১আমাদের প্রত্যেকের ভেতর এক কবিতার রান্নাঘর...হসন্ত, ঙ ও চন্দ্রবিন্দু - যা দাঁড়ি ও কমার সাথে মিশে পাঁচফোঁড়ন হয় ও এক এক বাটি কবিতার লাইনে যারা চুড়ান্ত খেল দেখায়...আবার তেল ও বনস্পতি ভাবনারা - নুন ও হলুদের সাথে মিশে তৈরী করে ফেলে এক অভিনব রেসিপি...কখনও তা স্টার্টার...কখনও মেইন কোর্স। এইসব খানায় “খাজানা” খুঁজতে এসে, প্রায়শই পাঠক ভাবেন...এনাদের মশলাগুলো ঠিক কোথা থেকে কেনা? সঞ্জয়দার দোকানেও এক সময় সব মশলা পাওয়া যেত, কিন্তু তখন আমার কবিতা আসত না...সেই আক্ষেপে আজও রান্নাঘরের মশলাবাটি খুলে খুলে দেখি ও ভাবি – কবিতার রান্নায় ঠিক কাকে “গুরু” করা যাবে...এতে দালচীনি ফিকিফিকি হাসে...এলাচ গন্ধ ছড়িয়েও মুখ ফোলায়...আর আমি রাধুঁনী সাজতে গিয়ে ... ...
১ লিস্টটা দুটো নাগাদ টাঙানো হবে অফিস থেকে এমনটাই জানাল। পলি ঘড়িতে দেখল, প্রায় দেড় ঘন্টা বাকি। কিন্তু বাড়ি গিয়ে ফেরত আসতে সময়ে কুলোবে না। রিসেপশন থেকে জানতে পারল বেসমেন্টে ওদের একটা ক্যান্টিন আছে। তাহলে ওখানেই বসা যাক।ঝাঁ চকচকে এই অফিসটায় চাকরির আবেদনটা তপনই এনে দিয়েছিল।- এটা তোর জন্য খুব ভালো ... ...
বাচ্চারা অল্প বড় হতেই যখন বুলি ফুটতে শুরু করে মা বাবারা একভাবে তাকিয়ে শুনতে চায় ওর প্রথম বলা শব্দটা...কোন কোন বাচ্চা শুরুতেই কাঁদতে কাঁদতে ‘মা’ বলে ফেলে...কেউ আম্মা...তবে কঙ্কাবতীর ছেলে চেঁচিয়ে উঠল ‘খানসামা’ বলে...!অল্প পড়াশুনা জানা কঙ্কাবতী প্রথমে ওটার মানে বোঝেনি, তবে কানে শব্দটা বার কয়েক গেলে জিজ্ঞেস করেই বসল হাবুলকে...ছেলে এসব কী বলে গো...খানসামা...?এ কোন ভাষা? হাবুলও ধমক দেয়। ও সব তোমার ধারা পাবে ... ...
তখন সবে স্কুলের বন্দী দশা কাটিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছি। আর তাঁরও আবির্ভাব হলো তখনই। হ্যাঁ, এক জোড়া নীল হাওয়াই চপ্পলের সেই মানুষটাতেই চলছিল একতরফা মন কেমনের গল্প।এই লম্বা সে চেহারায়, জুতোর সাইজ পাক্কা নয়। ওপর তলার জানালা দিয়ে এমনটাই ভাবতাম। আমাদের চোখাচোখি হত খুব কম, শুধু পাশ কাটিয়ে সরে যাওয়া টের পেতাম। টের পেতাম, জানালার কাছ ঘেষে তাঁর নিশ্চুপে এগিয়ে যাওয়া।একটা মস্ত সুবিধা ছিল। সে বাড়িতে ঢুকতে তাকে পেরোতেই হত আমার জানালা। বুকের মধ্যে চলত তখন ভীতু চড়াইয়ের ছটফটানি। ও বাড়ির ছোট বড় অনুষ্ঠানে এ বাড়ির নিমন্ত্রণ থাকত। প্লেট হাতে আমি ও সে অনেকবার একসাথে হয়েছি। তবে কথা হয়নি...তারপর হুড়মুড়িয়ে ... ...
বেশ ক বছর পর এলো শিউলি... শেষ সেবার স্পাইসজেটের লাল পাখায় দীপ্তর এই “আই লাভ ইউ” সহসা উড়ে গেল, পিছুও দেখলনা...দীপ্তর হলুদ ডায়রিতে তখন শুকনো গোলাপ...পেস্তা রঙা পাঞ্জাবিটা আরো ফিকে...বিগত কত বইমেলায় তাই সে একাই পা দুলিয়ে গেছে ডটকমের টেবিলে...এর মাঝে কত রিনি-ঝিনি ! অথচ আওয়াজ তুলল না কেউই...শিউলি একবার বলেছিল, যোগাযোগটা ভার্চূয়াল হলেও সম্পর্ক রিয়েল করে নেব... সে আশায় দীপ্তর তিরিশ - বত্রিশ হু হু করে চলে গেল... কিন্তু সব গল্পের শেষ তো আর এক হয় না...দীপ্তর এখন একগাল দাড়ি, ভাবে কবি হতে এটুকুই যথেষ্ট...! শিউলিরও এমনটাই মনে হত...তাই ওর গোটা রাত জেগে লেখা পঙ্তিগুলোতে কখনও হাত বোলায়নি সে... যদিও এখন সেগুলির ... ...
বইমেলাতে পরিচয়। সেদিন অনিমেষ ওর সদ্য বেরোনো বইয়ের পাতাগুলো উলটে পালটে দেখছিল, কাউন্টারে তখনই হইচই...- কালকেও ঘুরে গেলাম, নেই বললেন। আজও না? মানিকদা নরম সুরে বোঝাতে চাইলেন, দেখুন শর্টেজ হয়ে গেছে। যে কটা কপি এনেছিলাম গত পরশু অবধি শেষ। আপনি কাল আসুন। একটা ম্যানেজ করে রাখব।- আচ্ছা, কাল কিন্তু।- হ্যাঁ হ্যাঁ। ঠিক পাবেন। মেয়েটাকে বেরোতে দেখে অনিমেষ ডাকল। - শুনছেন, এটা খুঁজছিলেন? যে বইটা তন্ন তন্ন করে গত দুদিন...আজ অন্য হাতে পেয়ে ছিনিয়ে নিতে মন চাইলেও পারল না শ্রীপর্না।- কিন্তু এটা আপনি পেলেন কোত্থেকে? এই যে বলল, একটাও কপি নেই।- না। মানে আমার কাছে আগে থেকেই ছিল।- আগে থেকে মানে? আমি কালও এসেছি...- আচ্ছা। ... ...
মেরিন বীচে আজ একটুও খালি নেই…ছাতা সব নীচু হয়ে আছে। জয়ি ও দীপও এখানে এসেছে অনেক বছর পর...- চলো, ওইখানটায় বসি...সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি...এখন খুব জোর হয়ে এলো...- কি করে এলে? - কেন? রাস্তা তো সেই আছে। জায়গা চিনতে ভুল হয়না আমার। একটা ঝালমুড়িওয়ালা তখন চপচপ ভিজে এগোচ্ছিল। জয়ি ডাক দিল। তারপর তাকে দাঁড় করিয়ে,- ভাইয়া, দো বনাও...এক বহত তিখা অর এক বিনা প্যাঁয়াজ কা...- এখনও মনে আছে জয়ি?- থাকবেনা আবার! নাক চোখ লাল করে সেদিনটা ভুলি কি করে!পাশাপাশি বসতে গিয়ে একটা সাদা চুলে টান পড়ল দীপের...- যাহ্ ওটা বোধহয় ফস্কে গেছে জয়ি। বাকি পুরো মাথা কালো করা আছে... জয়ি হাসল। বৃষ্টি তখন ... ...
১অ বিমু, বিমু ... বিম্মু রাআআনী....চট করে ভেঙে গেল ঘুমটা। স্বরটা কেমন চেনা চেনা ঠেকল। এ নামে বিমলাকে শুধু দু জন ডাকত। ঘাড় ঘুরিয়ে জানালার দিকে তাকালো বিমলা। পর্দাটা তখনও এলোপাথারি উড়ছে।আবারও ঘুমের ঘোরে ভুলভাল বকছে ভেবে চোখ বন্ধ করল। এবার মনে হলো ফ্যানের ওপর কেউ পা ঝুলিয়ে বসে। ঘচাং করে বিছানায় উঠে বসল। মোবাইলের আলো ফেলল ওপরে। দেখল, ব্লেড তিনটে ঘটঘট আওয়াজ করতে করতে বন্ধ হয়ে গেল। সেই সময় যত রাগ গেল আগরওয়ালের ওপর। নির্ঘাত লোকটা লাইট ফ্যানের একটা কাজও করেনি। পই পই করে বলেছিলাম, সব সার্ভিসিং করিয়ে তবে বাড়িটা দেবেন। টেবিলে রাখা গ্লাস থেকে কিছুটা জল খেয়ে বাইরে এসে ... ...
প্রশ্নগুলো ভাঙা স্লেটটি জুড়তে পারো? আঁকতে পারো মনের ভাষা?গাইতে পারো চিল্লিয়ে খুব, “মোদের গরব মোদের আশা”?লাটাই ঘুড়ির দৌঁড়বাজি আর, যেমন খুশি লিখতে পারো?নাচতে পারো তা ধিন ধিনা, সঙ্গে লারে-লাপ্পা আরোসইতে পারো বিষাদ নামক, জুজুবুড়ির নিত্য আসাকঠিন হাতে বিদায় তাকে, যাচ্ছেতাই টা করতে পারো?সমস্ত ‘না’ পারার মাঝে, ধৈর্য্যটুকু রাখতে পারো?এই অবেলায় সব সয়ে যায়, এমন খানা বলতে পারো?সব কটাতে ‘হ্যাঁ হ্যাঁ’ হলে, এ দিক পানে আসতে পারোজিলিপিদের ভোজ পেলেটে, আরেকখানি জুড়তে পারোহাসতে পারো কাতুকুতু বুড়োর মত, ফোকলা দাঁতেসাথে চানা হরা মটর, কটর কটর দোস্তো সাথেযা হোক এসব ভুজুর ভুজুর, লাইন বাড়াতে লেগেছে ঘোরযেমন আছ, তেমনি থেক – প্রশ্নগুলো?? ইগ্নোর ইগ্নোর – ঝর্না বিশ্বাস ... ...
আজ পটেশ্বরী যখন ঝিমোচ্ছিল তখন আচমকা ওর মস্তিষ্কে ঢুকে গেল গল্পের অতি ক্ষুদ্র ছানারা...ঢুকেই তাদের দৌরাত্ম শুরু...একেকটা একেক দিকে লাফাচ্ছে। সামলাতে গিয়ে পটেশ্বরীর হাল, নাজেহাল। ওরা প্রত্যেকে কিছু বলতে চায়। কিন্তু আলাদা করে শোনার মত সময় ও ধৈর্য্য কোনটাই দেয় না পটেশ্বরী...রাগে অভিমানে ওরা মুখ ফুলিয়ে থিতিয়ে যায় ভেতরেই... তখন ওদেরই এক পুঁচকে ফস্কে গিয়ে লিখিয়ে নেয় কিছুটা...সেটাই নিয়ে এলো পটেশ্বরী...“অথ পটেশ্বরী কথা”১গল্পটা যখন শুরু হচ্ছে, পটেশ্বরীর ক্লাস নাইন...সেভেন - এইটের সমস্ত খারাপ লাগা মিটিয়ে ভালো হবার প্রচেষ্টায় ও এখন একটু গল্প টল্প পড়ে...পড়ে কটা কবিতাও...আনন্দবাজার তখন ছাপত মন কেমনের কাহিনী...আর ওর কেবলই মনে পড়ে যেত সদ্য আলাপ হওয়া ছেলেটিকে...যাক, ... ...