নাঃ, আর না পেরে এই সুতোটা খুলেই ফেললাম।এককালে আম্রিগায় গাদা লাইফ স্টাইল ম্যাগাজিনের কন্টেন্ট দেখতে দেখতে মনে হত এই নিয়ে খিল্লি লেখা নামাব। তো সে দেখতে দেখতেই অনলাইনে বাংলাদেশের গাদা মিডিয়া কন্টেন্টের বন্যা হাজির হল। সেই 'জীবনশৈলী'র নামে গাদা চাটনি খবর, 'সায়েন্স' এর নাম করে হাবিজাবি। আর মোটামুটি আনন্দলোকীয় গসিপের আখড়া। তার থেকেও কোয়ালিটি বাজে, কন্টেন্ট, ফর্ম সবেতেই। গাদা ফেক খবরেরও ছররা!
তা, সেসব বেশিরভাগই ছিল ভুঁইফোঁড় সব সাইট, এখন আর আছে কিনাও জানিনা।
তারপর এই ক'বছর হল এপারেও ঢুকে পড়ল সেসব, কিন্তু বেশ ভাল ঘোমটার রাখঢাক রেখে। মানে প্রথম শ্রেণীর সংবাদপত্রের ই ভার্শন, যা লোকে ছাপানো কাগজেরই ডিজিটাল ভার্শন ভেবে পড়ে, সেই ইপেপারের সঙ্গে সমান্তরালেই এই কাগজগুলোর অনলাইন ভার্শন চালু হল, যা অনেকের কাছেই অনেকদিন অব্দি আলাদা বলে ধরাই পড়েনি। অথচ ইপেপারের pdf. এর থেকে এটাই সহজে কাগজের নাম টাইপ করলেই খোলে।
আর এই ডিজিটাল ভার্শনগুলো হয়ে উঠল এসব আবর্জনার আস্তাকুঁড়। অবশ্যই দুর্গন্ধ এড়াতে প্রচুর সুগন্ধী স্প্রে করা, চাটনি আর কুড়মুড়ের অবাধ সাপ্লাই, আর অবশ্যই অতি আকর্ষক তো বটেই। হেডিং ছবির চক্করে ক্লিক করার লোভ না হোক, কৌতূহল, আর এক দুবারের পর অভ্যাস বশতও হয়ত হাত যাবেই, আর তারপর তো সোশ্যাল মিডিয়ার আলগো অনুযায়ী সার্চ ইঞ্জিনের ফিডে এসব খবরই আসার চক্কর!
একটু লক্ষ করলে দেখা যাবে, বেশ কিছু ছক মোটামুটি বাঁধা। ট্র্যাশ সিরিয়ালগুলোর গল্পে এই হপ্তায় কী হল, বা কী হতে চলেছে, বা তাদের নায়ক নায়িকা খলনায়ক নায়িকারা কে সোশ্যাল মিডিয়ায় কী ছবি দিলেন, কী বললেন, কোনটার টিয়ারপি কোন হপ্তায় কত, এসব মোটামুটি বাঁধা।
আর তার সঙ্গে আছে নানাবিধ জীবনশৈলী 'বিজ্ঞান'.
আর আছে এইসব।
মানে, আগে ছাপা কাগজে রাশিফল টল বেরত, কিন্তু এগুলোই প্রবন্ধ, খবরের বিষয় হতে দেখিনি। এখনো হয় কিনা জানিনা। কিন্তু অনলাইন ভার্শনগুলোয় রমরমিয়ে এগুলোই ফিচার, আর্টিকল, স্টোরি!
এগুলোই নাকি হিট দেয়, রেভিন্যু দেয়। এই নাকি সারভাইভাল মডেল! তা, সে ডিম মুরগি প্রশ্ন আবারো এসে যায়। পাবলিক এগুলো খায়, তাই খাওয়ানো হচ্ছে, না মুখের সামনে ধরা হচ্ছে, তাই খাচ্ছে। আর এমনিতেও জানক ফুডের আকর্ষণ যে বেশি, সে আর বলতে, কিন্তু তা বলে যদি কেবলি জাংকই রাঁধা হয় আর বেড়ে নাকের ডগায় ঝোলানো হয় তো যা হবার তাই হচ্ছে! ওই সিরিয়াল টিয়ারপি ইত্যাদি নিয়েও একই কথা মনে হয়। ভাল কথা, টিয়ারপি র মত এগুলোর হিট দেখারও কোন উপায় আছে নাকি, মানে হপ্তায় হপ্তায় সার্ভে হয় নাকি?
অনেকদিন ধরে এগুলোর কিছু নমুনা জড়ো করব ভাবছিলাম, লেখারও ছিল আরো অনেক কিছুই, কিন্ত সে আর সময় করে করব করব ভেবে সময় আর আসেওনি। আজ এটা দেখে এতটাই মেজাজ খিঁচড়ালো, দুম্ করে টইটা খুলেই দিলাম।
এসব নমুনা একটু জমা হোক।
কতটা নেমেছে, নামছে একটু তো বোঝা যাবে।
ভেবেছিলাম, নির্মল আনন্দের টইতে রাখব কিনা। তা, নির্মল আর কই এসব! এখন তো ভাবছি, টইয়ের নামটা আস্তাকুঁড় দেব কিনা।
ও, নাঃ, লিনক দেব না। স্ক্রিনশট থাকুক। লিনকগুলোর এখান থেকে ভিসিট বাড়িয়ে এগুলোকে আরো 'হিট' করানোর 'পাপ' করাতে চাইনা!
গৌড়ীয় পুরাণে এই 'পাপে'র কোন শাস্তিবিধান আছে কিনা, খোঁজ নিতে হবে।