ভুমিপুত্রদের জন্য সংরক্ষণ ভাল সাপোর্ট পাবে। কিন্তু ভাষাশিক্ষার ব্যাপারটা খুব জনপ্রিয় নাও হতে পারে। অবাঙালি ভাষা, আচরণ স্ট্যাটাস সিম্বল হিসেবে দেখে লোক। গরীব বা নিম্নমধ্যবিত্তরাও ওটাই করতে চায়।
আর সবচেয়ে বড় ভাষা সন্ত্রাস তো ইংরিজি পড়া। এত বছর হয়ে গেল, তবু আমার ইংরিজি পড়ার গতি, বাংলার অর্ধেক। সংস্কৃত পড়াটা কম, কিন্তু সন্ত্রাসই। হয়তো লাখে একজন গবেষণা করবে, তার জন্য সবাইকে কেন পড়তে হবে?
এর চেয়ে, ইশকুলে বিজাতীয় সংস্কৃতের জায়গায় স্থানীয় একটা পরিচিত ভাষা লেখা এবং পড়াটা শিখে নিলে চাপ তো কমবেই। সন্ত্রাসও।
সংস্কৃত পড়াটাও তো তৃতীয় ভাষা পড়াই। তার জায়গায় স্থানীয় ভাষা পড়লে কী চাপ পড়বে বুঝলামনা। আর স্থানীয় ভাষা মানে কী সে তো আগেই বললাম। আপাতত বাংলা সাঁওতালি নেপালি।
এতে করে সংখ্যাগরিষ্ঠের সংস্কৃত পড়াও আটকাবেনা। গবেষণাও না। তারা তো তৃতীয় ভাষা হিসেবে পড়ছেই। সংখ্যালঘু অবশ্য পড়তে পারবেনা। তবে ও না পড়লেও গবেষণা আটকায়না। দুই ক্লাসে থাকে তো আটটা শব্দরূপ ছটা ধাতুরূপ। খুবই আগ্রহ থাকলে এক মাসেই মুখস্থ করে নেওয়া সম্ভব।
মেদিনীপুর অস্মিতাও বিরল নয়।
আচ্ছা, এলেসাহেবের কি সলিউসান ভাষা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে?
দেশের ভবিষ্যত যখন বিজেপি তখন ইস্কুলে শুধু হোয়াট্সাপ ফরোয়ার্ড করতে শিখিয়ে দিক। অত ভাষা টাষা শিখে কি হবে। বাকী বড়লোক মেধাবীদের জন্য প্রাইভেট ইস্কুল আছে।
স্থানীয় ভাষার কী সংজ্ঞা? বাঁকুড়ার একটা ছেলের কাছে স্কুলপাঠ্য বাংলা দ্বিতীয় ভাষার সমান। তার ওপরে আছে ইংরেজি। তার মানে সে আসলে তিনটে ভাষা শিখতে বাধ্য হচ্ছে। এগুলো আপনারা ফিল করেন?
আপনি নাও জানতে পারেন, আমি জানি। কারণ আমার প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী সংস্কৃতের শিক্ষক। আমার নিজের মেয়েই সংস্কৃত নিয়ে গবেষণা করছে। সেসব তাহলে ফালতু? এটাতো ভাষা সন্ত্রাস!
সেটা স্থানীয় ভাষা হবে নাই বা কেন? একটা জায়গায় থাকব, পড়ব, স্থানীয় ভাষাটা জাস্ট লিখতে পড়তেও জানবও না?
আর ওই দু বছর সংস্কৃত পড়ে কেউ সংস্কৃত শিখেছে বলে জানিনা। তার চেয়ে স্থানীয় ভাষা শেখালে শিখবে।
দুটো পেপারে কুড়িটা গল্প কবিতা? আপনারই মাথা খারাপ হয়ে গেছে! আমার কন্যা ২০১১-র মাধ্যমিক। আমি নিজে তাকে ৩৯টা গল্প-কবিতা পড়িয়েছি!
সেটাই বা স্থানীয় ভাষাই হবে কেন? সংস্কৃত স্থানীয় ভাষা? আরবি? সংস্কৃত যদি তৃতীয় ভাষা হিসেবে না নেওয়া হয়, তাহলে পরবর্তীকালে সংস্কৃত পড়াবেন কে? স্কুলে বা কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে?
মামুর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মাধ্যমিকে বাংলার দুটো পেপার দিতে হত। কুড়িটা গপ্পো-কবিতার সঙ্গে ঐসব অপিনিহিতি ফপিনিহিতি পড়তে হত। কোন আঞ্চলিক ভাষায় রামবাবুর আমবাগানকে আমবাবুর রামবাগান বলে এইসব ভাট মুখস্ত করতে হত। মামু প্লিজ আরেকবার মাধ্যমিকে বসুক। তারপর ভাষাপ্রস্তাব দিক।
ওহো না না। আমি তো ওই ভাবেই তৃতীয় ভাষা চাইছি। মাধ্যমিকের সাবজেক্ট হিসেবে নয়। দু বছরের জায়গায় তিন বছর হতে পারে। এই মাত্র।
তবে সরকারি কাজের চাকরিতে থাকা জরুরি। ওটা বাধ্যতামূলক।
বোঝো কাণ্ড! ১৯৭৯ সাল থেকে তৃতীয় ভাষা কেবল সপ্তম অষ্টম শ্রেণিতে পড়তে হয়। ১৯৮১ থেকে মাধ্যমিক ৯০০-য় হয়। আমি সেই বছরের মাধ্যমিক। বাধ্যতামূলকভাবে দুটো ভাষার পরীক্ষা দিয়েছি - বাংলা ও ইংরেজি। আপনি তার ৪০ বছর পরে তিনটে ভাষাকে বাধ্যতামূলক করতে চাইছেন!
আরও পার্থক্য আছে। রাজ্যের ভিত্তিতে "বঞ্চনা" ব্যাপারটা আমেরিকায় নেই।
তাছাড়া আমেরিকায় ডেমোগ্রাফি মোটামুটি একই। আমেরিকার হিসেবে ভারতবর্ষ চলবেই বা কেন।
পার্থক্য হল ইন্ডিয়াতে ইনকাম ট্যাক্স আর সেলস ট্যাক্সের পুরোটাই কেন্দ্রের হাতে। আমেরিকাতে সেলস ট্যাক্স পুরোটাই রাজ্যের হাতে। তাছাড়া বেশিরভাগ রাজ্যেই অল্প বিস্তর ইনকাম ট্যাক্স আছে, যেটা কর্পোরেটরাও দেয়। দুই জায়্গাতেই প্রপার্টি ট্যাক্স লোকাল গভের হাতে।
তৃতীয় ভাষা এখন ঐচ্ছিক নাকি? আমাদের সময় তো ছিলনা। কবে থেকে হল?
সৈকত তৃতীয় ভাষা ঐচ্ছিক, বাধ্যতামূলক নয়। আপনি বাধ্যতামূলকভাবে তিনটে ভাষা পড়ানোর কথা বলছেন। কী বলছেন সেটা নিজে বুঝতে পারছেন তো? ছাত্রছাত্রীদের ওপর এত চাপ দিতে চাইছেন কেন?
গোদা ইনকাম ট্যাক্সটা শ্যমাচাচাই তো নেয়! পুরোটাই কি রাজ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া, তা তো নয়। নইলে রেস টু দ্য বটমের গল্প আপনি জানেন।
শ্যামচাচার দেশে রাজ্যের হাতে অনেক ক্ষমতা আছে (এমনকি নিজস্ব মৃত্যুদন্ড অবধি ), সেটা মানি।
তৃতীয় ভাষা পড়ানো হয় তো। আমরা সংস্কৃত পড়েছি, চন্দননগরে ফ্রেঞ্চ পড়তে হত। কেউই কিসু শেখেনি। স্থানীয় ভাষা পড়ালে শিখবেও। কাজও হবে।
তবে কাজে স্থানীয় ভাষা মাস্ট করা দরকার। নইলে এতেও কেউ কিছু শিখবেনা।
তাহলে আপনি ত্রিভাষা চাইছেন। মাতৃভাষা, ইংরেজি এবং স্থানীয় ভাষা। তাই তো? মাধ্যমিক স্তরে কোঠারি কমিশনের সুপারিশের পরে ত্রিভাষা সূত্র বর্জিত। আপনি কি সেটা ফিরিয়ে আনতে চাইছেন?
বিজেপি তো বলছে যে মোদিকে দায়িত্ব দাও, সব বন্চনা একদিনে ক্ষতম করে দেবো। যেমন ব্ল্যাক মানি এখন আর কোনও ইস্যুই নয়। অবাঙালীকে বলছে বাঙালী হঠিয়ে সুবিচার দেবো, বাঙালদের বলছে মুসলমান ঠেঙিয়ে সুবিচার দেবো, ঘটিদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাঙালহীন রাজ্যের। লোকে সেসবেই মশগুল হয়ে রয়েছে। আমরা নাহয় সেসবে আর ঘি নাই ঢাললাম।
বিজেপির এরকম কোনো বক্তব্য নেই। এই ইস্তাহারে শুনলাম ভাষাশিক্ষা নিয়ে কিছু কথা লিখেছে। পড়া হয়নি এখনও। কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্য-ফেডারালিজম, অনুপ্রবেশ-আইএলপি -- সবেতেই বিজেপি পুরো উল্টো দিকে।
সেইজন্যই তো বললাম যে ফেডারালিজম নিয়ে আলাদা তক্ক আছে। সেটার পরিসর অনেক বড়।
তবে এসব কথা একটু সাবধানে বলবেন। আপনি যেটা বলছেন, সেটাই কিন্তু মোটামুটি বিজেপির বক্তব্য। আপনি আবার উচ্চবর্ণ হিন্দু। ঃ))
"তার মানে আপনি হিন্দি মাধ্যম এবং উর্দু মাধ্যম চাইছেন না? তার মানে এই মাধ্যমগুলো এ রাজ্যে থাকা আপনার কাছে অপ্রয়োজনীয়?"
কেন চাইবনা? থাক না। প্রথম ভাষা হিসেবে তো আপত্তি করিনি। সঙ্গে বাধ্যতামূলক স্থানীয় ভাষা থাকবে। স্থানীয় ভাষা হিসেবে কাকে গণ্য করছি, তারও একটা লিস্টি দিলাম। সঙ্গে রাজ্য সরকারের পরীক্ষায় স্থানীয় ভাষা বাধ্যতামূলক হোক চাইছি। এই তো।
"এবারে আপনি যেটা বলছেন সেটা কেন্দ্রের বন্চনা।"
বঞ্চনা না, স্ট্রাকচারটাই ওই। আপাতত ধরে নেওয়া গেল বঞ্চনা। ৭০ বছরের পুঞ্জিভূত বঞ্চনা। রিসোর্স পাচার। সেটা বাদ দিয়ে আলোচনাটা হবেই বা কী করে।
এই ৭০ বছরের "বঞ্চনা"র সুরাহা হয়ে গেলে, প্লাস, দেশভাগের "বঞ্চনা"র সুরাহা হয়ে গেলে বিহার বা বাংলাদেশ কোনো জায়গার লোকের আসা-যাওয়ায় আপত্তি কীসের? একটুও নেই।
শ্যামচাচার দেশের বহু রাজ্যে আয়কর এবং ব্যয়কর রাজ্যও নেয়।
সরি তিনবার পোস্ট হয়ে গেছে। সৈকত দাড়িভিটা স্কুলের ঘটনা মনে পড়ে? উর্দু মাধ্যম স্কুল? আপনি তার পুনরাবৃত্তি চাইছেন বুঝি?