এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পশ্চিমবঙ্গ দিবস 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ জুন ২০২৩ | ৮২০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • ১৭৫৭। জগৎশেঠকে সিরাজ প্রকাশ্যে এক চড় মেরেছিলেন। মিরজাফরকে খোলা সভায় তামাশার পাত্র বানিয়েছিলেন। এছাড়াও খুব খিস্তিখাস্তা মুখ-খারাপ করতেন। দরবারের পুরোনোদের পাত্তা দিতেননা। এর কোনোটাই ভালো কাজ না। সত্যিই না। তাই জগৎশেঠ প্রতিকার চাইলেন। গেলেন বড় গুন্ডা ইংরেজের কাছে। বাকি অভিজাতরাও গেলেন। পলাশীর যুদ্ধে ছোটো গুন্ডা ফৌত হয়ে অপমানের প্রতিকার হল বটে, কিন্তু জগৎবাবুও ফৌত হলেন। জগৎ শেঠের প্রভূত জাগতিক বুদ্ধি ছিল, কিন্তু তিনি খেলাটাই ধরতে পারেননি। বাকিরাও এক এক করে ভোগে গেলেন। বড় গুন্ডা এমন সুশাসন আনল, যে, ১৩ বছরের মধ্যেই দুর্ভিক্ষ। একটা স্বচ্ছল দেশের এক তৃতীয়াংশ লোক স্রেফ না খেতে পেয়ে মরে গেল। যারা মরল, তারা আঙুল কামড়াতে-কামড়াতে মরল। বাকি কিছু লোকের আঙুল ফুলে কলাগাছ হল। তারা ইংরিজিতে পড়াশুনো করে, এই পুরো ব্যাপারটাকেই বর্বরতা থেকে সভ্যতায় উত্তরণ বলল। পরে নবজাগরণ বলল। বাংলায় সভ্যতা-প্রতিষ্ঠিত হবার এই দিনটা ২৩ শে জুন। পলাশীর যুদ্ধের দিন। প্রথম বঙ্গদিবস।

    ১৯৪৭। বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আরেক মোল্লা। সুরাবর্দী। তিনি প্রশাসক হিসেবে বাজে ছিলেন। কলকাতা, নোয়াখালিতে দুখানা দাঙ্গা হয়েছিল, থামাতে পারেননি। সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগও ছিল। বেছে-বেছে নাকি মুসলমানদের চাকরি দিতেন। এইসব অনাচারের প্রতিকার চেয়ে বাঙালি ভদ্রলোকদের একটা বড় অংশ, যাঁরা মিডিয়ায় রাজত্ব করতেনও বটে, কংগ্রেসি এবং হিন্দু-মহাসভার নেতৃত্বে গেলেন নেহরু-প্যাটেল-গান্ধির কাছে। বিড়লা-টিড়লারা বললেন, প্রতিকারের একমাত্র উপায় হল দেশভাগ। নেহরু-প্যাটেল বললেন, ঠিক-ঠিক, ওটাই চাই। শ্যামপ্রসাদ বললেন, দেশভাগটা ব্যর্থ হতে দেবেননা। সুভাষ বসু তো তখন দেশে নেই। তাঁর বড়দা শরৎ বসু, ওই পাপিষ্ঠ সুরাবর্দী, এঁরা সব বললেন, বাংলা ভাগ করবেননা। দরকারে বাংলার সীমান্ত এমন করুন, যাতে ৫০-৫০ হিন্দু-মুসলমান থাকে। কেউ কারো উপর ছড়ি না ঘোরায়। দরকারে গণভোট নিন। কিন্তু কে কার গোয়ালে ধুনো দেয়। গান্ধি বললেন, এরা পয়সা খেয়ে এমন করছে। শরৎবাবু একঘরে হয়ে গেলেন, টুক করে মরেই গেলেন তারপর। দেশভাগ হয়ে সব অপরাধের প্রতিকার হয়ে গেল বটে, কিন্তু তারপর হল দাঙ্গা মারামারি। সেই ভদ্রলোকদের একটা বড় অংশ, কেউ মরে গেলেন, কেউ ভিটে-মাটি ছেড়ে পালালেন। নেহরু-শ্যামা সব্বাই হাত ধুয়ে ফেললেন। এই পুরো কান্ডটার শুরু যেদিনে, সেটাকে শ্যামার চ্যালারা বললেন গর্বের দিন। আনন্দের দিন। পশ্চিমবঙ্গ দিবস। 

    ২০২৪। এখনও আসেনি। তবে এন-আর-সি বলে একটা জিনিস হয়েছে। আর নতুন একটা নাগরিকত্ব আইন হয়েছে। বাঙালি মাত্রেই বাংলাদেশী বলার একটা চল হয়েছে। আর ভদ্রলোকেরা অনেকে বাংলাদেশী হটাও হিন্দুস্তান বাঁচাও, বাংলা বাঁচাও বলে হাঁক পাড়ছেন। আরেকটা গর্বের দিন পেয়েই যাওয়া যেত এতদিনে। কিন্তু কেলো করেছে সার্বজনীন ভোটাধিকারে। যেটা ৫৭ আর ৪৭এ ছিলনা। এই অসুবিধে দূর করে নতুন হিন্দুস্তান, নতুন বাংলা কি গড়া যাবে ২৪ শে? আমরা পাব কি বাংলার হিন্দুস্তান দিবস? দেখা যাক। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পার্টিশন | 134.238.***.*** | ২১ জুন ২০২৩ ০৪:২২520587
  • বাংলাভাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিনকে রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে পালন করা একটি ভয়ানক ব্যাপার। পার্টিশন বাঙালীর কাছে শোকের বিষয় ছিল। ইতিহাস ও যেকোন রকম শুভ বোধ পাল্টে সেটা উদযাপনের বিষয় হয়ে গেল।
  • পরিবর্তন | 195.154.***.*** | ২১ জুন ২০২৩ ০৫:০৩520589
  • ২০০৭। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভটচাজ। নন্দীগ্রামে মুলোর চক্রান্ত করল। বাপব্যাটা শিশির-শুভেন্দু মিলে হাওয়াই চটিপরা পুলিশ ঢোকালো। বুজিনকুরা গুরুচণ্ডালির মতো ফোরামে হলদি নদীতে কুমিরের গপ্প ছড়ালো। পাপিষ্ঠ কিছু লোক বলল মমতা খাল কেটে বিজেপি আনবে। সিঙ্গুর আন্দোলনে রাজনাথ সিংয়ের হাত ছিল। বুজীরা চেঁচিয়ে বলল যে আসে আসুক সিপিএম যাক। বুদ্ধবাবু সাইড হয়ে গেলেন। সুনীল গাঙ্গুলিটাঙ্গুলিকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। ব্রাত্য-অর্পিতা হনু হল। দশবছর পরে রাজ্যে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত আর মুলোদের যথেচ্ছ দুর্নীতি। পরিবর্তন দিবস।
  • Amit | 163.116.***.*** | ২১ জুন ২০২৩ ০৫:১৪520590
  • নীরদবাবু তো কবেই লিখে গ্যাছেন বাঙালি চিরকালই আত্মঘাতী। সে হিসেবে ঠিকই আছে। যত মত তত পথ - গন্তব্য একটাই- "স্বখাত সলিলে ভরাডুবি"। কেবল সেই যুগের "যে আসে আসুক" বলে আকাশ ফাটিয়ে চিল্লানো কিছু লোকে আজকে হটাৎ জেগে উঠে চাদ্দিকে বিজেপি র জূজূ দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন। 
     
    এই জন্যেই তো কবি লিখে গেসলেন: 
    " প্রিয় -ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য ,
    কাঁচা ঘুম ভেঙে গেছে সদ্য।"
    :) :) 
  • ইন্দ্রাণী | ২১ জুন ২০২৩ ০৫:৩০520591
  • সংশোধনের জন্য ধন্যবাদ।
  • Equation | 201.15.***.*** | ২১ জুন ২০২৩ ০৫:৩৬520593
  • মামু, অংকে আটকে যাচ্ছে। জগৎ শেঠের গল্পে সিরাজের রোলটা জদি তিনোদের ধরি, তাহলে দাঁড়াচ্ছে-
    বড় গুন্ডা ইংরেজ = বিজেপী
    ছোট গুন্ডা সিরাজ = তিনো
     
    কিন্তু নন্দীগ্রামের টাইমে এই যারা 'যে আসে আসুক-টাসুক' বলতেন, তেনাদের সমীকরণ কী ছিল? 
    বড় গুন্ডা = শিপুয়েম
    ছোট গুন্ডা = বিজেপী?
     
    তবে কি (১) ও (২) থেকে পাই -
    সবচেয়ে বড় গুন্ডা = শিপুয়েম, বড় গুন্ডা = বিজেপী আর ছোট্ট কিউট গুন্ডা = তিনো? 
     
    গুলিয়ে যাচ্ছে মামু!
  • সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় | ২১ জুন ২০২৩ ০৫:৪০520595
  • "আমি ধরিলাম" বলে অঙ্ক শুরু করে যদি না মেলে, তাহলে ধরায় প্রবলেম আছে। খুবই বেসিক ব্যাপার। 
     
    আর আমি তো পলাশি, দেশভাগ নিয়ে লিখলাম, এর মধ্যে তিনো, সিপিএম কোথা থেকে চলে এল? কিছু কি কামড়েছে? 
  • &/ | 151.14.***.*** | ২১ জুন ২০২৩ ০৬:০২520596
  • পলাশি, পলাশি
  • সৃষ্টিছাড়া | 2405:201:8003:9f5a:1f7:9659:d1f2:***:*** | ২১ জুন ২০২৩ ১২:২৩520603
  • আপনিও তো মাল সরেস্ , চটিচাটা, আবার সুরাবর্দী কে মোল্লা বলেন, ১০০% সাম্প্রদায়িক লেখা তেলতেলে বাঙ্গালী বিরোধী এদিকে দাড়ি ওদিকে পৈতে !
    পারবেন আমার মত পিতা মাতার পারলৌকিক ক্রিয়া মুখাগ্নি মুক্ত হতে? 
    জেনাজা চড়িয়ে সংস্কারে নিয়ে যেতে, ৪২ বছর অভুক্ত থেকেও বিনা পারিশ্রমিক ছাত্রদের পাঠ দান করতে? তার বেলায় প্রবুদ্ধ র মত পন্তেল 
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন