মৃত্যু মিছিল। এবারে বড় কাছে, বড় ঘনিষ্ঠ। এমন কেউ যার সঙ্গে স্কুলে এক্কা দোক্কা খেলেছি। কলেজে আড্ডা মেরেছি, অফিসের অবসরে লাঞ্চ খেয়েছি, সন্ধ্যায় এক কাপ কফি নিয়ে তুমুল তর্ক বিতর্ক করেছি। শৈশবে স্নেহ কেড়েছি। তারা এমন চলে গেল, যেন এত সহজে চাইলেই যাওয়া যায়! যেন পর্দা তুলে এ ঘর থেকে ওঘর যাওয়া। অথচ এরপর হাজার লক্ষ বার চাইলেও সেই পর্দা তুলে আর কখনও এ ঘরে ফিরে আসা যাবে না। পূর্ণচ্ছেদ। অসুখ? এমন অসুখ হয়? নিঃশ্বাস না নিতে পেরে অতল জলের তলায় ডূবতে ডুবতে , শেষ সময়ে আপনজনের চোখে জল না দেখে, পৃথিবীতে ভালবাসা যে এখনও বেঁচে আছে এই বিশ্বাসটুকু সঙ্গে ... ...
আচ্ছা আমরা কি একটু রাস্তা পেতে পারি না, রাস্তার ওপর কোন হক নেই আমাদের? জানি রাস্তা কারো একার নয়, জানি কেউ কারোকে রাস্তা ছেড়ে দেয় না । অথচ যখন এ অঞ্চলের সবেধন নীলমণি একমাত্র রোগাভোগা রাস্তাটা বালি সুড়কি লোহার ছড় ইত্যাদি নির্মাণ সামগ্রীতে দুই তৃতীয়াংশ ঢেকে যায়, দৈত্য দানবের মত ট্রাকগুলো আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে রাস্তায় পেটের ময়লা খালি করে, হাজার হর্ণ দেওয়া সত্ত্বেও একটু অবজ্ঞার দৃষ্টিতে চাওয়া ছাড়া তেমন পাত্তা দেয় না , তখন মনে হয় রাস্তা প্রোমোটারের, আমার নয়। আজকাল কিছু লিখতে ভয় করে এই বুঝি ট্রোলিং শুরু হল। তাই বলি, গাড়ি থাকলেই সিনেমার ভিলেন বা ভ্যাম্প - সেই ... ...
মা ভাবেন লোকে মেয়েকে তাঁর আদর করে লক্ষী বলে, সরস্বতী বলে না কেন? লক্ষীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ধন, শ্রী, সম্পদ এবং সবার ওপর ঘরকন্নার চাবিকাঠিটি। সুগৃহিণী হওয়ার আশীর্বাদ। লক্ষীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সঞ্চয়, ধানের ছড়া, খড়ের আঁটি, ঝাঁপিতে এক মুঠো চাল, সিঁদূর মাখানো একটি দুটি টাকা – অসময়ের ভরসা। লক্ষী হলেন নারায়ণের সহধর্মিণী, তাঁকে নিয়ে কত ব্রতকথা, কত পুরাণ, কত গল্প। মেয়েকে তো মানুষ করা হয় পরের ঘরে যাবার জন্য, অভাবের সংসারে উপবাসে থেকে পানের রসে ঠোঁট লাল করে অতিথি অভ্যর্থনা, ... ...
আমাদের ছোটবাড়ি আমি যখন ছোট ছিলাম সংসারে সব জড়, স্থাবর, অস্থাবর পদার্থ ছিল পরিবারের সদস্য, তাদের একটা করে নাম ছিল, নিজস্ব পরিসর, কর্তব্য, স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ছিল। ফুল কাটা কাঁসার বাটি মানে মাঝারি মাপের, নীচে একটু টোল খাওয়া, বাবার রাতে দুধ খাওয়ার বাটি – সে কাজ অন্য কোন কাঁসার বাটি দিয়ে হবে না। বড় বাড়ি মানে আমাদের সাত পুরুষের মিত্র বাড়ি আর নববসু লেন এ আমার দাদার (ঠাকুর্দার) কেনা মাঠ ও বাগান শুদ্ধু দোতলা বাড়িটি ছিল ছোট বাড়ি – প্রবীণতার দাবীতে বরাবর এক পা পিছিয়ে রইল সে। আমাদের ছোট বাড়ি ছিল একটা ছোট দোতলা টালির ছাদ ছাওয়া বাড়ি, ... ...
একটি ষোল বছরের কিশোরীকে চারজন নির্মমভাবে ধর্ষণ করে, মেরে মেরুদন্ডের হাড় ভেঙে দিয়ে, জিভ কামড়ে টেনে ছিঁড়ে ফেলার পর সে যখন মরে যায়, তখন কিছু লেখার মত থাকে না। একা ঘরে খবরটা দেখতে দেখতে, পড়তে পড়তে, ভেতরে জমে ওঠা অন্ধকার, কালো আগুনরাগ, দু:খ, হতাশা, অক্ষমতা, অসহায়তা - ফুটিয়ে তোলে, শব্দের অত শক্তি নেই। বাক্যের অত স্পর্ধা নেই। কলমের অত ক্ষমতা নেই। লজ্জা করে, বড্ড লজ্জা করে। মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করতে লজ্জা করে, কাঁদতে লজ্জা করে। এমন কি বিচার চাইতে, নালিশ জানাতে লজ্জা করে। ... ...
লকডাউনের পুণ্য প্রভাতে ঘুন ভাঙতেই হোয়াটস অ্যাপে একটি সুপ্রভাত বার্তা পেলাম – বেসিনের পাশে স্তুপাকৃত তৈজসপত্র মার্জনারত এক স্বল্পবসন ম্যাচো ম্যান । নীচে ক্যাপশন “ হাতে স্কচ থেকে স্কচ ব্রাইট – ভারতীয় পুরুষের বিবর্তন!” তারপর তো তাই নিয়ে সারাদিন ধরে হাসি ঠাট্টা কৌতুকের বন্যা । কত রকম মিম, কতরকম ভিডিও, কতরকম রম্যরচনা! রান্না, ঘরমোছা, বাসন মাজা ইত্যাদি ঘরের কাজ করতে তারা যে কত অপটু, কত আনাড়ি সে কথা জেনে আর জানিয়ে হেসে গড়িয়ে পড়ছে ঘরবন্দী রসিকপুরুষের দল। ঘরের কাজে হাত লাগাতে বলে অসহায় পুরুষজাতিকে কি প্রচণ্ড অত্যাচার করে চলেছে পাষন্ড নারীজাতি তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা – কি করুণ আবেদন - ... ...
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধায় স্মরণে ... ...
প্রতিটি মেয়ের এক গোপন নিজস্ব যুদ্ধ আছে, যা তাকে রোজ নিয়ম করে সকলের চোখের আড়ালে লড়তে হয়। সেই যুদ্ধের সব ক্ষত সব রক্তপাত যত্নে লুকিয়ে হাসিমুখে পৃথিবীর মুখোমুখি হতে হয় রোজ। প্রতিটি মেয়ে জানে রোজ কত অপমান, অবিচার, তাচ্ছিল্য উপেক্ষা করে তাকে রেসের শেষ ফিতেটা আঙুলে ছুতে হয় – দৌড়টা কিন্তু তাকেই প্রাণপণে ছুটতে হয়, কেউ তার হয়ে ছুটে দেয় না। ... ...