ভালো লাগল বলে পাঠালাম ।
'আজ ফেলুদার ইনবক্স-এ কোনো এক অজ্ঞাত আইডি থেকে ইমেইল এসেছে। সচরাচর ফেলুদা এইধরনের ইমেইল খোলেনা। কিন্তু এই ইমেইলটার লোগোতে সাতরঙা গোল চশমার ছবি দেখে কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে ভেবে তারপর খুলেই ফেললো।
ইমেইলটার বিষয়বস্তু এইরকম:
১৩ই মার্চ, দুপুর ১টা
"প্রিয় ফেলু,
আমি গত দশদিন ধরে চীনের একটা গোপন ডেরাতে আস্তানা গেড়েছি। যোগাযোগের মাধ্যমেও গোপনীয়তা বজায় রাখতে হচ্ছে, তাই তোমার মেলের উত্তর দিতে দেরি হলো। আমার হঠাৎই এইভাবে চীনে আসা কতদূর সার্থক করতে পারবো জানি না, তবে গত কয়েকদিন যে সব ঘটনা ঘটেছে তাতে কিছুটা আশাপ্রদ বলেই মনে হচ্ছে।
এখানকার ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির এক প্রফেসরকে প্রায় অপহরণ করেই আমার এই গোপন ডেরাতে নিয়ে এসেছি। কোভিড-১৯ এর মারাত্মক প্রভাবে ওনার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। আমার মিরাকিউরল প্রয়োগে এখন অনেকটা সুস্থ।
গত কয়েকদিন ধরে আমার রিমেমব্রেন যন্ত্রের সাহায্যে ওই চীনা প্রফেসরের সমস্ত পূর্বস্মৃতি আমি রেকর্ড করেছি। এই কোভিড-১৯ এর আগের সমস্ত বিবর্তিত রূপের ভাইরাসদের সংগ্ৰহ করে আমার মেকশিফ্ট ল্যাবরেটরিতে রেখেছি।
তুমি তো জানোই যে একসময় মাইক্রোসোনোগ্ৰাফ দিয়ে আমি টেরাটম্ গ্ৰহের প্রাণীদের, অর্থাৎ ভাইরাসদের সঙ্গে কথোপকথন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। সেই পদ্ধতিটি এখানেও প্রয়োগ করেছি, এবং কাল হঠাৎই আংশিক সফল হয়েছি বলতে পারো।
একমাত্র ভাইরাস-ই এই মহাবিশ্বের সমস্ত প্রাণ শেষ করতে পারে ফেলু। এরা নিজেরাও বিবর্তিত হয়, তাই ওই ভাইরাস-রাই বাকি ভাইরাসদের মারতে পারে। এই ভিনগ্ৰহীদের জেনেটিকালি মডিফায়েড করিয়ে নিজেদের মধ্যেই লড়িয়ে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যদিও এই যুদ্ধকে 'বায়ো ওয়ারফেয়ার' না বলে 'প্রথম মহাবিশ্বযুদ্ধ' বলাই যুক্তিযুক্ত।
আমি তাই অ্যান্টি-করোনা ভাইরাসদের এক এক করে দলে টানছি। ওদের বশে এনে আমি 'নাকরোনা' সেনা তৈরী করবো। মানবকল্যাণে এটাই হয়তো হবে আমার শেষ এক্সপেরিমেন্ট।
শুভেচ্ছান্তে
ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু"
পড়া শেষ করে ফেলুদা আমার দিকে ঘুরে বললো, 'বুঝলি তোপসে, জেনেটিকাল মডিফিকেশন আর জেনেটিকালি ইঞ্জিনিয়ারড্ ভাইরাস নিয়ে কাজ অনেক হয়েছে, তবে তার অধিকাংশই বায়োলোজিকাল অস্ত্র তৈরি করতে। এই কোভিড-১৯ ও অস্ত্র হতে পারে, কারণ কিছুদিন আগেই কয়েকজন চাইনিজ বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে কানাডার একটা মাইক্রোবায়োলোজিকাল ল্যাবরেটরিতে সিকিউরিটি ব্রিচের অভিযোগ উঠেছিল। এখন প্রফেসর শঙ্কু যদি সেই একই পদ্ধতিতে মানবকল্যাণ করেন,সেটা অন্তত আমার কাছে অপরাধ নয়।'
ইমেইলটা জটায়ুকে পড়াতেই উনি বলে উঠলেন, 'প্রফেসর দেখছি ভাইয়ে ভাইয়ে, আই মিন, ভাই-রাসে ভাই-রাসে লড়াই বাঁধাতে চলেছেন। এব্যাপারে তো বাঙালি সিদ্ধহস্ত মশাই। নোভেল করোনাকে বিলুপ্ত করে এইবার বাঙালি আরেকটা নোবেল পাবেই। আর চীনে বসে প্রফেসর যেমন নতুন যুদ্ধকৌশল তৈরী করছেন, তাতে আমার পরের উপন্যাসের নাম-ও ঠিক করে ফেললাম, চায়নায় চাণক্য!'
কলকাতায় লোকজনের কোনো সচেতনতা নেই। কাল একটি পত্রিকার এডিটরিয়াল মিটে কলেজ স্ট্রীটে গেছিলাম। আমি বাদে আর একজনও মাস্ক পরেনি। শুধু তাই নয়। আমি পরাতে আবার সবার বক্তব্য 'এই যে তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার ই ইনফেকশন লেগেছে। তোমার থেকে আমাদের ছড়াবে। ' কেউ স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেনা। মিটিং এ স্বাভাবিক ভাবেই চা, সিঙ্গারা, মিষ্টি দেয়। সেসব খেয়ে ঐ একটু বোতল থেকে দু ফোঁটা ঢেলে নামকা ওয়াস্তে হাত ধুচ্ছে।