লাঞ্চবক্স, ধোবিঘাট, বহমানতা : অবন্তিকা পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০১ অক্টোবর ২০১৩ | ১১০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
“কেউ যায় না/ শুধু জায়গা বদলে বদলে/ সব কিছুই/ জায়গা বদলে বদলে/ সকলেই/ থাকে।“
আমাদের পুবদিকের জানলা দিয়ে নিচের দিকে তাকালে যে টালিছাদ বাড়িটা দেখা যায়, তার ইটের দেয়ালে গতকাল সকাল থেকে নীল রঙের প্রলেপ লাগতে শুরু করেছে। নতুন নীল রং। যেন আশ্বিনের আকাশ। ওই বাড়িটার মানুষজনের সাথে আমার ব্যাক্তিগত চেনাশোনা নেই। কেবল সকালে-রাতে একগুচ্ছ সম্পর্ক লক্ষ্য করি। সবুজ হাওয়াই চটি, বেতের চুপড়ি, ছেঁড়া টেডি বিয়ার, কালো চশমা, হাতল ভাঙা চেয়ার, বেগুনি কামিজ – এসবের দৈনন্দিনতায় আঁচ করে নিতে চাই টালিছাদের নিচে বসবাসকারী নারীপুরুষদের, যেমনটা চিনতে চেয়েছিলাম সেই ইমরান নামের কিশোরকে, যার জন্য দিদি জাসমিন ক্যামকর্ডারে গুছিয়ে রাখছিল সুখ-দুঃখ, যেমনটা বুঝে নিচ্ছিলাম ওই দেশপান্ডে আন্টিকে, যে যত্নে লালন করে নিঃসঙ্গ ইলার ভালো থাকা-খারাপ থাকা।
লাঞ্চবক্স দেখে এলাম। দু’বছর আগে, সম্পর্ক নিয়ে তৈরী হওয়া আরেকটা ছবির কথা খুব মনে পড়ছে। ধোবিঘাট।
ম্যাক্সিমিনি উওমেন্স বুটিক : অবন্তিকা পাল
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ৩০ এপ্রিল ২০১৬ | ৩৪২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৯
ক্রিস্টাল হার্বাল ক্লিনিকে গিয়ে বলতে, গোটা ছয়েক ওষুধ লিখে দিল । সে ওষুধ আবার ওদের কাছ থেকেই কিনতে হয় । বিল হল চব্বিশ টাকা । সব ক্যানসেল করে একটা ট্যাবলেটের শিশি নিয়ে এলাম । রাত্তিরে দুটো বড়ি, ঘুমোবার আগে । সে কী কেলো বড়দা! কিছুতেই কিছু হয়না । ইংরিজির বদলে গড়িয়াহাট থেকে দুটো বাংলা সিডি আনা করালাম । মাতৃভাষায় যদি কিছু উপকার হয় । তাও হল না । ব্যবসাটা কোনওক্রমে করতে হয় তাই করা । লেখা ফেখা মাথায় উঠেছে । পুরো বনবনাইটিস । শেষে বড়দা, আপনার এই দোকানের উল্টোদিকে ওষুধ পাওয়া গেল । আপনার দোকান, যা কিনা আমায় ভাড়ায় দেওয়া - টিপটপ মিটশপ । প্রথম দিনেই বুঝেছিলাম দোকানটার আয়পয় ভালো । কিন্তু চার-চারটে বছর বসছি, এতদিনে একবারও এ বিষয়টা চোখে পড়েনি কেন কে জানে ! ফারুখ যখন রোজ দোকান বন্ধ করে, এই সাড়ে ন’টা নাগাদ, রাস্তার উল্টো ফুটে ম্যাক্সিমিনি বুটিকের মামনিরা তাদের ম্যানিকুইনগুলোকে জামা ছাড়ায় । রোগা রোগা ম্যানিকুইন, তাদের চ্যাপ্টানো নিতম্ব, বুকের কাছে সামান্য ঢিবি ।
সালোকসংশ্লেষ : অবন্তিকা পাল
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৫ এপ্রিল ২০১৫ | ১২৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
শহর কোলকাতা থেকে অনতিদূরে মৌবনীদের সবুজ-মেরুন দোতলা বাড়ি। এর আগে যদিও লাল-হলুদ ছিল। প্রমিতা ওপারের মেয়ে, তায় তার ঢাকা নিবাসী মাসতুতো বোনের ছেলে এখানে থেকে এমবিএ পড়ছিল কিছুদিন। বাপের বাড়ির সদস্য পেয়ে শ্রীমতীদের মনের জোর বেড়ে গেলে গৃহশান্তির জন্য পুরুষমানুষকে অনেককিছুই করে ফেলতে হয় যা তাদের নীতিবিরুদ্ধ। তবে ওই, রাখে বাবা অদ্বৈতানন্দ তো মারে কে! মানে, মৌবনী সবে এমএসডব্লু শেষ করে চাকরিতে ঢুকবে ঢুকবে, ওমনি তার ভালোবাসাবাসি হলো বিভাসের সাথে। এ কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। কেজি স্কুল থেকে আজ পর্যন্ত এই নিয়ে মৌবনী দুটি ছেলে ও একটি মেয়ের হাত ধরে বাড়ি এলো। প্রমিতা প্রথমবার সোনার বোতাম গড়ালেন, দ্বিতীয়বার সাদা পাথর দেওয়া আংটি ও তৃতীয়বার মানে অধ্যাপিকা বান্ধবীটির বেলায় পত্রপাঠ বাড়ি থেকে বার করে দিলেন। মাস্টার্স-এর সময়টায় মৌবনী পেয়িং গেস্ট থাকছিল যোধপুর পার্কের একটা ফ্ল্যাটে। কাজের সুবাদে তাদের উল্টোদিকের ফ্ল্যাটটিতে নিয়মিত আসত বিভাস। এভাবেই একদিন মুখোমুখি-চৌকাঠ পেরিয়ে তেলরং-ক্যানভাস সমেত হুড়মুড় করে ঢুকে পড়া মৌবনীর হৃদয়ে। প্রতিমার অবিশ্যি ছেলেটির পেশা টেশা দেখার চেয়ে পুলকের কারণ এই ছিল যে, সে পুরুষ। বিভাসের মা ছন্দা আবার কোন এক অদ্বৈতানন্দের দীক্ষিতা। তিনি পুত্র ও বাবাজী সমেত মৌবনীর বাড়িতে- এলেন দেখলেন জয় করলেন।
অরুণা শানবাগ, নিষ্কৃতিমৃত্যু ও উন্মাদের ভাষা : অবন্তিকা পাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ জুলাই ২০১৫ | ১৩০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
কেইএম হাসপাতালের প্রাক্তন মেট্রন দুর্গা মেহেতা-কে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রশ্ন করা হল, কেন তিনি ও তাঁর অন্যান্য নার্সরা চাননি অরুণাকে নিষ্কৃতিমৃত্যু দেওয়া হোক l উত্তরে তিনি টিভির পর্দায় জানালেন- আমাদের অধিকার মানুষকে বাঁচানোর, হত্যা করার নয় l অরুণা আমাদেরই একজন ছিল l তুমি নিশ্চয় চাইবে না তোমার কোনো প্রিয়জনকে এভাবে হত্যা করা হোক l (We have right to give life to anybody, not the right to kill anybody. She was one of us. You don’t want your family member to be killed.) এ আবেগসর্বস্ব বক্তব্যের সাথে একমত হওয়া কোনো যুক্তিনির্ভর মানুষের পক্ষে সম্ভবপর নয় l তবে, অরুণার শায়িত শরীরের সাথে আবেগ ব্যতিরেকে আরও টুকরো টুকরো কিছু বাস্তবতা জড়িয়ে ছিল l নার্সরা জানান- অনেক বছর আগে জন্মদিনে একবার অরুণাকে মাছের টুকরো ভেঙে খাওয়ানো হয়েছিল l অরুণা নাকি সেদিন খুশি হয়েছিল খুব l তার ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফুটে উঠেছিল l বাঙ্ময় হয়ে উঠেছিল আপাত-ভাষাহীন চোখ l মনে পড়ে যাচ্ছে ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবির আনন্দভাই-এর কথা, যে একমাত্র মুন্নার প্রশ্নের উত্তরেই ‘পলক ঝপককে’ জবাব দিত, আর বাকিদের কাছে সে ছিল স্রেফ একটা ‘কেস’ l
বেশ্যাপাড়ার গল্প : অবন্তিকা পাল
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৪ অক্টোবর ২০১৫ | ২১৮৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
যেদিন খদ্দের থাকে না, আমরা অনেক অনেক গল্প করি। বরাবর এমনটাই হয়ে আসছে। আমাদের দেওয়ালে চারজনের ছবি লাগানো আছে। আমি চারজনকেই চিনি। একটা আদ্যা মা, একটা নেতাজি, একটা মাধুরী দীক্ষিত, আরেকটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দীপালির ট্রাঙ্কে আরও একটা ছোট্ট মতো ছবি আছে। আমি জানি ওটা কার। পলাশের। আমাকে কেউ বলেনি। কিন্তু জানি। একদিন দুপুরবেলা খাটের ওপর ছবিটা পড়েছিল, আর আমি রাগ করে একটু চিবিয়ে ফেলেছিলাম। দীপালি কী মারই মেরেছিল। ওই একদিনই। আর কখখনও না। তারপর নিজেই একঘন্টা কাঁদলো। দীপালি ওর মা বাবার কথা একেবারে বলে না। গোমতীর কারো কথাই বলে না প্রায়। কেবল একজন দিদিমণির কথা বলে – তার নাম মায়া। উনি দীপালিকে খুব ভালোবাসতেন। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখাতেন, ঘি ভাত রান্না করে খাওয়াতেন। সেইসব গান দীপালি গায়। মাঝে মাঝে। বিশেষ করে ওই শুভাশিস এলে। শুভাশিসকে একটানা দু’বছর হলো দেখছি, মাসে সাধারণত একবার আসে। শুরুর দিকে, মাইনে পেয়ে। আমার জন্য ক্রিমবিস্কুট আনে, মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে। আর টাকা দেওয়ার পর আমাদের একটা-দুটো করে কবিতা শুনিয়ে চলে যায়। আমি আর দীপালি তখন খুব হাসি।