২০২০ সালে সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে কোভিড-১৯ অতিমারী, যার ফলে অনেকগুলো দেশে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়, বহু মানুষ মারা যান, আর্থিকভাবে ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হন আরও অনেকে। হু এর টাইমলাইন ধরলে গত বছর জানুয়ারি মাসে চীনের উহান কাঁচাবাজারে (যেখানে সব্জি, ফলমূল, মাছমাংস, বন্যপ্রাণী ইত্যাদির কেনাবেচা হয়) প্রথম সংক্রমনের খবর পাওয়া যায়। তারপর অতিদ্রুত তা অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। টাইমলাইন চাইলে এখানে দেখতে পারেনঃ
https://www.who.int/news/item/29-06-2020-covidtimeline
এই অতিমারীর ফল কি হয়েছে তা আমরা সবাই জানি, কিন্তু মুশকিল হলো, এটা কিভাবে শুরু হয়েছিল সে নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ ধোঁয়াসা রয়ে গেছে। অথচ এই শুরুটা জানা অত্যন্ত জরুরি, কারন তাহলে আমরা এর পরের এরকম কোন সংক্রমণ থেকে সাবধান হতে পারবো।
প্রায় প্রথম থেকেই দুটি সম্ভাব্য হাইপোথিসিস নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিলঃ
১। সার্স-কোভ-২ জীবানু বাদুড়ের দেহে পাওয়া যায়, অন্য অনেকগুলো সার্স ভাইরাসের মধ্যে এটি একটি। এরকম কিছু বাদুড় হয়তো উহানের কাঁচাবাজারে আনা হয়েছিল, সেখানে এই জীবানুটি প্যাঙ্গোলিন বা ঐ জাতীয় কোন প্রাণীকে ইনফেক্ট করতে সক্ষম হয়, এবং সেখান থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। একে বলা হয় স্পিসিস জাম্প বা zoonotic transmission. এর আগেও এরকম হয়েছে, উদাহরন অ্যানথ্রাক্স আর ইবোলা। এর বহু কারন আছে, যার মধ্যে ক্লাইমেট চেঞ্জ একটা কারন (চাইলে এই রিভিউ পেপারটা পড়ে দেখতে পারেনঃ https://ehp.niehs.nih.gov/doi/full/10.1289/ehp.0901389)
২। সার্স-কোভ-২ ল্যাবে ইন্ঞ্জিনিয়ার্ড বা পরিবর্তিত একটি ভাইরাস। বাদুড়ের থেকে পাওয়া কোন ভাইরাস সংগ্রহ করে (সন্দেহ করা হচ্ছে এটি RaTG13 ভাইরাস) তার ওপর গেইন-অফ-ফাংশান পরীক্ষা চালানো হয়, সেটিকে অনেক বেশী সংক্রামক বানানো হয়, তারপর কোনভাবে সেটি উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি বা WIV এর ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পড়ে।
এই টইটাতে এগুলো নিয়ে বিশদে আলোচনার ইচ্ছে আছে, অন্যদেরও যোগ দিতে অনুরোধ করছি। তবে তার আগে কয়েকটা ডিসক্লেমার দিয়ে দিঃ
আমি নিজে বায়োলজি, ভাইরোলজি ইত্যাদি নিয়ে খুব কম জানি, কাজেই অনেক ভুল করবো, অন্যরা সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে ভালো হয়। আর এই আলোচনায় যেটা চেষ্টা করবো সেটা হলো, "ফলো দ্য সায়েন্স, নট দ্য সায়েনটিস্ট"। অর্থাত ফ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা করবো আর কিছূ যুক্তিনির্ভর স্পেকুলেশানও থাকবে, কিন্তু কনস্পিরেসি থিওরি না হয়ে যায় সেই চেষ্টা করবো।
DC দারুন হচ্ছে এই টই টা। পুরোটা একেবারে পড়ে ফেললাম। আমারও প্রথমে হাইপোথিসিস 1 টাই বেশি জোরদার মনে হচ্ছিল। এখনো তাই।
তবে ল্যাব লিকের সম্ভাবনা আরো খতিয়ে দেখা দরকার। এমনকি এও হতে পারে যে দুটোই হয়েছে। শুরু থেকেই হয়তো দুটি বা তিনটি স্ট্রেন ছড়িয়েছে। কারন চায়নার ওয়েট মার্কেট অনেক দিন ধরেই চলছে নতুন নয়। হঠাৎ এদিকেও রিসার্চের রা আক্রান্ত হলো , আবার ও দিকেও ছ রালো । অড, ভে রি অড।
আরেকটা ঘটনা বলার, আমেরিকা অনেক দিন ধরেই জিও পলিটিক্স থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার প্রসেস এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক দিক থেকেও আমেরিকা বেশ সেল্ফ সাফিসিয়েন্ট। এমনকি তেলের জোগান ও টেক্সাস থেকেই হচ্ছে। সেমি কন্ড্যাকটর যুদ্ধেও চীন কে কোণঠাসা করে দিয়েছে। এখন গোল বাাদানোর মূল কারণ কি হতে পাারে ?
একটা হতে পারে যে এত লোক মরল, এত ক্ষতি হল কিন্তু কাউকে ভিলেন থাউড়ানো গেল না যে। ট্রাম্প কে কিছুটা ভিলেন বানানো গেছে কিন্তু ওর ওপর তো তেমন আর লোক দেখানো প্রতিশোধ নেওয়া যাবে না।
অপর দিকে চীনের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয় নি, বা জানা যাচ্ছে না। বেশ আছে। তাহলে এদের কে দোষী বানিয়ে যদি কিছু জরিমানা চাপানো যায়, বা নতুন আরো সাংসন। এইটা আমেরিকার মোটিভ হতে পারে।
সবই স্পেকুলেশন আপাতত।
চীনে ঠিক কীরকম সংখ্যক লোক এই সার্স কোভ-২ জনিত অসুখে মারা গিয়েছে সেই ব্যাপারে সঠিক তথ্য কি পাওয়া যায়?
গিয়েছেন
এইসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চেপে দেওয়ার কারণ কী?
আমেরিকা মনে হয়না ল্যাব এসকেপ তত্ত্ব নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ঘাঁটাঘাঁটি করতে খুব উৎসাহী ছিল; কারণ আমেরিকার কিছু ফেসিলিটিতেও গেন-অফ-ফাংশন রিসার্চ হয়। এনআইএইচ ফান্ডিং উহানে গেছে এটাও ঘটনা (যদিও ফাউচি বলছেন ব্যাট-হিউম্যান ইন্টারফেস সংক্রান্ত রিসার্চের জন্যে ফান্ড দেওয়া হয়েছে, গেন-অফ-ফাংশন নয়)। যাইহোক, মিডিয়াতে আলোচনা শুরু হলে আমেরিকাকেও অস্বস্তিতে পড়তে হবে। তাছাড়া চীন ঠিক ইরাক নয় যে আমেরিকার কিছু প্রফিট করার আছে।
সেজন্যেই আমেরিকার দিক থেকে যে সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে, সেটা মনে হয় পুরোপুরি আমেরিকার আভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে। ট্রাম্প ও রিপাবলিকানরা এই সুযোগ অবশ্যই ছেড়ে দেবে না, যেহেতু তারা ল্যাব এসকেপের কথা প্রথমেই বলেছিল এবং সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সংস্থাগুলি পাত্তা দেয়নি। ফলে এখন ল্যাব এসকেপ তত্ত্ব যত জোরালো হবে, রিপাবলিকানদের তত লাভ; এটা থেকে ২০২৪ সালে ট্রাম্পের ক্যাম্পেন অনেক ফায়দা তুলতে পারে।
চীনে অথরিটারিয়ান সরকার, তাই তথ্য চেপে যাওয়া খুব আশ্চর্যের কিছু নয়; কিন্তু ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল কোভিডের টাইমলাইন নিয়েও অনেক সন্দেহ আছে। এটা আগের বছরেই জানা গেছিল যে উহান পশুবাজার গ্রাউন্ড জিরো নয়, বড়জোর সুপারস্প্রেডার। একদম প্রথমদিকে সংক্রামিত কয়েকজনের ঐ বাজারের সাথে কোনো যোগও পাওয়া যায়নি। রেডক্রশের আর্টিকেল থেকে জানতে পারছি আমেরিকাতেও প্রথম কেস জানুয়ারী ১৯, ২০২০ ধরা পড়েছিল, কিন্তু এখন মনে করা হচ্ছে ডিসেম্বর ২০১৯ এও আমেরিকাতে কোভিড কেস ছিল। তাহলে বোঝা যাচ্ছে একটা কোয়ায়েট পিরিয়ড কিন্তু ভাইরাসটা পেয়েছে, যেসময় হয়তো বাদুড় থেকে ইন্টারমিডিয়ারি স্পিসিসের মধ্যে মিউটেট করে অবশেষে মানুষের দেহে সংক্রামিত হয়েছে। ইন্টারমিডিয়ারি স্পিসিসকে অবশ্য শনাক্ত করা যায়নি, কিন্তু যেমন dc লিখেছেন, সেটা এবোলার মতো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হতে পারে।
যদি টাইমলাইন পিছিয়ে যাওয়াকে ধরি, তাহলে কিন্তু ল্যাব এসকেপের পক্ষে একটা সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স (ভাইরাস এত দ্রুত কী করে মানুষকে সংক্রামিত করার মতো 'লাকি' মিউটেশন ঘটিয়ে ফেলল?) দুর্বল প্রমাণ হবে। সেক্ষেত্রে মেনে নিতে হবে ভাইরাস প্রাকৃতিকভাবেই মিউটেট করার যথেষ্ট সময় পেয়েছে, হিউম্যানাইজড মাইসের কোষে রেখে কালচার করার দরকার পড়েনি।
ইন্টারমিডিয়ারি স্পিসিসের সমস্যাটাও বাইপাস করা যায়; এমন হতে পারে বাদুড় থেকে সরাসরি মানুষের শরীরে এসেছে, এক্ষেত্রে ইন্টারমিডিয়ারি স্পিসিসের দরকারই পড়বেনা। বাদুড়ের কোষেই ভাইরাসটি মিউটেট করে শক্তিশালী হয়ে সরাসরি মানুষের কোষে আক্রমণ করেছে। ইউনান প্রদেশ থেকে উহান পর্যন্ত ছড়াতে যে সময় লেগেছে, সেটা ভাইরাস কাজে লাগিয়েছে মিউটেট করে করে শক্তিশালী হতে। ফলে এসময় যে সংক্রমণগুলো ঘটেছে সেগুলোর ফলে মানুষ তত অসুস্থ হয়ে পড়েনি। একমাত্র উহানে পৌঁছে ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। উহান শহর এলাকা, তাই চিকিৎসাব্যবস্থার প্রাচুর্য আছে এবং ভাইরাসের সংক্রমণ নজরে পড়েছে।
রেডক্রশের আর্টিকেল: https://www.redcross.org/about-us/news-and-events/press-release/2020/study-suggests-possible-new-covid-19-timeline-in-the-us.html
এই দেখুন কান্ড! এরপরে হয়তো কোনদিন ইনভেস্টিগেট করে এও বের হতে পারে, শুধু উহানই নয়, নর্থ ক্যারোলিনা আর টেক্সাস থেকেও বেরিয়ে থাকতে পারেন ভাইরাস বাবাজী।
সংক্রমিত যদ্দুর জানি। শিরোনামে এক্সট্রা আকার কেমন জানি লাগছে।
বাকিটা আকর্ষণীয়।
নতুন কোনো চাঞ্চল্যকর তথ্য কি বের হল?
ডিসি, সায়ন্তন--আপনারা কোথায়?
নেচারে এই নিয়ে রিপোর্ট বেরিয়েছে। WIV আর উহানে আউটব্রেক এর সমাপতন নিয়ে লজিকাল মন্তব্য করেছেঃ
Virology labs tend to specialize in the viruses around them, says Vincent Munster, a virologist at the Rocky Mountain Laboratories, a division of the National Institutes of Health, in Hamilton, Montana. The WIV specializes in coronaviruses because many have been found in and around China. Munster names other labs that focus on endemic viral diseases: influenza labs in Asia, haemorrhagic fever labs in Africa and dengue-fever labs in Latin America, for example. “Nine out of ten times, when there’s a new outbreak, you’ll find a lab that will be working on these kinds of viruses nearby,” says Munster.
https://www.nature.com/articles/d41586-021-01529-3
দেখা যাক।
ভাইরাস সংগ্রহ করে এনে তাকে বেশি বেশি লেথাল করার গবেষণা করাই বা হয় কেন? এ যেন প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম তুলে এনে কায়্দা করে তাকে এনরিচ করা!
খুব ভালো আলোচনা। একটা জিনিস কাকতালীয় কী না, তাই নিয়ে লোকের খুব সিন্দেহ জাগছে। য়ুহানে একটা লিডিং ভাইরোলজির ল্যাব আছে, আর য়ুহান থেকেই কভিড-১৯ ছড়াল>
খেয়াল করলে দেখব ঐ এলাকা, বিশেষ করে য়ুহান যে রাজ্যে, সেই হুবেই ইতিহাসে কুখ্যাত প্লেগ (যার থেকে ব্ল্যাক ডেথ) আতুরঘর হিসেবে। হতে পারে, অপরিচ্ছন্নতা, খাদ্যাভ্যাস বা অন্য কোনও কারণে এই এলাকা থেকে একাধিক পশুবাহিত মহামারী শুরু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এবং হয়তো সেইজন্যেই য়ুহানে ভাইরোলজি ল্যাব হয়েছিল।
একেবারেই সময় পাচ্ছিনা ডিসি। তবে আমার প্রশ্নের কিছুটা সায়ন্তনবাবু করে দিয়েছেন।
যে বিজ্ঞানীরা ওই ইন্সার্শন নিয়ে এর আগে পাব্লিশ করেছিলেন,যা দিয়ে দেখিয়েছিলেন ল্যাব লিক নয়, তাঁদের সবার বক্তব্য এখন এসেছে?
এটা খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ছি।
পাই ম্যাডাম, নেচার বা অন্য কিছু অথরিটেটিভ পত্রিকায় আপডেটেড আর্টিকেল ছাপা হচ্ছে, তাতে এই ল্যাব লিক হাইপোথিসি অ্যাড্রেসও করা হচ্ছে। আর ডঃ ডেভিড আল্টিমোরে নিজের বক্তব্য বেশ কিছুটা রিট্র্যাক্ট করে নিয়েছেন, এখন বলছেন "স্মোকিং গান" বলা ঠিক হয়নি। (https://www.theguardian.com/world/2021/jun/09/leading-biologist-dampens-his-smoking-gun-covid-lab-leak-theory)
এছাড়া উহানে WIV আর উহানেই প্রথম আউটব্রেক নিয়ে যে সন্দেহ, সেটা তো এখন স্রেফ অ্যাসোসিয়েশান/কসেশান ফ্যালাসি মনে হচ্ছে। অর্থাত নেচারে যা লিখেছে, উহানের আশেপাশে করোনাভাইরাস পাওয়া যায় বলেই ওখানে ওই ল্যাবোরেটরি বানানো হয়েছিল (যেটা সোমনাথ বাবুও বললেন)।
এই তো। তুলেছি। প্লীজ লিখুন।
নতুন কোনো আপডেট থাকলে
ডিসি, নতুন কিছু জানা গেল?
এখন বলছে ডিসেম্বর না, অক্টোবর থেকেই ...