এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জেনারেল মহবত খানের হাত থেকে অপহৃত জাহাঙ্গীরকে বাঁচাতে নূর জাহানের সার্জিকাল স্ট্রাইক!!

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ মে ২০২৩ | ৫২৯ বার পঠিত
  • নূর জাহান, আসফ খান ও অন্য আমিররা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে চলেন। ওপারে বাদশাহকে আটকে রাখা হয়েছে সারি সারি তাঁবুর একদম শেষ প্রান্তে। ঝিলম নদী খুবই খরস্রোতা আর গভীর, রাজপুত সেনাদের নজর এড়িয়ে তুরন্ত পার হওয়া অসম্ভব। সভায় সেতু তৈরি আর নৌবিদ্যা পারদর্শী মোঘল বিশেষজ্ঞরা অন্য কথা বলেন। তাঁদের মতে ঝিলম নদী কোনো কোনো জায়গায় বেশ অগভীর। সেসব জায়গা চিহ্নিত করে ফৌজ, হাতি-ঘোড়া, তোপ-বন্দুক সাজানো শুরু হয়। বাককরি জানাচ্ছেন অপহরণের ঘটনার দুদিনের মাথায় ষোলোশো ছাব্বিশের আঠেরোই মার্চ হাতির পিঠে বন্দুক হাতে নূর জাহান মোঘল ফৌজের প্রতি আক্রমণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ঝিলমও ক্ষেপে ওঠে হাতির ডাক, ঘোড়ার চিঁহি আর রামসিঙ্গার কানফাটানো আওয়াজে। নৌবিদদের অনুমান ভুল প্রমাণ করে বাস্তবে দেখা গেল নদীর কিছু জায়গা বেশ গভীর, তার ওপর তীব্র স্রোত, যুদ্ধ তো পরের কথা ওপারে পৌঁছোনই দায়। আসফ খান আর তাঁর ছেলে বন্দুক-তলোয়ার নিয়ে বাছাই করা সওয়ার আর সেপাইসালার, আমিরদের সঙ্গে করে স্রোতের সঙ্গে প্রচুর লড়ে ওপারে নেমেই ধুম হাতাহাতি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন। মহবত খানের কোন এক ছেলে পাঙ্গা নিতে এলে তাঁকে কোতল করে ফেললেন আসফের ছেলে শায়েস্তা খান। এই ঘটনায় অভিজ্ঞ সেপাইসালার আসফ খান প্রমাদ গোনেন, এরপরও আক্রমণ অব্যাহত রাখলে মহবত খান হয়তো প্রতিক্রিয়ায় তাঁর কব্জায় থাকা জাহাঙ্গীরকেই কোতল করে বসবেন। তারচেয়ে আপাতত পিছিয়ে যাওয়াই ভালো। এই ভেবে ফিরে যায় মোঘল ফৌজের বড় ভাগ-কলামটাই। নূর জাহান তাঁর হাতিতে চড়ে অনবরত গুলি চালাতে চালাতে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে আসফের কোন যোগাযোগ থাকা ওই তুঙ্গ মুহূর্তে সে যুগে  সম্ভবও ছিল না কারণ মূল যুদ্ধটাই লড়তে হচ্ছিল খরস্রোতা ঝিলমের জলে, খবর পৌঁছোনো অসম্ভব। বেগমের বাহিনী কোনোরকমে জলে ডোবা থেকে নিজেদের বাঁচাতে বাঁচাতে লড়ছিল। পিঠের জিন আর কম্বলের ওজন জলে ভিজে  ভিজে একসা হয়ে কয়েকগুন বেড়ে ডুবিয়ে দেয় ঘোড়াদের। অপর পাড়ে মহবত খানের সুশৃঙ্খল বাহিনীর সওয়াররা সারি সারি দাঁড়িয়ে, হাতিরা দুর্ভেদ্য দেওয়াল তুলে আছে তার ফাঁক থেকে নিরবিচ্ছিন্ন গুলি গোলা ছুটে আসছে, ঝাঁকে ঝাঁকে তীর এসে ফুঁড়ে দিচ্ছে শরীর। অনড় অচল বাহিনী শাহী ফৌজকে ঝিলমের জলে নাকানি চোবানি খাওয়াচ্ছিল। ঝিলমই সাথ দেয় মহবতকে। এই অসম লড়াইয়ে নূর জাহান হারালেন তাঁর দুই বিশ্বস্ত অপরলিঙ্গের বীর নাদিম আর জাওয়াহিরকে।

    নূর জাহান গুলি চালাতে চালাতে বিপজ্জনক ভাবে প্রায় অপর পাড়ে চলে যান। তাঁকে সাহায্য করার জন্য প্রয়োজনীয় ফৌজ ছিল না। তাঁর হাতিও শুঁড়ে তলোয়ারের কোপ আর পেছনে দুটো  বর্শা বেঁধার যন্ত্রনায় চিৎকার করছিল। মাহুত হাতির মুখ ঘুরিয়ে জলের গভীরে চলে যাবার সিদ্ধান্ত করে সেখান থেকে হাতি আস্তে আস্তে সাঁতরে ওপারে ফিরে যায়। সে সময় কিছু শাহী বন্দুকবাজ তীব্র গুলিবর্ষণ করে নদীর পাড়টা আটকে রেখেছিল যাতে অরক্ষিত বেগমের পিছু না নিতে পারে মহবতের ফৌজ। সাহসী বেগম না হয় অন্য পাড়ে অক্ষত পৌঁছলেন কিন্তু সেই জানকসম করা লোকগুলোর কী হয় কেউ জানে কি? স্বর্গীয় আশীর্বাদপুষ্ট রাজা-বাদশাহদের বাঁচাতে তারা, ইতিহাসের চিরকালের পদাতিক বোড়েরা, কচুকাটাই হয়ে থাকবে।

    ( 'আলমগীর' উপন্যাসের অংশ - উপল মুখোপাধ্যায় )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Prativa Sarker | ০৯ মে ২০২৩ ১৫:৩৫519626
  • খুবই আগ্রহোদ্দীপক !  পড়ব এই উপন্যাসটি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন