অমার্জিতের ভবিতব্য : শুচিস্মিতা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ মার্চ ২০১৯ | ১৩০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সত্যি বলতে কি খবরটা পড়ে প্রথমে বেশ রাগ হয়েছিল। কাজল লাগাতে না পারা আত্মহত্যার কোন কারণ হল! তারপর ভাবলাম আমিই বা তবে খুঁজেপেতে স্মাজ-ফ্রি কাজল কিনি কেন? রোজ না হোক, যেদিনগুলোতে পড়াতে হয়, সেমিনার দিতে হয়, কমপ্যাক্ট দিয়ে তেলতেলে মুখ মেরামত করি কেন? হয়ত কাজল ধেবড়ে গেলে আত্মহত্যার ইচ্ছে জাগে না। কিন্তু নিজেকে সুন্দর দেখানোর মহাযজ্ঞে আমিও নাম লিখিয়েছি এবং এর মধ্যে কোথাও আমার নিজস্ব সৌন্দর্যাকাঙ্খা লুকিয়ে নেই। যদি চুল না আঁচড়ে, টি-শার্ট আর র্যাপ অ্যারাউন্ড পরে, তেলতেলে মুখে ক্লাসে ঢুকলে আমার একটুও সমালোচনা হবে না এমন ভরসা কেউ দিত, তাহলে আমি একদম এসব করে সময় নষ্ট করতাম না।
সন্তানহীনতার অধিকার : শুচিস্মিতা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৭ মার্চ ২০১৭ | ৩৩১৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৬
অনেকেই প্রশ্ন করেন, কেন সন্তান চাই না। আমরা বর্তমান পৃথিবীকে একটা শিশুর জন্য যথেষ্ট সুস্থ ও নিরাপদ মনে করি না। তাই আমরা সন্তান চাই না। আমরা যখন জন্মেছিলাম তখনও পৃথিবী সুস্থ ছিল না, কিন্তু সেই সিদ্ধান্তে আমাদের কোন হাত ছিল না। যেটা আমাদের হাতে আছে আমরা বড়জোর সেটুকু করতে পারি। আমরা না জন্মালেও পৃথিবীর কোন ক্ষতি ছিল না। পৃথিবী তার মত চলত, অথবা চলত না। আরো অজস্র পৃথিবীর মত গ্রহ আছে ব্রহ্মাণ্ডে যাতে প্রাণ নেই। তারাও সুন্দর। অবশ্য চেতনা না থাকলে আর সুন্দরই বা কি! এসব দার্শনিক কথা থাক। নিতান্ত বস্তুতান্ত্রিক ভাবনাতেও দেখতে পাই মানুষজন্ম কেমন একটা অনর্থক ব্যাপার। এত বেশি মানুষ হয়ে গেছে পৃথিবীতে, না আছে পর্যাপ্ত খাবার, না আছে পর্যাপ্ত জমানো সম্পদ। সোজা কথা সোজা ভাবেই বলি। ছোট থেকেই শিখেছি খুব ভালো রেজাল্ট করতে হবে, ভালো চাকরি করতে হবে, তারপর একটা ভালো বিয়ে, সন্তান এবং তাদের প্রতিপালন। এই জিনিসগুলোর একটাও এমন লোভনীয় নয় যে তার জন্য জীবনভোর প্রাণপাত পরিশ্রম করা যায়। যারা পারেন তারা করেন। আমরা আরো একটা মানুষকে তার মতামত ছাড়াই নিয়ে এসে এই বোঝা চাপিয়ে দিতে চাই না। আর মতামত নেওয়ার তো কোন উপায়ই নেই। একটি শিশুকে জন্ম দিয়ে তাকে তো আর সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করা সম্ভব নয়, তুমি কিভাবে বড় হতে চাও জানাও। নিজেদের মত তার ওপর চাপাতেই হবে, এমনকি তার মধ্যে এমন কিছু মতও থাকবে যা নিজেদেরই নীতিবিরুদ্ধ। যেমন ধরা যাক, বন্ধুস্থানীয় ভারতীয় বাবা-মায়েরা যেভাবে গেটেড কমিউনিটিতে বাসা বেঁধে গেটেড স্কুলে পড়শোনা করিয়ে যতখানি সম্ভব নোংরা পৃথিবীর ছোঁয়া বাঁচিয়ে বাচ্চা মানুষ করেন, সেটা আমাদের একান্তই অপছন্দ। একটু সমালোচনাই করলাম। তবে এটাও জানি, নিজেদের বাচ্চা থাকলে আমরাও এই পথই নিতাম। আরেকটি মানুষের জীবন নিয়ে বাজি লড়ার সাহস আমাদেরও হত না। আমরা জানি, আপনারা নিরুপায়।
অমার্জিতের অধিকার : শুচিস্মিতা সরকার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মার্চ ২০১৮ | ১৭১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
আজ থেকে বছর পঁচিশ আগেও মফস্বল শহরগুলো অন্যরকম ছিল। তখন সাজগোজ বলতে চোখের তলায় কাজল, হাল্কা লিপস্টিক আর কপালে টিপ। প্রায় সব কিশোরীরই তখনও লম্বা ঢালা চুল থাকত। ভেজা চুলের নিচের দিকে আলগোছে বিনুনী বেঁধে তারা ইশকুলে যেত। মায়ের অত্যাচারে অথবা কারো কারো ক্ষেত্রে নিজের শখেই মুসুরডাল বাটা কি দুধের সরের প্রলেপ পড়ত মুখে মাঝেসাঝে। এর চেয়ে বেশি কেউ করতও না। যারা করার কথা ভাবত তাদের যেন একটু দূরেই সরিয়ে রাখা হত। যে রূপচর্চা করে তার লেখাপড়ায় মন নেই এমন নিদান দেওয়া একেবারেই বিরল ছিল না। আমার জীবনও এভাবেই চলছিল। পরিবারের সদ্য বিয়ে হয়ে আসা যুবতীটির নিখুঁত ভ্রূযুগল দেখে কখনও হয়ত ইচ্ছে জাগত নিজেরটিও অমন হোক। কিন্তু সে ইচ্ছা আর বাস্তবের মাঝে "সাজগোজে মন চলে গেছে, এর আর লেখাপড়া হবে না" জাতীয় মন্তব্যের উঁচু দেওয়াল থাকত। তখন ভাবতাম, শুধু মফস্বলের বাংলা মিডিয়ামেরই বুঝি এমন কপাল পোড়া। কলকাতার কলেজে পড়তে এসে বেশির ভাগ সহপাঠিনীর অসংস্কৃত ভুরু দেখে সে ব্যাথার খানিক উপশম হল। লম্বা বিনুনী, তেলতেলে মুখ, এবড়োখেবড়ো ভুরু আর লোমশ হাত-পা নিয়েই কলেজ জীবন পেরিয়ে গেল। এমনকি প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রেও এই অমার্জিত রূপ বিশেষ বাধার সৃষ্টি করেছিল সেরকম খবর নেই।
সত্যিকারের গল্প : শুচিস্মিতা
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ৮৩৪ বার পঠিত
"সব সত্যি। মহিষাসুর সত্যি, হনুমান সত্যি, ক্যাপ্টেন স্পার্ক সত্যি, টারজান সত্যি, অরণ্যদেব সত্যি, ..."
এমনকি ধরো মা দুগগার শাড়ীতে অসংখ্য চুমকি, বিসর্জনের পর সেগুলৈ যে কোজাগরীর আকাশে তারা হয়ে ফোটে - তাও তো সত্যিই। ভারী ইচ্ছে হয় একবার হাতে ছুঁয়ে দেখি কতটা সত্যি। ভাসানের আগে ছুঁলে দোষ নেই - সেটা আমি জানি। অনেকেই সে সময় টুকটাক পকেটে পোরে মহিষাসুরের বাজুবন্ধ কিংবা গণেশের উত্তরীয় থেকে খসে পড়া একফালি জরির পাড়।