আমার হাইট পাঁচ পাঁচ। আমার নামের হাইট ছয় চার। শুধু নামটাকে যদি ধরা হয়, সত্যজিৎ রায়ের মতো প্রেজেন্স। তারপর তো আমি এলাম, যাক গে, সে অন্য ব্যাপার।
ছোটবেলায় কথা বলতে শেখার পর প্রবল উৎসাহে কেউ জানতে চাইলেই নিজের নাম বলতাম। কিন্তু ছোটরা খুব উৎসাহ নিয়ে কিছু করলে বড়দের উদ্ভট আচরণ করার স্বভাব প্রথাগত। তাই, আমি নাম বললেই দেখতাম স্বাভাবিক কথা বলতে পারা মানুষেরা হঠাৎ আউ-আউ করে আধো-আধো বোলে "বাব্বা কত্তো বয়ো নাম" বলে তালি দিচ্ছেন। আমার ভালো লাগতো না। বরাবরই, মানুষ যাতে কম কথা বলে, আমি সেই চেষ্টা করি। তাই তারপর থেকে কেউ নাম জানতে চাইলে বহুদিন অব্দি বলতাম "শুভংকর ঘোষ রায় চৌধুরী বাবাকতবড়নাম।" আপনার হয়ে বলে দিলাম। আর কষ্ট করে আপনাকে কচি সাজতে হবে না।
কিন্তু শান্তি কী আর সহজে আসে। অন্যের ডায়ালগ বলে ভাবলাম এ যাত্রা বেঁচে গেছি। কিন্তু না। উৎকট শিশু তাদের সাজতেই হবে। "উলিউলিউলি কীই মিত্তি কথা বয়ে গো, বাবু আয়েকবাল বয়ো নামটা। তুবনকল গোৎ লায় তৌদুলি বয়ো।" স্কুলে রেজিস্টারে দিদিমণিরা লিখে রাখলেন "Suvankar G.R. Chow." সাধারণ রাস্তার দোকানের ভোক্যাবুলারির নিরিখে "শুভংকর গ্রেভি চাউমিন"। Affidavit কথাটা শুনলেও উচ্চারণ সম্বন্ধে অবগত ছিলাম না। রাগে, অপমানে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি এসে গর্জন করলাম, "আমি নাম এপিঠওপিঠ করবো!"
বাড়ির লোক হুব্বা। কেউ বুঝতে পারছে না, আমি তাওয়ায় নিজের নাম সেঁকে নিতে বা ওই ধরণের কিছু করতে চাইছি কেন। অবশেষে আরও কিছু অপ্রয়োজনীয় শব্দ খরচ করে সহজ করে বলায় সবাই খুব শান্তি পেল, হাহা করলো। আমাকে ঐতিহ্য, ওজন কিসব বোঝানো হলো। ভুল বুঝলাম। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মোটা হয়ে গেলাম। আর এপিঠওপিঠ করে পি.এইচ.ডি-র বিবলিওগ্রাফি ছাড়া আর কিছু তৈরি করা হলো না।
এছাড়াও, 'ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্য করেন'-ক্যাম্পেনের আমি জলজ্যান্ত উদাহরণ। আমি প্রি-OMR Sheet যুগের ছাত্র। তাই বেঁচে গেছি। পাশ করেছি। কারণ, যে সামান্য কটি OMR-system এর পরীক্ষায় আমায় বসতে হয়েছে চাকরির সূত্রে, তার বেশির ভাগ sheet-এই আমাকে নাম লেখা শেষ করার জন্য পেন্সিল দিয়ে এক্সট্রা চৌকো চৌকো ঘর কেটে শেষ কটা অক্ষর লিখতে হয়েছে পদবীর। কম্পিউটার স্বাভাবিক কারণেই read করেনি আর কিছু। গল্প হয়ে গেছি। একবার এরকম ঘর কেটে নাম লিখে নিজেকে উদ্ধার করে সবে সঠিক অপশনে গোল করা শুরু করেছি, ইনভিজিলেটর এসে দাঁড়ালেন। নাম দেখে সে কী পুলক! হাত বুলিয়ে বুলিয়ে ফীল করলেন নামটা। তারপর বললেন, "ইংরেজি alphabet ২৬টা, আর আপনার নামে লেটার ২৫টা।" সুমেরুতে পাতিলেবুর গাছ পেলে লোকে এরকম করে। বললাম, জানি। চলে গেলেন হেসে হেসে।
ইত্যাদি প্রভৃতি কথা বলে আজকের মতো আমার নামতর্পণ করলাম আমি। এবার যাও সব নিজ নিজ কাজে।
খুব হাসলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে। :D
লেখাটা ভালো। আপনার নামের খুব কাছাকাছি নাম শুনেছিলাম আর্যভট্ট ভট্টাচার্য-এর। গোটা তেইশ বর্ণ তো থাকারই কথা। ভাটের পাতায় গল্প পড়েছিলাম যদ্দুর মনে পড়ছে। সে সময় বেশ মজা পেয়েছিলাম শুনে যে আমেরিকায় a ফর আপেল করে গোটা নামটা লোককে বোঝাতে বোঝাতে নাকি এমন অবস্থা হয়েছে যে রাতে ঘুমের ঘোরেও নামের বানান করতে পারেন।
অপরিচিত লোক আমি। পুরোনো কথা, আবার অন্য লোকের কথা, সর্বোপরি অন্য পাতার কথা বললাম বলে আশা করি আপনাদের দুজনের কেউই কিছু মনে করবেন না। কিন্তু ওই লম্বা নামের কিছু অভিজ্ঞতা এখানে থাকলে মন্দ হতো না -- এই মনে করেই বলা।
আকাদা নাকি?
আমার ওরকম দাদামাসিপিসিবাবুদিদিবিবি বলে ডাকার অধিকার নাই। "অপিরিচিত" কিনা, তাই! আপনি চেনা মানুষ, হয়তো ওইরকম কোনও নামে ডেকে থাকেন।
আরে এ আর নতুন কথা কি! aka নামে যিনি লেখেন, আমি জানতাম তাঁর আসল নাম আর্য্য ভট্টাচার্য, বউয়ের নাম রিমি। গুরুর পাতায় অনেক গল্প ছড়ানো। এখন সেই আর্য্য আসলে আর্যভট্টের সংক্ষিপ্ত নাম কিনা সেটা জানতে চাইলাম।
তা থাক। ছড়ানো সব গল্প থাকলেই যে সবার সমান অধিকার থাকবে এমন কথা তো নাই! আপনি বলতে পারেন কিন্তু আমি যদি সাম্পান রাম্পান বলি অমনি সব গোলমাল হয়ে যাবে। হুঁহুঁ বাবা! এ অতি কঠিন ঠাঁই! এই নাম দুটি দেওয়ার সময়টাও খুব মজার ছিল। যাগ্গে, এখানে লম্বা নামীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিৎ -- মেঘের ভেলার মতো ব্যাপার নিয়ে না।