কাল আমি জানতে পারলুম,সুনন্দ সান্যাল প্রয়াত হয়েছেন।আমি সঙ্গতভাবেই আশা করিনা নির্বীর্য বাঙালি কোন ঋজু মেরুদণ্ডের মানুষকে স্মরণ করবে।লেহনজীবিতা দিয়ে,বাংলাদেশের শিক্ষকসমাজ মোমবাতি ছাড়া আর কিছুতে আগুন জ্বেলেছেন বলতে পারি না।
তৈলপ্রদান বাঙালির অক্ষয় জীবিকা এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকেও সেই স্বভাব থেকে মুক্ত করা যায় না।
এখন যদি মনে করেন,এই লেহন-বৃত্তি বেঁচে থাকার একটা policy এবং লেহনের মধ্যেই বেঁচে থাকবার বিপ্লব আছে,তাও তাকে সিদ্ধ করতে হবে,যোগ্যতানুসারে।
কে কেন কাকে লেহন করছে,এই তিনপ্রশ্নের উত্তর না দিলে,লেহনজীবী মানুষের আয়ু,কীর্তি,কর্ম সবই প্রশ্নের মুখে।
সুনন্দ সান্যাল,লেহনজীবী ছিলেন না।তিনি কোনো কলেজে ছাত্রাবস্থায় অন্যবিষয়ে অনার্সে ফেল করে বাংলা পড়েননি এবং ইংরেজির চমৎকার শিক্ষক হতে পেরেছিলেন।
তিনি মৃদুমৃদু হাসিতে মহর্ষির মত সভামণ্ডপে বসতেন না,লঘু লঘু ভাষে,শ্যামও রাখি কুলও রাখি বক্তৃতা দিতেন না।
তিনি সব পরীক্ষা দিয়েই পরীক্ষা পাস করেছিলেন।অনায়াসে বিদেশ যেতে পারতেন,চাইলে যেকোনো বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পারতেন,কিন্তু ভুয়ো ডিগ্রি দিয়ে রিডার,প্রোফেসর এবং উপাচার্য হননি।এবং অবসরের পর অবৈধ বেতন ফেরৎ দেওয়া দূরে থাক,বাড়িতে বসে অবৈধ পেন্সান ভোগও করেন নি।
সুনন্দ বাবুর মুখরক্ষা করতে,২০০৭ এ বিমান বসুকে সিকাগো গিয়ে ক্লিণ্টন সিলির সঙ্গে বসতে হয় নি এবং তিনি ২০০৭ এ পিএচ,ডি পাননি।সুনন্দবাবুকে তীর্থের কাকের মত,কবে অজিত পাঁজা মারা যাবেন,তার অপেক্ষা করতে হয়নি,কারণ তিনি এমন কিছু ঘটান নি,যাতে অজিত পাঁজা বেঁচে থাকলে,কারাবাস অবধিও হতে পারত।
সুনন্দবাবুকে ভাষাতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করবার জন্য সৈয়দ মুজতবা সিরাজের গাল খেতে হয়নি,কারণ সংস্কৃত না,জেনে বঙ্গভাষাচর্চা যে অসম্ভব তা তিনি বুঝতেন।
সুনন্দবাবুর একটি পদবন্ধ আমি জীবনে ভুলব না।
একটি মিছিল হয়েছিল।তাতে যাঁরা থাকতে পারেন,তাঁরা ছিলেন।তখন বুদ্ধপদে বিনমিত বুদ্ধিজীবীরা প্রচুর যুক্তিজালে,ভুলকে সত্য ও সত্যকে ভুল বলে,পোস্টমডার্ণ যুগের সূচনা করছেন।
সুনন্দবাবু,একা।ঠিক রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছেন অন্ধকার ঘরে,একটিমাত্র মৃৎপ্রদীপের আলোর মত,তিনি স্থির হয়ে আছেন।
টি ভি জিজ্ঞাসা করল,তাঁর প্রতিক্রিয়া ।
তিনি উত্তর দিয়েছিলেন
"বাঙালির মৃত বিবেকের শোভাযাত্রা নিয়ে আমার কিছু বলবার নেই।"
সুনন্দ সান্যালের মত ঋজু বাঙালির প্রয়াণ আমাদের স্মরণে থাকুক।
কেসিসাহেব, অর্জুনদেবের আজকের পোস্ট।