এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ‘মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ’ নিয়ে কথা বলা নিষিদ্ধ!

    PRABIRJIT SARKAR লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১২৮৬ বার পঠিত | রেটিং ৩.৩ (৩ জন)
  • From সুষুপ্ত পাঠক
    পৃথিবীতে যত সাম্রাজ্যবাদ আছে, ব্রিটিশ, পূর্তগিজ, ফরাসী...সেই উপনিবেশিক শাসনের হত্যা শোষণ নিপীড়ন নিয়ে কথা বলা ইতিহাস চর্চা, খোদ ইউরোপীয়ানরা তাদের উপনিবেশ শাসনের সময়কার অনাচার নিয়ে কথা বলে। একমাত্র ‘ইসলামী সাম্রাজ্যবাদ’ নিয়ে কথা বলাই হারাম! যে এটা নিয়ে কথা বলবে, সে ইহুদী, ইজরাইয়েল, মোসাদ, বিজেপি, র’, হিন্দু জাতীয়তাবাদী...।
    এই জন্য ভারতে তিনশো বছরের মুসলিম শাসন যে একটা সাম্রাজ্যবাদ সেটার কোন স্বীকৃতি নেই! ভারতের সেই সময়ের ইতিহাস লিখেছে মুসলমানরা। সেই ইতিহাসই বামপন্থীদের ইতিহাসের রেফারেন্স। তারা কখনোই ভারতে ইউরোপীয়ান সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সঙ্গে ‘ইসলামী সাম্রাজ্যবাদ’ নিয়ে একটি কথাও বলেনি। উল্টো ভারতে মুসলিম শাসনকে বাদ দিলে ভারতের ইতিহাস বলতে কিছু থাকে না বলে দাবী করে। এখানে কেউ পাল্টা যুক্তি দিলে আর রক্ষে নেই! সে সোজা চাড্ডি!
    তাদের যুক্তি হচ্ছে, মুসলমানরা বহিরাগত হলেও এখানে সাম্রাজ্য স্থাপন করে এখানেই থেকে গিয়েছিল। এটাকে নিজেদের দেশ বানিয়ে ফেলেছিল। এর বিরুদ্ধে পাল্টা যুক্তি যখন দেই- আমেরিকায় সাদারা তো সেখানে উপনিবেশ স্থাপন করে সেখানেই থেকে গিয়েছিল। সেটাকেই নিজেদের দেশ বানিয়ে ফেলেছিল। তবু আজো সাদাদের উপনিবেশ ইতিহাস, তাদের অত্যাচার আদিবাসীদের উপর, সেসব কি আমরা বলি না? আফ্রিকাকেও তো সাদারা নিজেদের দেশ বানিয়ে থেকে গেছে। খোদ সাদা চামড়ার মার্কিন লেখকরা বিস্তর বই লিখে গেছেন এ বিষয়ে। এবি গুথরি নামের একজন লেখক ব্রিটিশ সাদারা কেমন করে আমেরিকা গিয়ে উপনিবেশ স্থাপন করে আদিবাসীদের মেরেহেজে দখল করেছিল তা নিয়ে ‘দ্য বিগ স্কাই’ নামের এক ঢাউস উপন্যাস লিখে বুকার পুরস্কার পেয়েছিলেন। কেবল আমিই তৈমুর লং নিয়ে কথা বলে তিরস্কার পেলাম! কেন ভারতীয় বাচ্চাদের নাম তৈমুর রাখা হয় সে প্রশ্ন করে চাড্ডি হলাম!
    লড ক্লাইভের লুটপাটের ইতিহাস ভারতে একটি জনপ্রিয় ইতিহাস। এই ইতিহাস সকলেই জানে। এসব নিয়ে কথা বলা হচ্ছে ‘ইতিহাস চর্চা’। এখন যারা লন্ডনে বসবাস করে তেমন ভারতীয় উপমহাদেশীয়রা মনে করে আমাদের টাকা লুটপাট করেই ব্রিটিশদের এত ধনসম্পদ। লড ক্লাইভ একটা খলনায়ক আমাদের ইতিহাস। কিন্তু সুলতান মাহমদু ভারতীয়দের এত বেশি দাস বানিয়ে ধরে নিয়ে প্যারস্যের দাস বাজারে উঠিয়েছিলেন যে দাসদের দর সর্বনিন্ম পর্যায়ে পড়ে গিয়েছিল। এত লুট মাহমুদ আর ইরানের নাদির শাহ করেছিল যে সেসব দেশ সম্পদশালী হয়ে গিয়েছিল। আজ কেউ ইরান বা মধ্যপাচ্য গিয়ে বলে না, আমাদের ধনসম্পদ লুটপাট করে ওরা সম্পদশালী হয়েছে। উল্টো সুলতান মাহমদু, নাদির শাহদের ইতিহাস বলা হলে সেটার নাম হয় “মুসলমানদের ভিলেন বানানো হয়েছে”!
    মুঘল আমলের দুর্ভিক্ষ নিয়ে কথা বলাই তো ডাইরেক্ট ‘মুসলিম বিদ্বেষী’! ইংরেজদের সময় দুর্ভিক্ষ নিয়ে কথা বলুন- সেটা ইতিহাস চর্চা, কিন্তু তাজমহল বানিয়ে কোটি কোটি মানুষ ভাত-রুটির জন্য মরে পড়ে থেকেছে সেটা নিয়ে কথা বলা মানে আপনি কারোর এজেন্ট হয়ে লিখছেন! এই যে ভারতে ‘মুসলিম শাসন’ নিয়ে কথা বললেই বিতর্কিত হতে হয়, এর মানে হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশে ‘ইসলামী সাম্রাজ্যবাদের’ উত্তরাধিকাররা সরব। বামপন্থীরা তাদেরকে জনসমর্থন মনে করে দলে পাবার আশা করে। এসব স্বপ্ন স্বপ্নদোষে পরিণত হবে।
    এসব নিয়ে লেখার কারণে আমি সেফ জোন থেকে বেরিয়ে গেছি। তথাকথিত নিরপেক্ষ আমি হইনি। আমার পক্ষ সত্যের পক্ষে। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ, পূর্তগিজ, ফরাসী উপনিবেশ হয়েছিল, ইউরোপীয়ান সাম্রাজ্যবাদ ঘটেছিল, তেমনি এখানে মুসলিম শাসনে ‘ইসলামী সাম্রাজ্যবাদ’ দখল করেছিল। ইউরোপীয়ান সাম্রাজ্যবাদ মধ্যযুগীয় একটি আগ্রাসনবাদ। এর এখন কোন বাস্তবতা নেই। কিন্তু মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ একটি ধর্মীয় মতবাদ। যার ভারতীয় উপমহাদেশীয় নাম “মুসলিম লীগ”। এই মুসলিম লীগ দর্শনের কথা বলেই আমি সেফ জোন থেকে বেরিয়ে গেছি। নইলে আমি মিষ্টি মিষ্টি মুক্তমনা থেকে যেতে পারতাম। ফলে এখন আমার লেখা যাদের যৌক্তিক বলে মনে হয় তারাও নিজেদের সেফ জোনে রাখতে সেটি প্রকাশ করেন না। আমার প্রথম বইতেও আমি ভারতবর্ষের মুসলিম লীগ দর্শনের ইতিহাস বর্ণনা করেছি। এই বইটি প্রকাশ হওয়ার পর একশ্রেণীর মুসলিম লীগ ও বামপন্থীদের গা জ্বলে যাচ্ছে। শুনেছি বইটি ভালো চলছে, সেটিও একটি কারণ প্রতিদিন আমার বিরুদ্ধে পোস্ট দেয়ার।
    আমার বই নিয়ে আমি কিছু বলবো না। পাঠকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। সেটা থাকুক। আমার কথা হচ্ছে আমি জনপ্রিয় হতে আসিনি। আমাকে চাড্ডি, মোসাদ, আরএসএস, সিআইএ এজেন্ট যা খুশী বলা হোক, আমার কিছু যায় আসে না। আমি যা লিখি সে বিশ্লেষণ যে কতখানি বাস্তব, সত্য, সেটি আজ না হলেও কাল বুঝতে পারবেন। তাদের হতাশাটা আমি বুঝতে পারি। বইটি ঠেকাতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। প্রথম বই নিয়ে সেরকম কৌশলই ছিল। আমার প্রথম বই বের হওয়াই একটা আড় হয়ে ছিল প্রকাশকদের জন্য। সেটি কেটে গেছে। এরপর একের পর এক বই বের হতে পারবে। আমার সেসব বই আমাকে জনপ্রিয় নয়, আরো বেশি বন্ধুহীন করে দিবে। কিন্তু আমাকে উপেক্ষা করতে পারবেন না...।
    এক দশক আগে ব্লগে লিখেছিলাম, আমি নতুন প্রজন্মের জন্য লিখি। আজো সে কথাই বলি। আমি নতুন প্রজন্মের জন্য লিখি। আমি তাদের নাড়িয়ে দিতে চাই, প্রচলিত ইতিহাস ঐতিহ্য বলতে যা জানো, তা সত্য নয়...।
     

    সুষুপ্ত পাঠক লিখেছেন -আমি মোটামুটি একমত 
    February 24

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • পলিটিশিয়ান | 2607:fb91:a6b:1592:ac39:bcb1:7e4c:***:*** | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৯528901
  • "মূর্খরাই কেউ কিছু পোস্ট করলে তাদের মনের মত না হলে ব্যক্তি আক্রমণ করে।"
     
    একেবারে খাঁটি কথা।
  • Arindam Basu | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১১528904
  • মোগল আমল এবং সে সময়কার সাম্রাজ্য নিয়ে উইলিয়াম আরভিনের বইটি পড়ে দেখুন, এবং অবশ্যই সে বইতে সার যদুনাথ সরকারের কমেন্টারী গুলো পড়বেন। 
    https://archive.org/details/latermughals02irviuoft/page/n4/mode/1up
     
    (আর্কাইভ থেকে ফ্রি তে পাবেন)।
    পড়ে দেখুন, মোগলদের নামে যে ধরণের "সাম্রাজ্যবাদী" তকমা দেওয়া হচ্ছে, তার কতটুকু ভিত্তি রয়েছে। 
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন