এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  সিনেমা

  • বিক্রমাদিত্য মোতোয়ানের জুবিলী ও ভারতীয় সিনেমার প্রথম যুগ সম্পর্কে কিছু কথা

    Shuchismita
    সিনেমা | ২৬ মে ২০২৩ | ১০০৫ বার পঠিত
  • বিক্রমাদিত্য মোতোয়ানের জুবিলীর পাঁচটা এপিসোড দেখেছি। আর দেখার ইচ্ছে নেই। যতটুকু দেখেছি তার ওপর ভিত্তি করে কিছু কথা মনে এসেছিল যেগুলো ফেসবুকে লিখেছিলাম। তারপর দেখছি সব মিলিয়ে বেশ অনেকটাই লেখা হয়ে গেছে যেগুলো জড়ো করে এক জায়গায় রাখা উচিৎ। সেটাই এখন করব।

    সম্ভবত জুবিলীর উদ্দেশ্য ভারতীয় সিনেমার প্রথম যুগের প্রেক্ষাপটে সিনেমা জগতের লোকেদের নিয়ে একটা গল্প বলা। ১৯৪৭ এর দেশভাগের সময় থেকে জুবিলীর কাহিনী শুরু। গল্প শুরু হচ্ছে এক নায়িকাকে দিয়ে যিনি সিনেমার মাঝপথে সহ অভিনেতার সাথে ইলোপ করলেন। নায়িকার স্বামী স্টুডিও মালিকের মাথায় হাত। যাঁরা ভারতীয় সিনেমার প্রথম যুগ নিয়ে খোঁজখবর রাখেন তাঁরা জানেন বাস্তবিক এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল ১৯৩৫-৩৬ সালে। স্টুডিওটির নাম বম্বে টকিজ। মালিকের নাম হিমাংশু রাই। বিখ্যাত সেই নায়িকা দেবিকা রাণী ছবির নায়ক নিজামুল হাসানকে নিয়ে কলকাতায় পালিয়েছিলেন। কাজলের দাদু শশধর মুখার্জী তখন বম্বে টকিজের কর্মচারী। তিনি দেবিকা রাণীকে ফিরিয়ে আনেন। নিজামুল হাসানের বম্বে টকিজের কেরিয়ার শেষ হয়। ছবির নতুন নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন শশধর মুখার্জীর শালা কুমুদ গাঙ্গুলী যাঁর স্ক্রিননেম হয় অশোক কুমার। ছবির নাম "জীবন নাইয়া"। এই ঘটনার ছায়া অবলম্বনে শরদিন্দুর "ছায়াপথিক" নামে উপন্যাস আছে। শরদিন্দুর মিসোজিনি বেশ স্পষ্ট সেই বইতে।

    যাই হোক খুব ডিটেলে না হলেও, ভাসা ভাসা এই গল্প আমার জানা ছিল। গুরুচন্ডালীতে প্রকাশিত সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায় ভারতীয় ফিল্মের আদি যুগে কলকাতার নিউ থিয়েটার্সের ভূমিকার কথাও আগ্রহ সহকারে পড়েছিলাম। সেই লেখায় কানন দেবীর স্টারডমের কথা জেনে আমি কানন দেবীর আত্মজীবনী "সবারে আমি নমি" পড়ে দেখি এবং মুগ্ধ হই। কাজেই জুবিলীতে যখন একটি চরিত্রের মুখ দিয়ে দেবিকা রাণীর আদলে তৈরী চরিত্রকে বলা হয় "পুরুষ অভিনেতাদের দেখতেই দর্শক ভীড় করে", তখন আমার খটকা লাগে এবং আমি ইউটিউবে দেবিকা রাণীর কিছু ফিল্ম খুঁজে বার করে দেখি। অবাক হয়ে দেখি যে তিনটে ফিল্ম আমি খুললাম তার প্রতিটিতেই টাইটেল ক্রেডিটে নামগুলো আসছে এই ভাবে

    Bombay Talkies presents
    Devika Rani in
    "Movie name"
    by Niranjan Pal (writer)
    Produced by Himangshu Rai
    Directed by Franz Osten
    ...
    Music Director: Saraswati Debi
    Cast
    Devika Rani
    Ashok Kumar
    etc..
    সবার আগে দেবিকা রাণীর নাম। তার পরে বাকি সব। শুনেছি সুচিত্রা সেন বিপ্লব এনেছিলেন উত্তম কুমারের আগে তাঁর নাম লিখতে বাধ্য করে। দেবিকা রাণীর সময় সম্ভবত এই নিয়ে কোনো তর্কও হয়নি।

    যদিও জুবিলী দাবী করেনি যে সুমিত্রা কুমারী চরিত্রটিই দেবিকারাণী, কিন্তু যে কেচ্ছাটি দিয়ে গল্প শুরু হয়েছে সেটা তো হিমাংশু রাই, দেবিকা রাণী, নিজামুল হাসান, অশোক কুমার, শশধর মুখার্জী ইত্যাদিদের জীবন থেকে নেওয়া। কাজেই যারা ঘটনাটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তাদের কাছে সুমিত্রা কুমারীর থেকে দেবিকা রাণীর কোয়ালিটি আশা করা আশ্চর্য নয়। এখানে জুবিলী আমাকে বেশ হতাশ করেছে। সুমিত্রা কুমারীর দুর্বল চরিত্রচিত্রণের কোথাও দেবিকা রাণী নেই। দেবিকা রাণীর জীবনে বিপর্যয় অনেক ছিল, কিন্তু তিনি অসহায়, দয়ার পাত্রী ছিলেন না। উচ্চবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত মেয়ে অর্থাভাবে নয়, পারিবারিক লিগ্যাসিতে নয়, স্বামীর নির্দেশে নয়, সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় ফিল্মকে কেরিয়ার হিসেবে নিচ্ছেন এমন নজির তিরিশের দশকে তো বটেই, তারপরেও বহু বহু বছরে নেই। তার ওপর আবার প্রথমে তিনি নায়িকা হতে আসেন নি, এসেছিলেন টেকনিকাল কাজকর্ম, আর্ট ডিরেকশন ইত্যাদি করতে। ফিল্মকে ভালো না বাসলে এ সম্ভব নয়। ফিল্মও তখন একটা নতুন মিডিয়াম। বিশেষ করে ভারতে তো সেভাবে শুরুই হয়নি। উনি শুধু নিজের কেরিয়ার করছেন না, ভারতের অস্তিত্বও জানান দিচ্ছেন পৃথিবীর কাছে। চিন্তা ভাবনায় স্বাধীন, উচ্চাকাঙ্খী, কর্মঠ এবং unapologetic এক মহিলা । হিমাংশুর মৃত্যুর পর দেবিকা রাণী বম্বে টকিজ চালিয়েছিলেন। দিলীপ কুমার, মধুবালা তাঁরই আবিষ্কার। এর পরেই তো ইন্ডাস্ট্রি মেল ডমিনেটেড হয়ে যাবে। কাজেই দেবিকা রাণীর মত একটা চরিত্রকে দেখানোর সুযোগ পেয়েও সেই সুযোগ হাতছাড়া করা আমার বেশ গায়ে লেগেছে।হয়ত অসহায়, অত্যাচারিত মেয়েরা লড়াই করে সফল হচ্ছে বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে এমন গল্প বেশি জনপ্রিয়তা পায়। অত্যাচারিত হওয়ার আগেই একটা মেয়ে সফল হয়ে গেলে অথবা সফল মেয়ে বঞ্চিত হওয়ার গল্পতে বেশি জোর না দিলে সেই কাহিনী দর্শকের মনোরঞ্জন করতে পারে না। 

    আমি যখন ফেসবুকে এই পোস্ট করছিলাম তখন ভাবছিলাম আমার এত রাগ হচ্ছে মহিলা সুপারস্টারকে তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা না পেতে দেখে। অথচ জুবিলীর যা রিভিউ দেখছি সবই প্রশংসা আর উচ্ছ্বাসে ভরা। খারাপই লাগছিল। সেই সময় মিঠুন খুঁজে দিল thewire.inএ প্রকাশিত এই রিভিউটি (https://thewire.in/culture/jubilee-series-review)। এই রিভিউর লেখিকা ফিল্ম জগৎ নিয়ে গবেষণা করেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ উঠে এসেছে এনার লেখায়।

    দেবিকা রাণীর ফিল্মগুলো দেখার সময় সঙ্গীত পরিচালক সরস্বতী দেবীর নাম চোখে পড়ায় পুলকিত হয়েছিলাম। সঙ্গীত পরিচালক বলতে তো পুরুষমানুষের চেহারাই চোখে ভাসে। মহিলা সঙ্গীত পরিচালক এমনকি এখনও ব্যতিক্রমী। thewire.inএ প্রকাশিত এই রিভিউটি প্লেব্যাক সিংগিং এর ব্যাপারে আমার আগ্রহকে উসকে দিল। জুবিলীতে দেখানো হয়েছে বম্বে টকিজের মালিক হিমাংশু রাইয়ের আদলে তৈরী চরিত্রটি এবং বিনোদ দাস (অশোক কুমার ও শশধর মুখার্জীর সংমিশ্রন) প্লেব্যাক ও গানে লিপ দেওয়ার কথা প্রথম ভাবলেন। দুজনের কেউই সঙ্গীত পরিচালক নন। প্রথম প্লেব্যাকের ঘটনাটি ঠিক এভাবে ঘটেনি। আমার তথ্যের মূল উৎস https://www.artsandcultures.org/.../history-of-playback... । সেই সাথে আমি এই সিনেমা ও মানুষগুলো সম্পর্কে অন্য সোর্স থেকেও পড়াশোনা করে কিছুটা ভেরিফাই করার চেষ্টা করেছি। কারোর কাছে যদি অন্যরকম তথ্য থাকে তাও সানন্দে শুনবো।

    একথা মনে হয় সবাই জানে যে আদি যুগে নির্বাক ছবি তৈরী হত। নির্বাক ছবি প্রদর্শনের সময় অর্কেস্ট্রা বাদনের কথাও শুনেছি। ছবির সাথে শব্দ যোগ করা প্রথম ভারতীয় ফিল্ম হল ১৯৩১ সালের আলম আরা। সেই ছবিতে সাতটা গান ছিল। গানগুলো গেয়েছিলেন অভিনেতা অভিনেত্রীরাই এবং তার রেকর্ডিং হয়েছিল অন্য সংলাপের সাথেই। পড়েছি আলম আরা যে স্টুডিওতে তোলা হয়েছিল সেটা ছিল একটি রেললাইনের পাশে। ট্রেনের আওয়াজ এড়ানোর জন্য রাতে শুটিং হত। তা সত্ত্বেও রেকর্ডিং খুব ভালো হয়নি। বাইরের আওয়াজ এসে যেত। যাঁরা অভিনয় করতেন তাঁরা খুব বেশি নড়াচড়া করার সুযোগ পেতেন না। জুবিলীতে এই অসুবিধের কথা দেখানো হয়েছে।

    ১৯৩৫ সালে কলকাতার নিউ থিয়েটার্স "ধূপ ছাঁও" নামে একটি ফিল্ম বানায়। পরিচালক নীতিন বোস। সঙ্গীত পরিচালক রাইচাঁদ বড়াল। সাউন্ড রেকর্ডিস্ট মুকুল বোস। পাহাড়ী সান্যাল এই সিনেমার একজন অভিনেতা। কলকাতা থেকে সেই সময় হিন্দী ছবি তৈরী হত এবং তা সারা ভারতে দেখানোও হত। এই সিনেমাতে গান আগে রেকর্ড করা হল। তারপর অভিনেতারা শুটিংএর সময় সেই গানে লিপ দিলেন। এটাই ভারতীয় সিনেমায় প্রথম প্লেব্যাক। তখনও আলাদা করে প্লেব্যাক সিঙ্গার ছিল না। অভিনেতারাই আগে গানটা গেয়ে রেকর্ড করে রেখেছিলেন। অভিনয়ের সময় সেই রেকর্ডিং বাজানো হল পিছনে। ক্যামেরার সামনে সেই গানে লিপ দেওয়া হল। সাউন্ড রেকর্ডিংএর ত্রুটি এড়ানোই তখন প্লেব্যাকের উদ্দেশ্য।

    এর পরের বছর, ১৯৩৬ এ বম্বে টকিজ বানালো "অচ্ছুত কন্যা"। একটি দলিত মেয়ে ও ব্রাক্ষণ ছেলের প্রেমের গল্প। এই ফিল্মের সঙ্গীত পরিচালক সরস্ব্তী দেবী প্লে ব্যাক গানে একটি নতুন মাত্রা যোগ করলেন। যাঁরা অভিনয় করতেন তাঁরা সকলেই সুগায়ক ছিলেন না। অথচ তাঁদের দিয়েই গান গাওয়ানোর রেওয়াজ। সরস্ব্তী দেবী রেকর্ডিংয়ের সময় গানের দুর্বল অংশগুলোকে যন্ত্রানুসঙ্গ দিয়ে ভরিয়ে দিলেন। "অচ্ছুত কন্যা"র ম্যায় বন কি চিড়িয়া গানটি খুব বিখ্যাত হয়।
    দেখা যাচ্ছে প্লেব্যাক সিংগিং এসে গেলেও প্লেব্যাক সিংগার তখ্নও আসেনি। প্লেব্যাক সিংগার আসতে আরও দশ বছর সময় লাগবে এবং তা হবে ধাপে ধাপে। কিছু অভিনেতা ও গায়ক আসবেন (যেমন নূরজাহান, তালাত মাহমুদ) যাঁরা নিজেরা যেখানে অভিনয় করছেন সেখানে গান গাওয়ার সাথে সাথে অন্য অভিনেতাদের জন্যও গাইতে শুরু করবেন। তারপর আসবেন পেশদার প্লেব্যাক সিংগাররা যাঁরা নিজেরা অভিনয় করলেন না, অন্যের হয়ে গাইলেন। শামশাদ বেগম ও মান্না দে (১৯৪১) এই তালিকায় জনপ্রিয় নাম। তারপর এলেন মহম্মদ রফি (১৯৪৪), গীতা দত্ত (১৯৪৬)। ১৯৪৮ এ এলেন, দেখলেন ও জয় করলেন লতা মঙ্গেশকর। প্রথম দিকে প্লেব্যাক সিংগারদের নাম প্রকাশ পেত না। তারপর তো তাঁরা এতই জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন যে অভিনেতাদের ছাড়িয়ে তাঁদের জন্যও হিট হয়ে গেল কত সিনেমা।
    ধূপ ছাঁও সিনেমা থেকে ভারতীয় সিনেমায় প্রথম প্লেব্যাকের ক্লিপ এখানে দিলাম। গান গেয়েছিলেন পারুল বোস, সুপ্রভা সরকার, হীরামতি দুয়া, ও সম্ভবত উমাশশী। পুরুষ গায়কটি সম্ভবত কৃষ্ণচন্দ্র দে। সেক্ষেত্রে একে আধুনিক প্লেব্যাকেরও প্রথম নিদর্শন বলা চলে কারণ কৃষ্ণচন্দ্র দে অভিনয় করেন নি এখানে।

     
    জুবিলী সম্পর্কে আরও একটি অস্বস্তির কথা বলে আপাতত শেষ করব। এই ছবিটিতে জুবিলীর একটি দৃশ্য দেখা যাচ্ছে যেখানে জুবিলীর তিন প্রধান পুরুষ চরিত্রের একজন ১৯৪৭এর দেশভাগের সময় পাকিস্তান থেকে মুম্বইতে আসছেন। এটা রিফিউজি ক্যাম্পের সামনের দৃশ্য। আমার বিশ্বাস এই ছবিতে ছেলেটিকে যে টি-শার্ট পরানো হয়েছে এবং তার হাতে যে চামড়ার সুটকেসটি আছে সেগুলো ১৯৪৭ সালের ভারতীয় ফ্যাশনে ছিল না। 
     
    টিশার্টের ইতিহাস সম্পর্কে প্রচলিত মত হল বিশ শতকের প্রথম দিকে নাবিকদের জন্য এই জামা প্রথম তৈরী হয়। নাবিকরা এই জামা পরে ডেকের ওপরে ঘুরে বেড়ালেও সাধারণ মানুষ ভিতরে পরার জামা হিসেবেই টিশার্ট ব্যবহার করতেন। ১৯৫১ সালের "আ স্ট্রীটকার নেমড ডিজায়ার" সিনেমার পর থেকে বাইরে পরার জামা হিসেবে টিশার্ট জনপ্রিয়তা পেতে থাকে ধীরে ধীরে। কিন্তু সেই সময়েও যা টিশার্ট পরা ছবি পাচ্ছি সেগুলো টাইট ফিটিং, ছোট হাতার নিচে বাইসেপস বেরিয়ে থাকে - এইরকম। এই ছবির মত ঢিলেঢালা ও কনুই পর্যন্ত হাতাওয়ালা নয়। ১৯৫১ সালের আওয়ারা সিনেমাতে রাজ কাপুর ও অন্য চরিত্র অভিনেতাদের গোলগলা ডোরাকাটা টিশার্ট পরা অবস্থায় দেখা যায়। সেই ছবিও রইল। ভারতে কবে থেকে টিশার্ট পরা হচ্ছে সে বিষয়ে কোনো আলোচনার খোঁজ এখনো পর্যন্ত পাইনি। আমার লেখা পড়ে কেউ খোঁজ দিতে পারবেন এই আশাতেই টুকরোটাকরা ভাবনাচিন্তাগুলো এখানে জড়ো করা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Amit | 163.116.***.*** | ২৬ মে ২০২৩ ০৪:৩২740160
  • জুবিলি তো আদৌ কোনো ডকু সিরিজ নয়- জাস্ট ফিক্শন। সেটা টাইটেল এই বলে দেওয়া আছে। এক্ষেত্রে এতো ঐতিহাসিক একুরেসি আদৌ আশা করা হচ্ছে কেন ? আঁধি সিনেমাটা কি ইন্দিরা গান্ধীর বায়োপিক ? 
  • hu | 24.53.***.*** | ২৬ মে ২০২৩ ০৫:৫৩740161
  • ঠিক। বায়োপিক নয়। তবে ১৯৭০ সালের কোনো চরিত্রের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেওয়া যায় না। রাধানাথ শিকদারের কৃতিত্ব জর্জ এভারেস্টকে দেওয়া অনুচিত। নারী-পুরুষ সমান ভাবে কাজ করছে যে ইন্ডাস্ট্রীতে সেখান থেকে খুঁটে খুঁটে মহিলা অ্যাচিভমেন্টগুলোকে বাদ দেওয়া দৃষ্টিকটু। কেউ কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও বলতে পারেন। আমি জুবিলীর সমালোচনা লিখতে বসিনি। এটা যে ফিকশন, এমনকি সময়টাও শুরু হয়েছে ১৯৪৭ থেকে এ আমি লক্ষ্য করিনি এমন নয়। সমস্যা হল এই ধরনের গল্পে যেখানে কিছুটা কল্পনা আর কিছুটা সত্যি মিলিয়ে মিশিয়ে পরিবেশন করা হয় সেগুলো দেখে দর্শক (বা পাঠক) বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। আমার মনে হয়েছে জুবিলী দেখে খুব একটা খোঁজখবর না রাখা দর্শকের মনে হতে পারে ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রী চিরকালই মেল ডমিনেটেড ছিল অথবা এক্জন স্টুডিও মালিক এবং একজন অভিনেতার বুদ্ধিতে প্লেব্যাক গানের উদ্ভাবন হয়। দুটোর কোনোটাই যেহেতু আমি যতদূর জানি সত্যি নয় তাই যেটুকু জেনেছি লিখে রাখলাম। ভবিষ্যতে যদি আমার ধারণার পরিবর্তন হয় বা নতুন কিছু জানতে পারি, সেটাও লিখব।
  • r2h | 192.139.***.*** | ২৬ মে ২০২৩ ০৬:১২740162
    • hu | 24.53.190.120 | ২৬ মে ২০২৩ ০৫:৫৩
    • ...নারী-পুরুষ সমান ভাবে কাজ করছে যে ইন্ডাস্ট্রীতে সেখান থেকে খুঁটে খুঁটে মহিলা অ্যাচিভমেন্টগুলোকে বাদ দেওয়া দৃষ্টিকটু। কেউ কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও বলতে পারেন।
     
    এইটা আমারও খুবই আশ্চর্য লাগে। মোটামুটি ষাট সত্তরের দশকে যে শিল্প তুমুল মেল ডমিনেটেড তার মাত্র কয়েক দশক আগে ছবিটা কত অন্য রকম ছিল - সেটা জেনেও কৌতুহল হবে না - এ একটু আশ্চর্য ব্যাপার, আর আজকালকার ওটিটির স্মার্ট দেখতে সিনেমা যারা বানান তারা এইটুকু গবেষণা করেননি সেটাও অবিশ্বাস্য।
    কেন ওরকম ছিল, কী করে পাল্টালো সেসবের নিজের মত করে ব্যাখ্যা বা ধারনা করা যায়। কিন্তু এখনকার পরিচালক ইত্যাদি যাদের বাজেট রিসোর্স নিশ দর্শক সবই আছে তারা এই অপলাপগুলি করেন কেন তার ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

    কদিন আগে ক্কলা নিয়ে সৈকতদা লিখেছিল, ঐটাও মনে পড়লো।
  • Amit | 163.116.***.*** | ২৬ মে ২০২৩ ০৭:০১740163
  • মেল ডমিনেশন টা সারপ্রাইজিঙ কেন ? যেখানে ইকোনমিক বা ক্ষমতার স্টেক বেশি , বিজনেস হোক কি রাজনীতি কি ক্রাইম বা সাইন্স রিসার্চ - সব জায়গাতেই তো মেল্ ডমিনেশন আছে- শুধু ইন্ডিয়া নয় - গোটা পৃথিবীতেই। ইকুয়ালিটি আসতে এখনো অনেক বছর। ফিল্মি দুনিয়া আলাদা হবে কেন ? 
     
    একটা ইন্দিরা গান্ধী বা মমতা বা শেখ হাসিনা বা জয়ললিতা র উদা দিয়ে তো পুরো সোসাইটি কে একুয়াল বলা যায়না। এনারা ব্যতিক্রমই।  তেমনই দেবিকা রাণী ও। 
  • hu | 24.53.***.*** | ২৬ মে ২০২৩ ০৮:২৭740164
  • অমিতবাবু, উচ্চশিক্ষিত মহিলা হয়ে ফিল্মকে কেরিয়ার হিসেবে বেছেছেন সেই হিসেবে দেবিকা রাণী ব্যতিক্রম হলেও স্টারডমের দিক থেকে দেবিকা রাণী মোটেই ব্যতিক্রম নন। তিরিশের দশকে একাধিক মহিলা সুপারস্টার ছিলেন। https://thewire.in/culture/jubilee-series-review - এই নিবন্ধটায় তার বিশদ বিবরণ পাবেন। আমি একটা ছোট্ট ছবি শেয়ার করছি এই নিবন্ধটা থেকে। এতে ১৯৩২ সালের কিছু মহিলা ও পুরুষ আর্টিস্টের পারিশ্রমিক আছে। নিজেই দেখে নিন, মহিলারা পুরুষ স্টারদের চেয়ে অন্তত চারগুণ রোজগার করতেন। এই লিস্টে পৃথ্বীরাজ কাপুর সামান্য পরে শুরু করলেও ডি বিলিমোরিয়া কিন্তু মহিলা শিল্পীদের সমসাময়িক এবং সে সময়ের বিখ্যাত হিরো। সৈকতদার লেখায় পড়েছি কানন দেবী অশোক কুমারের সাথে ফিল্ম সাইন করেছিলেন প্রতীকী এক টাকা বেশি পারিশ্রমিক নিয়ে।
     


    এছাড়াও শুধু অভিনয় বা গান নয়, বম্বে টকিজের সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন একজন মহিলা - সরস্বতী দেবী। ভারতীয় সিনেমায় প্রথম প্লেব্যাকে তাঁর ভূমিকার কথাও আমি লিখেছি। এতজন মহিলা যেখানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন সেখানে তাঁদের কি আর ব্যতিক্রম বলা যায়?
  • hu | 24.53.***.*** | ২৬ মে ২০২৩ ১৯:৫৮740165
  • তপন সিনহার স্মৃতিকথা থেকে নিউ থিয়েটার্সের শব্দযন্ত্রীদের গল্প। এঁদের মধ্যে পরিচালক নীতিন বোস ও সাউন্ড রেকর্ডিস্ট মুকুল বোসের কথা গতকাল লিখেছিলাম ভারতের প্রথম প্লেব্যাক গানের প্রসঙ্গে।
     
     
     
  • Kishore Ghosal | ১৫ জুন ২০২৩ ১১:৪৩740230
  • লেখাটা পড়ে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারলাম। আপনি এত রিসার্চ করেছেন/করছেন - এ বিষয়ে সুন্দর একখানি গ্রন্থ লিখতে শুরু করুন না - আমরা গুরু-তে ধারাবাহিক পড়ে আনন্দ পাই। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন