এই টইটা তো এমনিতেই ভোগে গেছে, তো এখানেই থাক। ফেবু পোস্ট আরকি।~~~
সারা পৃথিবীতেই নানান রকম ভয়ানক জিনিসপত্র হয় যা শুনলে মনে হয় এসব আবার হয় নাকি, এ নিশ্চয় রসিকতা। যতদিন এসব দূরের জিনিস থাকে ততদিন গায়েও লাগে না। আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে ঘাড়ের ওপর পড়ে, তখন আর কিছু করার থাকে না। নিজের ঘরে হলে চমকে উঠতে হয়, তাও মনে হয় আমার তো কিছু হয়নি।
আগরতলার পাট চুকেছে বেশ কয়েক দশক হল। তাও নিজেকে আগরতলার লোক বলে পরিচয় দিই। সম্প্রতি আগরতলার ঘটনাবলী দেখে ঐরকম লাগছে - বাস্তব না রসিকতা গুলিয়ে যাচ্ছে।
কদিন আগে দেখলাম মূর্তি পছন্দ হয়নি বলে আর্ট কলেজের সরস্বতী পুজোয় এবিভিপি এসে ওড়না ও বজরং দল এসে ঠোঙা চাপিয়েছে।
ধর্মভিত্তিক সংগঠন এসব করবে - এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু অবাক হলাম, ছাত্রছাত্রীদের কোন বক্তব্য কোথাও চোখে পড়লো না। ত্রিপুরার শিল্পী সাহিত্যিকদের কোন বক্তব্য চোখে পড়লো না কোথাও।
শিল্পের সংজ্ঞা, ঔচিত্য ও সীমা বিষয়ে একটি ঐতিহ্যবাহী চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পাঠ দেবে কোন রাজনৈতিক বাহিনী, এইটা গ্রহণযোগ্য না। আর এইটা বিনা প্রতিবাদে ও প্রতিরোধে মেনে নিতে দেখাটা ভয়ের।
যারা ঠোঙা পরিয়েছে তাদের থেকে বড় চিন্তা যারা মেনে নিয়েছে তাদের নিয়ে - একটা শিল্পকর্ম নিয়ে তার স্রষ্টার কোন প্রতীতি নেই - এ কেমন কথা!
মূর্তি ভালো হয়েছে কি হয়নি, শাস্ত্রসম্মত কিনা, সেসব কথা অপ্রাসঙ্গিক। দুটি রাজনৈতিক সংগঠন একটা কলেজে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের কাজে নাক গলাতে পারে বিনা প্রতিরোধে, এটাই ভয়ের।
তারপর সিংহ সিংহীর নামকরণ।
আকবর আর সীতা নামে সিংহ আর সিংহীর নাম নিয়ে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল মামলা করেছে দেখে অনেকের সঙ্গে আমারও হাসি পেয়েছিল। ভেবেছিলাম ভারতীয় আদালতে শুনতে পাই অসংখ্য নিষ্পত্তি না হওয়া বিচারাধীন মামলা, নিশ্চয় এমন অনর্থক জিনিস নিয়ে মামলা করায় মামলাকারীদের বিচারক বকাঝকা করে ভাগিয়ে দেবেন। ক'দিন পর দেখলাম বিচারক কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করেছেন এইসব নামের জন্য।
তারপর দেখলাম ত্রিপুরার একজন বরিষ্ঠ বনকর্তা এই কারনে সাসপেন্ড হয়ে গেছেন।
এবং যথারীতি, কর্ণবিদারী নিস্তব্ধতা। মানুষ যাঁদের মুক্তচিন্তা চর্চার অগ্রদূত ভাবে সাধারনত, সেরকম কারো কন্ঠ কানে পৌঁছয় না।
হয়তো তাঁরা বলেন, কে জানে, স্থানীয় বৃত্তে, ঘনিষ্ঠ বৃত্তে।
কিন্তু দূরে বসে সেসব কানে পৌঁছয় না।
খারাপ খবরগুলি পোঁছয়, তার কাউন্টার কিছু শুনতে পাই না।
একেক সময় ভয় হয়, হয়তো তাঁদের মধ্যেও একটি বড় অংশ এসব সমর্থন করেন। কে জানে।
আজ শুনলাম বইমেলায় নীহারিকা প্রকাশনার সুসজ্জিত তোরন ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
হয়তো নিয়ম মেনেই ভাঙা হয়েছে, ছবি দেখেছিলাম, সুন্দর দেখাচ্ছিল, কোন নিয়ম লংঘন হয়েছিল হয়তো।
এর সঙ্গে রাজনীতির কোন যোগ নেই এমনটা ধরে নেওয়া সমীচিন, কারন ত্রিপুরার মূলধারার সাহিত্যচর্চা ইদানীং সযত্নে 'অরাজনৈতিক', অন্তত দূর থেকে যতটা দেখতে পাই। ব্যতিক্রম আছে, সেই সন্ধান সামান্য পাই। তবে তারা দলছুট, ব্যতিক্রম।
সে যাই হোক। কিন্তু এই বিষয়েও মোটের ওপর কর্ণবিদারী নিস্তব্ধতা। শিল্প, সাহিত্য, সৃষ্টিশীলতার জগতে শ্মশানের শান্তি পীড়াদায়ক।
কোন কিছু নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করা, আপত্তি জানানো কি আজকাল উঠে গেছে, নাকি সবাই আসলে ভয়ানক সন্তুষ্ট, এইসবই আদর্শ ব্যাপার স্যাপার? ধন্দ হয়।
সুমন লিখেছিলেনঃ
..."শাসন করে মুর্খ চোখ রাঙায় দলবল
...
সঙের আরশিতে সময় -এর মুখ
রাংতায় মোড়া যুগের অসুখ
নির্বোধের দল বলে, সাবাস এই তো চাই
বিদায় পরিচিতা আকাশ অবাক তার কাছে যাই"...
কী আর করা যাবে। সৃষ্টিকর্ম হোক অরাজনৈতিক, নিরাপদ ও বিবর্ণ। পেছন দিকে এগিয়ে যাই।