দিঘি থাক মাঝখানটিতে : জয়া মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ জুন ২০১১ | ১৫৪০ বার পঠিত
এদেশের সমাজ, যেকোনো উন্নত সমাজের মতোই, প্রকৃতির দেওয়া জলকে ব্যবহার করবার বহু বহু উপায় জানত। পুকুর তার একটি। নদী থাকে নদীর জায়গায়, তার কিনারে বসে শহর, গ্রাম, শস্যের ক্ষেত। কিন্তু যেখানে বড় নদী নেই? সেখানে জলকে কীভাবে কাছে আনবে মানুষ? সেইসব কাছের জলভাণ্ডার ছিল পুকুর-দিঘি-সরোবর। এদেশে একটা বিরাট সুবিধা এই যে বর্ষার এক নির্দিষ্ট সময় আছে। প্রায় দিন তারিখও ঠিক আছে তার। যে অতিথি অঘোষিত, হঠাৎ আসেন, তাকে নিয়ে গৃহস্থ বিব্রত হতে পারেন, কিন্তু যে অতিথি আগাম খবর দিয়ে, তূরী-ভেরী বাজিয়ে 'রাজব্য উল্বতধ্বনির' প্রবেশ করেন তাঁর জন্য তৈরি থাকার সময় পাওয়া যায়, আয়োজন করা যায়। শেষ বসন্তে জল কমে যাবার পর থেকে পল্লির মানুষেরা নিজের নিজের এলাকার পুকুরের পাঁক কেটে তুলতেন। সেই তোলা পাঁকের কিছু অংশ নিয়ে সারা বছরে ভাঙাচোরা পাড়ের মেরামতি হত। বাকিটা বয়ে নিয়ে যেতেন নিজেদের জমিতে। গ্রীষ্মে শুকনো খরখরে হয়ে যাওয়া সেই পাঁক মাটি বর্ষার আগে আগে 'মই দিয়ে' খেতে ছড়িয়ে দিলে খুব ভালো সার হয় সেকথা জানা ছিল। সম্পূর্ণ গৃহস্থেরা পুকুর কাটাতেন, কেবল নিজের বাড়ির চৌহদ্দিতে নয়, বাইরেও। জল দান করা বড় পূণ্য কাজ ছিল।
পুরুষশূন্য হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন : জয়া মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৭ জুন ২০১১ | ১৪৫৬ বার পঠিত
আয়লার পর সুন্দরবন গিয়ে আমার মনে হয়েছিল ,যদি আয়লার ধ্বংসলীলা না ঘটতো তাহলে সুন্দরবনের সমস্যা দেশের তো বটেই ,এমনকি রাজ্যের সচেতন মানুষদের কাছেও অজানা রয়ে যেতো । সুন্দরবনবাসীদের মুখে বার বার শোনা যাচ্ছিল ,যদি আয়লার মত বা তার চেয়ে বড় কোনও সমুদ্র তুফান আবার হয়, তাহলে কি হবে । তারপর তিনবছর কেটেছে । আয়লার ভয়ঙ্কর ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম কারণগুলি বিভিন্নজন, যারা বিষয়টি বোঝেন ও কাছ থেকে দেখেছেন,তাঁরা চিহ্নিত করেছিলেন । সমাধানের উপায়ও বাতলে দিয়েছিলেন ,তার মধ্যে ছিল বাদাবন বাড়ান ,এমব্যঙ্কমেন্ট সারানোর নিয়মিত ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বীরভূমের পান্নালাল দাশগুপ্তের পথে ফ্লাড সেন্টার তৈরী পর্যন্ত নানারকম সমাধান সূত্র ,এই পরামর্শগুলির পিছনে ভাবনা ছিল ,সমবেদনা ছিল ,ছিল বাস্তব অভিজ্ঞতার জোর ।কিন্তু কিছুই হয়ে ওঠেনি সুন্দরবনে । পানীয় জলের সংস্থান টুকুও নয়।
ভূমিজল : জয়া মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৪ জুন ২০১২ | ২১৫৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
জলের দেশ আমাদের। একশটা নদী। কয়েক লক্ষ পুকুর ছিল। ঝিল-বিল-সরোবর। কোনোটারই কমতি ছিল না। আকাশ যেমন নীল প্রায় তেমনই নীল নীল ছায়া ধরা থাকত মাঠঘাটে গাঁয়ে। এমনকি শহরেও চারপাশে। অথচ আজ জল নিয়ে এমন দুরবস্থা – যেমন বন্যার বিপদ, তেমনই জল না থাকার কষ্ট। গাছপালা নেই, ঘাসজমিও প্রায় শেষ – বর্ষায় ভেসে আসা মাটি নদীর খাত ভরে দিচ্ছে। একটু বৃষ্টিতেই জল উপচে বন্যা। আর নদী খাল বিলে জল না থাকলে, হেমন্তকাল থেকেই জলের কষ্ট শুরু হয়ে যায়। এদিকে মাটির তলার জল খুব বেশি তুলে ফেলার ফলে কুয়ো নলকূপেও জল নেই। ঘরসংসারে জলের কষ্ট, চাষের ক্ষেতেও তাই।
দেশভ্রমণ : জয়া মিত্র
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১১ মার্চ ২০১২ | ১৪০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
শুভ যোগ বলুন আর ত্রহ্যস্পর্শ মাইনাস ওয়ান, এমন কেলোর কীর্তি এর আগে হয়েছে কি? নারীদিবস আর দোল এবার পিঠোপিঠি। ওদিকে গালে রঙ কত জমেছে কে জানে, আমাদের লেখা জমে গেছে বিস্তর। টেকনিকাল টিমের হুড়কোয় এতদিন চুপচাপ থাকলেও এই মওকা আর ছাড়া গেলনা। জমে যাওয়া জিনিসপত্তর থেকে তুলে নিয়ে কিছু ছড়ানো-ছেটানো লেখা তোড়ায় বেঁধে হাজির করা হল এবারের স্পেশাল বুলবুলভাজায়। নতুন ভার্সানে নতুন গুরু এলে নতুন বুলবুলভাজা আবার বেরোবে। কিন্তু তার আগেই, এই সুযোগ, আর ছাড়াছাড়ি নেই।
কত বাড়ি দেখা হল। এখনও তো বেশি বড় হইনি। যখন মায়ের মতন হব তখন আরো কত বাড়ি দেখব। কত ভাল কত খারাপ। মায়ের মতন বড় হওয় অব্দি কি বাড়িতে বাড়িতে কাজ করতেই থাকব? না আমি ভাবি যে বাবাকে বলব আমকে বিয়ে দিও না, আমাকে তোমার পার্টিতে নিয়ে নাও। দাদা আছে, আমিও থাকব। আমাকে ঐ চক্চকে সানাইএর মত বাঁশিগুলো বাজাতে দেবে। আমি তো বাজাতে পারি। যখন বাবা থাকে না, আমি একএকদিন বাজাই। জামাইদাদাও এগুলোই বাজায়। ওরা যা বাজাতে বলে সব বাজাতে পারি। আমি তো আর দাদার মতন নেশা খাব না, দুটো পয়সা পেলে ঘরেই আনব। বলব বাবাকে।
কোথায় তুমি চলেছ, আমার দেশ? : জয়া মিত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ মে ২০২০ | ৫৭২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২২
ফেরো, আমার দেশ, ঘরে ফেরো। আর যেওনা রাক্ষসের নরভুক পুরীর উন্নয়ন-পুজোয় বলি হতে। নিজের ঘরে থাকো। নিজের জোরে থাকো। ও মা আমার, তোমার লক্ষ মুখ যখন কাতরাচ্ছিল, যখন মায়ের কোলেও ঘুমোচ্ছিল না খিদেয় কাঁদা শিশুরা, যখন সতেরো দিনের বাচ্চা কোলে বাড়ি যাবে বলে হাঁটছিলে তুমি, তখনও তোমার মাথার ওপর জেগে ছিল নীল আকাশ। মেঘ। গাছপালারা তাকিয়েছিল দূর থেকে। পাশের সরু ঘোলাটে জলধারাটি যে তোমার ফেটে যাওয়া বুকে ওই কাদাজলের অঞ্জলি জোগাচ্ছিল- এরা সবাই তাকিয়েছিল তোমার দিকে। তোমার অপেক্ষায়। ওরাও আশ্রয়হারা। তুমি ওদেরও বাঁচাও। আমাদের বাঁচাও, শিক্ষিত করো আমাদের।
তুমি নিজের ঘরে থাকো।
এক শহর-ইয়ারের আসর জমেছে পাতায় পাতায় : জয়া মিত্র
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ১৬ আগস্ট ২০২০ | ৩২৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
কলকাতার কথা। ঘাটের কথা, পথের কথা, সৌধ, ভাঙা বাড়ির কথা, প্রতিষ্ঠানের কথা, ফিল্মস্টার, চিত্রপরিচালকদের কথা, কিন্নরকণ্ঠীদের কথা, আবার একেবারে আটপৌরে মা-মাসিমাদের জীবনের কথাও। হাসি-ঠাট্টার কানায় কানায় ভরা চোখের জলও। ছোট বড় ব্যক্তিগত গদ্যে বিন্যস্ত আড্ডার মেজাজে লেখা দু’ পর্বের একটি বই। পড়লেন লেখক জয়া মিত্র।
এমন আপ্রাণ স্নেহ বধ্যভূমি দেখেনি কখনও : জয়া মিত্র
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩৪৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সম্প্রতি পূর্ণ হল বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মের শতবর্শ। এ মুহূর্তে তাঁর কবিতা ফিরে পড়তে গিয়ে আমরা দেখি নিরন্তর ভালোবাসার, স্নেহের, এক নির্ঝর যেন জ্বালাপ্রান্তর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলেছে। এই দেশ থেকে, যে দেশ কখনও বিশ্লিষ্ট নয় দেশের মানুষ আর মানুষের সময় থেকে, তার সঙ্গে হাড়ে-মজ্জায় শিরায় বিজড়িত রয়ে গিয়েছেন এই কবি। লিখছেন জয়া মিত্র