার-কে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলো, আইন এড়িয়ে বাধ্যতামূলক করতে চাইলো, আপত্তি শুরু হলো। দেখলাম মানুষের financial, demographic, religious, ethnic সমস্ত ক্ষেত্র গুলো জুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শুরু হচ্ছে। ফলে ধর্ম, জাত, জাতি, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদির সাথে মানুষের আর্থিক তথ্যগুলো জুড়ে যেতে চলেছে। সামাজিক ব্যবস্থায় ঢুকে পড়লে তাদের মতামত চিন্তাধারা মানসিকতা ব্যবহারিক বিষয়গুলো ঢুকে পড়বে। ডিসিও এই ধরণের জিনিসই বলেছেন (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪০)।
তার ওপর মোদির যেসব কারণে "খ্যাত" ছিল জনমানসে। সেগুলো থেকে বিপদের সম্ভাবনা দেখা শুরু করলাম, তখিনি মনে হলো হয়তো এই সার্বিক একক পরিচয়টি দেশের নির্মাতারা ইচ্ছে করেই রাখেননি এই বিপদগুলোর আশংকা করে। ইচ্ছে করেই সমস্ত দপ্তর গুলোকে জোড়েন নি, যাতে একত্রিত (৩৬০ ডিগ্রি) টোটালিটারিয়ান শাসন ব্যবস্থা না তৈরী হওয়ার সুযোগ থাকে। বরং বেশি বেশি করে স্বাধীন ও বিচ্ছিন্ন সরকারি সংস্থা (যেমন প্রধানত আরবিআই, বিচারব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি) তৈরী করেছেন।
আমি তাই সার্বিক একক পরিচয় ভাবনার বিরুদ্ধে (তার সুবিধে গুলো মাথায় রেখেই)।
এবি'র অনুরোধটায় "... অরিত্র যদি আলোচনা করেন তো ভাল হয়" আসছি এরপর।
dc | 171.79.***.*** | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:৫৯742399
বাঃ অরিত্র একেবারে হাতুড়ির মাথায় পেরেকটা ঠুকেছেন। কোন নাগরিকের একটা সিংগল ন্যাশানাল আইডেন্টিটি কার্ড থাকা উচিত কিনা, সেটা আধার বিতর্কের শুরুতে একটা কোর ইস্যু ছিল। আধারের ইউএসপি ছিল বায়োমেট্রিক বেসড আর অনলাইন ভেরিফিকেশান, কাজেই এই ইস্যু নিয়ে নৈতিক আর ইমপ্লিমেনটেশনাল, দুরকম আপত্তিই উঠেছিল। নৈতিক, কারন এটা সিভিল রাইট লঙ্ঘন করে (প্রাইভেসি আর অ্যানোনিমিটি সংক্রান্ত নানা ব্যাপার)। ইএফএফ এর একটা লিংক চট করে পেলাম, তবে এ নিয়ে প্রচুর পেপার লেখা হয়েছে। আপাতত ইএফএফ এর লিংকটা দিয়ে রাখিঃ
আর ইমপ্লিমেনটেশানের দিক থেকে আপত্তি উঠেছিল কারন ভেরিফিকেশানটা ডিজিটালি হয় (মানে ইন্টারনেট থাকতে হবে), কাজেই কোনরকম টেকনোলজিকাল সমস্যা হলে আর ঐ একটামাত্র আইডি কার্ড ফেল করলে লোকে আর সার্ভিস পাবে না, অর্থাত সিংগল ন্যাশানাল আইডেন্টিটি কার্ড হলো বাই ডিজাইন এক্সক্লুশনাল।
আধার নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়, দাসত্বের প্রমাণ। নাগরিক বা অ-নাগরিক বসবাসকারী উভয়েই আধার করতে পারেন এবং সেটাই চাওয়া হয়। কিন্তু তাহলে কি নাগরিকত্ব ও আধার-এর কোনোই সম্পর্ক নেই বা এই NPR, NRC ইত্যাদির? দেখা যাচ্ছে NPR, NRC এর উপযোগী একটা বদল নাগরিকত্ব আইনে এসেছে ২০০৩-এ, সেই বছরেই আবার সূত্রপাত UID বা আধার-এর। এবার কয়েকদিন আগে যে আধার নিষ্ক্রিয়করণের ঘটনা ঘটলো তাতে বলা হয়েছে বসবাস সংক্রান্ত নথি জমা করতে। আমি নিশ্চিত জানি না সেখানে কোনো ব্যক্তি 'কি হিসেবে' বসবাস করছেন, অর্থাৎ নাগরিক নাকি নন নাকি শরণার্থী সেটাও জানাতে হবে। আর সেটা হলেই NPR, NRC এর ভিত্তি তৈরী। আসাম। অর্থাৎ নাগরিকত্বের প্রমাণ নয় (হবে কী করে, তেমন কোনো ভেরিফিকেশন ছাড়াই প্রাইভেট ছোটোখাটো সংস্থার সাহায্যে তথ্য নেয়া হয়েছিল, মূল লক্ষ্য ছিল বায়োমেট্রিক সংগ্রহ করে রাখা), সে নাও হতে পারে, কিন্তু নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হয়তো আবশ্যিক, আর নাহলে আধার locked! এবারে সেই ব্যক্তি ব্যবস্থার বাইরে, কি করবে? ভালো ফাঁদ!
Invoking Jean-Jacques Rousseau, the attorney general said, we can’t “live in a vacuum as there is social contract as well. When the state is providing some facility, it is entitled to have your identity.” This strikes at the heart of what the French thinker Michel Foucault explicitly discussed in The Birth of Biopolitics regarding the perversion of Rousseau’s conception of the ‘social contract’ since the 18th century. To equate “facility” with “identity” is to argue that citizens should give up their natural rights for purely utilitarian reasons determined by the government. It compromises the political value of the social contract, suggesting that the citizen trade her rights for securing benefits. In Rousseau’s theory of social contract, the idea is based on the legitimacy of the original sovereign, the people, who represent the general or collective will in a democracy. To coerce popular consent asking citizens to comply with the will of the government is to disregard that contract.
আপনি তো নাগরিক রাষ্ট্র সম্পর্ক, নাগরিক অধিকারের দিক থেকে নৈতিক আপত্তির খুব মূল জায়গাটা আলোচনায় এনে দিয়েছেন।
"এখন সেখানে "আপনার" সম্বন্ধে কিছু তথ্য যদি রাখা থাকে, তাকে অন্যান্য জায়গায় আপনার পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে | কিনতু তার মানে এই নয় যে সে জিনিস "আপনি" কে, তার পরিচয়পত্র, আপনার লাইসেনস কেড়েও নেয়া হতে পারে, তাতে আপনার পরিচয় লুপ্ত হবে না, আপনি গাড়ি চালাতে পারবেন না এইমাত্র। পাসপোর্ট যেমন আপনার "নাগরিকত্বের" পরিচয়। তাতে "আপনি" কে, তার একটা আংশিক পরিচয় পাওয়া যায় মাত্র | সেইরকম "আধার" পরিচয়পত্র দিয়ে কিসের পরিচয় পাওয়া যায়, এবং তাতে কার কি আসে যায়, এইটা নিয়ে অরিত্র যদি আলোচনা করেন তো ভাল হয়। তখন ওজর আপত্তিগুলো বেশ বোঝা যেতে পারে |"
এবি, সুন্দর জায়গাটা ধরিয়েছেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মতো সাধারণ ডকুমেন্ট বা পাসপোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট দুটোকেই আমরা সাধারণ অর্থে পরিচয়পত্র বললেও আসলে তারা ঠিক 'পরিচয়' গঠন করে না, সমাজে বা বিশ্বে আমার যে পরিচয় বা আরো পরিষ্কার করে বললে পরিচয় সম্পর্কীয় তথ্য (নাম, লিঙ্গ পরিচয়, ঠিকানা, ছবি বা নাগরিকত্ব) সম্পর্কীয় তথ্য ইত্যাদি attest (শংসায়িত) করে। এই কাজ আধারও করে (নাগরিকত্ব বাদ দিয়ে)।
ফলে আমার ডিএল, পাসপোর্ট বা আধার cancel বা expire হলেও সমাজে আমার পরিচয়টি বদলে যায় না। পাসপোর্ট গেলেও নাগরিকত্বও খোয়া যায় না, শুধু প্রমাণটি খোয়া যায় (অবশ্য reverse is not true, নাগরিকত্ব গেলে পাসপোর্টও যায়)। তাই যারা আমাকে সামনাসামনি চেনেন বা যেখানে (যেমন ব্যাংকে) আমি এই পরিচয়পত্রের এটাস্টেড ফোটোকপি (বা সফটকপি, **কিন্তু কোনো সিস্টেম লিঙ্কিং নয়**) দিয়েছি সেগুলো বদলে যায় না; তারা আমাকে একই নামে চিনবে, একই ঠিকানায় যোগাযোগ করবে। ব্যাংক অবশ্য কিছুদিন পরে re-KYC করতে বলবে (যেহেতু কারুর নাম বা ঠিকানা পরিবর্তন হতে পারে) এবং তখন আমাকে ভ্যালিডিটি রয়েছে এমন একটি ডকুমেন্ট দিতে হবে। কিন্তু ততদিন কিছু বলবে না, ব্যাংক 'আমার' authentication করে সই (ও ছবি) বা পাসওয়ার্ড পিন দিয়ে, সেটা ভুলে গেলে আমাকে চিনতে অস্বীকার করবে।
এবারে যখন আমরা বলছি "আধার" একটি পরিচয় গঠন করে, তখন "পরিচয়" বলতে আমার সামাজিক পরিচয়কে বোঝানো হচ্ছে না, প্রাথমিভাবে UIDAI এর ভাণ্ডারে একটি পরিচয় গঠন হচ্ছে যা রাষ্ট্র তার সমস্ত ব্যবস্থার জন্যে ব্যবহার করছে। অর্থাৎ "ব্যবস্থার মধ্যে" আমার একটি পরিচয় গঠিত হচ্ছে। ঠিক যেমন গুগুলের সমস্ত সফটওয়্যার সার্ভিস গুলোয় (জিমেল, ইউটিউব, ক্যালেন্ডার থেকে ড্রাইভ ইত্যাদি) আমার একটা পরিচয় তৈরী হচ্ছে গুগুল অ্যাকাউন্ট-এর (জিমেল আইডি/পাসওয়ার্ড) ওপর ভিত্তি করে "গুগুলের ব্যবস্থার মধ্যে"। আমার জিমেল অ্যাকাউন্টটি গেলে যেমন গুগুল ব্যবস্থায় আমার সেই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে জড়িত সব সার্ভিস সাবস্ক্রিপশন ডেটা সব চলে যায়। ঠিক তেমনি 'আধার পরিচয়' দিয়ে লিংকড ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ফোন কানেকশন, প্যান আর যা কিছু এখন আছে (এবং ভবিষ্যতে হতে চলেছে) সেইসব কিছু জুড়ে গোটা ডিজিটাল ব্যবস্থাটি তৈরী হয়। সেই ব্যবস্থা আমায় নয়, আমার পরিচয়টিকে চেনে। সুবিধে, পরিষেবা, অধিকার, 'ব্যক্তি আমি' সরাসরি পাইনা, পায় আমার 'পরিচয়'টি পায় (যেমন তার সঙ্গে লিংক করা ব্যাকের অ্যাকাউন্ট)। পাসপোর্ট গেলে যেমন নাগরিকত্ব যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স গেলে গাড়ি চালানোর অধিকার। তেমনি আধার গেলে ব্যবস্থাটি থেকে আমার পরিচয় (অ্যাকাউন্ট) টি চলে যায় আর তার সঙ্গে সংযুক্ত সমস্ত সুবাধে পরিষেবা ও অধিকার চলে যায়।
**কোনো প্রতিষ্ঠানে পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড দেওয়া (আধার নাম্বারটি ঢেকে দিলে আরো ভালো) আর আধার নাম্বার **লিংক** করার মধ্যে তফাৎ আছে। প্রথমটা সাধারণ পরিচয়ের (নাম, ঠিকানার) প্রমাণ, প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক তৈরী হচ্ছে 'ব্যক্তি' আমার সঙ্গে। আর দ্বিতীয়টা হল ব্যবস্থার মধ্যে পরিচয়টির সঙ্গে সংযোগ, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরী হচ্ছে "ব্যবস্থার মধ্যে থাকা পরিচয়টির" সঙ্গে।
অরিত্র | 103.77.***.*** | ১৩ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৩৬743562
খুব প্রাসঙ্গিক একটা আর্টিকল পেলাম, বিচার বিভাগ একটু একটু করে চোখ খুলছে।
সিএস, আপনি যদি এই টইটা দেখেন তাহলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে বায়োমেট্রিক পরিচয় সংক্রান্ত তথ্যগুলো দিতে পারেন। এই পাতার আসল আলোচনাটা অবশ্য এগোয় নি আশানুরূপ ভাবে।
সিএস | 2401:4900:706a:66b6:b5cb:f1bf:2858:***:*** | ১৩ আগস্ট ২০২৪ ১৮:৪৯743563
আচ্ছা, দিয়ে দেব। এটাও একটু দেখতে হবে, ভারতের পাশের দেশগুলোতে আইডি রিলেটেড টেক ট্রান্সফারে ভারতের ভূমিকা আছে কিনা, আধার knowledge তাদের দেওয়া হয়েছে কিনা।
বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে,
মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা,
কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
আমাদের কথা
আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের
কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি
জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
বুলবুলভাজা
এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ।
দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও
লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
হরিদাস পালেরা
এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে
পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান
নিজের চোখে...... আরও ...
টইপত্তর
নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান।
এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর।
... আরও ...
ভাটিয়া৯
যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই,
সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক
আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
টইপত্তর, ভাটিয়া৯, হরিদাস পাল(ব্লগ) এবং খেরোর খাতার লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব, গুরুচণ্ডা৯র কোন দায়িত্ব নেই। | ♦ :
পঠিত সংখ্যাটি ১৩ই জানুয়ারি ২০২০ থেকে, লেখাটি যদি তার আগে লেখা হয়ে থাকে তাহলে এই সংখ্যাটি সঠিক পরিমাপ নয়। এই বিভ্রান্তির জন্য আমরা দুঃখিত।
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।
অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি।
যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।
মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি
বার পঠিত
সকলকে জানান
উপরে যে কোনো বোতাম টিপে পরিচিতদের সঙ্গে ভাগ করে নিন
গুরুচন্ডা৯ বার্তা
গুরুতে নতুন?
এত নামধাম দেখে গুলিয়ে যাচ্ছে? আসলে আপনি এতদিন ইংরিজিতে সামাজিক মাধ্যম দেখে এসেছেন। এবার টুক করে বাংলায়ও সড়গড় হয়ে নিন। কটা তো মাত্র নাম।
গুরুর বিভাগ সমূহ, যা মাথার উপরে অথবা বাঁদিকের ভোজনতালিকায় পাবেনঃ
হরিদাসের বুলবুলভাজা : গুরুর সম্পাদিত বিভাগ। টাটকা তাজা হাতেগরম প্রবন্ধ, লেখালিখি, সম্ভব ও অসম্ভব সকল বিষয় এবং বস্তু নিয়ে। এর ভিতরে আছে অনেক কিছু। তার মধ্যে কয়েকটি বিভাগ নিচে।
শনিবারের বারবেলা : চিত্ররূপ ও অক্ষরে বাঙ্ময় কিছু ধারাবাহিক, যাদের টানে আপনাকে চলে আসতে হবে গুরুর পাতায়, ঠিক শনিবারের বারবেলায়।
রবিবারের পড়াবই : পড়া বই নিয়ে কাটাছেঁড়া সমালোচনা, পাঠপ্রতিক্রিয়া, খবরাখবর, বই নিয়ে হইচই,বই আমরা পড়াবই।
বুধবারের সিরিয়াস৯ : নির্দিষ্ট বিষয় ধরে সাপ্তাহিক বিভাগ। ততটা সিরিয়াসও নয় বলে শেষে রয়ে গেছে ৯।
কূটকচা৯ : গুরু কিন্তু গম্ভীর নয়, তাই গুরুগম্ভীর বিষয়াশয় নিয়ে ইয়ার্কি ফুক্কুড়ি ভরা লেখাপত্তর নিয়েই যতরাজ্যের কূটকচা৯। কবে কখন বেরোয় তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।
হরিদাস পাল : চলতি কথায় যাদের বলে ব্লগার, আমরা বলি হরিদাস পাল। অসম্পাদিত ব্লগের লেখালিখি।
খেরোর খাতা : গুরুর সমস্ত ব্যবহারকারী, হরিদাস পাল দের নিজের দেয়াল। আঁকিবুঁকি, লেখালিখির জায়গা।
টইপত্তর : বিষয়ভিত্তিক আলোচনা। বাংলায় যাকে বলে মেসেজবোর্ড।
ভাটিয়া৯ : নিখাদ ভাট। নিষ্পাপ ও নিখাদ গলা ছাড়ার জায়গা। কথার পিঠে কথা চালাচালির জায়গা। সুতো খুঁজে পাওয়ার দায়িত্ব, যিনি যাচ্ছেন তাঁর। কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।
লগিন করে থাকলে ডানদিকের ভোজনতালিকায় যা পাবেনঃ
আমার গুরুঃ আপনার নিজস্ব গুরুর পাতা। কোথায় কী ঘটছে, কে কী লিখছে, তার মোটামুটি বিবরণ পেয়ে যাবেন এখানেই।
খাতা বা খেরোর খাতাঃ আপনার নিজস্ব খেরোর খাতা। আঁকিবুকি ও লেখালিখির জায়গা।
এটা-সেটাঃ এদিক সেদিক যা মন্তব্য করেছেন, সেসব গুরুতে হারিয়ে যায়না। সব পাবেন এই পাতায়।
গ্রাহকরাঃ আপনার গ্রাহক তালিকা। আপনি লিখলেই সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকরা পাবেন নোটিফিকেশন।
নোটিঃ আপনার নোটিফিকেশন পাবার জায়গা। আপনাকে কেউ উল্লেখ করুক, আপনি যাদের গ্রাহক, তাঁরা কিছু লিখুন, বা উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটুক, জলদি পেয়ে যাবেন নোটিফিকেশন।
বুকমার্কঃ আপনার জমিয়ে রাখা লেখা। যা আপনি ফিরে এসে বারবার পড়বেন।
প্রিয় লেখকঃ আপনি যাদের গ্রাহক হয়েছেন, তাদের তালিকা।