এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হাসপাতালে একদিন 

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৭৯০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • তোমাকে প্রথম যেদিন আমি  দেখেছিলাম, সেদিন তুমি মাক্স পড়ে ছিলে। আর সময়ই বা কতক্ষণ ছিল, খুব হলেও দশ থেকে পনেরো  সেকেন্ড। তোমরা আসলে আর চলে গেলে। আমি তোমার নামে কিছু  কথা  আগেই শুনেছিলাম, তাই একটু হলেও কৌতুহল ছিল তোমাকে দেখার জন্য। যখন তোমরা ঘরে ঢুকলে ব্যাগপত্র রাখার জন্য, তখন আমি একবার শুধু তোমার দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিই এই ভেবে যে, কেও যেন দেখে না ফেলে। কিন্তু, আজ যতটুকু তোমার সাথে কথা বলে তোমায় জানতে পারলাম, তাতে তোমার প্রতি আমার আগ্রহ বাড়তে থাকে। আমি যখন জেঠিমার সাথে কথা বলতে বলতে তোমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করি, দেখি তোমার কোনো ইচ্ছাই নেই কথা বলার আমার সাথে। তারপর আমি ভাবলাম,  আমি তো খারাপ দেখতে, কেনই বা কথা বলবে আমার সাথে? তাই আবার জেঠিমার সাথে কথা বলতে বলতে নিজেই নিজের জন্য হেসে ফেললাম। কত বোকা আমি। খুব ইচ্ছে করছিল তোমার মুখটা একবার দেখার জন্য, আর কথা তো বলবে না, তা আমি একরকম অনুমান করেই নিয়েছিলাম।  তারপর জেঠিমার সাথে কথা বলতে বলতে জানতে পারলাম, তুমি না খেয়ে আছো। খুব  ইচ্ছে করছিল আমি নিজে বাইরে গিয়ে তোমার জন্য কিছু জল খাবার কিনে এনে তোমার হাতে দিই। কিন্তু ইচ্ছে হলেও কোনো উপায় ছিল না আমার ।  কারণ আমি ঠিক হাঁটতে পারছিলাম না। তারপর চারপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ আশেপাশে  আছে কি না? দেখি কেউ নেই, যাকে বললে কিছু এনে দিবে। কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই একটা ছেলেকে, যে ছেলেটা আমার পাশে ঘুমায় তাকে। তাকে বলা মাত্র সে রাজি হলো, আমি দুটো কেক আনতে বললাম ত্রিশটাকা দামের গুলো। তারপর সে চলে গেলো এবং কিছুক্ষণ পরে কেক এনে আমার হাতে দিলো। তারপর কেকগুলো আমি জেঠিমাকে দিই। জেঠিমা আবার তাকে দিল এবং আমাকে অর্ধেক দেওয়ার জন্য বললো। আমি সাথে সাথেই বললাম -
     'না জেঠিমা, আমি এইমাত্র খেলাম, আর ঔষধ খেলাম কেবলই। তোমরা খাও, তোমরা না খেয়ে আছো।  দেখছো ক'টা বাজে এখন? দুপুর হয়ে গেছে।  তোমরা খাও।' 
    তারপর সে মাক্সটা খুললো এবং হাতে স্যানিটাইজ করে জেঠিমাকে খেতে দিলো। আমি লক্ষ্য করলাম মেয়েটা খুব একটা খারাপ না, যেরকমটা আমি কল্পনা করেছিলাম, তার থেকে বেশ মিষ্টি। হালকা- পাতলা, বেশ ভালোই।  জেঠিমাকে খাওয়ানোর পর সে চলে গেলো জল আনতে। তারপর জল নিয়ে আসার পর সে খাওয়ার আগে আমাকে খাওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করলো। কিন্তু আমি লজ্জা পাচ্ছিলাম। বললাম -
     'তুমি খাও। তুমি না খেয়ে আছো। আর আমার জন্য ভাত আনতে গেছে,  এখুনি চলে আসবে।' 
    তারপর সে খেতে শুরু করলো এবং মনে মনে কি ভাবলো জানি না, হয়তো একটু খারাপ ভাবতেই পারে, না ভাবার কিছু নেই। তারপর  আমি জেঠিমার সাথে বাড়ির ব্যাপারে কথা বলতে শুরু করলাম। তখন হয়তো ও একটু লক্ষ্য করছিল আর ভাবছিল, ওদের বাড়ির বিষয়ে এতো কথা বলছে কেন? তাও আবার বাড়ির সমস্যার কথা। যে কথাগুলো সাধারণত পরিচিত না হলে বলা যায় না। তারপর ও আর কি ভেবেছিল জানি না। আমি একটু লক্ষ্য করলাম ও কিন্তু তখন  আমাদের কথার মাঝে মাঝে  টুকটাক করে কথা বলছে।  এভাবে চলতে থাকা কথা বলার মাঝে তার সাথে একটু মিষ্ঠি তর্কও হয়ে গেল। তর্কের বিষয় ছিল - জন্মদিন, অন্নপ্রাশন নিয়ে। আমি বললাম -
    'আমাদের মতো পরিবারের জন্মদিন, অন্নপ্রাশন ঠিক  মানায় না। তা যদি করতে হয় বাড়িতে বাড়িতেই করা ভালো। একটু পায়েশ রান্না করে।' 
    কিন্তু ওর কথা -
     'আজকাল যে দিন এনে দিন খায়, তারাও জন্মদিন, অন্নপ্রাশন  করে থাকে। বেশ ধুমধাম করে।' 
    - 'হুম হতে পারে। কিন্তু জন্মদিনটা ঠিক মানায় না। ওটা একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে। এই জন্যেই বলছি, আমরাও তো মানুষ হয়েছি। কই আমাদের তো জন্মদিন, অন্নপ্রাশন করেনি। তাই বলে আমরা কি ঠিকঠাক ভাবে বড়ো হইনি?'
    - 'মোটেই না। এখন সবাই করছে।'
    এইরকম একটা মিষ্ঠি তর্ক করলাম ওর সাথে।  জানিনা ও কি ভাবলো আমাকে নিয়ে। হয়তো একটু অদ্ভুত ভাবতেই পারে, না ভাবার কিছু নেই। হয়তো নাও ভাবতে পারে। কেননা, কি এসে যায়- চিনি না, জানি না, কে না কে হয়? এইসব ও ভাবতেই পারে।  কিন্তু আমি ভাবছিলাম একটু অন্যরকম।  তাকে আমার বেশ ভালোই লেগেছিল কথা বলে, তার ব্যবহার দেখে। বেশ ভালো। কেন বলছি - যাকে আমি জেঠিমা বলছি, সে আসলে ওর মামি হয়।  আজকাল নিজের মেয়েরা আসে না অসুখে পড়লে বা বিপদে পড়লে, সেখানে মামির জন্য যদি হাসপাতালে এক বেডে থাকতে হয় এক সপ্তাহ ধরে, তাহলে তাকে নিঃসন্দেহে ভালো বলাই যেতে পারে। মেয়েটি বেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে সব কিছু গুছিয়ে রাখে। ওর মামির যত্ন নেয়, ঠিক মায়ের মতো। কখন ঔষুধ খেতে হবে, কিভাবে খেতে হবে, কখন জল খাবে, কখন ভাত খাবে, কখন খাবে না, কখন ফল খাবে, কখন শুকনো খাবার খাবে, কখন ভারি খাবার খাবে,  সব কিছু। খুব ভালো দায়িত্বশীল মেয়ে। ওর মামির কথায় ও হচ্ছে -
    'ডাক্তারের থেকেও বড়ো ডাক্তার।' 
    টাকা-পয়সার দিক থেকেও বেশ হিসেবি, কেন বলছি তার কারণ হলো- আমি যখন খাওয়ার কথা তাকে বলি, ও কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই মানা করে দেয়।  ও বলে-
     'এখুনি তো গাড়ি আসবে, বাড়ি গিয়ে খাবো। বাড়তি টাকা খরচা করে কোনো লাভ নেই।' 
    ওর মামি বলে- 
    'ও ওইরকমই, সাড়াদিন না খেয়ে থাকলেও কখনো বলবে না আমার  খিদে পেয়েছে।'
     আর যেটা না বললেই নয়, সেটা হলো বেশ দায়িত্ববান। নিজের জিনিসপত্রের প্রতি বেশ সজাগ। কোনো কিছু ছাড়া পড়লো নাকি, তা নিয়ে বেশ দায়িত্বশীল। ঔষুধ খাওয়ার আগে তা দেখে নেওয়া বা শুনে নেওয়ার দিক থেকেও বেশ চালাক-চতুর। তারপর সে হয়তো একটু আমাকে সন্দেহ করছিল এই ভেবে যে, কি হয়েছে এই ছেলের? কেননা, আমি বেশ ভালোভাবে জেঠিমার সাথে কথা বলছি, হাসাহাসি করছি, উঠছি, বসছি, বেড়াচ্ছি।  সে বুঝতেই পারছিল না আসলে আমার কি হয়েছে?  তার সন্দেহ দৃঢ় হয় তখন, যখন আমি তাদের সামনে ঔষধ খাই। আমার ঔষধ খাওয়া দেখে শেষে সে জিজ্ঞেস করেই ফেললো- 
    'তোমার কি হয়েছে?' 
    উত্তর দিতে আমি একটু  লজ্জা পাচ্ছিলাম, তাই একটু হেসে বললাম -
    'কিছু না।' 
    তারপর সে আর কিছু বললো না। হয়তো বুঝতে পেরে গেছে। কেননা আমি উপরে টি-শার্ট পড়ে থাকলেও, নিচে কিন্তু লুঙ্গি পড়েছিলাম। যেখানে সবাই সাধারণত পেন্ট পড়েছিল। তারপর আর সেরকম কোনো  কথা বলা হয়নি। কেননা, ততক্ষণে গেটের বাইরে গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে গেছে । তাই যাবার আগে শুধু বললো-
     'সাবধানে থেকো।' 
    তারপর  তারা সবাই চলে গেলো।  আর আমি সেখানেই বসে রইলাম। হয়তো আর কোনোদিনই  দেখা হবে না ওর সাথে । কিন্তু ও আমার কাছে একটা স্মৃতি হয়ে রইবে। খুব ভালো মেয়েটি। বেশ ভালো কথা বলে।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 68.184.***.*** | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১:৫০498451
  • প্রথমে ভেবেছিলাম এটা রঞ্জনদার লেখা। খুব অবাক লাগছিলো ভেবে যে এত কম সময়ে এত ভার্সেটাইল কনটেন্ট ও স্টাইল নিয়ে লেখেন কী করে! তারপরে ছবি দেখে বুঝলাম ইনি অন্য একজন রঞ্জন রায়। তবু, ভালোই লাগলো। বেশ লেখার স্টাইল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন