এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দুর্গাপূজোর অন্য গল্প (৭)

    Mousumi Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৪৩৪ বার পঠিত
  • মহাষ্টমীর সকাল। স্নান সেরে বাঁড়ুজ্যে ছাড়া আমরা সকলেই মণ্ডপে। বাঁড়ুজ্যেদের অফিস তো ছুটি নেই। একটাই ছুটি দশমীর দিনে, দশেরার ছুটি। করবার কিছুই নেই। সম্ভব হলে অফিস থেকে সময়মতো এসে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে যাবে। নাহলে অফিস চত্বরেও নবরাত্রি পূজো হচ্ছিল, সেখানেই সেরে নেবে। তারপর দুপুরে সরাসরি মণ্ডপে পৌঁছে যাবে।
     
    অষ্টমী পূজো শুরু হয়ে গিয়েছে। মা যথারীতি গিয়ে পূজোর যোগাড়ে হাত লাগাল। পূজোর মন্ত্র, ঢাকের আওয়াজ, ধুনো, ফুল, ফল ও নতুন জামাকাপড়ের গন্ধ - সবকিছু  মিলেমিশে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পুরোহিত মশাই পুষ্পাঞ্জলির জন্য তৈরী হতে বললেন। পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার জন্য মহিলারাই বেশী। বাচ্চাদের ও স্কুল খোলা থাকে শুধুমাত্র দশমী ছাড়া। বেশ কিছু পরিচিত অবাঙালী মহিলা এই মণ্ডপেই প্রতিবছর পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে থাকেন। তাঁরাও ছিলেন আমাদের সঙ্গে। যা হোক, অঞ্জলি সেরে  প্রসাদ নিয়েই সন্ধিপূজোর প্রস্তুতি শুরু হল। সেই বছর বেশ তাড়াতাড়ি ছিল সন্ধিপূজোর সময়।

    এরপর দুপুরে ভোগের ব্যবস্থা সেদিন। বাচ্চারা স্কুল থেকে ফিরেছে। অফিস থেকেও বাঁড়ুজ্যেরা সকলেই চলে এসেছে। খিচুড়ি, বেগুনি, তরকারি , চাটনি, পায়েস, মিষ্টি - এই ছিল মেনু। এর মধ্যে সবথেকে আকর্ষণীয় পদ হল বেগুনি। ভিনরাজ্যে পকোড়া বা ভাজিয়ার নানা রকমফের প্রচুর পাওয়া গেলেও বেগুনি পাওয়া যায় না। বেগুনি হল বাঙালীর বাঙালিয়ানা ! তাই পুজোয় শখের পদ হল বেগুনি। অবাঙালীদেরও মহাষ্টমীর দিন নিমন্ত্রণ থাকত। ওঁরা বেগুনি ছাড়াও বাঙালী স্টাইলে রান্না খিচুড়ি ও পায়েস  খুব পছন্দ করেন।  পরবর্তীকালেও যেখানেই থেকেছি সর্বত্র দেখেছি এই দুটি পদ বিশেষ প্রশংসার অধিকারী হয় অবাঙালী সমাজে।

    খাওয়া সেরে ফিরতে প্রায় বিকেল হয়েই গেল। ঘরে ফিরেই সকলে বিশ্রাম নিলাম। সন্ধ্যায় আরতি। আরতির আগে আছে অবাঙালী মহিলাদের গর্বা নাচ। আবার আরতির পর সব মিলেমিশে আছে ডাণ্ডিয়া। সেই সময় এর কোনোটি সম্পর্কেই  আমার সাধারণ জ্ঞান মোটেও ছিল না। অথচ দুর্গাপূজোর মিটিংয়ে দুখানি নাম অনেক শুনেছি, এমনকি ডাণ্ডিয়া নাচ করবার জন্য আমার নামও একটু হলেই লেখা হয়ে যাচ্ছিল। তাই বেশ উৎসাহ বোধ করছি। শুধু তাই নয়, বাঙালীদের আয়োজিত পূজোতে আজ অবাঙালী মহিলারাও যোগ দেবেন বলে তাড়াতাড়ি পৌঁছতেই হল।

    গিয়ে দেখলাম মণ্ডপের সামনে ঘাসের উপর বেশ কয়েকজন ঘাগরা চোলি পরিহিতা মহিলা ঘুরে ঘুরে একটি গানের সঙ্গে নাচ করে যাচ্ছেন। গানটি কিছুই বুঝছি না। মনে মনে বেশ দমে গেলাম। পরে জানলাম গুজরাটি গান।  অদ্ভুত ছন্দে তালে তালে তাঁরা বেশ খানিক সময় ধরে নাচ করে গেলেন মা দুর্গাকে তাঁদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানানোর উদ্দেশ্যে। আমার বেশ ভালো লাগল। বোনেরও পছন্দ হল।

    আরতির সময় বাবা, মা কে নিয়ে বাঁড়ুজ্যে এসে পৌঁছল। পরদিন নবমীতে ছুটি নিয়েছে বাঁড়ুজ্যে – শুনে বাবা, মা খুব খুশী। মণ্ডপে এসেই আমাকে সেকথা জানান হল। একটু শান্তিতে  রাত পর্যন্ত মণ্ডপে থাকতে  পারব ভেবে ভালো লাগল।

    মাইকে ডাণ্ডিয়া নাচ ঘোষণা হয়ে গেল। বিভিন্ন বয়সের মহিলারা এবারেও একইরকম পোশাকে সেজে এসে গোল হয়ে দাঁড়াতে লাগলেন। সকলের হাতে দুটো করে ছোট লাঠি, এরই নাম ডাণ্ডিয়া বলে জানলাম। সেই মেয়ে দুটিও আছে।  আমাকে বলেও গেল, "কাকিমা দেখতে থাক। সামনের বছর তোমাকে করতেই হবে।" 

    অন্ধকার নেমে এসেছে। আকাশে নবমীর চাঁদ। বেশ শিরশিরে ঠাণ্ডা পড়া শুরু হয়ে গিয়েছে তখন। বয়স্করা সকলেই  হালকা চাদরে মাথা ঢেকে নিয়েছেন।  চারপাশে টুনি বাল্বের আবছা আলো। সামনে বেদীর উপরে আমাদের সেদিনের বড় আদরের উমার আজ পরিপূর্ণ মাতৃরূপ। কিছু আগেই শেষ হয়েছে সন্ধ্যারতি। তখনও ধুনোর ধোঁওয়ার গন্ধ বাতাসে। আমরা সকলে সারিবদ্ধভাবে চেয়ারে বসে। হিন্দী গানের সঙ্গে নাচ চলছে। আধো অন্ধকারে ঘাগরার জরি, চুমকি ঝলমলিয়ে উঠছে নাচের তালে তালে। গান বদলাচ্ছে, একটা থেকে আর একটা গান, মাঝখানে কোনোও বিরতি নেই, কখনও ধীর গতিতে,  কখনও দ্রুত লয়ে, ডাণ্ডিয়ার ঠুকঠুক মিঠে শব্দ ----- কেমন ঘোর লাগানো ---- খুব ভালো লেগে গেল...... দেখলাম, নিজের অজান্তেই পায়ে তাল ঠুকে যাচ্ছি...

    ক্রমশঃ
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন