(প্রতিবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস আসে আর যথানিয়মে চলে যায়। সেমিনার, সিম্পোজিয়ম, সচেতনতা শিবির, নানা ধরনের অনুষ্ঠান, টাকার শ্রাদ্ধ। অথচ মানুষের অসচেতনতা এবং মাত্রাতিরিক্ত লোভের কারণে প্রকৃতি রুদ্ররোষ ধারণ করছে প্রায়শই। উত্তরের পাহাড়, নদী, জঙ্গলে ঘেরা প্রকৃতিকে দুহাত দিয়ে লুটছে মানুষ। প্রকৃতি নিচ্ছে প্রতিশোধ। একুশের গৃহবন্দী পরিবেশ দিবসকে উত্তরের বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রে খোঁজার চেষ্টাতে গুরুচন্ডালীর পাতায় উত্তরের পরিবেশ ভাবনা গৌতম চক্রবর্তীর কলামে)
খামখেয়ালিপনার পরিণতি হচ্ছে ভয়ঙ্কর
প্রকৃতি তার নিজস্ব খামখেয়ালিপনায় চলে। কিন্তু প্রকৃতির চেয়েও অধিকতর মানুষের খামখেয়ালিপনা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নামে প্রকৃতিকে বন্ধনে আবদ্ধ করার খামখেয়ালিপনার পরিণতি হচ্ছে ভয়ঙ্কর। অপরিকল্পিত পর্যটন শিল্পের রমরমা, অবৈজ্ঞানিক গৃহ নির্মাণ পদ্ধতি, যানবাহনের মাত্রাধিক্য চলাচজনিত গ্রীণহাউস এফেক্ট ইত্যাদি মনুষ্যসৃষ্ট কারণ প্রলয়ের বার্তা বহনকারী। উত্তরবঙ্গের সমস্ত শহর এবং মফস্বলে নগরায়ণের দৌলতে রাস্তাঘাট সম্প্রসারণ, পাকা বাড়িঘর নির্মাণ হচ্ছে, যানবাহনের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। মাত্রাতিরিক্ত লোহা-লক্কড়ের ব্যবহার, অত্যধিক ভূগর্ভস্থ জলের উত্তোলণ ইত্যাদি নানা কারণে ভূস্তর অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে এবং এর ফলে বড়সড় বিপদের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। অরণ্য সম্পদের বেহিসেবি ধ্বংসলীলা পরিবেশকে চরম বিপদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর সেটা সরাসরি প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ মাটি থেকে ফসফেট সংগ্রহ করতে পারছে না। গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ ভূমিতে জন্মাতে পারছে না। উদ্ভিদ এবং প্রাণী জগতের খাদ্যচক্রের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটির জৈব উপাদানের পরিবর্তন ঘটছে।
পরিবেশ সুরক্ষায় অপরিকল্পিত নির্মাণ বন্ধ হোক
জেলাগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং, দিনাজপুর এবং মালদহ অত্যধিক ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। ভূমিকম্প এবং ধ্বসপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত দার্জিলিং পাহাড়। পাহাড়ে যেভাবে বড় বড় বিল্ডিং তৈরি করা হচ্ছে এবং গাছ কাটা হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতের বিপদের ইঙ্গিত বারেবারেই পাওয়া যায়। পুর আইন এবং নিয়ম অনুযায়ী পাহাড়ে তিনতলার বেশি বাড়ি তৈরি করা বেআইনী কাজ। কিন্তু নিয়মকে তোয়াক্কা না করে বহুতল তৈরি হচ্ছে সেখানে। পাহাড়ে এই মুহূর্তে ১১.০৫ মিটারের বেশি উচ্চতার বাড়ি করার নিয়ম নেই। বেশ কিছু বাড়ির মালিককে চিঠি পাঠিয়ে বেআইনিভাবে নির্মিত বাড়ির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে পুরসভা বিক্ষিপ্তভাবে ব্যবস্থা নিলেও বহুকাল ধরেই বেআইনি নির্মাণ চলে আসছে দার্জিলিং পাহাড়ে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে নির্মিত শৈলশহর দার্জিলিং এর পাহাড়ি সৌন্দর্য্য নবনির্মিত বহুতলে ঢাকা পড়ে যাওয়াতে ডুয়ার্সের মোহময়ী শোভা পর্যটকদের কাছে উদ্ভাসিত হতে থাকার ক্ষেত্রে কেমন ভাঁটার টান। যে শ্যামল সৌন্দর্যের টানে দেশি-বিদেশি মানুষ দার্জিলিং আসতো সেই সৌন্দর্য্য আজ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে ভূমিকম্প বা মেঘভাঙ্গা বর্ষণে কোনরূপ বিপর্যয় ঘটলে তার জন্য দায়ী থাকবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে গড়ে ওঠা বিল্ডিং।
চাপ বাড়ছে মহাদেশীয় পাতগুলির উপর
যে কোনো সময় তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে উঠতে পারে হিমালয় পর্বতমালা। এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বেঙ্গালুরুর জওহরলাল নেহেরু সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড সাইন্টিফিক স্টাডিজ এর বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘদিন ধরে হিমালয়ের নিচে অবস্থিত মহাদেশীয় পাতগুলির উপর গবেষণার কাজ চলছে। এখানকার মহাদেশীয় পাতগুলির উপর বহু বছর থেকে চাপ বাড়ছে। বেঙ্গালুরুর গবেষকরা জানিয়েছেন হিমালয়ের মহাদেশীয় পাতগুলির মধ্যে অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে এই অঞ্চলে ৮.৫ অথবা তার চেয়ে বেশিমাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি “জিওলজিক্যাল সার্ভে” নামে একটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে পশ্চিম নেপালে এবং ভারতের এশিয়া অঞ্চলে মহাদেশীয় পাতের মধ্যে চ্যুতি দেখা গেছে। ইসরোর উপগ্রহ চিত্র এবং জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সমীক্ষা থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। আমেরিকার কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একই মত। হিমালয় অঞ্চলে ৮.৫ অথবা তার বেশিমাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল বহু বছর আগে। যার ফলে দুটি প্লেটের প্রায় ১৫ মিটার সরণ হয়। তারপর প্রায় ৭০০ বছর ধরে ওই এলাকায় কোন বড় ভূমিকম্প না হওয়ার ফলে মাটির তলায় মহাদেশীয় পাতগুলির উপর চাপ আরো বেড়েছে। যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তাতে যে কোনো সময় বিপর্যয় হতে পারে। ২০১৫ সালে নেপালে যে ভূমিকম্প হয়েছিল তার তীব্রতা ছিল ৮.১। ওই ভূমিকম্পে অন্তত হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ভূমিকম্পের জেরে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল কেঁপে উঠেছিল। হিমালয় মতে হিমালয়ের ভূমিকম্পের মাত্রা ৮.৭ পর্যন্ত হতে পারে।
অপরিকল্পিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে সংকটে তিস্তা
পশ্চিমবঙ্গের তিস্তা নদী উপত্যকায় করোনেশন সেতু থেকে তিস্তাবাজার পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এলাকায় দুটি কেন্দ্রে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। সুপ্রিমকোর্টের রায়ে বলা আছে জাতীয় উদ্যানের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রকল্প তৈরি করতে হলে ন্যাশনাল বোর্ড অফ ওয়াইল্ড লাইফ এর স্থায়ী কমিটির কাছ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে অনুমোদন নিতে হবে। পরিবেশ কর্মী এবং ভূবিদদের সতর্কবার্তা ছিল পরিবেশ ধ্বংসের দায়ে বিপদে পড়তে হতে পারে উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমকে। পরিবেশবিদেরা হুশিয়ারি দিয়েছেন পরিবেশ ধ্বংসের দায়ে একদিন চরম বিপদে পড়তে হবে উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমকে। ন্যাশনাল বোর্ড অফ ওয়াইল্ড লাইফও প্রকল্প শুরুর সময় তাদের একটি রিপোর্টে বিষয়টি জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর কাছে। ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তিস্তার নির্মাণ প্রকল্পের জন্য অনুমোদন পেতে জাতীয় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এন এইচ পি সি আবেদন করেছিল বন্যপ্রাণ দপ্তরের কাছে। সেই সূত্রেই একটি সমীক্ষকদল পাঠায় জাতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিকর্তা। সমীক্ষকরা দেখেন প্রকল্পের জন্য বহু বন-জঙ্গল জলের তলায় চলে গেছে। ধ্বংস হয়েছে অরণ্যের পরিবেশ। বিপন্ন হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকার বন্যপ্রাণীরা। চূড়ান্ত ক্ষতি হয়েছে স্পর্শকাতর এলাকা হিসাবে চিহ্নিত কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্কের। যেসব বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে প্রকল্পের কাজ করানো হয়েছে তারা পরিবেশের দফারফা করে দিয়েছে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ হয়েছে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে। ৩-৪ টি প্রকল্প এলাকা ক্রমশই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে এবং বড় ধরনের বিপদের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাই পরিবেশ দপ্তর ছাড়পত্র দেয়নি।
অপরিকল্পিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ তিস্তায়
প্রকৃতপক্ষে আইন ভেঙে সিকিম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রূপায়ণে তৎপর হয়ে উঠেছিল সেই সময়ে। আইনে বলা ছিল কোনভাবে পরিবেশকে বিপর্যস্ত না করে যদি প্রকল্প করা যায় তো ভালো, নইলে প্রকল্প করা যাবে না। তিস্তা নদীর ওপর নির্মীয়মান জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির জন্য বন্যপ্রাণী সুরক্ষা সংক্রান্ত শংসাপত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। অথচ সেই শংসাপত্র ছাড়াই তারা কাজে হাত দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। কিন্তু এই ধরনের বেআইনি কাজ বন্ধ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে পারে নি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন মোতাবেক বন ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক পরিকল্পনা রচনা এবং তার প্রয়োগ সংক্রান্ত সর্বোচ্চ সংস্থা মিনিস্ট্রি অফ ওয়াইল্ড লাইফের নেতৃত্বে থাকেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। অথচ সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত উপায়ে চলেছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ। এখন আবার চলছে পাহাড় ফাটিয়ে সেবক-রংপো রেলপথ নির্মাণের কাজ। আতঙ্কে রয়েছেন পরিবেশবিদরা। ডুয়ার্সে সেই নিবিড় বনভুমি আজ আর নেই। নিবিড় বনভূমি এলাকা রয়েছে জলদাপাড়া এবং তার আশেপাশের কিছু এলাকাব্যাপী। কিন্তু সে তো কোর এরিয়া। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ডুয়ার্স থেকে ভুটানে আসা যাওয়ার বনপথ বা দুয়ারগুলির মধ্যে তিনটি বনপথের একটি ছিল পূর্ব দুয়ার বা রাজাভাতখাওয়া হয়ে, পশ্চিমদুয়ার বা ডালিমকোট হয়ে আর একটি এবং অপরটি থিম্পু হয়ে পাহাড়ের বনভূমি পেরিয়ে নেমে আসত সমতলে। সমতলের বনভূমি সহ বিস্তীর্ণ এলাকা ডুয়ার্স নামে পরিচিত ছিল। পশ্চিমে সেবক পাহাড়ের পাদদেশ থেকে এই বনভূমি চলে গিয়েছিল অসম সীমান্তে সঙ্কোশ নদী পর্যন্ত। এই বনপথগুলি জঙ্গলেই ঢাকা থাকত। এখন জলদাপাড়া বা বক্সা অরণ্যভূমির অবস্থা দেখে কষ্ট হয়।
পৃথিবীর দেওয়া উপকরণ ব্যাবহারে সংযম প্রয়োজন
বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে যেভাবে নিম্নচাপ সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা উপকূলীয় অঞ্চলসহ হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলকে যেভাবে প্রভাবিত করতে শুরু করেছে তাতে দার্জিলিং পাহাড় বিপদসীমার মুখে দাঁড়িয়ে। বর্ষাকালে পাহাড়ের গা বেয়ে বৃষ্টির জল নামে বিভিন্ন দিক দিয়ে। এই জল পাহাড়ের গায়ের শিলা ও মাটির ভেতরের টানকে কমিয়ে দেবার ফলে হঠাৎ একদিন পাথরসহ সবকিছু ধসে পড়ে এবং মানুষের জীবন ও সম্পত্তি নষ্ট হয়। দার্জিলিং পাহাড় এর তিনধারিয়া কারসেড এর কাছে পাগলাঝোরা এবং চুনাভাটি বা সিকিমের রাস্তায়, সেবকের অনেক জায়গায় সারাবছর পাহাড়ের গা চুইয়ে চুইয়ে জল পড়ে। দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং এবং সিকিমের রাস্তায় ভারী ভারী যানবাহন চলার ফলে যে কম্পন হচ্ছে তার ফলেও ছোট ছোট ধ্বস নামছে। পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে রাস্তা তৈরির জন্য ডিনামাইট বিস্ফোরণের ফলে এবং সময়ে সময়ে রাস্তার ওপর দিয়ে মিলিটারিদের ভারী ভারী গাড়ি অথবা ভারী যানবাহন যাতায়াতের ফলে যে অবনমন ঘটে তার ফলেও ধ্বস নামছে। সেবক করোনেশন সেতুর কাছে পাহাড়ের গায়ে গাছপালা কম। নেই বললেই চলে। ফলে এই অঞ্চলে ধসের তীব্রতাও বেশি। কার্শিয়াং এর কাছে পাগলাঝোরা অঞ্চলে পাহাড়ের সংকোচন প্রসারণের ফলে এবং গাড়ি চলাচলজনিত কারণে কম্পনের ফলে পাহাড়ের শিলাস্তরে ব্যাপক ফাটল ধরেছে। তাই মানুষ যদি পৃথিবীর দেওয়া উপকরণগুলি ব্যবহারে সংযম দেখাতে না পারেন তাহলে মহাপ্রলয় আসতে আর বেশি দিন বাকি থাকবে না।
খুব ভালো লেখা। ভাবাবে।
ভাল লেখা। তবে অনেক জিনিষ একটু একটু ছুঁয়ে যাওয়া। পয়েন্টগুলো আরো বিস্তৃত লেখা হলে আরো ভাল হত।
দ
আসলে সংক্ষিপ্ত পরিসরে সবকটা বিষয়কে স্পর্শ করার চেষ্টা করেছি। পরবর্তী লেখায় প্রত্যেকটা পয়েন্টকে আলাদা আলাদা ভাবে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করব। কথা দিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে
একজন সচেতন মানুষ হিসেবে সমাজের প্রতি তোর দায়বদ্ধতা তোর লেখার মধ্যে দিয়ে তুই তুলে ধরেছিস ..... অনেক ধন্যবাদ.....হয়তো বেশীরভাগ মানুষ ভাবতেই পারছি না আসন্ন বিপর্যয়ের কথা ... সামনের দিন আরো ভয়ের।. তোর এই প্রতিবেদন প্রাসঙ্গিক