তুমি থামবে...! বলে ওকে শাসায় পলি। তপন নিজ আনন্দে প্লেটের চাউমিন শেষ করে, মাঝে দু একবার প্লেট থেকে খাইয়েও দেয় পলিকে।
এ অধিকার তপনকে দিতে পলিরও ভালোলাগে। তাই ও বাধা দেয়না। বরং আনন্দে কাছে এগিয়ে যায় আরো। এদিকে কথা বলতে বলতে অনেকটা সময় যায়। তপন জানায় ওকে বাড়ি পৌঁছে দেবে তাই পলি নিশ্চিন্তে আবারও উঠে পড়ে বাইকে। কলকাতার রাস্তায় হু হু করে ছুটে চলে ওদের বাইক...তখন সন্ধ্যা হয়ে এলো।
৪
অফিসটা সেভেন্থ ফ্লোরে, অগত্যা লিফটে নামতে হলো বেসমেন্টে। কোণের একটা টেবিল দেখে পলি বসে পড়ল। ভিড় মোটামুটি। টি টাইম চলছে বোধহয়। মেনুতে চোখ বুলিয়ে চা ও একটা সিঙারা অর্ডার করল পলি। মা তখনই ফোন করে জানাল, বাবার রাতের ওষুধটা আনতে হবে। ছবি বোন পাঠিয়ে দিয়েছে প্রেস্কিপশনের।
মা যদিও জিজ্ঞেস করল না, কতক্ষণ লাগবে। পলি নিজেই জানাল, ওর ফিরতে একটু দেরী হবে।
মনে মনে ভেবে রেখেছে আজ তপনকেও সারপ্রাইজ দেবে। সটান গিয়ে উপস্থিত হবে ওদের দোকানে। আগে কাকুকে একটা প্রনাম সারবে তারপর বাকি সব।
চা শেষ হলো অনেকক্ষণ তাও সময় যেতে চায়না। মোবাইলে টুং টুং করে দুটো মেসেজ এলো তপনের।
- একটু বেরিয়েছি। কেন?
- বাড়ি থেকে কিছু জানেনা। তাই জানতে চাইলাম।
‘আচ্ছা’ লিখে ফোন রাখতে যাবে ব্যাগে, তখনই ক্যান্টিনের টিভি স্ক্রীনে দেখতে পেল প্রিয় এক অভিনেতার মৃত্যু নিয়ে এখনও চর্চা চলছে। যে মানুষটা চলে গেছে তাকে তো আর ফিরে পাওয়া যাবেনা। হ্যাঁ দোষীকে শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। সুইসাইডে প্ররোচনা যে দেয় সেও সমান দোষী। দিনগুলো সত্যি ভালো যাচ্ছেনা।
পলির মধ্যেও ইদানিং একটা মনখারাপ প্রায়শই গ্রাস করে। ওর মনে হয় ও কিছুই করতে পারবেনা। বাড়ি থেকেও এই একই কথা রোজ শুনতে হয়, তাই আজ যদি চাকরিটা হয়ে যায় সবাই খুশি হবে। এসব ভাবতে ভাবতেই দেখল সময় হয়ে এসেছে। বিল মিটিয়ে আবারও লিফটে উঠে এলো সাত তলায়। রিসেপশনিস্টকে জিজ্ঞেস করে জানল, বড়বাবু সই করলেই টাঙিয়ে দেবে। উনি সবে মাত্র এসেছেন।
পলির ভেতরটা গুরগুর করতে লাগল। কিভাবে বোঝাবে এ অনুভূতি, সবার আগে কাকে ফোন করবে, মা না তপন?
৫
পৌলমীর অফিস, বোনের স্কুল নিয়ে এখন সকালগুলো খুব ব্যস্ততায় কাটে...তপনের আসা যাওয়াও বেড়েছে। দুই বাড়ি থেকে মেনে নিয়েছে ওদের ব্যাপারটা। খুব শিজ্ঞিরি আংটি বদল হবে এমনই ভাবছে বড়রা...
অফিসেও পৌলমীকে সবাই এক নামে চেনে...অনেক বড় বড় দায়িত্ব ওকে সামলাতে হয়। বড়বাবু কৌশিক সেনের ডান হাত হতে তাই বেশি সময় লাগেনি পলির।
যদিও সেদিন তপন ওকে বেশ করে রাগিয়ে দিয়েছিল...
- আমাকে আবার ভুলে যাস না যেন...আজকাল যা ‘কৌশিক’ ‘কৌশিক’ করছিস...
পলিও শাসিয়ে দেয় মস্ত অধিকারে।
ডেস্কে এখন সব লেখাই সামলাতে হয় পৌলমীকে। রোববারের সাপ্তাহিক কলামে নিয়মিত লিখছেন এক উঠতি লেখক। এই পত্রিকাটির বৈশিষ্ট্য এই যে নাম দেখে লেখা নেয়না। কনটেন্টই আসল...আর তা বাছাই প্রক্রিয়ায় পৌলমী নিজেও এখন একজন। ওই প্রথম সিফারিশ নিয়ে আসে, আর কৌশিক পাতা উল্টিয়েই তাতে মোহর লাগিয়ে দেয়।
প্রত্যেক রোববার এ লেখার জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে...ফেসবুকেও ওদের পত্রিকার পেজে লাইক সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কৃতিত্ব, এতে যুক্ত থাকা সকলেরই, তবে বেশি অংশের ভাগীদার নাকি পৌলমীই...কারণ সে জয়েন করার পর থেকেই পত্রিকার শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে – এমন কানাঘুষো করে অনেকেই...
যদিও লিস্ট টাঙানোর দিন পর পর দুটো ঘটনা ঘটে যায়।
খবরে দেখিয়েছিল বহুতল থেকে একটি মেয়ের ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্য ও সুভাষ পল্লীর একত্রিশ বছরের মেয়েটি স্বপ্ন পূরণ হওয়ার খুশিতে অনেক দেরী করে বাড়ি ফিরেছিল।
সেদিন পৌলমী ছিল দুজনেই...
এ খবর শুধু দুই জন জানে –
এক কৌশিক সেন, ও দুই - এ শহর কলকাতা...