CD কি? যা DC নয়। তাহলে DC কি? যা AC নয়। তাহলে AC কি CD না CD নয়? এইটা নিয়ে সমস্যা আছে। উপপাদ্য, সম্পাদ্য ইত্যাদি হলে প্রতিপাদ্য বিষয় অন্য হত। কিন্তু কমপ্যাক্ট ডিস্ক সিডি হলে আজ থেকে আনুমানিক পঁচিশ বছর আগে কী ছিল আমার মনে, তা-ই স্বপনপুরের দূরগত অতীতের মতো ভেসে ওঠে। AC, DC কারেন্ট তখন শোনাই যেত, সেই নিয়ে তামাশাও ছিল নানা রকম। AB বললেই মনে পড়ে অনেক স্যার অ্যাটেনডেন্সের খাতায় অনুপস্থিত লিখতেন ওটা দিয়ে। অনেকে ডট দিতেন। আমি এখন ডিজিটাল অ্যাটেনডেন্সে ভরসা করি। BA বললে যা যা মনে হয় তার বয়স তখনও আসেনি। BA করতে পরে যাদবপুরে আসব। AC তখনও কারেন্ট ছিল, এয়ার কন্ডিশনার হয়নি। CA তখন অনেকেই হতেন, কেউ কেউ অন্য আরো পেশায় খ্যাতি পেতেন। DA তখনও সরকার ঘোষণা করতেন। যদিও বিশদ বুঝতাম না। আর AD বলতে ভিটামিন অয়েল বুঝতাম, একটা মিষ্টি গন্ধ, শীতকালে মাখতে হত, অনিচ্ছা নিয়েও। BC আর CB নিয়ে কিছু ভেবে দেখিনি। ভাবলে দেখাই যাবে কিছু আছে বা ছিল। আপাতত মিসিসিপি নদীর কথা কেন জানি না মনে পড়ছে। সে যাই হোক, আসল হল সিডি।
স্কুলে একদিন কম্পিউটার ক্লাসে নিয়ে যাওয়া হল। ল্যাবে তখনও প্রবেশাধিকার নেই। ফিজিক্স বিভাগে একটা রঙীন কম্পিউটার। তার আগে সব সাদাকালো ছিল। রাশভারি স্যার একটা ছোট বাক্স খুলে একটা গোল চাকতি বের করে বললেন, এটা সিডি। তখনও নতুন সহস্রাব্দের জন্ম হয়নি। নতুন কিছু আসবে এমন কিছু ধারণাও নেই তখন। গোল চাকতি, তার থেকে সাত রঙ বেরোচ্ছে। কম্পিউটারে দিতেই রবীন্দ্রনাথের গান বেজে উঠল। তাহলে কম্পিউটারে হিসাব ছাড়াও আরও কিছু হয়?
এরপর আরো বেশ কিছু বছর পর কম্পিউটার হঠাৎ বাধ্যতামূলক হয়ে গেল। মহা ফ্যাসাদ। ক্লাসে বাইনারি নাম্বার লিখে লিখে বাড়িতে এনে আর কিছুই বোঝা যেত না। কম্পিউটার শূন্য আর এক ছাড়া কিছুই নাকি বোঝে না। কিন্তু ও টুকুও বোঝার কী দরকার ছিল? তাছাড়া সবই প্রকৃতই পরম শূন্য বলে শুনছি তখন, শূন্য থেকে সৃষ্টি, শূন্যেই বিলয়। তাহলে এক আসছে কেন? আর শেখানো হলই যখন আরো কিছু সংখ্যা দিলে কী ক্ষতি হত? এমন সংখ্যালঘু পরিস্থিতি, খাতায় শূন্য গুনে গুনে প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। একবার মনে হল তেরোটা শূন্য। তারপর মনে হল পনেরোটা হয়ত। আবার গুনতে দেখা গেল চোদ্দটা। এর মধ্যে এক লিখেছি নাকি পেনের আঁচড় পড়ে গেছে ভুলক্রমে? সামান্য ভুল হলেই প্রলয় নেমে আসবে।
এমনই এক ক্লাসে বাইনারি রেখে প্রথম ল্যাবে নিয়ে যাওয়া হল। সাজানো গোছানো সুন্দর। AC মানে এয়ার কন্ডিশনার আছে। জুতো খুলে ঢুকতে হয়। বেরিয়ে নিজের জুতো যথাস্থানে না পাওয়ার আশঙ্কা কুরকুর করে মনে। সব জুতোই একরকম, কালো। জুতো ঠিকঠাক না হলে প্রেয়ার হলে ঠাসঠাস চড় পড়ত। যাই হোক, ঠেলাঠেলি করে এরপর যতবারই ল্যাবে ঢুকেছি, বলা বাহুল্য যন্ত্র পর্যন্ত পৌঁছনোর ভাগ্য হয়নি। দূর থেকেই প্রণাম জানিয়েছি। এটা অনেকটা ফুটবল মাঠের পরিস্থিতি। বল কিছু নির্দিষ্ট লোকের পায়েই ঘুরছে। তারা কে সেন্টার কে ফরওয়ার্ড কে ব্যাকওয়ার্ড বলা মুশকিল। আসল কথা তারা সবাই কম্পিউটার জানে। আর পেশিশক্তির চেয়ে বলীয়ান আর কিছুই নয়। তারা কাজ করত মন দিয়ে। আমরা অনেকেই বলের আশায় বসে থেকে থেকে দুর্বলতর হয়ে অবশেষে চেয়ার বাঁচানোর কাজ করে যেতাম মন দিয়ে। কারণ আমাদের থেকেও প্রতিকূল অবস্থায় কেউ কেউ চেয়ারের অভাবে দাঁড়িয়ে থাকত আর চেয়ার ছেড়ে দেওয়ার আবেদন-নিবেদন-হুমকি ইত্যাদি ভেসে আসত। গোলকিপার যেমন একসময় কী করছিল বুঝতে না পেরে বারে খানিকটা জিমন্যাস্টিক করে সেখানেই হতোদ্যম হয়ে বসে থাকত, তেমন করেই চেয়ার ধরে রাখত সবাই। স্কুলবাসের সুবাদে এই সিট দখলের ব্যাপারটা সকলেই শিখে যায়। পিছনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে কি আমাকে জানালার ধারটা ছুটির পরে ছেড়ে দেবে? নাতো। ডিউস বলের ফুটবল খেলায় নেবে? কভি নেহি। তাহলে তার জন্য যে বেঞ্চের ধারের জায়গাটা রাখে রোজ, সে কি করবে? অতয়েব, যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে চেয়ারে বসে থাকো। কিসের ক্লাস যেন? কম্পিউটার, অ্যাটেনডেন্সের খাতায় তো নাম উঠে গেছে আজকের মতো। AB তো বসতে দেওয়ার সুযোগ দিইনি। আমি কি আর চেয়ারে বসে আছি এমনি এমনি!!
কীসের কথা যেন হচ্ছিল? হ্যাঁ, সিডি। এরপর যখন নিজের কম্পিউটার হল, তখন অনেক সিডি জুটল। আসল, নকল, ভরা, খালি, কেনা, ফ্রিতে পাওয়া, পাইরেটেড, রিরাইটেবল ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে তখনই সিডি আন্ডাররেটেড। পেন ড্রাইভ এসে গেছে। এক্সটারনাল হার্ড ডিস্ক আসছে। ক্রমে কেবি এমবি হল, এমবি জিবি হল, জিবিও টিবি হল। এবার না পটল তোলে। টিবি উল্টে দিলে বিটি। অনেক আগে বিটি বা বেসিক ট্রেনিং করত অনেকে। আমি বি এড করব ভেবেছিলাম। করা হয়নি। করিনি। কী যেন হচ্ছিল? সিডি। মাথা বুজে আসছে, চোখ জড়িয়ে আসছে। সকালে ঘুম ভাঙলে শুনতে পাই, পুরনো মোবাইল আছে, পুরনো ল্যাপটপ আছে, পুরনো টিভি আছে, পুরনো ট্যাবলেট আছে। মানে বিক্রি আছে ওজনদরে। সিডি নেবে ওরা? আমার অনেক সিডি আছে। যদি একটা ড্রাইভ পাই পর পর চালাই, উনিশশো নিরানব্বই, আটানব্বই, সাতানব্বই, ছিয়ানব্বই সালগুলো ফুটে উঠবে না মনে হয়। রাখতে পারিনি কোনও সিডিতে। আমি যে দোকান থেকে সিডি কিনতাম সেটা এখন সিসিডি। ঐ দোকানের সামনে আমাদের বাস থামত। রিক্সাস্ট্যান্ডে দু একটা রিক্সা। একটার পিছনে ঝকঝক করছে অনেক সিডি। পরপর। সিডি ফ্লপ করেছে। ফ্লপির মতো। ওর মধ্যে কত কী ধরা আছে। রিক্সাগুলো পরপর চলে যাচ্ছে, স্বপ্নের দিকে। একটায় লেখা ঠাকুমার আশির্বাদ। আর একটায়, আসি বন্ধু, আবার দেখা হবে।।
©️অভিষেক ঘোষ
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।