গল্পের গল্প - ঝর্না বিশ্বাস
একটা গল্পের ভেতর গল্প ঘুমিয়ে পড়ল। মা গল্প ডেকে গেল অনেকক্ষন, কোনও শব্দ নেই…
পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাচ্চাবাচ্চাগুলোও খুব করে চাইছিল গল্প ঘুম থেকে উঠে একটু ওদের সাথে গল্প করুক…অপেক্ষাও করল ওরা…তারপর নিরাশ হয়ে যখন ফিরছে, তখন গল্পের ঠাকুমা সবাইকে ডেকে চাখতে দিলেন তেঁতুলের আচার…
সব গল্পরা তখন লাইন দিয়ে দাঁড়ালো ভালো ছেলেদের মতন…কারো হাত ছোট, কারো লম্বাটে চ্যাপ্টা…একটা গল্পর তো পড়াকু ছেলের মত হাত জুড়ে কালি…
ঠাকুমা তার শাড়ি দিয়ে মুছতে চাইলেও, উঠলনা…
বললেন, হাঁ কর…তোর মুখেই পুরে দিই…
যেই না দেওয়া, চোখ পিটপিট করতে করতে সে গল্প এগোল আরো অনেকটা…তবে বড় গল্পটার রাগ হলো খুব…একে তো লাইনে সবচেয়ে পেছনে, আর তখন থেকেই লক্ষ্য করছে, কে কতটা আচার বেশি পেল…
বয়ামের আচারও তখন প্রায় খালি…ঠাকুমা অন্য বয়াম আনতে ঘরে গেলেন আর বড় গল্পও মুখ ভার করে এলো নীচের তলায়…ওখানে গল্পকাকু্ কাগজে মুখ ঢেকে ক্রমাগত নাক ডাকছে।
বড় গল্প ভাবল এই বেশ, চুপচাপ সটকে যাব…কিন্তু যেই না কাছাকাছি আসা, নাক ডাকার ঘনত্ব ক্রমশ কমে কাকু আওয়াজ দিলেন,
- কে রে…
বড় গল্প আমতা আমতা করে কিছু বলতেই যাবে, দেখতে পেল – একটা ছোট গল্প ওপর তলার জানালার পর্দা সরিয়ে মুচকি হেসে যাচ্ছে…ভাবটা এমন যেন, বেশ জব্দ হয়েছ আজ, আমার সোনা গল্পদা…
একেই মাথা গরম, আচারে ভাগ পায়নি…তার ওপর এ হাসি সহ্য করা যায়না…
গল্পদা চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই দেখল, ফুলকারির পর্দাটা আস্তে আস্তে টেনে সে পর্দার পেছনে চলে যাচ্ছে…
ততক্ষণে গল্পের মা, হলুদ মাখা হাতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন…ও গল্পকাকুকে দেখে বললেন…
তুমি কেমন হে, ছেলেটা তখন থেকে দাঁড়িয়ে…
বলেই বেতের মোড়াটা আগিয়ে দিলেন যেটা আসাম থেকে আনা…
আসাম, মানে সেই ছোটবেলায় ঘোরা ডিব্রুগড়, ডিগবয়…গল্পের বাবা থাকতেন, বদলীর চাকরীতে…তাই এ জায়গাগুলো ওর খুব চেনা…
গল্পের মনে আছে একবার ওরা মিজোরাম গেছিল…তবে ওখানকার স্মৃতি এখন খুব ঝপসা হলেও, গেস্ট হাউজে বাহাদুরের হাতে রান্নার স্বাদ এখনও চোখ বন্ধ করলে টের পায়…যেমন অরুনাচলেও, সেই কাদের বাড়িতে ছিল মনে নেই…তবে সিনেমা হলে বড় কাঠের তক্তা পাতা…আর তাতেই পর্দা জুড়ে সেদিন সানি দিওল…
এদিকে গল্পদা আর বাবার খুব জমে…তাদের গল্পের কোনও সূচনা থাকেনা…নস্যি দিয়ে শুরু হয়ে মাঝ পথে খেই হারিয়ে পুরনো সাইকেল হয়ে পাড়া বেপাড়া থেকে সে গল্প ছড়িয়ে যায় রাজনীতিতেও…
রাজনীতি…! গল্পর মা এ কথা শুনলেই মাথা গরম…অতি অপ্রিয় বস্তুটি…গল্প ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছে, বাবা পূর্ব বললে মা পশ্চিম…দুজনের চিন্তা ভাবনা একদম উলটো…গল্প এখন বোঝে উল্টোতেই মিল হয় প্রচুর…নিউটনের তৃতীয় সূত্রও তাই বলে…
যা হোক ক্যালেন্ডারে তারিখ সাল সব এখন বদলে গেছে…গল্পেরও ঘুম ভেঙেছে। কুলকুচি সেরেই ও দেখল মা যথারীতি নেই…সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে এক ফেব্রুয়ারীতেই…
গল্প সেদিনটাতে লিখতে চাইছিল আরেকটা গল্প…খুব মনে থাকার দিন…মনে রাখার দিন…মন খারাপের দিন…
এদিকে ব্যাপারটা খুব সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে…গল্প তাই খাতা কলম গুটিয়ে দিল তাড়াতাড়ি…
গল্প আরেক গল্পের মোড়কে ঢুকে এখন এক অন্ধকার ড্রয়ারে গড়াগড়ি খাবে…কেউ দেখবেনা, দেখতেও চাইবেনা…
এরপর সোম থেকে রবি আসবে…রবি থেকে সোম…
গল্পর যেদিন ইচ্ছে হবে সে আবার লিখবে …তবে গল্পদা্র এখন আর কোনও গল্প নেই…গল্পরও মাথাব্যাথা সব চলে গেছে…
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।