এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আলুপোস্ত

    Mousumi Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৪৪৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • তখনও বাঙালী অ্যাপার্টমেন্টবাসী হয় নি।  বাঙালী তখন সবেমাত্র 'ছোট পরিবার সুখী পরিবার'  থিমে অভ্যস্ত হতে শুরু করেছে।  পরিবারে তখনও ঠাকুমা, দাদু, পিসি, জেঠু, কাকুরা  জেঠিমা, কাকিমারা আর সেইসঙ্গে  কুচোকাচার দল শোভা পেত। বাঙালির বাঙালিয়ানা রসনার পরিতৃপ্তিতে। বাড়ির হেঁশেলে মাছ, মাংস, শাক সব্জি র মধ্যে অন্যতম স্থান পেত পোস্তর নানা পদ – আলু পোস্ত, ঝিঙে পোস্ত, পোস্তর বড়া ইত্যাদির রূপে। নিরামিষ দিনে ডাল, বিশেষতঃ বিউলির ডালের সঙ্গে আলু বা ঝিঙে পোস্ত বাঙালির অতি পছন্দের পদরূপে সম্মান পেত। তখনও পোস্তর দাম আকাশছোঁয়া হয়ে না গেলেও পোস্ত একটু দামীই ছিল। সামান্য একটু পোস্ত শিলে মিহি চন্দনের মতো করে বেটে পুরো সংসারের জন্য একটি সুস্বাদু পদ তৈরী হয়ে যেত বলে দাম গায়ে লাগত না।

    বাঙালী ভ্রমনরসিক জাতিও বটে। দেশের কথাই বলছি। কোনও ট্যুরিস্ট স্পটই বাঙালী ছাড়া ভাবা যায় না। সমুদ্র, পাহাড়, মালভূমি, মরুভূমি, জঙ্গল সর্বত্রই বাঙালীর আনাগোনা থাকায় খুঁজে পেতে বাঙালী খাবারের হোটেলও মোটামুটি পাওয়াই যায়। সেই হোটেলে আলু পোস্ত একটি বিশেষ পদ রূপে শোভাও পেয়েছে এতদিন। হোটেল মালিক অবাঙালী হলেও সগর্বে ঘোষণা করেন সেকথা। বদ্রীনাথ ধামে গিয়েও আলুপোস্ত পদটি পরিবেশিত হতে দেখেছিলাম।

    শৈলশহর মুসৌরিতে বেড়াতে গিয়েছেন আমার পরিচিত এক দাদা বৌদি দুই মেয়েকে নিয়ে। মনে প্রাণে বাঙালী দাদা সেখানে আলু পোস্ত খেয়ে নাকি ঠাণ্ডা লাগিয়ে ফেলেছিলেন বলে শুনেছি। শুনে অবাক হয়েছিলাম সেই সময়।

    এরপর আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলি। বছর পনেরো আগে গিয়েছিলাম হিমাচল প্রদেশের কিন্নরে। সারাহান ঘুরে পৌঁছলাম সাংলায়। সেখান থেকে যাব কল্পা। তখন তো মোবাইল ফোনের এমন রমরমা হয়ে যায় নি। সাংলার হোটেলের ম্যানেজার ল্যাণ্ডফোন থেকে যোগাযোগ করলেন কল্পার হোটেলে। সেখানে বাঙালি ম্যানেজার। ফোনেই ভদ্রলোক হৈ চৈ ফেলে দিলেন। আমাদের নাম ধাম না শুনেই বললেন দুপুরে গরম খাবার পাবেন, আর পাবেন আলু পোস্ত। তিনজন তো? চলে আসুন আপনারা। বাঙালী হয়েও পাহাড়ে গিয়ে আলুপোস্তর ভক্ত আমরা খুব একটা নই। যাই হোক, পৌঁছলাম সেখানে। এটা সেটার পর ম্যানেজার বাবুর প্রশ্ন, 'দুপুরে কি খাবেন? আমাদের তৈরী আছে সবকিছু মোটামুটি। শুধু বলুন ভেজ না ননভেজ?'

    'আমাদের সঙ্গে যে কথা হল আপনার? ভাত, ডাল, পোস্ত দেবেন বলেছিলেন যে?'

    তিনি জানালেন, 'ফোন গতকাল থেকে কাজ করছে না। ব্যাজার মুখে বললেন, দিদি, পোস্ত তো খাওয়াতে পারছি না আজ'। যথেষ্ট যত্ন করেই তিনি খাইয়েছিলেন আমাদেরকে, তবে মনে আলু পোস্ত না খাওয়াতে পারার দুঃখ নিয়ে। বোঝাতেই পারলাম না যে আমরা সেই স্বর্গরাজ্যের সৌন্দর্য্যেই যারপরনাই আনন্দিত, আলুপোস্ত সেখানে দরকার নেই।

    খুব ভালো কাটিয়েছিলাম ঐ হোটেলের আতিথেয়তায়। তবে হালকা মুহূর্তে আজও মনে একটা প্রশ্ন দেখা দেয়, আমাদের জন্য সেদিনের রান্না করা আলু পোস্ত কাদের ভাগ্যে জুটেছিল?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:২৮497873
  • আমরা গিয়েছিলাম নৈনিতাল। সারা উত্তরাখন্ড ঘুরে। তখন অবশ্য উত্তরাখন্ড হয়নি। পুরি আর সামোসা খেয়ে খেয়ে জিভে চড়া পড়ে গিয়েছিল। তা, নৈনিতালের লেকের এক কোণে একটা চমৎকার রেস্টুরেন্টে পরিস্কার বাংলায় লেখা দেখলাম, হঠাৎই, " এখানে আলুপোস্ত পাওয়া যায়"। আর যায় কোথায়। লাফ মেরে সেই দুপুরেই সেখানে। 
    কী কী খেয়েছিলাম, একটুও মনে নেই। আলুপোস্তর জন্য অপেক্ষাটা মনে আছে। অবশেষে তিনি এলেন। দেখতে চমৎকার। কিন্তু মুখে দিয়ে, ওরে বাবা। আর খাওয়া যায়না। ঠকিয়েছেন? একেবারেই না। পোস্ত একদম খাঁটি। আর আলু তো নৈনিতালের। কিন্তু কী জানি, পোস্ততে কী দেওয়া হয়েছে। আর আলুটা মনে হয় অন্য তরকারি থেকে তুলে, পোস্তয় দেওয়া। মাংস থেকেও হতে পারে। এর থেকে না খেলেই ভাল হত। মধুর স্মৃতিটা অন্তত থাকত। আপনার যেমন আছে।  মনে হয়, না খেয়ে ভালই করেছেন। :-)
  • Mousumi Banerjee | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:১৫497917
  • নৈনিতালের আলু পোস্তর কথা জেনে ভালো লাগল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ প্রতিক্রিয়া দিন