এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কুসুম জীবন 

    Sudip Ghoshal লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৬ নভেম্বর ২০২৩ | ৩৯৬ বার পঠিত
  • কুসুম  জীবন

    সুদীপ ঘোষাল 

    সেতারবাদকের মেয়ে কুসুম। কুসুম কান পেতে শোনে জীবনের সুর।

    কুসুম বাড়িতে ফিরে বলল, বাবা, আমাকে এম এ পাশ করতে দাও। তারপর আমি চাকরি করব। এখনই বিয়ে করব না।
    বাবা বললেন, চাকরি করার প্রয়োজন নেই মা। এম এ পাশ কর। পাত্র বিদেশে থাকে। পাশ করার পর তোর বিয়ে দেব। আমার বয়স হয়েছে। কবে মরে যাব ঠিক নেই।
    কুসুম আর কোনো কথা বলতে পারল না।
    কুসুম বিছানায় শুয়ে ভাবে, অসিম তাকে কত ভালোবাসে। খেয়াল রাখে। কত বিপজ্জনক কাজ সে করে কুসুমের জন্য। 

    পরের দিন আবার অসিমের সঙ্গে চিড়িয়াখানা যায়। কুসুম দেখে জলহস্তির কতবড় হাঁ। সব ভালোবাসা যেন ও গিলে ফেলতে চায় নিমেষে। যত স্মৃতি, কত মুহূর্ত যে গিলে খায় জলহস্তির মত ছেলেরা তার ইয়ত্তা নেই। অসিম বলে, কী ভাবছিস। চল ওখানে গিয়ে বসি। বর্তমানকে নিয়ে বাঁচি। ভবিষ্যৎ ছুঁড়ে মারি ডাষ্টবিনে। তারপর ওরা মহিলা বাথরুমে ঢোকে। কুসুম আনওয়ান্টেড সেবেনটি টু খেয়েছে সকালে। কুসুম জিনসের প্যান্ট খোলে। অসিম পিছন থেকে কুসুমকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ দেয়, রসে সিক্ত হয়ে ওঠে দুজনের দেহ, মন। এই প্রথমবার ওরা শারীরিকভাবে মিলিত হল। মনের বন্ধনে স্বামী স্ত্রী হয়েছে বহু পূর্বে।

    তিন

    কুসুম বলে অসিমকে, চোদ্দ বছর বয়সে মায়ের বিয়ে হয়েছিল। তখন থেকেই মায়ের স্বাধীনতা ডোবাপুকুরের শানবাঁধানো সিঁড়িতে থমকে গিয়েছিল। তবু ছোট পিসির প্রশ্রয়ে দরজাঘাটে তাল কুড়োনোর বেলা, ঘেটো রুই ধরার পালা, মাকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল। কিছুটা ডানা মেলে ওড়া,কিছুটা বাবার বাড়ির স্বাদ। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার মত মা নতুন পুকুর সাঁতরে এপাড় ওপাড় হত। শাড়ি পরে মায়ের সাঁতারকাটা দেখে কাকা আর পিসি অবাক হত। তারাও মায়ের পিঠে চেপে সাঁতার শিখত। কাকা আর পিসির মাতৃস্নেহের অভাব মা অনেকটা পূরণ করে দিয়েছিল। আমার মা তাদের মানুষ করে তুলেছেন সন্তানের আদরে। অভাবের ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তবু ঠাকুরদা হাসিমুখে মায়ের হাতের রান্না তৃপ্তি করে খেতেন। সকলকে খাওয়ানোর সময় মায়ের খেয়াল থাকত না নিজের খাওয়ার কথা। ঠাকুরদা বলতেন,তোমার ভাত কই?  মা হাসিমুখে জল খেয়ে দুপুরে মাটির দোতলা ঘরে বিশ্রাম নিত। এরকম কত রাত দিন যে কেটেছে তার ইয়ত্তা নেই। তবু হাসিমুখে মা আমার সংসারের সমস্ত কাজ সেরে বর্ষার উদ্দামতায় সাঁতরে পেরোতেন সংসার নদীর এপাড়, ওপাড়। 

    তারপর একদিন ঘোর অমাবস্যায় ঢেকে গেল মায়ের অন্তর কাকার মৃত্যুতে। পিসিও চলে গেলেন। বাবা চলে গেলেন। মা আর সাঁতার কাটেন না। তালপুকুরে তাল পচে যায়। ঘেটো রুই ঘাটে আসতে ভুলে যায়। না হেঁটে মায়ের পায়ের জোর কমে যায়। এখন ছেলেদের আশ্রয়ে তাঁর সংসার নদী পারাপারের একান্ত সাধনায় স্মৃতিগুলোই হাতিয়ার।
    সেই মা আমাকে কোনো কাজ করতে বললে না বলতে পারি না রে অসিম। অসিম বলে, হয়ত না বলতে পারব না রে।
    কুসুম হঠাৎ করে আঘাত দিতে চায় না অসিমকে।তাই আগেভাগে গল্প শোনায় জীবনের। অসিম যেন কিছু করে না বসে। সে যে তার আপনার জন। এতবড় আপনজন তার পৃথিবীতে নেই।
    অসিম বলে, বিয়ে হয়ে গেলে যোগাযোগ রাখবি তো।
    - নিশ্চয় রাখব। তোকে আমার সব দিয়ে বসে আছি। আমি তোর বাচ্চার মা হবো।
    - তাহলে তুই তো ঠগবাজ মেয়ে হয়ে যাবি। আমি তোকে এতটা নীচে নামতে দেব না।

    পাঁচ

    তারপর আবার ইউনিভার্সিটির রিডিং রুমে দুজন বসে আছে। খুব নিচু স্বরে অসিম কুসুমকে তার বাবার কথা বলে। অসিম বলে, তুমুল বৃষ্টির দিনে খোলা আকাশের নিচে চারকাঁধে চলেছে বাবার শবদেহ। বাবা চিরকাল রবীন্দ্রসংগীতের সুরে ভিজে যেতেন। প্রত্যেক বাইশে শ্রাবণে বাবা বাড়ির সামনের ফাঁকা মাঠে কবিসম্মেলনে বিশ্বকবির গলায় ভেজা চোখে মালা দিতেন। নিজে গান গাইতেন, "যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে"... । গান শুনে ভিজে যেত আমার চোখ।
    আজ বাবা চলেছেন চার কাঁধে শবদেহ হয়ে,ঠিক তার কবিগুরুর মত। বৃষ্টিভিজে বাবা মাথা দুলিয়ে শুনছেন  রবীন্দ্রনাথের গান। দূর থেকে মাইকে ভেসে আসছে রবিঠাকুরের গানের সুর, 
    "আমার ব্যথার পূজা হয় নি সমাপন"।

    কুসুম অসিমকে বলে, মেসোমশাই এর বয়স কত হয়েছিল রে।
    - সত্তর বছর
    - মরার বয়স নয়, আহা
    - ঠিক বলেছিস কুসুম।
    অসিম বলে, গ্রামের বাড়িতে আমাদের মাটির দোতলা বাড়ি ছিলো। সন্ধ্যাবেলা হলেই হ্যারিকেন নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেতাম দোতলার ঘরে।আমরা ভাই বোন একসাথে পড়ছি, এমন সময়ে কালোদার গলা শুনতে পেলাম। পড়ার থেকে গল্প হত আমাদের বেশি। বড়দা সবাইকে চুপ করতে বললো, কিসের চিৎকার হচ্ছে।  শুনলাম নিচে হৈ হট্টগোলে সবাই ছোটাছুটি করছে।কালোদা আমাদের বাড়ির লোকাল গার্জেন। তিনি নিচে থেকে বলছেন, ওপরে যারা আছো, কেউ নিচে নামবে না। বড়দা জিজ্ঞাসা করলো, কেন কালোদা? কালোদা জোরে চেঁচিয়ে বললেন, গোলার তলায় গুলবাঘ ঢুকেছে। সাবধান। ওরা মানুষের রক্ত খায়। বড়দা বললো, গুলবাঘ আবার কি? কালোদা বললো, বাঘের মত দেখতে। কিন্তু বাঘ নয়। সাইজে একটু ছোটো। ঠিক হায়েনার মত। ওরা খুব হিংস্র।

    কুসুম বলে অসিমকে, তারপর আগে যেটা বলছিলাম বাড়িতে সবাই আতঙ্কিত। কালোদা নিচে নামতে বারণ করছেন। সকলে ঘরে ঢুকে খিল দিয়ে বসে আছে। উঠোন একদম ফাঁকা। আমার বড়দার ভালো নাম দিলীপ। কিন্তু বড় শ্রদ্ধায় ডাকনাম আমরা দিয়েছি, বাহাদুর বিশু। বাহাদুর বিশু পরোপকারী, বুদ্ধিমান, দরদী এবং সাহসী যুবক। বিশুর কাহিনী আমার স্মৃতিকথা, সাদা পাতায় জীবনরেখা গল্পে বিস্তারিত বর্ণনায় পাবেন। যাই হোক  বিশু বললো, আর পারা যাচ্ছে না। গুলবাঘ গোলার তলায় ঢুকে আছে। বের হচ্ছে না। দেখি খুঁচিয়ে বের করি। এই বলে একটা গিঁট তোলা লাঠি নিয়ে নিচে নেমে এলো বিশু। একহাতে তিন ব্যাটারীর টর্চ আর এক হাতে লাঠি। সকলে চিৎকার করে উঠলো, যাস না হতভাগা। কিন্তু বিশু মনস্থির করে ফেলেছে। তার বুদ্ধিতে সে বুঝতে পারছে এটা ভয়ংকর কিছু নয়। কিন্তু বিশু লাঠি দিয়ে খোঁচা মারার সঙ্গে সঙ্গে গুলবাঘ বিশুর কাছে চলে এলো। সে দেখলো, একটা ভোঁতা মাথা। টর্চ রেখে বিশু মারলো চার লাঠি। কিন্তু একটাও গুলবাঘের শরীরে পড়লো না। জন্তুটা লাফিয়ে উঠছে তিন ফুট। তারপর বিশু মাথা ঠান্ডা করে অপেক্ষা করলো কিছুক্ষণ। সে দেখলো, জন্তুটা বসে আছে আর মাথাটা নাড়াচ্ছে। তিন ব্যাটরীর টর্চের আলোয় দেখলো বিশু, ওটা মাথা নয়। একটা ঘটি। জলেরঘটি। অই ঘটিতে চারটে ট্যাংরা মাছ বিশু ছিপে ধরে রেখে ভুলে গেছে বাড়িতে বলতে। বিশু ঘটিটা হাত দিয়ে ধরে টান মারতেই খুলে গেলো। একটা বিড়াল মাছ খেতে গিয়ে ঘটিতে মাথা আটকে যাওয়ায় এই বিপত্তি। বিশু লাঠি রেখে বিড়ালটাকে ধরে আদর করলো। সবাই বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। কালোদা বললো, শালা বিড়ালের লোভ আর যাবে না। মারো শালাকে। বিড়ালটা আদরে আব্দারে ডেকে উঠলো, ম্যাঁও।
    কুসুম গল্প শুনে জোরে হেসে ওঠে। রিডিং রুমের শিক্ষিকা মুখ তুলে বলেন, গেট আউট প্লিজ।
    রিডিং রুম থেকে বেরোতে বেরোতে দুজন দুজনকে কিস করে, অসিম, কুসুমের বুকে হাত দিয়ে বলে, কি করে এতবড় হলো রে।
    - তুই তো করেছিস। চ বাগানে বসি।
    বাগানে গাছের আড়ালে বসে ওরা টেপাটেপি করল, চুমু খেলো। কুসুম বলল, আমার বিয়ে হয়ে গেলে তোর খুব কষ্ট হবে, না রে।
    - তোর হবে না।
    - জানি না, যা।

    আট

    দুজনে বাইরে আসে। টিফিন খায়। তারপর বাস ধরে বাসায় ফেরে।
    পরের দিন তারা ভিক্টোরিয়ার মাঠে বসে। অসিম বলে তার মায়ের কথা। সে বলে,
    স্বামী চলে যাওয়ার পরে একদম একা হয়ে পরেছিলেন, আমার মা, কবিতা দেবী। তার হয়ত মনে পরতো ফুলশয্যা, আদর। তিনি বলতেন, কি করে যে একটা একটা করে রাত, দিন পার হয়ে যায়, বোঝাই যায় না। তবু বুঝতে হয়, মেনে নিতে হয়। অসিম বলে, একটা ঘুঘু পাখি তার স্বামী মরে যাওয়ার পর থেকেই এ বাড়িতে আসে। আম গাছের ডালে বসে আপন মনে কত কথা বলে। ঘুঘুর ঘু, ঘুঘুর ঘু। লোকে বলত, সবিতাদেবীর সঙ্গে পাখিটার খুব ভাব। তার মনে হয় স্বামী, ঘুঘুর রূপ ধরে আসেন। তিনি আম গাছের তলায় খুদকুড়ো ছিটিয়ে দেন। ঘুঘু পাখিটা খায় আর গলা তুলে কবিতাকে দেখে । কিছু বলতে চায়। তিনি বোঝেন। আর আপনমনেই পাখিটার সঙ্গে বকবক করেন। পুরোনো দিনের কথা বলেন। ছেলের বৌ বলে, বুড়িটা পাগলী হয়ে গেছে। প্রতিবেশীরা অতশত বোঝে না। হাসাহাসি করে। শুধু তার ছেলে বোঝে মায়ের অন্তরের কথা, ব্যথা। ঘুঘু পাখিটা সারাদিন ডেকে চলে। এবার আয়, এবার আয়। মায়ের বয়স হল আশি। 
    কুসুম বলল, তোর কবিভাব আমাকে পাগল করে। আয় তোকে আদর করি।
    তারপর দুজনে জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকল আকাশপানে চেয়ে।
    অসিম বলল, প্রথম প্রেমের পরিণতি বিচ্ছেদ, জানিস
    - হ্যাঁ জানি, তবে থেমে থাকবি না। একদিন ঠিক মিলন হবে।
    - কি জানি, তোকে আমি হারাতে চাই না কুসুম।

    নয়

    একদিন সবাই দেখলো, বুড়ি ফুলশয্যার রথে শ্মশানে গেলো বোধহয় স্বামীর কাছে। ঘুঘু পাখিটা ডেকে চলেছে তখনও,, ঘুঘুর ঘু...। 
    কুসুম বলে, তোর মা বাবা দুজনে এখনও একসাথেই আছেন। আমরাও মরার পর একসাথেই থাকব দেখিস। অসিম কুসুমের মুখ চেপে ধরে। সে বলে, ওকথা বলতে নেই। তোর বিয়ে হবে বিদেশে। তুই রাজরাণী হবি, দেখিস।
    অসিম বলে চলে, কিশোরবেলায় একটা রঙীন বাক্স ছিলাে জানিস পড়ার ঘরে। তার ভিতরে দুটি রবীন্দ্রনাথ একটা জীবনানন্দ আর কয়েকটা বাল্যকালের খেলনা ছিল। মন খারাপ হলেই পুরী থেকে আনা, নকশা কাটা পেন ও হলুদ কাশীরাম দাস বের করতাম বাক্স থেকে। তখনই প্রভাতী সূর্যের ভালবাসা দখল করত আমার মন। তারপর বন্যা এলো, মাটির বাড়ি ভেঙ্গে পড়ল। জীবনের তোয়াক্কা না করে আমি ভেসে যাওয়া বাক্স ধরার চেষ্টায় বিফল হলাম। ভেসে চলে গেলে আমার স্বপ্ন। বাবা আমার কান্না দেখে নতুন বাক্স কিনে দিলেন। তারপর বড় হলাম। চাকরি পেলাম। আরও নতুন বাক্স কিনলাম। কিন্তু হায় সেই প্রভাতী সূর্যের ভালোবাসা আর পেলাম না।
    কুসুম জড়িয়ে ধরে অসিমকে। সে বলে, কবি আমি তোকে ভালোবাসি রে।

    দশ 

    কুসুমের বিয়ে হয়ে গেলো বিদেশে। সে এখন টরেন্টোয় বরের সঙ্গে। নতুন সংসার। বেশ মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে কুসুম। বর বিরাট ধনী। রাতে তার সোহাগ উথলে ওঠে। কিন্তু কুসুমের মনের খবর কে রাখে?
    কুসুম ভাবে, বাবার বাড়িতে থেকে সে এম এ পাশ করেছে। অসিমের সঙ্গে যাতায়াত করত। কী সুন্দর ছিল দিনগুলো। তার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে বর বলে ওঠে, প্লিজ তারাতাড়ি খেতে দাও ডার্লিং। অফিস যেতে হবে। হাতে একদম সময় নেই। কুসুম বেশির ভাগ একা একা থাকে আর ভাবে পুরোনো দিনের কথা। তার মনে পড়ে, পাড়ার মধু মাসি ফুটপাতের এক কোণে কোনোরকমে থাকত। তার কোনো ছেলেমেয়ে নেই। একদিন ফুটপাতে কুড়িয়ে পেলো একটা শিশুকে। তাকে ভগবানের দান মনে করে মানুষ করতে লাগলো। তারপর মাসি আরও চারজন অনাথ শিশুর খোঁজ পেলো। মাসি ভিখারী হতে পারে কিন্তু তার পড়াশোনার যোগ্যতা, বুদ্ধি ভালোই ছিলো। শিক্ষিতা রুচিশীল মাসি কি করে ভিখারী হলো, সে ঘটনা পুরো বলতে গেলে ইতিহাস হয়ে যাবে। যাই হোক স্বাধীনচেতা মাসি স্বামীর ঘর ছেড়ে ফুটপাতে আশ্রয় নিয়েছিলো বাধ্য হয়ে। মাসি এবার পাঁচ শিশুকে নিয়ে সরকারী অফিসে হানা দিতে শুরু করলো। একদিন এক সরকারী আধিকারিক বললেন, মাসি আপনার কোনো পরিচিতি নেই। আপনার অনাথ আশ্রমের কোনো জমি নেই। কি করে আপনি অনাথ আশ্রয় গড়ে তুলবেন। আপনার অর্থবল, জনবল কিছুই নেই। মাসি বললো, কিন্তু আমার একটা জিনিস আছে, তা হলো ইচ্ছাশক্তি। আমি আশ্রম গড়ে তুলবোই। আপনি দেখে নেবেন। আমার সে মনবল আছে।

    এগারো

    পাঁচ শিশুকে নিয়ে মাসির পথ চলা শুরু হলো। তিনি ভিক্ষা করে অই শিশুদের পরিচর্যার ব্যবস্থা করলেন। পাঁচ শিশুকে দেখে একদিন অমরবাবুর মায়া হলো। তিনি মাসিকে বললেন, আপনার শিশুদের থাকার জন্য আমি ঘর তৈরি করে দেবো। আমি জায়গা দেবো। আমার যতটা সাহায্য করা প্রয়োজন আমি করবো। আইনের ঝামেলা আমি দেখাশোনা করবো।
    মাসি জোড় হাতে অমরবাবুকে নমস্কার জানালো। কেতুগ্রামের ফাঁকা জমিতে ঘর তৈরি হলো প্রথমে দুটি। তারপর শুরু হলো মাসির বিজয় যাত্রা। তারপর সমাজের বিভিন্ন  স্তরের মানুষের কাছ থেকে সাহায্য আসতে লাগলো। তৈরি হতে লাগলো আরও ঘর। বাউন্ডারি হলো। আর অনাথ শিশুর সংখ্যা বাড়তে থাকলো। প্রথমে শুকনো কাঠ কুড়িয়ে রান্না করা মাসি আজ গ্যাস ওভেনে রান্না করে নিজের শিশুদের জন্য। মাসিকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি। কিন্তু বাদ সাধলো আর এক বিপদ। একদিন আশ্রম থেকে তিনটি শিশু চুরি হয়ে গেলো। মাসি পাগলের মত খুঁজতে শুরু করলেন শিশুদের। এক রাখালের কাছে খবর পেলেন, এক পাষন্ড তিন শিশুকে হাত পা বেঁধে রেখেছে চিলেকোঠার ঘরে। রাখালকে নিয়ে মাসি থানায় গেলেন। পুলিশের সাহায্যে ধরা পড়লো বিরাট শিশু পাচারকারী দল। রাখাল অই মালিকের কাছেই কাজ করতো। তিনজন শিশুকে কাঁদতে দেখে রাখালের সন্দেহ হয়। তারপর মাসি জিজ্ঞেস করাতে সব ছবি পরিষ্কার হয়ে যায়। রাখালকে মাসি অনাথ আশ্রমের এক অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করলেন। 

    বারো 

    এইভাবে মাসি এলাকার মানুষের কাছে মা বলে পরিচিত হলেন। তিনি এবার আর একটি আশ্রম গড়ে তুললেন শালারে। এইভাবে মাসির পাঁচ পাঁচটা আশ্রম চলছে সুন্দর পরিবেশে মানুষের সহায়তায়।
    মনে পড়ে, একবার কুসুমের বাবা তাকে ঝালং বেড়াতে নিয়ে গেছিলেন।কাজের ফাঁকে নির্জনতা খোঁজেন মানুষ ।আর এই নির্জনতা খুঁজতেই তার ঝালং এর কথা মনে পড়ে। কুসুম বলল, অসিমদাদা চলো আমরা বেড়াতে যাই ঝালং এ।
    কুসুম বলে, আমি অসিমদাদার সঙ্গে ছায়ার মত থাকি তার পরিবারের একজন হয়ে। শিয়ালদহ থেকে ছাড়ছে, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস। রাত সাড়ে আটটায় ছেড়ে পরের দিন দুপুরে পৌঁছবে নিউ মাল জংশন। এখান থেকে ঝালং ৪৫ কিলোমিটার। গাড়ি রিজার্ভ করে আসতে হবে। হাজার দেড়েক টাকা ভাড়া পড়বে। এ ছাড়া, নিউ জলপাইগুড়িতে নেমেও আসা যায় ঝালং। নিউ জলপাইগুড়ি বা এনজিপি থেকে ঝালংয়ের দূরত্ব ১০৪ কিলোমিটার। ঝালংয়ে সবচেয়ে ভালো থাকার জায়গা হল পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের তাঁবু। নদীর ধারে পরপর কয়েকটি তাঁবু রয়েছে। যেন প্রকৃতির কোলে বসবাস। 
    অসিমদাদা বললেন, গরম অনেকটাই কমে গিয়েছে। বর্ষাও বাংলার দরজায় কড়া নাড়ছে। তাই বাঙালির ভ্রমণ পিপাসু মন আবার জেগে উঠেছে। এই বর্ষায় যদি ২ থেকে ৩ দিনের জন্য বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে আর আপনি যদি রোমাঞ্চ পছন্দ করেন, তা হলে ঘুরে আসুন ঝালং থেকে। শিলিগুড়ি থেকে ৯৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রাম।
    কুসুমকে নিয়ে অসিম গভীর বনে গেলো। সেখানে তাকে কোলের উপর বসিয়ে নানাভাবে আদর করল।

    তেরো

    অসিম জানে, শিলিগুড়ি থেকে ভুটান যাওয়ার পথেই আসে একটি গ্রাম। জলঢাকা নদীর ধারে অবস্থিত এই  অঞ্চলের সৌন্দর্য চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো। এই সরু নদীতে গিয়ে মিশেছে ঝোলুং-এর মতো বেশ কিছু ঝোরা। জলের টলটলে নীল জল দেখে স্বপ্নের জগতে পৌঁছে যাওয়া যায়। নদীর উপরের দোলনা ব্রিজ অ্যাডভেনচার প্রেমীদের জন্য আদর্শ। সুমনদা বই পড়ে জানলেন,যাঁরা ভিড় পছন্দ করেন না, তাঁরা অনায়াসে ঝালং গিয়ে নির্জনতা উপভোগ করতে পারেন। এখানে গাড়ি-হর্নের আওয়াজের কোনও চিহ্ন নেই। সারা দিন ধরেই ঝর্নার জলের শব্দ। বর্ষায় তার সঙ্গে বৃষ্টির আওয়াজ আর ঝিঁঝির শব্দ মিশলে পরিবেশটা আরও রোমাঞ্চকক হয়ে ওঠে এছাড়াও সবুজে ঘেরা পাহাড়ি গ্রামে রঙ বেরঙের কাঠের বাড়িগুলি দেখার মতো। সঙ্গে রয়েছে রাস্তার ধারে সার দেওয়া কমলালেবুর বাগান। বর্ষার সময়ে পুরো চিত্রটাই আরও রঙিন হয়ে ওঠে। রাতেও ঝালং-এর সৌন্দর্য দেখার মতো। রাতে জোনাকি যেন সৌন্দর্য আরও নিবিড় করে তোলে। আর একটু দূরে, ঝালং-এর কাছেই রয়েছে বিন্দু গ্রাম। এই পাহাড়ি গ্রাম নানা রকমের গাছ দিয়ে সাজানো। গ্রামে একটি বাঁধ রয়েছে, তার উপরে উঠলে ভুটানকে এক ঝলক দেখে নেওয়া যায়। চালসা থেকে কুমানি, গৈরিবাস হয়ে পথ গিয়েছে ঝালং-এ। কুসুম যখনই সুযোগ পায় বাবার চোখের আড়ালে অসিমকে চুমু খায়, আদর করে। অসিম সুযোগ পেলে তার সুডৌল স্তনে হাত দেয়, প্যান্টির ফাঁক দিয়ে আঙুল ঢুকিয়ে দেয়। কুসুম বলে, অসিম চিরদিন তুমি আমার হয়ে থেকো প্লিজ।

    চোদ্দ 

    ঝালংয়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে জলঢাকা নদী। বনবাংলোর পাশে ঝোলুং ঝোরা এঁকেবেঁকে গিয়ে মিশেছে জলঢাকা নদীতে। সামনে জলঢাকার ওপর ব্রিজ। ঝালং থেকে পাহাড়ি পথে ছোট্ট গ্রাম প্যারেন হয়ে ভুটান সীমান্তে ভারতের শেষ জনপদ বিন্দু। পথে পড়বে ঝালং-এ জলঢাকা হাইডেল পাওয়ার প্রজেক্ট, প্যারেনে রঙিন রঙিন কাঠের বাড়িঘর আর রাস্তার ধারে কমলালেবুর বাগান। ছবির মতো পাহাড়ি গ্রাম বিন্দু। রঙিন কাঠের বাড়ির জানলায়, বারান্দায় টব আলো করে রয়েছে ফায়ারবল, পিটুনিয়া, গ্ল্যাডিয়োলা আর অর্কিডের ফুল। বিন্দুতে জলঢাকা ব্যারেজের ওপারে ভুটান। বাঁধের ওপর পায়ে হেঁটে ওঠা যায়, ছবি তোলা নিষেধ। হেঁটে আসা যায় ওপারে ভুটানের চৌহদ্দি থেকেও। হাটবারে ভুটানের গ্রাম থেকে দলে দলে মানুষ আসেন বিন্দুতে বাজারহাট সারতে। প্রয়োজন মুছে দেয় রাজনৈতিক সীমারেখা। এখানে বিন্দু নদী জলঢাকায় মিশেছে। নদীর গা থেকে খাড়াই উঠে গেছে ভুটান পাহাড়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে বিন্দু থেকে হিমালয়ের বরফশৃঙ্গ দেখা যায়। বুধবারে ঝালং-এ আর বৃহস্পতিবারে বিন্দুতে হাট বসে। শিলিগুড়ি থেকে বিন্দুর দূরত্ব ১০৪ কিমি। ঝালং থেকে বিন্দু ১৩ কিমি। ঝালং থেকে দলগাঁও হয়ে রঙ্গো বেরিয়ে নেওয়া যায়। প্যারেন থেকে ঘুরে আসা যায় তোদে। তোদে গিয়ে কুসুম অসিমকে ওপরে উঠিয়ে সঙ্গমে রত হয়। রাতে একঘরে দুজনের বাসররাত হয়ে যায়।

    পনেরো

    কুসুম সপরিবারে অসিমকে নিয়ে ভ্রমণের কথা ভুলতে পারে না। কুসুম ও অসিম চালসা থেকে কুমানি, গৈরিবাস হয়ে পথ গিয়েছে ঝালং-এ,সেদিকে গেলো। বাবা, মা লজে আছেন। কুসুম দেকে ঝালংয়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে জলএই পর্যটন স্পটটি 99 কিলোমিটার দূরে শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি থেকে 77 কিমি। ঘন কাঠের বনভূমি এবং পটভূমিতে ভুটানের বিস্ময়কর পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত, ঝালং নিঃসন্দেহে প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য।

    দ্য পাহাড় স্টেশন কাছাকাছি অবস্থিত ইন্দো-ভুটান তীরে সীমানা জলdাকা নদী, পথে বিন্দু। জলধাকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উপর জলdাকা নদী এই অঞ্চলে একটি প্রধান আকর্ষণ। পাখি প্রেমীরা পার্বত্য পাখির পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় সংগ্রহ উপভোগ করতে পারেন জলের পাখি। আছে জলঢাকা নদী। বনবাংলোর পাশে ঝোলুং ঝোরা এঁকেবেঁকে গিয়ে মিশেছে জলঢাকা নদীতে। 
    অনেকক্ষণ ঘোরার পরে তারা জঙ্গলে ঢুকলো। ড্রিংক সেরে শুয়ে পড়ল ঘাসে। কুসুম জড়িয়ে ধরল অসিমকে। চুম্বনে সিক্ত হলো দুজনে। কেউ নেই। ওরা দুজনে বিবস্ত্র হলো। তারপর ডগি স্টাইলে মিলিত হলো দুজনে। অসিম বলে, তোমার স্বামীকে ঠোঁট আর অইটা কোনোদিন দিয়ো না। ও দুটো আমার। কুসুম বিয়ের পরে ভাবে, অসিমের কথা সত্যি হয়েছে। ওর স্বামী কোনোদিন ও দুটো নেবে না। কিন্তু অন্যজনের ক্ষেত্রে তো বাধা নেই।

    ১৬

    পরের দিন কুসুম দেখলো, সামনে জলঢাকার ওপর ব্রিজ। ঝালং থেকে পাহাড়ি পথে ছোট্ট গ্রাম প্যারেন হয়ে ভুটান সীমান্তে ভারতের শেষ জনপদ বিন্দু। পথে পড়বে ঝালং-এ জলঢাকা হাইডেল পাওয়ার প্রজেক্ট, প্যারেনে রঙিন রঙিন কাঠের বাড়িঘর আর রাস্তার ধারে কমলালেবুর বাগান। ছবির মতো পাহাড়ি গ্রাম বিন্দু। রঙিন কাঠের বাড়ির জানলায়, বারান্দায় টব আলো করে রয়েছে ফায়ারবল, পিটুনিয়া, গ্ল্যাডিয়োলা আর অর্কিডের ফুল। বিন্দুতে জলঢাকা ব্যারেজের ওপারে ভুটান। বাঁধের ওপর পায়ে হেঁটে ওঠা যায়, ছবি তোলা নিষেধ। হেঁটে আসা যায় ওপারে ভুটানের চৌহদ্দি থেকেও। হাটবারে ভুটানের গ্রাম থেকে দলে দলে মানুষ আসেন বিন্দুতে বাজারহাট সারতে। অসিম খাওয়াদাওয়ার পর একটা রুম একঘন্টার জন্য ভাড়া নিলো। দুজনে মিলিত হলো অভিজ্ঞ কায়দায়। আজ ওরা পরস্পরের অঙ্গ চুষে আনন্দ পেলো।তারপর বিপরীত ক্রিয়ায় মিলন করল কুড়ি মিনিট ধরে।
    ১৭

    অসিম জানে, প্রয়োজন মুছে দেয় রাজনৈতিক সীমারেখা। এখানে বিন্দু নদী জলঢাকায় মিশেছে। নদীর গা থেকে খাড়াই উঠে গেছে ভুটান পাহাড়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে বিন্দু থেকে হিমালয়ের বরফশৃঙ্গ দেখা যায়। বুধবারে ঝালং-এ আর বৃহস্পতিবারে বিন্দুতে হাট বসে। শিলিগুড়ি থেকে বিন্দুর দূরত্ব ১০৪ কিমি। ঝালং থেকে বিন্দু ১৩ কিমি। ঝালং থেকে দলগাঁও হয়ে রঙ্গো বেরিয়ে নেওয়া যায়। প্যারেন থেকে ঘুরে আসা যায় তোদে।
    কুসুম ভাবে, কয়েকদিন ওখানে কাটিয়ে আমরা ফিরে আসি। কিন্তু ঝালং এর প্রকৃতির শোভা মানসপটে ভেসে ওঠে বারেবারে। আর ভেসে ওঠে অসিমের কামুক মুখের ছবি। কুসুম অসিমকে নিয়ে আবার জঙ্গলে যায়। সে জানে এবার ফিরে গিয়ে তার বিয়ে হয়ে যাবে অনেক দূরে। আর সে অসিমকে পাবে না। তাই অসিমকে ইচ্ছেমত জড়িয়ে ধরে আর তার সর্বস্ব দেয় অকাতরে। কারণ সে অসিমকে বালোবাসে। কিন্তু অসিম এখন বেকার, গরীব। তাই তার সঙ্গে বিয়ে হবার কোনো প্রশ্নই নেই। অসিম, কুসুমের বাবাকে চেনে। তিনি জানলে, কুসুমকে অসিমের সঙ্গে মিশতে দেবেন না। তাই দুজনে বুঝেসুঝে প্রেম করে আর বারবার মিলিত হয় নতুন ছন্দে।
    ১৮
    কুসুমের স্বামী পঞ্চাশ কোটি টাকা রেখে হঠাৎ হার্ট আ্যাটাকে মরে গেলো। কথায় বলে, শয়তানের সাতদিন। কুসুম আর রিভেঞ্জ এর কথা চিন্তা করে না। শিল্পীকে আর দেহদান করে না। সে বাড়ি আসা ছেড়ে দিয়েছে। কুসুম একটা কাজ জুটিয়ে নিয়েছে। 

    ১৯
    এখন কুসুম কোনোরকমে অসিমকে খবরটা জানাতে চায়। অসিম কিছু চায় না। অজান্তেই সবকিছু হয়ে যায়। এখন কুসুমের তাকেই প্রয়োজন। কুসুম এখন ভালো আছে। রাতে আর তাকে অত্যাচার সহ্য করতে হয় না। একা থাকে, রবীন্দ্র সংগীত গায়, "আমারো পরাণ যাহা চায়,তুমি তাই গো"। 

    ২০

    কুসুম ভাবে, গ্রামের মেয়েবেলার কথা। দূর থেকে ভেসে আসত ভাদুগানের সুর। ছুটে গিয়ে দেখতাম জ্যোৎস্না রঙের শাড়ি জড়ানো  বালিকা ভাদু বসে আছে। আর একটি পুরুষ মেয়ের সাজে ঘুরে ঘুরে কোমর নাচিয়ে গান করছে, "ভাদু আমার ছোটো ছেলে কাপড় পরতে জানে না"। অবাক হয়ে গিলে যায় এই নাচের দৃশ্য অসংখ্য অপু দুর্গার বিস্মিত চোখ। ঝাপানের সময় ঝাঁপি থেকে ফণা তোলা সাপ নাচিয়ে যায় চিরকালের চেনা সুরে ঝাপান দাদা। ঝাপান দাদা ঝাপান এলেই গান ধরতো, "আলে আলে যায় রে কেলে, জলকে করে ঘোলা। কি ক্ষণে কালিনাগ বাসরেতে ঢোকে রে, লখিন্দরের বিধি হলো বাম"। গ্রামের পুরোনো পুজোবাড়ি গাজনের সময় নতুন সাজে সজ্জিত হতো। বাবা শিবের ভক্তরা ভক্তি ভরে মাথায় করে নিয়ে গিয়ে দোল পুজো বাড়িতে নামাতেন। অসংখ্য লোকের নতুন জামা কাপড়ের গন্ধে মৌ মৌ করে উঠতো সারা বাড়ি। তারপর পুজো হওয়ার পরে দোল চলে যেতো উদ্ধারণপুরের গঙ্গা য় স্নানের উদ্দেশ্যে। কিন্তু আমার মন ফাঁকা হয়ে একা হয়ে পড়তো। এই তো কিছুক্ষণ আগেই ছিলো আনন্দ ঘ্রাণ। তবু দোল চলে গেলেই মন খারাপের দল পালা করে শুনিয়ে যেতো অন্যমনস্ক কবির ট্রাম চাপা পড়ার করুণ কাহিনী। ঠিক এই সময়ে কানে ভাসতো অভুক্ত জনের কান্নার সুর। আমি নিজেকে প্রশ্ন করেছি বারংবার, সকলের অনুভূতি কি আমার মতো হয় ?

    ২১

    কুসুমের বান্ধবী কবিতা দেবি, পাশের গ্রামের মেয়ে। তিনি তার স্বামীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেন। ভাবুক হয়ে তিনি বলেন, তারপর শরতে কাশ ফুলের কারসাজি। তার মাথা দোলানো দেখে আমি দুর্গা পুজোর ঢাকী হয়ে যাই। আমার অন্তর নাচতে থাকে তালে তালে। মা তুই আসবি কবে আর, নতুন জামায় নাচে মন সবার। নদী এরপরে হেমন্তের  বুকে ছবি এঁকে এগিয়ে যায় শীত ঋতুর আহ্বানে। লোটা কম্বল বগলে আমি রাজস্থানী সাজি। কখনও ধূতি পাঞ্জাবি পরিহিত শাল জড়ানো খাঁটি বাঙালি। মাঝে মাঝে কোট প্যান্ট পরিহিত বিদেশী সাহেবের সুন্দর সাজ। আমি সারা পৃথিবীর সাজে সজ্জিত হতে চাই শীতের আদরে। শীতল আড়মোড়া ভাঙতেই বসন্তের বাসন্তী রঙের তালে তালে আমি রঙের ফেরিওয়ালা হয়ে যাই। সকলের অন্তরের গোপন রঙ ছড়িয়ে দেয় প্রকৃতি। এই সময়ে আমার রাধাভাব ছড়িয়ে পড়ে স্বচ্ছ অজয়ের মদনমোহনের রূপে। আমার সমস্ত শরীর মন ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মনোদেবতার মহান চরণে ...।

    ২২

    কুসুম বলে গ্রামের বাড়িতে, শিল্পী একমাটি, দুমাটি করে শেষে চোখ আঁকতেন পর্দার আড়ালে। আগে থেকে চোখ দেখতে নেই। আর আমার চোখ দেখার জন্য চাতুর্যের সীমা থাকতো না।পাঠক মশাইয়ের ফাই ফরমাশ খেটে সবার অলক্ষ্যে চোখ দেখে নিতাম একবার। সেই চোখ আজও আমার মনে এঁকে যায় জলছবি। কি যেন বলেছিলো সেই চোখ। আশ্বিন এলেই আমি প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখে বেড়াই মায়ের চোখ দেখার বাসনায়। ছোটোবেলার দেখা চোখ কোথায় কোন গভীর জলে ডুব দিয়েছে কে জানে। দরজাঘাট পুকুরের সবুজ সর সরিয়ে পানকৌড়ি ডুব দিয়ে খুঁজে চলে আজও আমার মায়ের চোখ। হাঁসগুলিও আমাকে সান্ত্বনা জুগিয়ে চলে জলে ডুবে ডুবে। হয়তো আমার জন্যই ওরা অভয় নাচ দেখিয়ে চলে মনদেবতার ঈশারায়।

    ২৩

    কুসুম ও অসিম মাঠে বসে ভাবত,  কাশের কুঁড়ি রসদ মজুদ করছে ফোটা ফুলের সৌরভ বিতরণের। এরপরেই শুরু আনন্দে মাথা দোলানোর উৎসব। মননদীর গভীরে প্রোথিত তার আগমনী সংগীত। হাত নেড়ে বলছে, আসছে আসছে। দেবী কাশ রঙের সংকেতে তাঁর আগমনী বার্তা পাঠান যুগ যুগ ধরে। আমাদের শোভন কাকা কাশ ফুল দেখলেই কারণে অকারণে গলা ছেড়ে গান গাইতেন। সেই মধুর সুরেই শোভন কাকা কাশ ফুলের শোভা বাড়িয়ে সকলের মনের সংকীর্ণ বেড়া ভেঙ্গে দিতেন। আমরা সকলেই প্রিয়জন মরে গেলে দুঃখ পাই। কিন্তু নিজের মরণ বুঝতে পারলেও দুঃখ প্রকাশের সুযোগ পাই কি? সেই শোভন কাকা গানে গানে কিন্তু নিজের মরণের আগেই পরিণতির কথা শোনাতেন। অঘোষিত উঁচু পর্বে নাম খোদাই হয়ে গিয়েছিলো তার। মৃৎশিল্পেও তার দক্ষতা ছিলো দেখার মতো। প্রতিমা তৈরির দায়িত্ব তার উপরেই দিয়ে নিশ্চিন্ত হতো পূজা কমিটি। শোভন কাকা এলেই আমাদের পুজোর গন্ধ গ্রাম জুড়ে গানের সুরের সঙ্গে ভেসে বেড়াতো। তিনি ছিলেন প্রাণজুড়ানো শান্ত পালক নরম আনন্দের ফেরিওয়ালা। তিনি মাটি হাতে মায়ের সঙ্গে মন মাতানো মন্দাক্রান্তা গাইতেন। তার চলন বলন দেখে ভালোবেসে তাকে শোভনানন্দ বলতেন তথাকথিত গুরুবৃন্দ। 

    ২৪

    কুসুম ভাবে, আমি ও অসিম এই গ্রামে ভালোবাসার বয়সটা কাটিয়েছি তার কথা আজ মনে সবুজ সর ফেলছে। শুধু মনে পড়ছে,আমার স্বপ্নের সুন্দর গ্রামের রাস্তা বাস থেকে নেমেই লাল মোড়াম দিয়ে শুরু।দুদিকে বড় বড় ইউক্যালিপ্টাস রাস্তায় পরম আদরে ছায়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে। কত রকমের পাখি স্বাগত জানাচ্ছে পথিককে। রাস্তা পারাপারে ব্যস্ত বেজি, শেয়াল আরও অনেক রকমের জীবজন্তু।.চেনা আত্মীয় র মতো অতিথির কাছাকাছি তাদের আনাগোনা। হাঁটতে হাঁটতে এসে যাবে কদতলার মাঠ। তারপর গোকুল পুকুরের জমি, চাঁপপুকুর, সর্দার পাড়া,বেনেপুকুর। ক্রমশ চলে আসবে নতুন পুকুর, ডেঙাপাড়া,পুজোবাড়ি, দরজা ঘাট, কালী তলা। এখানেই আমার চোদ্দপুরুষের ভিটে। তারপর ষষ্টিতলা,মঙ্গল চন্ডীর উঠোন, দুর্গা তলার নাটমন্দির। এদিকে গোপালের মন্দির, মহেন্দ্র বিদ্যাপীঠ, তামালের দোকান, সুব্রতর দোকান পেরিয়ে ষষ্ঠী গোরে, রাধা মাধবতলা। গোস্বামী বাড়ি পেরিয়ে মন্ডপতলা। এই মন্ডপতলায় ছোটোবেলায় গাজনের সময় রাক্ষস দেখে ভয় পেয়েছিলাম। সেইসব হারিয়ে যাওয়া রাক্ষস আর ফিরে আসবে না।কেঁয়াপুকুর,কেষ্টপুকুরের পাড়। তারপর বাজারে পাড়া,শিব তলা,পেরিয়ে নাপিত পাড়া। এখন  নাপিত পাড়াগুলো সেলুনে চলে গেছে। সাতন জেঠু দুপায়ের ফাঁকে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরতেন মাথা,তারপর চুল বাটি ছাঁটে ফাঁকা। কত আদর আর আব্দারে ভরা থাকতো চুল কাটার বেলা।এখন সব কিছুই যান্ত্রিক। মাঝে মাঝে কিছু কমবয়সী ছেলেমেয়েকে রোবোট মনে হয়। মুখে হাসি নেই। বেশ জেঠু জেঠু ভাব।সর্বশেষে বড়পুকুর পেরিয়ে পাকা রাস্তা ধরে ভুলকুড়ি। আর মন্ডপতলার পর রাস্তা চলে গেছে খাঁ পাড়া, কাঁদরের ধার ধরে রায়পাড়া। সেখানেও আছে চন্ডীমন্ডপতলা, কলা বা গান, দুর্গা তলার নাটমন্দির সব কিছুই। পুজোবাড়িতে গোলা পায়রা দেখতে গেলে হাততালি দিই।শয়ে শয়ে দেশি পায়রার দল উড়ে এসে উৎসব লাগিয়ে দেয়। পুরোনো দিনের বাড়িগুলি এই গ্রামের প্রাণ।এই গ্রামে ই আমার সবকিছু, আমার ভালোবাসা, আমার গান।

    ২৫

    কুসুম প্রবাসী বাঙালি। তাই তার মনে এত স্মৃতি জেগে ওঠে।প্রবাসি হলে বোঝা যায় নিজের বাবা,মা আর গ্রামের আকর্ষণ কত তীব্র হতে পারে। যারা কোনোদিন বাইরে পা রাখে নি তারা একথা বুঝতে পারবেন না। "সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর,পাঠশালা পলায়ন" সব স্মৃতি যেনো হৃদয় ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে লাভার মত।সেই আবেগ আটকানো সহজ কথা নয়।            

    ২৬

    কুসুম জানে, অসিম আমার বিয়ের পাঁচবছর পরেও বিয়ে করে নি। কুসুম ভাবে, এবার বাবার বাড়ি গেলেই অসিমদাকে বিয়ে করতে বলব আমার চেনা এক মেয়ের সঙ্গে। কথাটা বলব আমি নিজে।
    অসিম এম টেক পাশ করে, কম্পিউটার কোর্স শেষ করে। চাকরি পেয়ে যায় আই টি সি কোম্পানিতে। বেতন বছরে পঁচিশ লক্ষ টাকা।
    আই টি সি  কোম্পানি তাকে কাজের জন্য টরেন্টো পাঠিয়েছে। কুসুমের বিয়ে হয়েছে এখানে। তাই ভালো লাগছে তার।
    অসিম ভাবে, যদি হঠাৎ করে কোনোদিন কুসুমের সঙ্গে দেখা হয় তাহলে খুব ভালো হয়। নিশ্চয় হবে একদিন যদি তাদের ভালোবাসা সত্যি হয়।
    কুসুম এদিকে বরের বন্ধুর সঙ্গে আর সাহেবের সঙ্গে  সুখে আছে। সে ভাবে, অসিম আর যোগাযোগ রাখতে পারে না কাজের চাপে,যদি কোনোদিন অসিমের দেখা পাই, কথা বলব অনেকক্ষণ। কিন্তু তার বরের বন্ধু কি  পারমিশন দেবে? নিশ্চয় দেবে না। এক্স বয়ফ্রেন্ডকে সকলে  ভয় পায়। যতই আড়াল করে রাখা থাক, চোখাচুখি রোখা যাবে না। যে গরু গু খায় সে তার স্বাদ ভুলতে পারে না।
    কুসুম মরিয়া হয়ে, তার ভবিষ্যত ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেয়।

    সময় এগিয়ে যায় শূণ্যপুরের দিকে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sumit Roy | ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ০০:৫৮526162
  • পড়লাম, ভালোই লাগলো। স্টাইলটা বেশ ইউনিক লেগেছে, মানে ঘন ঘন ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরিতে ঢুকে যাওয়া আর তার গভীর বর্ণনা দেবার ব্যাপারটা। এটা গল্পের ন্যারেটিভ কমপ্লেক্সিটি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ন্যারেটিভ স্টাইলটাও বেশ নন-লিনিয়ার, যা থিমগুলোর ও ক্যারেক্টারগুলোর মাল্টিলেয়ার্ড এক্সপ্লোরেশনের সুযোগ করে দেয়।  গল্পে ইমেজারি ও সিম্বোলিজমও অনেক। প্রকৃতি, ঋতু, রুরাল ল্যান্ডস্কেইপ এর বিষদ বর্ণনা, বেশ কিছু সিম্বোলিজমও পেলাম মনে হলো। খুব কম কথার মধ্যে ইমোশনাল ডেপ্থও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে এদের স্ট্রাগল, ডিজায়ার, ডিলেমার মধ্যে দিয়ে। আর প্লটের নেচারটা গ্লোবাল না হয়ে অনেকটাই লোকাল, শুধু লোকাল কাস্টম, লোকাল ফেস্টিভ্যাল এর জন্য না, সোশ্যাল নর্ম, সোশ্যাল ভেল্যুগুলোও লোকাল, যেমন অসীমের,  যার মাধ্যমে এই  লেখা অনেক বেশি করে কালচারাল কন্টেক্স্ট পেয়েছে। এখন থেকে সোসাইটাল ইস্যুগুলোর অসাধারণ রিফ্লেকশন পেয়েছি। ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট অসাধারণ ছিল, ইন্টারনাল ও এক্সট্রারনাল উভয় দিক দিয়ে তাদের জার্নিটা বোঝা যায়। আমি সাহিত্য খুবই কম পড়ি, তাই আমার জাজমেন্ট খুব একটা ভাল হবার কথাও না, কিন্তু বেশ এনজয় করেছি এটুকু বলতে পারি। 
  • Sudip Ghoshal | ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৯526173
  • ভাল লাগল মতামত পড়ে।এক গভীর উপলব্ধির কথা, মনকাড়া বক্তব্য, বিস্মিত করেছে।খুব ভাল থাকবেন ভাই। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন