চিকিৎসক রোগী সংঘর্ষের উৎস সন্ধানে - পর্ব ২ : ডা. সিদ্ধার্থ গুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ১৪৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন (যার অনেকগুলোই গড়ে উঠেছে লাগাতার চিকিৎসক নিগ্রহের প্রতিক্রিয়ায়) পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছেন যে বিগত দেড় বছরে নানা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নার্সিংহোম বা ব্যক্তিগত চেম্বারে ভাঙচুর লাঞ্ছনা এবং নিগ্রহের ঘটনা একশো ছাড়িয়েছে। মহিলা চিকিৎসকরাও বাদ যাননি এর হাত থেকে। মেদিনীপুরের ডেবরায় এক চিকিৎসকের মুখে মানুষের বিষ্ঠা মাখিয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন প্রবীণ চিকিৎসক অপমানের ভয়ে ও পেশার চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। বহু সরকারি চিকিৎসক চাকরি ছাড়তে উন্মুখ, এবং অনেকে পদত্যাগপত্র দাখিল করে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বলে চিকিৎসকদের সংগঠনের বিবৃতিতে জানা গেছে। কিন্তু সরকার তাদের পদত্যাগ করার বা স্বেচ্ছাবসরের গণতান্ত্রিক অধিকারকে অগ্রাহ্য করেছেন। চিকিৎসকদের আরও অভিযোগ যে সরকারি ডাক্তারদের নিরাপত্তা দেয়া দূরে থাক, বিভিন্ন ক্ষেত্রে শাসক দলের স্থানীয় নেতানেত্রীরা এই গণপিটুনির প্রধান পরামর্শদাতা ও চালিকা শক্তি।
চিকিৎসক রোগী সংঘর্ষের উৎস সন্ধানে - শেষ পর্ব : ডা. সিদ্ধার্থ গুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ নভেম্বর ২০১৯ | ২০৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
উপরের স্তরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অনেকেই আবার এইসব দুষ্টচক্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, একথা বললে বোধহয় ভুল হবে না। এদের অনেকেই রোগী দেখার ন্যায্য প্রাপ্য অর্থের ওপর মোটা লভ্যাংশ বা কমিশন পেয়ে থাকেন রোগীকে ভর্তি করা, (এড়ানো সম্ভব এরকম) অস্ত্রোপচার, এবং কতদিন রোগী ভর্তি রইলেন, তার ওপর। হাসপাতালের স্বার্থ এবং বরিষ্ঠ চিকিৎসকদের স্বার্থ এক্ষেত্রে এক হয়ে যায়। বৈদ্যুতিন চ্যানেলে ঘনঘন মুখ দেখানো বেশ কিছু চিকিৎসক হাসপাতালগুলির আংশিক মালিকানা ভোগ করে থাকেন মেডিকেল ডিরেক্টর হিসেবে। কিছুদিন আগে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৯১ জন রোগী এবং ২ জন সেবিকার মৃত্যু ঘটেছিল। সে স্মৃতি আজও মলিন হয়ে যায়নি। প্রাথমিক গ্রেপ্তারি এবং মামলা-মোকদ্দমার পর হাসপাতালটির মালিকানার হস্তান্তর ঘটেছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কারও শাস্তি হয়নি। ঐ সময় জানা গিয়েছিল, অতি-প্রবীণ ও শ্রদ্ধেয় চিকিৎসক ডা. মণি ছেত্রীর নামেই ঐ হাসপাতালের লাইসেন্স, এবং তিনি ঐ হাসপাতালের একজন অংশীদার। ফলে তাঁকে কিছু দিনের জন্য কারাবরণ করতে হয়। এইরকম বহু মেগা-বিশেষজ্ঞ কার্যত কর্পোরেট হাসপাতালগুলির আংশিক মালিকানা ভোগ করেন, যদিও বিষয়টি প্রায়শ গোপনে থাকে। ফলে হাসপাতালের লভ্যাংশ নেব অথচ দুর্নীতির দায়ভাগ নেব না— এ প্রায় দস্যু রত্নাকরের পরিবারের বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।
চিকিৎসক রোগী সংঘর্ষের উৎস সন্ধানে- পর্ব ১ : ডা. সিদ্ধার্থ গুপ্ত
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৭ আগস্ট ২০১৯ | ১৪০৩ বার পঠিত
বর্তমানে সারা দেশের মতো এই রাজ্যেও সামাজিক অস্থিরতা এবং আইন শৃঙ্খলার দারুণ অবনতি সংক্রমণের মতো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে। দলিত, সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক মানুষজনের উপর সম্পন্ন ও প্রভাবশালীদের অত্যাচার; রাজনৈতিক দলগুলির গোষ্ঠীসংঘর্ষ বা নিজেদের মধ্যে এলাকা দখলের লড়াইতে সাধারণ নীচু তলার কর্মীদের প্রাণহানি; নানা ধর্মীয় প্ররোচনায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা; তোলাবাজি, অগ্নিসংযোগ বা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়ানো; রাজনৈতিক মদতপুষ্ট পার্টির ক্যাডারদের তাণ্ডব আজ দৈনন্দিন কাহিনি হয়ে দাড়িয়েছে। গত দেড় দু'বছর ধরে এর সাথে যুক্ত হয়েছে রোগীর আত্মীয়স্বজন এমনকি অসম্পর্কিত জনতারও চিকিৎসকদের উপর যূথবদ্ধ আক্রমণ এবং প্রহারের ঘটনা। কর্পোরেট হাসপাতাল, সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ছোট ও মাঝারি নার্সিংহোম গুলির উপর লাগাতার হামলা। প্রায় সব ক্ষেত্রেই আপাত কারণ হল অবহেলা বা ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু। অর্ধসত্য-অর্ধমিথ্যা এইসব অভিযোগ এবং উত্তেজনার পিছনে যা উপস্থিত থাকে তা হল, সরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা, অবহেলা, চিকিৎসকের অনুপস্থিতি, স্বাস্থ্যকর্মীদের দুর্ব্যবহার এবং হাসপাতাল চত্বরে বহির্বিভাগে দেখানো, পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে ভর্তি হওয়া নিয়ে সর্বভূতে বিরাজমান উৎকোচ ও ঘুষতন্ত্র, দালালরাজ। আর বেসরকারি কর্পোরেট হাসপাতালের ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতি, অস্বাভাবিক ভাবে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তোলা খরচাপাতি এবং বহুক্ষেত্রেই চিকিৎসকের দ্বারা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অপ্রয়োজনীয় রোগী ভর্তি, অহৈতুকী দামী ওষুধ এবং পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যবহার এবং অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার।