দেশপ্রেমিক আম্বানি : রৌহিন ব্যানার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৯ এপ্রিল ২০১৯ | ২২৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
সেনাবাহিনীর জীবনবীমার প্রিমিয়ামের টাকা এদের শেয়ার কিনতেই লগ্নি হয়েছে। এবং এই টাকা কিন্তু সরকারের দেওয়া নয়। কত টাকা? একটা মোটামুটি হিসেব ধরা যাক - ভারতীয় সেনা (শুধু মিলিটারি) তে জেনারেল এর সংখ্যা কমবেশী ৩৫০ জন - এরা জীবনবীমা বাবদ প্রিমিয়াম দেন মাসে ৫০০০/- অর্থাৎ বছরে ৬০০০০/- টাকা - ৩৫০ x ৬০০০০/- = ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। জওয়ান এর সংখ্যা কমবেশী ১৩ লক্ষ - এরা দেন মাসে ২৫০০/- অর্থাৎ বছরে ৩০০০০/- টাকা - মোট ১৩,০০,০০০ x ৩০০০০/- = তিন হাজার ন’শো কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বছরে মোট তিন হাজার এগারোশো কোটি টাকার মত - এই বিপুল অঙ্কের টাকার দায়ীত্ব কার? ফান্ড ম্যানেজমেন্ট কে করেন? ভক্তবৃন্দ জানতে চান না - আপনি জানতে চাইলেও পাবেন না - কারণ এর কোন সদুত্তর কারো কাছে নেই। একটি ডুবন্ত কোম্পানির শেয়ার কিনতে এই টাকা লগ্নি করা হয়েছে এবং হচ্ছে - অথচ কোম্পানি বা সেনাবাহিনী কোন তরফেই এই টাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন সদুত্তর নেই। আমাদের মহান সেনাবাহিনী যখন দেশের সেবা করতে নিজের প্রাণ হাতে করে যুদ্ধ করেন, সিয়াচেনে দাঁড়িয়ে পাহারা দেন, তখন তার পরিবারের ন্যুনতম নিরাপত্তা বিধানে সরকার বাহাদুর উদাসীন থাকেন - তাঁকে দেখিয়ে ভোট কেনাটা বেশী জরুরী।
দক্ষিণাবর্ত : রৌহিন ব্যানার্জি
বুলবুলভাজা | ভ্রমণ | ০৩ জানুয়ারি ২০২০ | ১৮৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
এর ঠিক দুদিন পরেই এসে পড়ল সেই অভিশপ্ত দিন, ৬ই ডিসেম্বর। তারপর সারা ভারত জুড়ে তাণ্ডব – এমন কি এই কলকাতা শহরেও আমার জীবনের সেই প্রথম কার্ফিউ দেখা। সুমনের বসে আঁকো তখনও বেরোয়নি – মগজে কারফিউ শব্দবন্ধ তখনো অচেনা, শহরে কারফিউ চিনে ফেললাম। কিন্তু দাঙ্গা হল না পশ্চিমবঙ্গে। রাজাবাজার, খিদিরপুর, পার্ক সার্কাস, কোথাও না। আস্তে আস্তে আবার স্বাভাবিক হয়ে এল শহর – কিন্তু মনের কালো ছায়াটা সরছিল না কিছুতেই। উত্তর ভারত জুড়ে চলমান অশান্তি – আদবানীর গ্রেপ্তারী, খবর আসছিল সবই, যদিও খবরের কাগজই ছিল আমাদের প্রধান ভরসা – আর ডিডি ওয়ান এর সংবাদ। আর এসবের মধ্যেই ১৯ তারীখে এসে পড়ল বাবা, মা, বোন – কুচবিহার থেকে। তিনদিন গজল্লা পাড়ার পরে ২১শে সন্ধেবেলা ট্যাক্সি ধরে সোজা হাওড়া - রাতে ম্যাড্রাস মেল সাড়ে দশটায়। স্লিপার থ্রি-টায়ার। থ্রি-এসি তখনো ভবিষ্যতের গর্ভে, এসি কামরা বিরাট বড়লোকেদের ব্যাপার।
ডেরা কি সাচ: সাচ কি সৌদা : রৌহিন ব্যানার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১৬৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
শুধু এদেশে বলে নয়, সারা পৃথিবীতেই টাকা থাকলে আইন আদালত ন্যায়বিচার সবই কেনা যায় কোন না কোন পর্যায়ে। সে গল্প আমাদের খুব একটা অজানা এমন নয়। কিন্তু দিনের শেষে আমরা – যাদের হাড্ডি এখনো পিলপিলায়ে যায়নি সবটা, আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে থাকি? নেতাজী তো ফিরবেন না – জ্যোতিবাবুও না, তাহলে বিপ্লব কবে কখন, কোথায় হবে? আমরা কি অপেক্ষা করব কবে সেই মহামানব আসবেন, বিপ্লবের ভ্যানগার্ড, আমরা তাঁর পিছনে ছুটে যাব হ্যামলিনের ইঁদুরদের মত – বিপ্লবকে কুলোর বাতাস দিয়ে বরণ করে আনতে? নাকি আমরা ফিরে যাব সেই সব মানুষের কাছে, যারা প্রতিনিয়ত লড়াইটা লড়ছেন? মার খাচ্ছেন, কখনো পাঁচকুল্লার রাস্তায় তো কখনো সিঙ্গুরের মাটিতে, কখনো ভাঙরের জমিতে কখনো বস্তারের জঙ্গলে? মার খাচ্ছেন, গুলি খাচ্ছেন, আবার আরো হাজারে হাজারে লড়ে যাচ্ছেন, তাঁদের কাছে?
আরে দাদা এত ঘাবড়াবেন না – আমাদের কাছে বেছে নেবার জন্য রাস্তা আছে তো। পিঠে বেঁধেছি কুলো, কানে গুঁজেছি তুলো, এখন কত কিলোবি, কিলো – এমনি করে যায় যদি দিন যাক না। চলতে থাকুক – ততদিন পর্যন্ত, যতদিন না আমার সন্তানকে নিয়ে যেতে আসে ওরা।
ডেরা সাচা সৌদা - সত্যি কাহিনি : হরনিধ কৌর - অনুবাদ রৌহিন ব্যানার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ৫৮১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৭
এই ধরণের নানান বঞ্চনা আর অত্যাচার এই মানুষগুলোর মোহভঙ্গ ঘটাচ্ছিল, সেই সঙ্গে জন্ম নিচ্ছিল ক্রোধ এবং হতাশা। অথচ এর থেকে বেরোনোর কোন রাস্তা তাদের সামনে খোলা ছিল না। ফলস্বরূপ সমাজের একটা বড় অংশ ড্রাগ এবং অন্যান্য নেশার ঝোঁকে পড়ে যাচ্ছিল। এক সময় প্নজাব আর নেশা প্রায় সমার্থক হয়ে গেছিল – অশিক্ষা আর দারিদ্র পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলছিল ক্রমশঃ। মানুষগুলো উদভ্রান্ত, দিশাহারা হয়ে পড়ছিলেন। স্বভাবতঃই এই প্রেক্ষিতে যখন ডেরা সাচা সৌদার মত আশ্রম এগিয়ে এল তাদের ত্রাতা হিসাবে, এরাও সাড়া দিলেন। না দেবার কোন কারণ ছিল না, কারণ ডেরা তাদের সম্মানজনক জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ডেরায় এই মানুষগুলির শিক্ষালাভের ব্যবস্থা আছে, তাদের ড্রাগ ও অন্য নেশা থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা আছে এবং সর্বোপরি, খাদ্যসংস্থান আছে। ডেরা তাদের কর্মসংস্থান দেয়, জীবনের উদ্দেশ্য দেয়। দিশাহারা অসহায় মানুষের কাছে খড়কুটোর মতন যে বাবাজী দিশা দেখাচ্ছে, সে রেপিস্ট কি না জানতে বা মানতে তাদের বয়ে গেছে। ভুললে চলবে না – পেটে সর্বগ্রাসী খিদে থাকলে কে আমাকে খাবার দিচ্ছে, সে খুনী না ধর্ষক, তাতে আমার কিছুই এসে যায়
জামাল মোমিন এবং ভদ্রলোকেরা : রৌহিন ব্যানার্জি
বুলবুলভাজা | খবর : খবর্নয় | ২৮ মে ২০১৮ | ১৮৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
এই অ্যালিয়েনেশন, নিজেদের পৃথক ভাবার প্রবণতা বহু প্রজন্ম ধরেই আমাদের মধ্যে পালন করে চলেছি আমরা – এখন খালি ওই যাকে বলি অনুকুল জল হাওয়া, তার সুবাদে এগুলি প্রকাশ্যে আনতে দ্বিধাবোধ করিনা, জানি এটা সামাজিকভাবে গৃহিত এখন। প্রতিবাদ করতে গেলে, জামালদের হয়ে কথা বলতে গেলে আপনাকে “পাকিস্তানে চলে যান” শুনতে হতেই পারে। তবে কিনা শুনলাম তো অনেক – এবার মনে হয় পালটা বলা দরকার যে না, আমি পাকিস্তান যেতে রাজি নই। এই দেশ, এই মাটি, এই সংস্কৃতিকে তোমাদের চেয়ে অনেক বেশী ভালবাসি, বুঝি, আমি, আমরা। অতএব যেতে হলে তোমরা যাবে – আমাদের জলজমিন ছেড়ে, যেখানে খুশী, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট যে চুলোয় চাও। আমরা এখানেই থাকব, জামালরা এখানেই থাকবে, সুলতানারা থাকবে।
ক্রিকেটের দেশ : রৌহিন ব্যানার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ মার্চ ২০১৫ | ২৪২৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কি নিজের ‘দেশ’, তা বলতে আমি হাতি ঘোড়া বেগুনপোড়া যা-ই বুঝিনা কেন, তাকে সমর্থন করব না? ভারত বা বাংলাদেশের হয়ে গলা ফাটাবো না? উত্তরে বলি (আমার কাছে উত্তর চাননি হয়তো, তবু এতখানি ধ্যাস্টামো যখন করেই ফেলেছি), সমর্থন আমিও করি – আপনিও করেন। সমর্থন করতেই পারি। খেলা দেখতে যারা ভালোবাসি, খেলা দেখবো। কিন্তু সেই দেখা, সেই সমর্থনকে আমার স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতাকে গ্রাস করতে দেবো কেন? ধরুন কাল যদি ভারতের বুকে বসে ‘ভারতবাসী’ হয়ে কেউ অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থন করেই (কী ভাগ্যি কাল বিপক্ষে পাকিস্তান বা বাংলাদেশ নেই), তবে তার সহজ এবং একমাত্র ব্যখ্যাটা এটাই হয়না যে সে বা তারা ‘দেশদ্রোহী’। না হয়না। কারণ প্রথম কথা ‘দেশ’ এর সংজ্ঞা প্রত্যেকের কাছে আলাদা এবং রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া সীমানাকে অস্বীকার করা মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার। আর দ্বিতীয় কথা, এটা ‘যুদ্ধ’ নয়। দু দেশের ক্রিকেট বোর্ডের দল নিজেদের মধ্যে খেলেছে, আমরা কোন না কোন দলকে ‘দেশ’ হিসাবে (বা আমার দল হিসাবে) ধরে নিয়ে সমর্থন করছি আমার স্বাধীন নির্বাচন অনুযায়ী, কোন রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতায় নয়। আমার বিপরীত দিকে বসা মানুষটারও তার মতন করে নির্বাচন করার অধিকার আছে বৈ কি। সেটা আমার সঙ্গে না মিললে সমর্থকের কথার লড়াই চলতেই পারে – দেশের বিরুদ্ধে লড়াই হয় না।
জীবনে অনেক যুদ্ধ। বেঁচে থাকার যুদ্ধ, প্রতিদিনের হাসার যুদ্ধ। ওটা থেকে পালাবার পথ নেই বিশ্বাস করুন, ক্রিকেট আপনাকে ওই যুদ্ধে একটুও বাড়তি সুবিধা দেবে না। স্টেডিয়ামের লক্ষ ওয়াটের আলোর ছিটেফোঁটাও ঢুকবে না আপনার ঝুপড়িতে বা এক চিলতে ফ্ল্যাটে – ম্যান অফ দি ম্যাচের কোটি টাকার গাড়ি আপনার একটা ই এম আই শোধের কাজে আসবে না। না ওটা আমাদের যুদ্ধ নয় – স্রেফ এন্টারটেইনমেন্ট। ক্রিকেট থাকুক, সমর্থন থাকুক, আনন্দ বিষাদ থাকুক, সেই সঙ্গে স্যানিটিও থাকুক।
অন্য রূপকথা : রৌহিন ব্যানার্জি
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৫ নভেম্বর ২০২০ | ৩৯৬৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
"ঘরে চল, এইখানেই দাঁড়ায়ে থাকবি নাকি ছেমড়ি?" হানিফার ডাকে হুঁশ ফেরে সাকিনার। ব্যাগটা তুলে হানিফার পিছন পিছন ভিতরে ঢোকে সে। ঘরের ভিতরটা কিছুটা বদলেছে বটে। উঠোনের ওপারে আগে কাঁটাগাছের বেড়া ছিল, মাঝে মাঝে ফাঁকা। ওখানটায় একটা ঘর উঠেছে। পাকঘরটা ছিল ডান দিকে, বাম দিকে খালপাড়ে খাটা পায়খানা। এখন ওখানে পাকা পায়খানা হয়েছে, রাস্তাটায় একটু সিমেন্ট দেওয়া। রান্না হচ্ছে এদিকের বারান্দার এক কোনে, সেখানে দুটি বউ কাজ করছে। সম্ভবতঃ জলিল আর খলিলের বিবি ওরা। ওদের আসতে দেখে একটু অবাক হয় দুজনেই। তাদের কাছে ডাকে হানিফা, "এই দেখ ছেমড়িরা, আমার একখান মাইয়া আছে কইছিলাম না? এই হইল সাকিনা বানু - আমার সই জারিনার মাইয়া। কিন্তু আসলে আমারই। ছালাম কর"