একটু সামারি করা যাক। আর গানটাও শুনে নিন https://soundcloud.com/rkmstudentshome/asha-basa
- আশাবাসা ঘোর তমোনাশা বামা কে মোহিনী?
আশা বাসা মানে কী? ঘোর তমোনাশা দেবী কালী
- ঘোর ঘটা কান্তিছটা ব্রহ্মকটা ঠেকেছে।
রঞ্জনদা বললেন ব্রহ্মকটা= ব্রহ্মতালু। হরিচরণ দেখে আমার মনে হল আকাশ, দীপ বললেন আকাশ হতে পারে। অর্থাৎ দেবীর রূপের কিরণ সর্বত্র প্রকাশিত, সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। দেবী সর্বত্র প্রকাশিতা, এটাই হয়তো সাধক বলতে চেয়েছেন।
- রূপসী শিরসি শশী , হরোরসি এলোকেশী,
রূপসী = দেবীর বিশেষণ , শিরসি= মাথায় ( সংস্কৃত বিভক্তি), হরোরসি= হর + উরসি (হরের বুকের উপর, পুনরায় সংস্কৃত বিভক্তি, যদিও সন্ধি বাংলা ভাষা অনুসারে হয়েছে) , উর= বুক উরস্ত্রাণ = বর্ম দেবী অসামান্য সুন্দরী, তাঁর মাথায় চন্দ্রকলা শোভিত, তিনি শিববক্ষে দণ্ডায়মানা
- মুখজ্বালা সুধাঢালা কুলবালা নাচিছে।
"মুখজ্বালা সুধাঢালা" সম্ভবত দেবীর মুখের বর্ণনা। যেখানে অসামান্য সৌন্দর্য ও ক্রোধের যুগপৎ সন্নিবেশ ঘটেছে। তুলনীয় "দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র আগুনবরণ!"
- দ্রুত চলে আস্য টলে, বাহুবলে দৈত্য দলে,
আস্য টলে= 'চলে যেতে ঢলে পড়ে আসব ভরে'। বাহুবলে দৈত্যদের দলন করছে, কালীর বর্ণনায় হরদম বলা হয় দৈত্যদলনী।
- ডাকে শিবা কব কিবা, নিশিদিবা করেছে।
"নিশিদিবা করেছে" এর দুটো অর্থ হতে পারে। রূপের ছটায় রাত্রি দিনে রূপান্তরিত হয়েছে। যেমন, "নাশিছে তিমিরে, তিমিরবরণী।" অথবা, অসম্ভবও সম্ভব হয়েছে। আর শেষে দুষ্টচক্র নয়, "দুষ্টচিত্ত" আছে। এখানে কবি নিজেকে দুষ্টচিত্ত বলেছেন। "রামপ্রসাদে কালীর বাদে" সাধকের সংগ্রাম, সাধনসমর। সাধক সমস্ত কামনা বাসনা জয় করে দেবীর সঙ্গে একাত্ম হতে চান। এই যুদ্ধকেই শেষ স্তবকে বর্ণনা করেছেন। ঠিক যেমন আরেক গানে "আয় মা সাধনসমরে দেখি মা হারে কি পুত্র হারে।" সাধক মাকে হারাতে চান; অর্থাৎ সব কামনাবাসনা জয় করে দেবী/ ব্রহ্মের("কালীই ব্রহ্ম, ব্রহ্মই কালী") সঙ্গে একাত্ম হতে চাইছেন।
- ক্ষীণ দীন ভাগ্যহীন, দুষ্টচিত্ত সুকঠিন,
- রামপ্রসাদে কালীর বাদে কী প্রমাদে ঠেকেছে।
কালীর কথা বলতে গিয়ে রামপ্রসাদের সব গুলিয়ে গেছে (প্রমাদে)।
প্রথম স্তবকগুলিতে দেবীর অসামান্য সৌন্দর্যের ও পরাক্রমের বর্ণনা, শেষ দুই স্তবকে সাধনসমরের ইঙ্গিত। মনে হয় এটাই গানের মূল কথা।