অশােক ও শােভন গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর থেকে দুই বৎসর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু দুজনের কারাের কোনাে চাকরী হয়নি। শুধুমাত্র তাদের টিউটোরিয়াল হােমের উন্নতি হয়েছে। তাদের এই হােম থেকে অনেক ছাত্র ফাস্ট ডিভিশনে মাধ্যমিক পাশ করেছে এমন কি দুই একজন ছাত্রছাত্রী স্টারও পেয়েছে। ফলে তাদের হােমের’ ছাত্রছাত্রী সংখ্যা এখন অনেক। দুইবেলা তারা হােম খােলে। সকাল সাত ঘটিকা থেকে দশ ঘটিকা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ছয় থেকে নয় ঘটিকা পর্যন্ত। প্রত্যেক গ্রুপে তিরিশ জন করে ছাত্রছাত্রী থাকে দুইজনে পনেরজন করে প্রতি সপ্তাহে চারদিন শিক্ষাদান করে। শুধুমাত্র নব এবং দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীই এখন পড়াশুনা করে। দুইবেলায় মােট ৬০জন ছাত্রছাত্রী পঁচিশ টাকা করে দেয়। মােট দেড় ... ...
একটু ভুলের জনাে পরস্পরের মধ্যে যে বিভেদ সৃষ্টি হয়তার জন্যে অনেক তো মাশুল গুনতে হয়। সে কথা বলার আগে মনে করি দুই বন্ধুকে। আজ শােভন এসেছে, অশােকের কাছে। তারা দুজনেই পরীক্ষা দিয়েছে। বর্তমানে যা অবস্থা মনে হয় বছর খানেকের মধ্যে না হলে বি.এ., বি.এস.সি,পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয় না। এই খবরটুকু তাদের জানা বলেই তারা দুজনে যুক্তি করে কিছু করতে চায়। কিন্তু কি করবে তারা। বর্তমান বেকার যুগে কিই বা করার আছে। অনেক আলােচনার পর তারা ঠিক করলাে তারা দুজনে মিলে টিউটোরিয়াল হােম খুলে স্বল্প বেতনে শিক্ষাদান করবে। কিছুদিনের মধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। তারা রূপাডিহির ও সােনাদিঘির সপ্তম শ্রেণী থেকে ... ...
শোভন ভাবে, দেশে ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রসার হচ্ছে দিন দিন। কোম্পানিগুলো নিয়মিত নতুন নতুন ওষুধ বাজারে নিয়ে আসছে। আর আগের ওষুধ তো আছেই। সেই ওষুধগুলোর পরিচিত চিকিৎসকদের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের।এটি একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। যাঁরা এ পেশায় যেতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারেন এ দুই ব্যক্তি। দুজনই নিজ নিজ পেশায় সফল। একেবারে নিচুতলা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছেন।এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে গ্লাক্সো, ওয়েথ ইন্টারন্যাশনাল, একমি ও আরএকের মতো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোয় কাজ করেছেন রফিকুল ইসলাম। অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বললেন, ‘এ পেশায় ভালো করতে হলে অবশ্যই দক্ষতা প্রয়োজন। তবে সেই সঙ্গে কাজের প্রতি নিষ্ঠা, প্রতিশ্রুতি ও সততা থাকতে ... ...
অভিনয় সকলেরই ভালাে হয়েছে। প্রত্যেক গ্রামের অভিজ্ঞ লােকেরা সকলের। অভিনয়ের প্রশংসায় মুখর। কিন্তু সকলের উর্ধ্বে যেন অরিন্দম। অরিন্দম একা,ছেলের চরিত্রে যা অভিনয় করে গেল তা সত্যি সকলের মনে দাগ রেখে গেল। পরের দিন সকালে অরিন্দম দেখে তরুণ যুবকেরা তাকে গুরু বলছে। তপন বলল, গুরু পায়ের ধুলো দাও। অরিন্দম বাড়িতে মা বাবাকে বলে গোপাল বাবুর বাড়ি গেল। গােপালবাবু আজ আশেপাশের পাঁচ ছয়টি গ্রাম থেকে একজন করে বা দুজন করে নিয়ে, আর নিজের গ্রাম থেকে আটজন অভিনেতাকে নিয়ে একটি বই মঞ্চস্থ করার মনস্থ করলেন। তার জন্য তো মহড়ার প্রয়োজন। সেই মহড়ার কাজ শুরু আজ থেকে। গোপালবাবুর সেই পুরানো দিনের বাড়ি। বাড়ি বললে ... ...
আবার সাঁতার শিখতে গিয়ে,ছোটোবেলার রায়পুকুরের রাধা চূড়ার ডালটা আজও আমায় আহ্বান করে হাত বাড়িয়ে । এই ডাল ধরেই এলোপাথারি হাত পা ছুড়তে ছুড়তে সাঁতার শিখেছি আদরের পরশে । ডুবন্ত জলে যখন জল খেয়ে ফেলতাম আনাড়ি চুমুকে, দম শেষ হয়ে আসতো তখন এই ডাল তার শক্তি দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে জড়িয়ে ধরতো অক্লেশে । হয়তো পূর্ব জন্মে আমার দিদি হয়ে যত্ন আদর করতো এই ডালটা । কোনোদিন তাকে গাছ মনে করিনি আমি ।এখনও জল ছুঁয়ে আদরের ডাক শুনতে পাই পুকুরের ধারে গেলে । রাধা নামের মায়াচাদর জড়ানো তার সবুজ অঙ্গে ।ভালো থেকো বাল্য অনুভব । চিরন্তন প্রকৃতির শিক্ষা অঙ্গনে নাম লিখে যাক ... ...
বিশু ও সৈকতের বন্ধু, অরিন্দম গোপালবাবুর স্ত্রী সবিতাদেবীর কথা বলছে । এখন গোপালবাবু নেই। অরিন্দম আর যাত্রা করেনা। সে এখন লেখে নিজের জীবনের কথা, গোপালবাবুর কথা তার পরিবারের কথা। সে বলল,বিশুকেকে একটা জীবনের গল্প। তারা এখন অজয় নদের ধারে বসে জীবনের প্রবাহ দেখে।বিশু সবিতাদেবীর পাশেই থাকে। একই গ্রামে ন্বাড়ি। সবিতা দেবীর বয়স নব্বই ছুঁই ছুঁই। শরীরের নানারকমের অসুখ বাসা বেঁধেছে ডাক্তারবাবু বলেছেন কিডনি,হার্টের যা অবস্থা, বড়জোর আর কয়েকদিন বাঁচবেন। ছেলে একটা প্লাসটিকের গামলা কিনে দিয়েছে। বাথরুম শোবার ঘরের থেকে অনেক দূরে। ওই গামলায় পেচ্ছাপ করা যাবে। কিন্তু পায়খানা যেতেই হবে দূরে। ফলে রাতে দরজার তালা খুলে উঠোন পেরিয়ে বাথরুম যেতে হয়। ... ...
সৈকত ঐতিহাসিক স্থান ঘোরার জন্য ঠিক করল। সৈকত ঘোরার কথা বাবাকে জানালো।সে বলল আমরা চারবন্ধু গরমের ছুটিতে ঘুরতে যাব ঠিক করলাম।আমি, রাজু, শ্যামলী আর সোমা। চারজনই আমরা ইতিহাসের ছাত্র। এক কলেজে পড়ি। সোমা বলল, সাঁচি স্তুপ দেখে আসি চল। সৈকতের বাবা মা বললেন, সাবধানে যেও।আজ সকলে সৈকতের বাড়িতে আলোচনা করছে ঘুরতে যাওয়ার আগে। শ্যামলী বলল, মধ্যপ্রদেশের রাজধানী শহর ভূপাল থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাঁচির বিদিশাগিরিতে অবস্থিত বৌদ্ধ স্তূপ। সম্রাট অশোক এই স্তূপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।রাজু বলল, হ্যাঁ ইতিহাসে পাওয়া যায় এইসব কাহিনী। অশোককের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরও কলিঙ্গবাসী পরাজিত হয়। এই যুদ্ধে প্রায় এক লক্ষ নরনারী প্রাণ হারায় এবং প্রায় ... ...
সৈকতের প্রিয় বন্ধু যাত্রাশিল্পী।তার নাম অরিন্দম।শিশিরবাবু, স্বপনবাবু, হেমন্তবাবু, তড়িৎবাবু সকলেই বড় বড় যাত্রাশিগোপালবাবু যাত্রা বিশেষজ্ঞ। তিনি যুবকদের যাত্রাশিল্প পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলেন। অরিন্দম বলে, যাত্রা করে এখন পেট ভরবে। কেউ দেখবে না। গোপালবাবু বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল রেখে চলতে পারলে এই শিল্প চলবে নিশ্চয়। অরিন্দম গোপালবাবুর কাছে যাত্রাশিল্প সম্বন্ধে জানতে পারে অনেককিছু। অরিন্দম যাত্রার পাঠ নেয় গোপালবাবুর কাছে। গোপালবাবু বলেন, অষ্টাদশ শতকে(১৭০০ সাল) যাত্রা বাংলা ভূখণ্ডের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় শিশুরাম, পরমানন্দ অধিকারী, সুবল দাস ছিলেন যাত্রার জগতে প্রসিদ্ধ। উনবিংশ শতকে পৌরাণিক কাহিনিভিত্তিক যাত্রা খুব জনপ্রিয়তা পায়। মতিলাল রায় ও নীলকণ্ঠ মুখোপাধ্যায়ের যাত্রাদল প্রসিদ্ধি পায়। সে সময় কৃষ্ণলীলা এবং ... ...
ছয় মাইল পায়ে হেঁটে যেতে হবে। আমাদের গ্রাম থেকে ছয় মাইল দূরে বিল্লগ্রাম। সেখানে আমরা হেঁটে চলে গেলাম 11 জন আর একজন এক্সট্রা মোট 12 জন। আর দর্শক আমাদের সঙ্গে ছাত্রদল 12 জন। তারপর দুটোর মধ্যে পৌঁছে গেলাম বিল্বেশ্বর মাঠে। অজয় নদীর ধারে মাঠ। বেশ বড়। সুন্দর মাঠ তিনটের সময় খেলা শুরু হলো। ওপেন করতাম আমি আর টুলাদা। আমি এক দিকে। আর টুলাদা রানার থেকে কোনরকমে কাটানো হল দু ওভার। বেশ জোরে বল।জোর বলের চেয়ে ভালো বলছে ব্যাটিং।কোনরকমে একদিকে ঠেকােনো হলো আর একদিকে টুলাদা পেটাতে লাগলো।কুড়ি ওভার করে মাত্র খেলা। এর মধ্যে রান তুলতে হবে ভাল রকম। না হলে জেতা যাবে ... ...
ইলেকট্রিক আলাে আসার পর অংশুমানের বাড়ির চারপাশে অনেকগুলি বাড়ি হয়ে গেল। প্রতিবেশী বলতে সামনের পাড়াটা আর দু-চারটি ঘর ছিল। কিন্তু এখন পােলে লাইট ঝুলছে। কল হয়েছে, জলেরও অভাব নেই। এখন লােকে জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করছে এইসব সুবিধার জন্য। জায়গার মালিক যারা তারাও ভালােরকম দাম পাচ্ছেন। ফলে অংশুমানের বাড়ির চারপাশে একটা পাড়া গজিয়ে উঠেছে। কিন্তু বেশিরভাগ লােক এখানে পড়াশােনা না জানা দলের। জানলেও হয়তাে সামান্যই জানেন। অংশুমান এদের ছেলেমেয়ের নিয়মিত পড়ায়। লেখাপড়া শিখলে নিশ্চয় কিছুদিনের মধ্যেই পরিবেশ ও পাল্টে যাবে। প্রায় কুড়ি বছর হল অংশুমান কাটোয়ায় এসেছে। এখন পার্শ্বশিক্ষকের কাজ করে। ছেলে ক্লাস ইলেভেনে পড়ে। দেবী সংসারের কাজকর্ম নিয়েই থাকতে ... ...