বিহার নির্বাচনের একদম শেষ পর্বে এসে লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, বস্তুত তৃণমূলের সঙ্গে বাম জোটের খোলাখুলি প্রস্তাব দিয়ে ফেললেন।
বামরা বিহারে অসাধারণ ফলাফল করে ফেলেছে এমন নয়, তবে নিঃসন্দেহে কংগ্রেসের চেয়ে ভালো। সবচেয়ে এগিয়ে আছে সিপিআইএমএল লিবারেশন। এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের সাইটের খবর অনুযায়ী তারা ৯ টি আসনে জিতেছে এবং আরও ৩ টিতে এগিয়ে আছে। এই প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে দীপঙ্কর স্পষ্ট করেই বলে দিলেন, যে, সর্বভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতে এবার পশ্চিমবঙ্গের বামদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাদের অগ্রাধিকার কী? তৃণমূলের বিপক্ষে গিয়ে বিজেপির সুবিধে করা? নাকি বিজেপির বিরুদ্ধে গিয়ে তৃণমূলের হাত ধরা? শত্রুর বিচারে কংগ্রেস এবং তৃণমূল, দীপঙ্করের বিচারে বিজেপির কাছাকাছিও আসেনা, এই হল দীপঙ্করের মোদ্দা বক্তব্য। এবং সে কারণেই এদের সঙ্গে বামদের জোট করা উচিত।
পশ্চিমবঙ্গে বিগত লোকসভা নির্বাচনে বামদের বিপর্যয় হয়েছে। বাম ঘরানার ভোটের একটি বৃহদংশ বিজেপিতে চলে গেছে, ভোটের হিসেবে। সে নিয়ে প্রচুর সমালোচনাও হয়েছে। কিন্তু বাম নেতৃত্ব এবং কর্মীবৃন্দ সজোরে এর জবাবে বলে এসেছেন, যে, ওভাবে বাম-ভোট বলে কিছু হয়না। ভোট কারো সম্পত্তি নয়। উল্টোদিকে, যাঁরা সমালোচনা করেছেন, তাঁদের বক্তব্য হল, ভোটের রাজনীতিতে "বিশ্বস্ত ভোট" বা "ভোট ব্যাঙ্ক" বলে একটি বস্তু অবশ্যই হয়। বামদের সেই বিশ্বস্ত ভোটই গেছে বিজেপির দিকে। তার কারণ, বাম পার্টির নেতারা প্রচারে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যতটা সরব, তার সামান্য ভগ্নাংশও বিজেপির বিরুদ্ধে নন। তাঁদের মূল আক্রমণ সর্বদা তৃণমূলের বিরুদ্ধেই। এই লাইন মূলত আত্মঘাতী। এই লাইন কর্মী এবং সমর্থকদের "শত্রুর শত্রু আমার মিত্র" লাইনে ভাবতে উৎসাহ জুগিয়েছে। একদা সমর্থকরা বিজেপিকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে অধিক কার্যকর ভেবে ভোট দিয়েছেন। এবং তার ফলেই এই বিপর্যয়।
এর জবাবে সিপিআইএম কর্মী সমর্থকরা, অন্তত আধা প্রকাশ্যে যেটা বলছেন, সেটাও এখানে প্রণিধানযোগ্য। পশ্চিমবঙ্গের ভোটের হিসেব বেশ জটিল। সিপিআইএম এর যে সাধারণ ভিত্তি, তার মূল সুরই হল তৃণমূল বিরোধিতা। তৃণমূলের প্রতি নরম এরকম কোনো সিপিআইএম সমর্থক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ঠিক এই পরিস্থিতিতে যদি সমর্থকদের চিন্তার উল্টোদিকে গিয়ে পার্টির নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলান, তাহলে গণভিত্তি যেটুকু আছে, সেটুকুও পার্টিকে ছেড়ে চলে যাবে। গণভিত্তি খুঁজে নেবে তৃণমূলের বিরোধী শক্তিকে, ভোট দেবে তাকেই। অর্থাৎ শক্তিশালী হবে বিজেপিই। বিজেপির পাল থেকে হাওয়া কাড়তেই তাই বামদের তৃণমূল বিরোধিতা চালিয়ে যেতে হবে।
সমস্যা হল, এতদিন এই যুক্তিতে চলেও কিন্তু সিপিআইএম তার গণভিত্তি অটুট তো রাখতে পারেইনি। বরং তাতে বিপুল ধ্বস নেমেছে। তবুও এই লাইনটিই অনুসরণ করে যাওয়া হচ্ছে, এবং এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে তার খুব বেশি বিরোধিতা আসেনি। সিপিআইম এর যেটুকু গণভিত্তি এখনও আছে, তারা বিজেপির সর্বাত্মক বিরোধিতা করলে বাম ছেড়ে ডান দিকে চলে যাঅবে, এ আশঙ্কার আদৌ কি কোনো ভিত্তি আছে? নাকি আশু বিপদকে মাথায় রেখে সর্বাত্মক বিজেপি বিরোধিতা করলেই বামদের যেটুকু ভিত্তি আছে তা আরও শক্তপোক্ত হবে? এ নিয়ে অবশ্যই বিতর্ক হওয়া দরকার। বিহার নির্বাচনের পর বিষয়টিকে প্রকাশ্যে আনলেন দীপঙ্কর। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জানা যাবে বিহারের অন্তিম ফলাফল। তারপর সমস্ত তাসই এসে যাবে টেবিলে। সেসব টেবিলের নিচে লুকিয়ে না ফেলে সমস্ত সম্ভাবনা, সমস্ত বিচার এবং সামগ্রিক বিতর্ক অবশ্যই প্রয়োজন।
১১ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৩১-তে Amit লিখেছেন "মোদী আর মমতার তফাৎ টা ঠিক কোথায় - ?"। এইটা পড়ে কাল থেকে ভেবে চলেছি, এটা কি সত্যি প্রশ্ন, রেটরিক, প্রস্তাব, নির্মল, কৌতুহল - ঠিক কী ধরনের ব্যাপার?
তারপর মনে হলো হতেও তো পারে এটা একটা সাদা প্রশ্ন।
∙ তৃণমূল কংগ্রেস এখনো পর্যন্ত কোন জাতিদাঙ্গা করায়নি, সেরকম করাবে তার খুব সম্ভাবনাও দেখা যায় নি।
∙ বিজেপির খুব স্পষ্ট এজেন্ডা ও ইতিহাস আছে, যা জাতিবিদ্বেষের ওপর দাঁড়িয়ে। তৃণমূলের সেরকম কিছু নেই, যদিও ক্ষমতা ইত্যাদির কারনে নানা সময় তাদের স্যাঙাৎ হয়েছে।
∙ বিজেপির আছে মায়া কোদনানি, দারা সিং, সেঙ্গার ইত্যাদি। তৃণমূলের অনুব্রত ইত্যাদি এদের কাছে শিশু। শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে পোষা গুন্ডা কোন দলেরই কম ছিল না, তবে বিজেপির লোকেদের মহানতর ব্রত আছে, যেটা একটু বেশি ভয়ানক।
∙ তৃণমূল দলটা চোর, অসৎ, মিথ্যাবাদী, নীতিহীন ধান্দাবাজে গিজগিজ করছে। আর বিজেপির মূলধন জাতিঘৃনা। মায়া কোদনানি নারোদা পাটিয়ার পর এক লক্ষ আশি হাজার ভোটের মার্জিনে জিতে এসেছিল। এই দুটির মধ্য আমি খুব সহজেই তারতম্য করতে পারি।
এইসব তফাৎ গুলো যথেষ্ট মনে না হতেই পারে। আলাদা আলাদা প্রেফারেন্স থাকে মানুষের বা দলের।
সিপিএমকে ভোট দিলে খুবই ভালো, মানে বিজেপি তৃণমূল সিপিএম - এই আমার অপশন হলে আমি অন্তত সিপিএমকে ভোট দেবো। যদিও সিপিএমের বিচ্যুতিও তো কম দেখিনি। আজকাল অনেক বামপন্থীরা লালুর সরকার না চাহি তো দাঙ্গা না হৈ কোট করেন। আমি নৃপেন চক্রবর্তীর আমলে জুনের দাঙ্গা দেখেছি। সরকার চেয়েছিল? ত্রিপুরায় গ্রাম গঞ্জ পাহাড় তো বটেই, খোদ আগরতলা আরএসএসের স্কুল, ক্যাম্প কর্মশালায় ছেয়ে গেছে গত কয়েক দশকে। সিপিএম কী করছিল তা জানা যায় না।
কিন্তু যখন সিপিএমের সমর্থকরাই শুধু নয়, নেতারাও তৃণমূলের বদলে বিজেপিকে ভোট দেওয়াকে জাস্টিফাই করেন তখন ঠিক ভরসা হয় না।
তিনোদলের শক্তি হ্রাস করার চেষ্টা করার মধ্যে তো কোনো অসুবিধে নেই। প্রভাইডেড সেই হ্রাস পাওয়া শক্তিটা বামেদের শক্তিবৃদ্ধি করছে। সেটা বিজেপিতে গিয়ে ভিড়লে বুঝতে হবে সেই চেষ্টা ঠিক পথে হয়নি।
@পিনাকীদা, বললেই হ'ল যে বস্তব ভিত্তি নেই ! ঃ)) ঘোর বাস্তব তো এটাই যে অলরেডি এক ডজন নেতা বিজেপিতে মিলিয়েছে এবং পরের লট অপেক্ষা করছে। আইডিওলজিক্যাল বেস তো কিছু নেই সে যতই সুবোদ বাবু নিওকমিউনিজমের জয়পতাকা বলে বিল কাটুন না ক্যানো। দুহাজার এগারো সালের পর এইটাই রাণীমার সবচেয়ে বড়ো কাজ ছিল যে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষমতার হায়ারার্কি প্রতিষ্ঠা করা (কেননা ল্যাম্পপোস্ট থিওরি)। উনি ডাহা ফেল সে তো দেখাই যাচ্ছে। ন কর্তা সেজর উপর ছড়ি ঘোরান তো বড় মেজর কাছে ইতস্তত করেন। নেত্রীরও এসব ঝাম মেটানোর ইচ্ছে আছে বলে তো আপাতত দেখা যাচ্ছে না। স্নেহের কাননকে কী এগবার ফোন করা যেত না! নাকি শুভেন্দুকে ডেকে পাঠানো যেত না! ঃ) যাগ গে।
দ্যাখো, তোমাদের বক্তব্য ঠিক ক্লিয়ার না। বিরোধী ভোটের অভিভাবকত্ব আর আলিমুদ্দিনে নেই যে তারা রাজনৈতিক মেসেজ পাঠালো আর জনতা সুড়সুড় করে ভোট দিয়ে দিলো। সাত পার্সেন্টে তো এসে ঠেকেছে। সেই গণভিত্তি পুনরুদ্ধার না করতে পারলে তো কোনো লাভই নেই, আর সেটা তৃণমূলের লেজুড়বৃত্তি করে হবে না। ফলে সেরকম কোনো রাজনৈতিক মেসেজ দেওয়ার গল্পই নেই। বারবার ফিশফ্রাই কূটনীতি হয় না এ মার্কেটে। ঃ)) আর জনসমর্থন জোগাড় করতে চাইলে চালচোরদের চালচোরই বলতে হবে, ওতে বিজেপি সুবিধে পেয়ে যেতে পারে সেসব ভাবলে চলবে না। বিহার ভোটে দেখাই যাচ্ছে যে বেকার সমস্যা, রুজি রোজগারের বিষয়, কৃষি ইত্যাদি নিয়ে বলে ভালৈ সুবিধে হয়েছে। এখানে তাহলে সেসব করবে না ক্যানো। সেসব বলার জন্য কংগ্রেসকে ঝেড়ে ফেলে একা এগোলেই সবচেয়ে ভালো হত। আর নিতান্তই সেই সো কলড রাজনৈতিক মেসেজ চাইলে, খুব নিশ পত্রিকায় না হয় ইংরেজীতে একটা প্রবন্ধ বেরোবে। ঃ))))
শিপিয়েম নেতৃত্ব বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে কাদের বেশী ভয়ংকার ভাবছে এই বার্তা কাদের কাছে পরিষ্কার হওয়ার দরকার ? বেঙ্গল ইন্টেলিজেন্সিয়ার কাছে? ঃ))) তারা ক্যানো এটা মানতে পারছে না যে দুদলই ইকোয়ালি ভয়ংকর এরকমও লোকে ভাবতে পারে। বার্তা ক্লিয়ার হচ্ছে না মনে হলে এটা যার যার ইন্টারপ্রিটেশনের সমস্যা। রাণীমার গোলমেলে কাজগুলোও কিন্তু এরকম ক্লিয়ার হয় নি। সংখ্যালঘুদের জন্য বিন্দুমাত্র কিছু না করেও সংখ্যালঘু তোষণের মতন খেতাব কিভাবে অর্জন করতে হয় তা রাণীমা দেখিয়ে দিয়েছেন। দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মাইনরিটিদের সাপোর্ট জোগাড়ের জন্য ছাগু কার্যকলাপে বিন্দুমাত্র বাধা দেননি। হিন্দু সংহতি নামক বিষটিকে বাড়তে দিয়েছেন, ভোটের সময় তাদের কাছ থেকে সাপোর্ট নিয়েছেন। এই সবের সুযোগে বিজেপি ফুলফোর্সে খেলে গেছে, খেয়াল পড়তে এখন বেগুনী রং দিচ্ছেন ঃ)))
তবুও এখনো মমতা খুব একটা ব্যাকফুটে নেই কিন্তু। অ্যাত ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
তিনোরা এখন যে ৪৫% ভোট পাচ্ছে, তার দুই তৃতীয়াংসই মাইনরিটি ভোট। ওটা চলে গেলেই তিনোদল আবার বিজেপি সরকারের ছোট পার্টনার হয়ে উঠবে। মাইনরিটি ভোট বিজেপিতে যাবে এমন কোনও ইঙ্গিত এখনও পাইনি।
এছাড়া আরেকটা বক্তব্য আছে। শিপিয়েম নেতৃত্ব প্রানপণে রুজি রোজগার, বেকার সমস্যা, চালচুরি, শিল্প হচ্ছে না, ইত্যাদি এইসব নিয়ে চেঁচিয়ে গ্যালো আর তারপর লোকে গিয়ে বিজেপিকে ভোট দিল, এটা ঠিক কাদের দোষ? ঃ) মানে যারা দিচ্ছে তাদের নয়, কিন্তু শিপিয়েমের !! আচ্ছা সে না হয় তাদের দোষই হ'ল, হা হা, আর এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আম আদমির যে দিনরাত উপচে পড়া ছাগলামো চলছে, বাঁধভাঙা ইসলামোফোবিয়া, তার বেলা! এসব সত্ত্বেও তারা ধোতু থেকে যাবে এইরম মাথার দিব্যিই বা ক্যানো! পৃথিবীতে ফক্স এন্ড ফ্রেন্ডসের সাবস্ক্রাইবারদের দরাজ সার্টিফিকেট দেবই বা ক্যানো! ইন্ডিভিজুয়ালিজম চর্চার দুনিয়ায় জনসাধারণের ভীড়ে যে প্রচুর হারামিজও লুকিয়ে আছে এটা না মানলে চলবে না, অ্যাটলিস্ট ইকোয়েশনের মধ্যে তো ধরতেই হবে। ইন আদার ওয়ার্ডস, ছাগল থিয়োরী।
মাইনরিটি ভোট কাটার জন্য বিজেপি কাকে পুষছে সেটা বিহারের মানুষ টের পেয়েছেন। তাঁর একজন জুড়িদার আছেন বাংলাতেও। নন্দীগ্রাম পর্বে যিনি বিরাট ন্যাতা হয়ে গিয়েছিলেন রাতারাতি। কাজেই মাইনরিটি ভোট মমতার আর একার নেই। মতুয়ারাও পুরোটা তাঁর সঙ্গে নেই। শুভেন্দুর পাল্টি খাওয়া মানেই জঙ্গলমহল ফর্সা। ফলে হাতে রইল পেন্সিল।
যে আলোচনা চলছে সেখানে দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের বক্তব্যকে অনেকেই ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। হয়ত সৈকতদার লেখাটি সেই ভুল ব্যাখ্যায় রসদ জুগিয়েছে। অর্থাৎ সৈকতদা নিজে দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের বক্তব্যকে ভুল বুঝেছেন আর সেই ভুল বোঝা থেকে তৈরি হওয়া লেখার আলোচনায় অনেকে সৈকতদার বয়ানকেই দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের প্রকৃত বক্তব্য হিসেবে ধরে নিয়েছেন।
রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তৃণমূল নয়,বিজেপি - এটাই দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেছেন। সাধারণভাবে রাজ্য সরকারে যারা থাকেন রাজ্য নির্বাচনে তারাই প্রধান প্রতিপক্ষ হন বিরোধিদের। এখানে তৃণমূল সরকারে থাকা সত্ত্বেও বিশেষ পরিস্থিতির কারণে বিজেপিকে বামেদের প্রধান প্রতিপক্ষ ভাবা উচিত।
দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের এই বক্তব্য কেউ মানতে পারেন বা নাও মানতে পারেন। কিন্তু এই বক্তব্যকে এস্কটেন্ড করে যদি কেউ এখানে নিয়ে যান যে রাজ্যের আগামী নির্বাচনে প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির বিরুদ্ধে সব বিরোধীদের জোটের কথা বলেছেন দীপঙ্কর ভট্টাচার্য,তাহলে বলতেই হয় তিনি দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে নিজের ভাবনাকে দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের বয়ান হিসেবে হাজির করছেন ও সেইখান থেকে অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
একটি নির্বাচনে কাউকে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দাগিয়ে দিলেই যে সব সময় বাকি সব পক্ষ এক মঞ্চে চলে আসবে বা আসতে পারলে ভালো হবে তেমনটা আদৌ নয়।
বিজেপি এই রাজ্যে পয়লা নম্বর প্রতিপক্ষ মানেই এটা নয় যে রাজ্যের দ্বিতীয় প্রতিপক্ষ তৃণমূলের বিরোধিতা করার প্রয়োজন নেই বামেদের। সেই প্রয়োজন অবশ্যই আছে। বস্তুতপক্ষে সেই বিরোধিতার জরুরী জায়গাটা বামেরা যদি ছেড়ে দেন তাহলেও রাজ্য সরকার ও রাজ্যের শাসক দল বিরোধী সব ক্ষোভ বিজেপির ঝুলিতেই জমা পড়বে। ফলে বিজেপি বিরোধী মহাজোটের ধারণাটি এই রাজ্যের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ঘুরিয়ে বিজেপিকেই সাহায্য করবে।
তাহলে দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের বার্তার সুনির্দিষ্ট তাৎপর্যটি কী ? সেটি এটাই যে প্রধান নিশানা তৃণমূলকে করার মধ্যে দিয়ে বিজেপি বিরোধিতার গুরুত্বতে যথেষ্ট জোর না দেবার ফলে ক) যেন তেন প্রকারেণ তৃণমূলকে সরকার থেকে হটানোর বার্তা যাওয়া ও (সেই সূত্রে) খ) বাম ভোটের বিজেপির দিকে সরণ এর প্রবণতা - এই দুটিকে আটকানো। বামেদের নিজেদের জমিকে পুনরুদ্ধার করা ও মজবুত করা,বামেদের লড়াইকে ঐক্যবদ্ধ করাই দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের বার্তার লক্ষ্য।
সৈকতদা সহ অন্যান্যদের এই বিষয়টি ভেবে দেখতে বলব।
বিজেপি বিরোধিতা গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে না এইরম তত্ত্ব খাড়া হচ্ছে কিভাবে? রিসেন্ট কৃষি বিল ইস্যুতে যথেষ্ট ভোকাল নয় বামেরা? নাকি এইযে অ্যাত সরকারী জিনিস্পত্তর বেচে দিল তা নিয়ে কিছু বলেনি! নাকি কোভিড হ্যান্ডলিং এবং থালা বাজানো নিয়ে বক্তব্য নেই! এই তো বিহার ভোটে মূল প্রচার তো এইসব বিবিধ নিয়েই হয়েছে। অন্যদিকে তৃণমূল সরকারে থাকবে, তাদের বিরোধীতাও হবে আবার তারা প্রধান নিশানা থাকবে না - এ আবার কী রকম কথা হ'ল।
আমাদের ইশকুলের লেখাপড়ায় একটা ভুল ধরনের পড়ানো হত, হয়ও বোধহয়। কবি কী বলিতে চাহিয়াছেন নিজের ভাষায় লিখ। কবি কী বলিতে চাহিয়াছেন, সে যদি কবি নিজে না বলেন, তাহলে জীবনানন্দ কী বলতে চেয়েছিলেন, তা এম. সেন (গোল্ড মেডালিস্ট)- এর কাছ থেকে জানতে হয়।
সৌভিক বরং এখানে যে ক্লিপিংটা রয়েছে, তার আক্ষরিক অনুবাদই একটা করে দিন। তাহলে ভুল বোঝার অবকাশ থাকে না।
বরং যদি বলেন যে কংগ্রেস ঝেড়ে ফেলে বৃহত্তর বাম জোট গড়ুন তো সেটা খুবই ভালো এবং ক্লিয়ার প্রস্তাব এবং সেসবে সমর্থন রয়েছে।
না পশ্চিমবাংলায় বিজেপি বিরোধিতা তৃণমূল বিরোধিতার চেয়ে কম গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে - এটাই তো অভিযোগ।
রিসেন্ট বছরগুলোর আগে দিদিও পবে বিজেপি বিরোধীতা করেনি।
এ অভিযোগের কোনো সারবত্তা নেই।
উফফফ, সাত পার্সেন্ট ছিপিএমকে নিয়ে সব্বার কী চিন্তা!!! চক্ষে জল এসে যায়।
বিজেমুল থেকে বিজেপি আর মুলো আলাদা করে পোবোন্ধ নামানোর এত আকুতি। কাঁটা বেছে খেতে হবে নাকি জল থেকে দুধ খেয়ে পরমহংস হতে হবে, তার নিদান এখনও আসেনি, আসব আসব কচ্ছে যদিও!!
সাত পার্সেন্টরাও হেসে ফেলে এই 2k20 প্রস্তাব দেখে, উফফফ পারিনা!!
এ অভিযোগের যথেষ্টই সারবত্তা আছে। আমি নিজে সুজন এবং সেলিমের বক্তব্যে বিভিন্ন সময়ে দেখেছি দুলাইনে নমো নমো করে বিজেপির বিরুদ্ধে বলেই তারপর দশলাইন তৃণমূলের বিরুদ্ধে বলতে। এমনকি যে ইস্যুর সাথে সরাসরি তৃণমূলের সম্পর্ক নেই সেখানেও। দুটো উদাহরণ দিচ্ছি। বছরখানেক আগে বিরাটিতে তৃণমূলের এক লোকাল নেতা উত্তরপ্রদেশ থেকে ভাড়া করা সুপারি কিলারের হাতে খুন হয়। স্থানীয় বিজেপির হাত ছিল তাতে। খুনের পরে সুজন চক্রবর্তী একটা ভিডিও স্টেটমেন্ট দেয়। চার মিনিটের ক্লিপ। সেখানে বিজেপির উল্লেখই নেই প্রায়। পুরোটা শুনলে মনে হবে তিনোরাই নিজেদের খুন করিয়েছে। রিসেন্ট হাথরাসের পরে সেলিমের কীর্তি। নমো নমো করে হাথরাসের নিন্দা করে তারপর পুরোটা জুড়ে তিনোদের নিয়েই বলে যাওয়া। এরকম আরও আছে। লোকে তো আর এমনি এমনি বলছে না। একটা সেকশন এটা করছে চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে।
আর এরকম অপ্রত্যক্ষ বিষয় ছাড়াও সরাসরি বহুসময়েই 'বিজেপিকে হারাতে গেলে আগে তৃণমূলকে হারাতে হবে। তৃণমূল কারণ আর বিজেপি ফল' - এরকম বক্তব্যও বহুবার বহুজনকেই বলতে শুনেছি। এটা তো ক্লীয়ারলি ভুল অ্যানালিসিস।
কেন?
না, সে লোকে তো অনেক কথাই বলে। ওতে হাবিজাবিও প্রচুর থাকে। ঃ) অ্যানেকডোট নিয়ে কিছু বলার নেই। এ চাইলে উলটো আমিও বলতে পারি। কিন্তু মনে হয় না এই লেভেলে তক্কোটা হচ্ছিল। যাক গে, আমার আর বিশেষ কিছু বলার নেই। ট্রেন ইউজুয়াল লাইনে ঢুকে গেছে।
কারণ, মুলোরা ততটাই ফাঁক করে দিয়েছে, আজকে মুলোর হয়ে পয়সা পিটিয়ে কালকে মুকুল গেরুয়া হয়ে শুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, কাল শুভেন্দুও হবে, শোভন হয়ে গেছে, অর্জুন হয়ে গেছে। আম্ফানের ত্রাণ ভাগাভাগি করে খাচ্ছে, ভাগাভাগি করে বালি তুলছে, জেন্ডার ক্রাইমে কত নম্বর স্থানে যেন, আমার জন্মভূমি? আজ এদিক, কাল ওদিক কচ্ছে, আর এদের মধ্যে কাঁটা বেছে নিতে হবে,,,;
ইল্লি আর কি?
অ্যানেকডোট না তো ঠিক। আজকেও বিমানবাবু একই রকম কথা বলেছেন দেখলাম। আনন্দবাজার থেকে পেস্ট করছিঃ
বিহারে আরজেডি-কংগ্রেসের সঙ্গে ‘মহাগঠবন্ধন’-এ শামিল হয়েছিল বামেরা। প্রতিবেশী রাজ্যে আশাতীত ফল তাদের। এ রাজ্যেও বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট প্রায় পাকা। তবে বিহারে আসন কমেছে কংগ্রেসের। এই পরিস্থিতিতে হাত শিবিরের সঙ্গে জোটে যাওয়ার প্রশ্নে অবশ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু জানালেন, ধর্মনিরপেক্ষ যে কোনও শক্তির সঙ্গেই জোট করতে আপত্তি নেই বামেদের। যদিও তৃণমূলের সঙ্গে জোটের প্রশ্নই নেই বলেও জানিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান।
দলীয় কর্মসূচিতে বুধবার মালদহে এসেছেন বিমান বসু। জেলার দলীয় কার্যালয় মিহির দাস ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিমানবাবু এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি দু’টি দলই সাম্প্রদায়িক। তাই এ রাজ্যে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোটে সমঝোতার কোনও প্রশ্নই নেই। বামেরা টিএমসি, বিজেপি— দু’দলের বিরুদ্ধেই লড়াই করবে।’’
বিজেপি আর তৃণমূলকে একই বন্ধনীতে ফেলা, এইটা তো লাইন। সেটা ঠিক অ্যানেকডোট না।
অ্যানেকডোট না তো ঠিক। আজকেও বিমানবাবু একই রকম কথা বলেছেন দেখলাম। আনন্দবাজার থেকে পেস্ট করছিঃ
বিহারে আরজেডি-কংগ্রেসের সঙ্গে ‘মহাগঠবন্ধন’-এ শামিল হয়েছিল বামেরা। প্রতিবেশী রাজ্যে আশাতীত ফল তাদের। এ রাজ্যেও বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট প্রায় পাকা। তবে বিহারে আসন কমেছে কংগ্রেসের। এই পরিস্থিতিতে হাত শিবিরের সঙ্গে জোটে যাওয়ার প্রশ্নে অবশ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু জানালেন, ধর্মনিরপেক্ষ যে কোনও শক্তির সঙ্গেই জোট করতে আপত্তি নেই বামেদের। যদিও তৃণমূলের সঙ্গে জোটের প্রশ্নই নেই বলেও জানিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান।
দলীয় কর্মসূচিতে বুধবার মালদহে এসেছেন বিমান বসু। জেলার দলীয় কার্যালয় মিহির দাস ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিমানবাবু এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি দু’টি দলই সাম্প্রদায়িক। তাই এ রাজ্যে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোটে সমঝোতার কোনও প্রশ্নই নেই। বামেরা টিএমসি, বিজেপি— দু’দলের বিরুদ্ধেই লড়াই করবে।’’
বিজেপি আর তৃণমূলকে একই বন্ধনীতে ফেলা, এইটা তো লাইন। সেটা ঠিক অ্যানেকডোট না।
একদম ঠিক কথাই বলেছেন, লড়াই বিজেমুলের বিরুদ্ধেই।
বিজেপি আর তৃণমূল দুটই যে ডেন্জারাস রাইট উইঙ্গ কমিউনাল দল সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ আছে নাকি। আর আজকের রাজ্য বিজেপির অদ্ধেক তৈরীই হয়েছে প্রাক্তন তিনোদের দিয়ে। ভবিষ্যতেও তাদের পার্টিশিপেশান আরো বাড়বে। তিনোদের ২০১১ সালে মসনদে না বসালে পশ্চিমবঙ্গে আজকে বিজেপির এই রমরমা হয়্না। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে বহুবছর পর কোলকাতায় ফিরে দক্ষিন কোলকাতায় বিজেপির মিছিল দেখেছিলাম। তাই দেখে আমিই অশনি সংকেত বুঝতে পেরেছিলাম। আর তিনোরা দেখতে পায়নি, দিদি বুঝতে পারেনি সেকথা আমি মানতে রাজী নই। বিরোধী ভোট ভাঙার লোভে দিদি রাজ্যে বিজেপিকে বাড়তে দিয়েছিল। এসব না দেখার জন্য, না মানার জন্য বালিতে মুখটা ঠিক কতটা গুঁজতে হয় সেটাই ভাবছি।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে বর্তমান তিনো দলটাকে কঙ্গ্রেস থেকে বিজেপিতে যাওয়ার কন্ডুইট ছাড়া আর কিছু মনে করি না।
"বিজেপি আর তৃণমূল দুটই যে ডেন্জারাস রাইট উইঙ্গ কমিউনাল দল সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ আছে নাকি। "
আমার সন্দেহ আছে। কিন্তু ও নিয়ে তর্ক করে কী হবে। সিপিএমের পাঁঠা সিপিএম কাটবে।
প্রসঙ্গত, দেখলাম মহাগঠবন্ধনে নীতিশকে ডাকাডাকি করা হচ্ছে।
একটা আঞ্চলিক দুর্নীতিগ্রস্ত দলের সাথে একটা সব বড় বড় ক্রোনি ক্যাপিটালিস্টের আশীর্বাদধন্য সর্বভারতীয় ফ্যাসিস্ট শক্তির কী তফাৎ সেটা বোঝা যাচ্ছে না? সত্যি?
পিনাকীদা, মমতা ব্যনার্জী ফ্যাসিস্ট নয়? এইটা বিশ্বাস করার জন্য অনেক ইসে দরকার।
মমতা শুধু ফ্যাসিস্ট নয়, সঙ্গে আদর্শহীন ধান্দাবাজও।
তিনোদের মসনদে রাখার তাগিদ যে অনেকেরই আছে, সে বিষয়ে আমারও সন্দেহ নেই।
তা সিঙ্গুরে কেন সারা রাজ্যে তো আর কোনও শিল্পই হয়নি। বুদ্ধবাবু আর আলিমুদ্দিন থেকে টাটাদের দেওয়া সব টাকাও তো উদ্ধার হয়ে গেছে। দোষীরাও সবাই নিশ্চই শাস্তি পেয়ে গেছে।
এই একই যুক্তি দেখিয়ে এই সাইটে ২০১০-২০১১ সালে গুচ্ছের বক্তব্য রাখা হত। একটা কুমীরের গল্পও দেওয়া হয়েছিল। সেসব যে মিথ্যা কথা ছিল, আজকে প্রমাণ হয়ে গেছে। তাই তাদের কথার দাম দেওয়ার আর কোনও প্রয়োজন দেখছিনা।
এসব সিপিএম তাদের জোটসঙ্গী দীপঙ্করবাবুকে বোঝাক। ভাবুন একবার হাতি কাদায় পড়লে মালেও জ্ঞান দেয়। :-)
তবে ফ্যাসিস্ট কথাটা আজকাল বড় সস্তা হয়ে গেছে। ৭২ এর সিদ্ধার্থ জমানাকে সিপিএম বলত আধা-ফ্যাসিস্ত।