পা বাড়ানোর কথা তো বললাম। কিন্তু কাজটা বেশ কঠিন। উনিশ শতকের রসায়ন ছিল পরমাণুর গাথাকাব্য। সেই সঙ্গে অণুর যোগ্য এবং সম মর্যাদাপূর্ণ সঙ্গদান। মৌলিক পদার্থের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য পরমাণু ধরে পাওয়া যাবে এবং বোঝা যাবে—এই ছিল উনিশ শতকের রসায়ন বিজ্ঞানীদের দৃঢ় বিশ্বাস। পদার্থের ক্ষুদ্রতম অবিভাজ্য কণা হল পরমাণু। পরমাণুর আপেক্ষিক ওজন এবং যোজ্যতা—এই দুটি ছিল তাদের পরম ধর্ম। পরিচিতি জ্ঞাপক যাচকাঠি। সেই ধারণায় চিড় ধরে গেল জার্মানি ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সে ঊনবিংশ শতাব্দের শেষ দশকের পর পর কয়েকটি যুগান্তকারী আবিষ্কারে। যথা:— ১। ১৮৯৫ সালের শেষ দিকে হ্বিলহেল্ম কনরাড রয়েন্টগেন এক্স-রশ্মি আবিষ্কার করেন। ২। ১৮৯৬ সালের গোড়ায় আতোয়াঁ অঁরি বেকারেল ইউরেনিয়াম যৌগের ভিত্তিতে তেজষ্ক্রিয়তার ঘটনা খুঁজে ... ...
নিতান্তই আবিষ্কারের সময়ানুগ সারিবদ্ধ ক্যাটালগ নয় বলেই বোধ হয় আমরা দেখি, বিজ্ঞানের ইতিহাস কখনও কখনও ভারি রসিক হয়ে ওঠে। ঊনবিংশ শতাব্দের একেবারে শেষ দশকে এমন একটা সময় ঘনিয়ে এল যখন পর্যায় সারণির জ্ঞানোৎপাদক মূল্য আরও সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে, অথচ যিনি এর থেকে সবচাইতে বেশি সুনাম অর্জন করতে যাবেন, তিনিই পরবর্তী বিকাশের প্রশ্নে কেমন যেন সন্দিগ্ধ হয়ে উঠলেন। এবার সেই সব গল্প। প্রথমে ইংল্যান্ডের দুই উইলিয়ামের কীর্তিকলাপ! একে একে। ১৮৯৪ সাল। পদার্থবিজ্ঞানে যিনি লর্ড র্যালে নামে পরিচিত, আদিতে তিনি ছিলেন জন উইলিয়াম স্ট্রাট, সেকালের একজন বিরাট মাপের বিজ্ঞানী। প্রথম দিকে গণিত নিয়ে গবেষণা চালালেও পরে পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় সমস্ত শাখাতেই তিনি স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন এবং ... ...
বিজ্ঞানের ইতিহাসে অনেক সময়ই দেখা যায়, একই আবিষ্কার একাধিক সূত্রে উঠে আসছে। আদি মধ্যযুগে শূন্যের ধারণা একই সঙ্গে ভারতে ও চিনে জন্ম নিয়েছিল। নিউটনের কালে নিউটনের সঙ্গেই জার্মানির গটফ্রিড হ্বিলহেল্ম লাইবনিৎস-এর নাম উত্থাপিত হয় কলন গণিতের উদ্ভাবক হিসাবে। অক্সিজেন খুব কাছাকাছি সময়ে তিনজন বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছিলেন: ইংল্যান্ডে প্রিস্টলি, সুইডেনে শিলি এবং ফ্রান্সে ল্যাভোয়াশিয়। চার্লস ডারউইনের মতোই বিশ্ব ভ্রমণ করে কয়েক বছরের মধ্যেই আলফ্রেড রাশেল ওয়ালেসও বিবর্তন এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্ব সংজ্ঞায়িত করে ফেলেছিলেন। তেমনই পর্যায়সারণির ক্ষেত্রেও মেন্দেলিয়েভের প্রায় পেছন পেছনেই ছিলেন জুলিয়াস লোঠার মেয়ার। বস্তুত তিনি কয়েক বছর আগেই, ১৮৬৪ ও ১৮৬৬ সালে, দুবার দুটো টেবিল বানিয়ে বিজ্ঞানী মহলে দিয়েছিলেন। ... ...
।। ১ ।।স্থান রাশিয়া, কাল উনিশ শতকের মাঝামাঝি। পাত্র ক্রমশ প্রকাশ্য। আপাতত পায়ে চলার এক অনবদ্য গল্প দিয়ে শুরু করি এই কথালিপি। সে এক অনন্য অনন্ত যাত্রা। অশ্রুতপূর্ব কাহিনি। প্রথম শুনলে বা পড়লে একেবারে শিশু সাহিত্য রূপকথার মতোই লাগে। ১৮৪৮ সালের এক বসন্তে চোদ্দ বছরের এক পুত্র আর ষোল বছরের এক কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে কোন সুদূর এক অনির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে চলেছেন সদ্য বিধবা এক মা। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে এসেছেন প্রথমে মস্কোতে, তারপর সেখানে মনস্কামনা পূর্ণ না হওয়ায় আবার রওনা দিয়েছেন সন্ত পিতার্সবুর্গের দিকে। দূরত্বটা এই সুযোগে জেনে রাখা দরকার: সাইবেরিয়া থেকে মস্কো ২১৯০ কিলোমিটার মাত্র; আর মস্কো থেকে ... ...
|| ৫. প্রসঙ্গ: মুসলিম শাসনকাল || মুসলমান শাসকমাত্রই এই দেশকে লুঠ করেছে। মুসলিম শাসনে ব্যাপক সংখ্যায় হিন্দুদের জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়; মুসলমান শাসকরা অসংখ্য হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছে; মুসলমান শাসনে হিন্দু ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিপন্ন ছিল; মুসলমান শাসনামলে লাগাতার এক হিন্দু মুসলিম যুদ্ধ চলেছিল; ইত্যাদি। সঙ্ঘপরিবার খুব সযত্নে দৃঢ়ভাবে এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মনে ... ...
|| ৩. হিন্দুরা কি উদার এবং পরধর্ম সহিষ্ণু? ||এই বর্তমান পর্যায়ে, অর্থাৎ, বিশ শতকের প্রথমার্ধে ব্রিটিশ শাসকের আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করে স্বাধীনতা আন্দোলনের যে জোয়ার আসে, যার পরিণতিতে অবশেষে ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হয়, তার মধ্যেই বহু খেপে হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা একটা নৈমিত্তিক অ্যাজেন্ডায় পর্যবসিত হয়। আর তাতে ধুনো দেবার প্রয়োজনে ক্রমাগত বেশ কয়েকটি হিন্দু মিথের নির্মাণ ... ...
গত কয়েক দশক ধরে কেন্দ্রীয় ভাবে এবং একাধিক রাজ্য স্তরে গেরুয়া প্রভাব ও শাসনের বিস্তারের ফলে হিন্দুত্ববাদ তথা হিন্দু ধর্মের ক্রমশ প্রকট আগ্রাসী রূপ সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষণ করা সমাজ কর্মী ও ভাবুকদের তরফে এই মুহূর্তের এক আদর্শগত দায় হয়ে পড়েছে। সাধারণভাবে আমরা হিন্দুধর্ম বলতে যা বুঝি এবং দেখি—ধর্ম সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদী তর্ক আপাতত পাশে সরিয়ে রেখে বলছি—তার মধ্যে ... ...
ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারে কংগ্রেস বা বিজেপি—যেই শাসন ক্ষমতায় আসুক, তাদের মাথায়—মাঝে মাঝেই একটা পোকা নড়ে ওঠে। হিন্দিকে এইবার সারা দেশে যে করেই হোক চালাতে (ওরফে, চাপাতে) হবে। এই সব শাসক দল জানে, বাস্তবে এটা কোনো দিনই আর সম্ভব হবে না। শাসন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে হয়ত সরকারি নথিতে, বিজ্ঞপ্তিতে, হুকুমনামায়, দরখাস্তে, রেল বা ব্যাঙ্কের কাগজপত্রে, হিন্দিকে আরও বেশি করে জায়গা ছেড়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু ওই অবধিই। ওর চাইতে বেশি আর কিছুই করা যাবে না। করতে গেলেই অশান্তি হবে। এমনকি নিজেদের দলের ভেতরেও। নীতিন গড়করি বিজেপি-র সভাপতি হলে হিন্দিতে ভাষণ দেবেন, আবার বেঙ্কাইয়া নাইডু সভাপতি হলে ইংরেজিতে বলবেন। সোনিয়া গান্ধী হিন্দিতে বলতে পারেন, কিন্তু শশী ... ...
১৯৭১ সালে পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের অভ্যুত্থান ভারতে তথা পশ্চিম বঙ্গে আমাদের এপারের বাঙালিদের কাছে অনেকগুলো নতুন বার্তা বয়ে এনেছিল। গোড়ার দিকে তার অনেক কিছুই আমরা বুঝিনি। বুঝতে পারিনি। তার সমস্ত কিছু আত্মসাৎ বা আত্মস্থ করতে আমাদের সময় লেগেছে। এক একবারে অল্প অল্প করে বুঝেছি। উনিশ্শ আশির দশকে এসে অনেকটা বুঝেছিলাম বলে এখন মনে পড়ছে। অবশ্য তত দিনে রাজনীতির সূত্রে বাংলাদেশের একটি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আমাদের দলের সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যাওয়ায় এবং ওপার থেকে বিভিন্ন নেতা কর্মীরা নিয়মিত এপারে আসতেন বলে তাঁদের থেকে শুনে শুনে অনেক কিছু আমরা অল্প অল্প করে বুঝতে পেরেছিলাম। কী বুঝেছিলাম? আজ মনে হচ্ছে, এই ... ...