এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • প্রশাসনে বাংলা 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ মে ২০২৩ | ১০৩৭ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৭ জন)
  • ডাব্লুবিসিএস পরীক্ষায় বাংলা বাধ্যতামূলক হবার পরই চারদিকে শোনা যাচ্ছে, এতে নাকি প্রচুর অসুবিধে। কথাটা ঠিকই, যাঁরা বাংলা বলতে, লিখতে, পড়তে পারেননা, এতে তাঁদের চাকরি পেতে খুবই অসুবিধে হবে। কিন্তু সমস্যা হল, তাঁরা বাংলা না জানলে আবার জনতার অসুবিধে। এ তো ইংরেজ আমল না, যে, বিলেত গিয়ে খ্যাটখ্যাটে ইংরিজিতে পরীক্ষা দিলেই কেল্লা ফতে, তারপর আপামর মূর্খ জনতা, কোনোক্রমে 'ইয়োর মোস্ট ওবিডিয়েন্ট স্যার' বলে হাতজোড় করে কৃপাপ্রার্থনা করে দাঁড়িয়ে থাকবে, যে, বাবু যদি একটু দয়া করে বোঝেন। ওসব কারবার আশিখানেক বছর হল উঠে গেছে। এখন যাঁরা ডাব্লুবিসিএস, তাঁরা পাবলিক সার্ভেন্ট। অর্থাৎ কিনা জনতার চাকর। প্রশ্নটা তাঁদের চাকরি পাওয়ার নয়। প্রশ্নটা জনতার সেবা পাওয়ার। জনতার ভাষাটা না জানলে জনসেবা করা অসম্ভব। মাদার টেরিজা যদি আলবেনিয়ান ভাষায় জনসেবা করার চেষ্টা করতেন, তাঁর কারবার উঠে যেত। কিংবা মার্গারেট নোবল স্রেফ আইরিশ অ্যাকসেন্টে কায়দা করে ইংরিজি বলতেন, তো তাঁর আর নিবেদিতা হওয়া হতনা। ফলে বাংলার জনতার সেবা করতে চাই, কিন্তু বাংলা জানিনা, এ যাঁরা বলেন, তাঁদের এমনিই অযোগ্য বিবেচিত হওয়া উচিত, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এইটা বুঝতে সরকারি কর্তাদের যে ছিয়াত্তর বছর লাগল, সেটাই আশ্চর্যের। 

    হ্যাঁ, তারপরেও অসুবিধে কী আর হবেনা? না পশ্চিমবঙ্গের হিন্দিভাষীদের প্রশাসক হবার অধিকার নেই? একশবার আছে। সেজন্য তাঁরা যদি বাংলা ভাষা শিখতে চান, তার পূর্ণ ব্যবস্থা হওয়া দরকার। জার্মানিতে গিয়ে আপনি উর্দুতে, তামিলনাড়ুতে গিয়ে স্প্যানিশে পরিষেবা দিতে পারবেননা। কিন্তু জার্মানিতে ইশকুলেই সহজে জার্মান শেখানোর ব্যবস্থা আছে। বাংলায়ও প্রতিটি শিশুর বাংলা শেখার ব্যবস্থা হবার কথা। বহু ইশকুলে আছেও সে ব্যবস্থা। যাঁদের অসুবিধে, তাঁরা বোঝাই যাচ্ছে, সেইসব ইশকুলে পড়েননি। সে হতেই পারে। সেক্ষেত্রে, আওয়াজ যাঁরা তুলছেন, তাঁদের তো এই ব্যবস্থাটার দিকে আঙুল তুলে আন্দোলন করা উচিত, যে, সব ইশকুল বাংলা শেখার সুযোগ দিচ্ছেনা। আঙুল তোলা উচিত প্রথমেই কেন্দ্রীয় বোর্ডের দিকে। সে নিয়ে কিস্যু আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়না। তারপর আঙুল তোলা উচিত রাজ্যসরকারের দিকে। তারা একাধিকবার ঘোষণা করেও পশ্চিমবঙ্গে সব বিদ্যালয়ে বাংলা বাধ্যতামূলক করেনি এখনও। কিন্তু সে নিয়েও কোনো আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়না।

    আশির দশকে তদানিন্তন বাম সরকারের স্লোগান ছিল 'মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ'। সেটা কাজে খুব বেশি এগোয়নি, কিন্তু স্লোগানটা ছিল। আর আজকে যাঁরা অশোক মিত্রকে নমো করেন, যাঁরা করেননা, সব পক্ষেরই 'মাতৃভাষা' শব্দটা উচ্চারণ করতেই মনে হয় লজ্জা হয়। যেন, ওরে বাবা, যথেষ্ট কেতের হলনা জিনিসটা। 'মাদার-টাং/কাউডাং' কিংবা 'মা কি বোল/ হল্লাবোল' বললে তবু একটা কথা ছিল। এই আত্মঘাতী কেত অনেক দিন ধরেই চলছে। একটু করে নানা বৃত্তে বাংলা সংকুচিত হচ্ছে। ছিয়াত্তর বছর ধরে। কিন্তু সেই সুনীল গঙ্গো-অশোক দাশগুপ্তর পর এ নিয়ে আর টুঁ শব্দটিও শুনতে পাবেননা। কারণ জিনিসটা যথেষ্ট 'কুল' না। কিন্তু যেই বাংলায় বাংলা-ভাষা নিয়ে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন, তক্ষুনি, এটা কিছু বছর হয়েছে, যে, জ্যাঠামশাইরা লাফিয়ে এসে বলবেন, এ বড় সংকীর্ণতা হয়ে গেল।

    পশ্চিমবঙ্গের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ছেলেমেয়ে, এই বিশ্বায়নের বাজারেও, এখনও বাংলা-মাধ্যমে পড়ে। সেই 'বামফ্রন্ট সরকারকে চোখের মণির মতো রক্ষা করুন' থেকে 'চুপচাপ ফুলে ছাপ' বা 'খেলা হবে'র মতো কার্যকরী জনপ্রিয় স্লোগান এখনও সবই বাংলায়। এই বাস্তবতার সামনে চাট্টি কেত দেখিয়ে কী উপকারটা হয় ঈশ্বরই জানেন। রাজনৈতিক ফয়দা? হয়না। আদর্শগত? কোন আদর্শ যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী, জাতিসত্ত্বার বিরোধী? জানিনা। বস্তুত, নেহাৎই কেত এবং হ্যাংলামি ছাড়া, এর আর কোনো ব্যাখ্যাও নেই। বিগত সত্তর বছরের বলিউড এবং একতা-কাপুরের স্টিম-রোলার আর কাউকে কিছু না করুক, বাংলার বৌদ্ধিক মস্তিষ্কদের আধা-ঔপনিবেশিক করে ছাড়তে পেরেছে, বহুলাংশেই, এ তার পরোক্ষ প্রমাণ ছাড়া আর কিছু না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হজবরল | 45.66.***.*** | ২২ মে ২০২৩ ১৩:৩২519973
  • নেপালিতেও দেওয়া যাবে। বাংলা /নেপালি যে কোনো একটা বাধ্যতামূলক।
  • Indra Mukherjee | ২৪ মে ২০২৩ ১৭:৪৯520029
  • ঠিক 
  • অভিভূষণ মজুমদার | 117.227.***.*** | ২৮ মে ২০২৩ ১৮:১৬520080
  • সহমত 
  • Indra Mukherjee | ২৯ মে ২০২৩ ১১:৪০520098
  • 300 নম্বরের বাংলা দিতেই হবে তাতে যত পন্ডিত হও না কেন 
    । Madam ফুয়াদ হালিম কেন বাংলা অনাবশ্যক করতে বলছেন? 
  • দীপ | 42.***.*** | ০৩ জুন ২০২৩ ২৩:৫৮520209
  • দীপ | 2402:3a80:a36:6e05:0:5b:206c:***:*** | ০৪ জুন ২০২৩ ০০:০৫520210
  • একসময় এই মাতব্বরেরা মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ বলে প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি উঠিয়ে দিয়েছিল। তখন থেকেই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলি ক্রমশ জনপ্রিয় হতে শুরু করে। আর বাংলা মাধ্যম স্কুলের ক্রমাবনতি শুরু হয়।
    এখন এরাই আবার বাংলাভাষার বিরোধিতা করছে। 
    আসলে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করাই এদের আসল উদ্দেশ্য! 
    এদের শুয়োরের বাচ্চা বললে শুয়োরের বাচ্চার অপমান করা হয়!
  • দীপ | 2402:3a80:a36:6e05:0:5b:206c:***:*** | ০৪ জুন ২০২৩ ০০:১০520212
  • এরা মুখে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গলা চড়িয়ে নিজের ছেলেমেয়ে, নাতি নাতনিদের আমেরিকায় পাঠায়, বাংলা মাধ্যমের জন্য কেঁদে ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করে! 
    আসলে বাংলা আবশ্যিক হলে সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েরা বড়োলোকের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দেবে ! সেটাই এদের চিন্তার কারণ! 
    পাক্কা শুয়োরের বাচ্চা!
  • :-) | 2405:8100:8000:5ca1::b:***:*** | ০৪ জুন ২০২৩ ০৮:২২520215
  •   দেবরায়ার গোপন প্রেমিক দেবরায়াকে স্টক করে বেড়াচ্ছে। আহা বাচারা শুয়োরচোদানির পো গোপন প্রেমের কি জ্বালা। laugh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন