হারানো প্রাপ্তি নিরুদ্দেশ : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৯ এপ্রিল ২০১৩ | ১৫৪১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
এর থেকে মনে হয়, হাসাকে যতটা সুখী ভাবতাম-মানে এখন ভাবছি বসে- ততটা সুখী নিশ্চয় সে ছিল না। শাশুড়ী ও পোড়া রুটি প্রসঙ্গে তার অত খচে যাওয়ারই বা কি ছিল, সেসব কি তার দুর্বল পয়েন্ট, অ্যাকিলিসের হিল? আর বনিতা, সে-ই কি সার্থক সুখী ছিল? নাকি সুখের কল্পনা করে রস পেত এত?সে কি হাসা'র নাম করে নিজের ভবিষ্যৎজীবনের সুখের ছড়াই বানাত বসে বসে? এমন বনিতা , যার পায়ে সোনার নূপুর, যার শাশুড়ী পালিয়ে বেঁচেছে, এবং যে দিনান্তে পেট ভরে রুটিটা - পোড়া হোক যাই হোক-অন্ততঃ খেতে পায় ! এইরকম সব প্রশ্ন পায় এখন ভাবতে বসলে। হাসা ও বনিতাকে পেলে খুঁটিয়ে জেনে নেওয়া যেত। কিন্তু তাদের পেলে তবে তো ! আমারও বয়স বাড়লো, আর দুজনেই এক এক করে- না, যা ভাবছেন তা নয়, একসঙ্গে নয়- যে যার মত আলাদা আলাদা কোথায় যে খসে পড়লো, কে জানে। আর তাদের খুঁজে পাওয়া গেল না।
গেল যে খেলার বেলা : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ মে ২০১৩ | ৫৪৩৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪৯
সব চরিত্র কাল্পনিক দেখে এক সময় আমায় বোঙায় ধরেছিল। সে কথা এই মায়াপাতার লোকজন কিছু কিছু জানেন। তারও আগে রেইনকোটের ভেজা বিষাদ। কিম্বা দোসর-এর সেই সাদা -কালোর নিষ্ঠুর মায়া। মৃত্যু-অপ্রেম আর ভালোবাসার বেঁচে থাকার গিঁট-পড়া কাটাকুটির মধ্যে বিষাদ তার থাবা নামাচ্ছে। বিষাদ, স্নেহময় , তার নখ বসাচ্ছে।কর্তব্য,পূর্বনির্ধারিত। পৃথিবীর কোনো গানের সুর-কোনো জলের স্বাদ,পাতালের কোনো ভোগবতীর ধারা, ফলের রসালতা, পৃথিবীর কোনো ওষুধ, কোনো অ্যালপ্রাজোলাম-ফ্লুওক্সেটিন-সিটালোপ্রাম এই মহৎ বিষণ্ণতার শালপ্রাংশুমহাভুজ শরীরে একটি আঁচড়ও কাটতে পারে না। এই বিষণ্ণতার রাস্তা ধরে ঐ তৃতীয় মানুষটি হেঁটে হেঁটে চলে যাচ্ছেন। পাহাড়ী রাস্তার মেঘ-কুয়াশা-তিস্তাজলের মধ্য দিয়ে। সখী হাম মোহন অভিসারে যাঁউ...
ফুরালে খেলা - ভারতের পটভূমিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস ঃ সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ | ২৫৬৩ বার পঠিত
রোগীটিকে ব্যথায় অমন কাতরাতে দেখে আমি আমার নেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জনকে ( মেডিকাল কলেজের একজন ছাত্র) জিজ্ঞেস করলাম : তুমি মেসমেরিজম দেখেছ কোথাও? সে বলল, সে মেডিকাল কলেজে চেষ্টা করতে দেখেছে, কিন্তু তারা তো কেউ সফল হয় নি। আমি বললাম : আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে এই রোগীটির ওপর চেষ্টা করতে, কিন্তু আমি আসলে কোথাও এটা করতে দেখিনি। কেবল বইয়েই পড়েছি। আমি কি পারব? মনে হয় না। এবং এসডেইলি পারলেন।
ভোটের গরম (২) : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৯ মে ২০০৯ | ১৫৭১ বার পঠিত
সোদপুর ব্রীজের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় রেলস্টেশনের সামনে অনেক উঁচুতে কংগ্রেসের বিশাল ব্যানার প্রথমেই আপনার চোখে পড়বে। সোনিয়াজীর হাস্যোজ্জ্বল ঘোমটা-টানা মুখ, হাত নাড়ছেন আমার -আপনার উদ্দেশ্যে, মনমোহনজীও আছেন, কিছুটা খাটো হয়ে। বেশ। ভালো কথা। কিন্তু নীচে-র লেখাটার যে মানে বোঝা গেল না, সেটা মোটেই ভালো কথা নয়। আমার পক্ষে, সম্ভবত: কংগ্রেসের পক্ষেও। একতা আর সদ্ভাবনা তো বুঝলাম, সুরক্ষাও বোঝা গেল, কিন্তু "ভীত-শান্তি'? এমন কোনো শব্দ কী শুনেছি এই বেঁটেখাটো বাঙালী জীবনে? ইহা কী বাংলা ভাষা? কে বলবে রে আমা-আ-য়?
ভোটের গরম (১) : লিখছেন -- ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০২ মে ২০০৯ | ১৫৮৪ বার পঠিত
প্রথমে ভেবেছিলাম নাম দেবো Vote টি কাব্য; কিন্তু কাব্য? এই কাগদেশান্তরী গরমে কাব্য? অগত্যা ভোটের গরম-ই সাব্যস্ত হল। নাম বাবদ মডারেটরের কাছে কিছু কর্জ হল। হ্যাঁ, কেউ যেন সিরিয়াস লেখার আশায় বসে না থাকে (অ্যাজ ইফ , কেউ বসে আছে)। এ ঘোর নিদাঘে আমি শুধু চাট্টি কুচ্ছো করবো, কিছু পি এন পি সি , কিঞ্চিৎ বিলাপ ও বাদবাকি প্রলাপ। হনুদা পড়ে রাগে-দু:খে মুখ ভেটকে উঠে যাবে, কেউ-কেউ পড়বেই না, কিন্তু তাতে আমার কচু। সরি, কচুপোড়া; ৪২ ডিগ্রির কথা মনেই ছিল না।
নিজেকে সারান : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩০ আগস্ট ২০০৬ | ১৪১৫ বার পঠিত
আমি যেখানে কাজ করতে যাই, সেখানকার পোষাকি নাম করোনারি কেয়ার ইউনিট। সেখানে ইউনিফর্ম পরা রোগীরা সার বেঁধে শুয়ে থাকেন যে যাঁর নিজস্ব বেডে। নানানরকম যন্ত্রপাতি দিয়ে তাঁরা তাঁদের নিজস্ব মনিটরের সঙ্গে বাঁধা। মনিটর হরদম মেপে যাচ্ছে তাঁদের হার্ট রেট, রেসপিরেটরি রেট, রক্তচাপ, ই.সি.জি.। যন্ত্রের ইনফ্রা রেড বিকিরণ মাপছে এমনকি রক্তের অক্সিজেন মাত্রাও।
সংবিগ্ন পাখীকূল : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ ডিসেম্বর ২০০৬ | ১৭০৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আমি আর সন্দীপ কোনো এককালে সাইকেল করে এয়ারপোর্ট দেখতে আসতাম। ভি. সি কলেজে পড়ি তখন। কলেজ কেটে , বলাই বাহুল্য। মাঝেমধ্যে সুবর্ণও আসতো। সাইকেল চেপে ঘুরতাম, সে তো কত জায়গাতেই। ক্লাশ না পালিয়েও আসতাম পরের দিকে। যেমন শীতের ভোর ভোর কুয়াশায়, যখন নীলগঞ্জ রোডের ধারে চায়ের দোকানে সবে উনুনে আঁচ পড়ছে, বাসিমুখ দোকানী হাই তুলতে তুলতে প্রাণপণে হাওয়া দিচ্ছে; ধোঁয়া আর কুয়াশায় মিলিয়েমিশিয়ে জট পাকিয়ে একাকার। দাওয়ায় মাদুর পেতে পড়তে বসেছে বাচ্চা ছেলে, গায়ে নস্যি রং চাদর না আলোয়ান কেবা জানে; উঠোনে রোগাভোগা বেড়াল-ছানার মত ফালি রোদ ডুরে শাড়ির পায়ে পায়ে ঘোরে।
দেশ যাদের কোনো মাতৃভাষা দেয় নি কখনো : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ১৩৬৫ বার পঠিত
কাল সারাটা দিন হাসপাতালে নানান ঝুট-ঝামেলায় কেটেছে। যেমন আর পাঁচটা কাজের দিন যায়, তার থেকে একটু বেশীই। সাঁঝের ঝোঁকে সোফাতে একটু গা এলালেই নয় যখন, ডক্টর"স রুমে ঢুকতেই কলকল করে বন্ধু ও সহকর্মীরা জানাল - আবার বাংলা বন্ধ। শুক্রবার।
কে ডাকল?
কে আবার, দিদি ছাড়া?
কেন হে?
নাকি নন্দীগ্রামে কিসব ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট হয়েছে।
ডাকিনীতন্ত্র : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৬ জানুয়ারি ২০০৬ | ১৫৭৩ বার পঠিত
উত্তরদিকে পেন্ডল হিল মাথা নিচু করে দেখছে। বড়সড় বাচ্চার মত, আধপাগলা জেমস যেমন, কিছু একটা দেখলো তো দাঁড়িয়ে গেল অমনি, ঠোঁটের কোণ দিয়ে লালা গড়িয়ে পড়ছে তো পড়ছেই। রোদ এসে ধুয়ে যাচ্ছে ছককাটা সবুজ মিডো। সাদা-কালো ফুটকিগুলো চরে বেড়ানো গরু আর ভেড়ার পাল। আলসেমো করে সাড়ে দশটায় ঘুম থেকে উঠে খেয়াল হল গতরাতের পাউরুটির টুকরো-টাকরা গুলো নি:শেষ। হুইটফ্লেক্সের প্যাকেটটা মেঝেয় গড়াগড়ি খাচ্ছে, ঠিক যেখানে আজ্ঞাচক্রের কালির দাগ শুকিয়ে প্রসঙ্গহীন, বুঝভুম্বুল। অগত্যা আইসল্যান্ড।
ছেলেধরা বুড়ো : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বই | ২৩ এপ্রিল ২০২১ | ৪৬৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
অনেক দূরের একটি নক্ষত্র, যার আলো আর তাপ সে একদা খুব ভালোবাসতো, আর এখনো সে শীত বুঝলে সেই আলো আর তাপের কাছে ফিরে ফিরে যায়, যদিও অনেক কাল খুব একটা দেখাশোনা নেই। এইমাত্র সেই নক্ষত্রপতনের শব্দ হল। লোকটার মন খারাপ লাগছে। তার বেঁচে থাকার টুকরোটাকরা দিয়ে তাই সে লিখে ফেলছে আবোলতাবোল। সেই সব দিনগুলি-রাতগুলির কথা, যাদের মধ্যে একদা সেই নক্ষত্রের আলো, আগুন আর জলের ছাপ পড়েছিল।
মাকোন্দোয় দুর্গাপূজা : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০০৬ | ০১ অক্টোবর ২০০৬ | ১৮৬৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
দুগ্গাপূজা নিয়ে অত বলাবলির বা কি আছে, অত আনন্দেরই বা কি আছে। সেসব বলবে পাল্লিনের মত কচিকাঁচারা। আমায় কেন, বৃদ্ধ মানুষ !
শুধু ছোটবেলায় একবার লাল জামা কিনে দেওয়া হয় নি বলে গড়িয়ে গড়িয়ে কেঁদেছিলাম। নালেঝোলে মেখে, মাটি চেটে , মেঝের শানে ঠাঁই ঠাঁই করে মাথা ঠুকে গুগলু বানিয়ে তবে ক্ষান্ত দিইছি। আর ক্যাপ ফোটানোর একটা ব্যাপার ছিল। ক্যাটকেটে কালো পিস্তলগুলো সব, নারকেল তেলের গন্ধমাখা। তায় আবার রোল ক্যাপগুলো কিছুতেই ফাটতে চাইত না। আর সেবার কে যেন একটা ঝিনচ্যাক রূপোলী পিস্তল কিনে দিল। দেবদূত-ফেবদূত কিছু একটা ভেবেছিলাম, লোকটাকে।
ইয়ে দাগ দাগ উজালা, ইয়ে শাব-্গজিদা সেহর : ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : রাজনীতি | ১৬ আগস্ট ২০২১ | ৩৫৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
কংগ্রেস নেতৃত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন, ব্যথিত বৃদ্ধ ঠিক করেন নোয়াখালির গ্রামে গ্রামে, বিহার-কলকাতা-দিল্লি-পাঞ্জাবের দাঙ্গা-বিদ্ধস্ত বস্তিতে তিনি শেষ চেষ্টা করে দেখবেন। তাঁর সারাজীবনের আদর্শ - অহিংসা দিয়ে হিংসাকে জয় করবেন। সঙ্গী তাঁর অক্ষয় সাহস আর হাতে-গোনা কয়েকজন অনুগামী। বিহারে হিন্দুরা তাঁদের আচরণ পরিবর্তন না করলে তিনি আমরণ অনশনের হুমকি দেন '৪৬-এর নভেম্বর মাসে। আর '৪৭ এর জানুয়ারি মাসে তিনি শুরু করেন তাঁর নোয়াখালি ভ্রমণ। দাঙ্গার শিকার নোয়াখালির সংখ্যালঘু হিন্দুদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের মনোবল জোগানো আর সংখ্যাগুরু মুসলমানদের মন পরিবর্তনের জন্য এই তাঁর যাত্রা-সাত সপ্তাহের এই যাত্রায় ১১৬ মাইল তিনি পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ান। জল-কাদার মধ্য দিয়ে, ভাঙা বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে, বিরুদ্ধ-ক্রুদ্ধ মানুষের ঘৃণা পেরিয়ে, সংশয়-অবিশ্বাস পেরিয়ে, মৃত্যুভয় পেরিয়ে খালিপায়ে তাঁর এই হাঁটা - এ হাঁটার তুলনীয় নজির পৃথিবীর মানুষ খুব বেশি একটা দেখে নি। তাঁর পথে ক্রুদ্ধ মুসলমানদের ছড়ানো ময়লা তিনি একবার নিজের হাতে পরিষ্কার করেছিলেন। প্রতিদিন সকালে তাঁর যাত্রা শুরু হত রবীন্দ্রনাথের 'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে' গান দিয়ে। সুমিত চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন - 'সেটি হয়ে উঠেছিল তাঁর প্রিয় স্তোত্র।' শুরুতে কিছু প্রতিরোধ ছিল - সাংবাদিক শৈলেন চ্যাটার্জি লিখেছেন - মুসলমানরা তাঁকে বিশ্বাস করত না; পরে তারা বুঝতে শুরু করল - এই মানুষটি সাধারণ একজন মুসলিমবিদ্বেষী হিন্দু নয়, এ অন্য কিছু। লাইন দিয়ে মানুষ তাঁকে দেখতে আসত, তাঁর চলার পথে ভিড় করে জোড়হাতে দাঁড়িয়ে থাকত তারা - তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে পীড়িত মানুষজনকে সান্তনা দিতেন, প্রার্থনা করতেন, সম্প্রীতির কথা বলতেন।