বিজ্ঞানের ইতিহাসে অনেক সময়ই দেখা যায়, একই আবিষ্কার একাধিক সূত্রে উঠে আসছে। আদি মধ্যযুগে শূন্যের ধারণা একই সঙ্গে ভারতে ও চিনে জন্ম নিয়েছিল। নিউটনের কালে নিউটনের সঙ্গেই জার্মানির গটফ্রিড হ্বিলহেল্ম লাইবনিৎস-এর নাম উত্থাপিত হয় কলন গণিতের উদ্ভাবক হিসাবে। অক্সিজেন খুব কাছাকাছি সময়ে তিনজন বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছিলেন: ইংল্যান্ডে প্রিস্টলি, সুইডেনে শিলি এবং ফ্রান্সে ল্যাভোয়াশিয়। চার্লস ডারউইনের মতোই বিশ্ব ভ্রমণ করে কয়েক বছরের মধ্যেই আলফ্রেড রাশেল ওয়ালেসও বিবর্তন এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্ব সংজ্ঞায়িত করে ফেলেছিলেন। তেমনই পর্যায়সারণির ক্ষেত্রেও মেন্দেলিয়েভের প্রায় পেছন পেছনেই ছিলেন জুলিয়াস লোঠার মেয়ার। বস্তুত তিনি কয়েক বছর আগেই, ১৮৬৪ ও ১৮৬৬ সালে, দুবার দুটো টেবিল বানিয়ে বিজ্ঞানী মহলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তখন অবধি আবিষ্কৃত সমস্ত মৌলগুলিকে যুক্ত করতে না পারায় সেই দুটোই শেষ পর্যন্ত স্বীকৃতি পায়নি।
আমরা আপাতত মেন্দেলিয়েভের কাজের দিকে নজর রাখছি।
সন্ত পিতার্সবুর্গে পৌঁছে মারা যাওয়ার আগে মাদাম কর্নিলেভা নাকি পুত্র দমিত্রিকে বলেছিলেন, “বিভ্রমে পড় না, কথায় নয় কাজের উপর গুরুত্ব দিও, ধৈর্যের সঙ্গে পবিত্র এবং বৈজ্ঞানিক সত্যের সন্ধানে ব্যাপৃত থেক।” [Cited, McQuarrie et al 2011]
মেন্দেলিয়েভ নিষ্ঠার সংগে জননীর এই শেষ নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গেছেন। সারা জীবন ধর্মীয় আধ্যাত্মিক কূটকচালি থেকে দূরে সরে থেকেছেন। বিজ্ঞানের সত্য সন্ধানে যুক্তিশীল মগজ নিয়ে তথ্যের সাগরে ডুব দিয়েছেন। মৌলিক পদার্থগুলির পারমাণবিক গুরুত্ব অনুযায়ী হালকা থেকে ভারির দিকে ক্রমান্বয়ে সাজিয়েছেন। আর তার মধ্যে পর্যায়বৃত্ত খুঁজেছেন। যোজ্যতা ও অন্যান্য রাসায়নিক ধর্মের সাদৃশ্য দেখে দেখে এক এক ভাগে রেখেছেন। এর জন্য তিনি প্রথমে কতকগুলো কার্ড নিয়ে তার গায়ে মৌলগুলির নাম লিখেছেন। তার পর সেগুলো ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক গুরুত্ব অনুযায়ী নানা রকম বিন্যাসে উপরে নীচে স্তম্ভ ও সারিতে ভাগাচাগি করে সাজিয়েছেন। আর ক্রমাগত বুঝবার চেষ্টা করে গেছেন, কীভাবে সাজালে ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের সাদৃশ্য ও ক্রমবিন্যাস ঠিকঠাক মেলে। অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন বহু দিন ধরে। অনিদ্রায় কাটিয়েছেন বহু রাত।
তার পর সে এক দিন ধরা পড়ল।
তিনি দুটো মূল নীতি প্রথমেই মনে মনে স্থির করে নিলেন: এক উল্লম্ব অভিমুখে স্তম্ভগুলিতে থাকবে সদৃশ ধর্ম বিশিষ্ট মৌলগুলি; স্তম্ভের ক্রম হবে যোজ্যতারও ক্রম। আর সারি বরাবর আনুভূমিক দিক ধরে রাখা হবে ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক গুরুত্ব অনুযায়ী মৌলগুলিকে। আবার তার মধ্যেও তিনি পারমাণবিক গুরুত্বের তুলনায় বংশ কৌলীন্যকে একটু বেশি জোর দিতে চাইলেন। যেখানে পারমাণবিক গুরুত্বকে গুরুত্ব দিলে বংশগত সাদৃশ্য মেলানো যাচ্ছে না, তিনি হয় পরমাণুর ভর সম্পর্কে প্রচলিত হিসাবকে সন্দেহ করেছেন, অথবা, একটা জায়গা ফাঁকা রেখে এগিয়েছেন।
অর্থাৎ?
একটা মৌলের জন্য যখন জায়গা ছেড়ে রাখছেন, তার মানে হল, যতগুলো মৌল হাতের সামনে আছে এরাই সব নয়, তিনি আশা করছেন, আগামী দিনে আরও অনেক মৌলিক পদার্থ আবিষ্কার হবে। তারাও এই সারণিতে জায়গা খুঁজবে, তাদের জায়গা দিতেও হবে। তার ব্যবস্থা এখন থেকেই আগাম গুছিয়ে রাখতে হবে। এরকম ভাবনা তাঁর আগে কেউই সাহস করে প্রশ্রয় দিতে পারেননি। লোঠার মেয়ারও নয়।
সাহসটা ভাবুন একবার।
শুধু কি তাই? তাঁর আরও দুঃসাহস হয়েছিল, এরকম কয়েকটি ফাঁকা জায়গায় যে সম্ভাব্য মৌল এসে বসতে পারে, তাদের সম্পর্কে শুধু রাসায়নিক নয়, ভৌত ধর্ম সম্পর্কেও অগ্রিম আভাস দেওয়া। তার আপেক্ষিক গুরুত্ব (বা ঘনত্ব), গলনাঙ্ক, ইত্যাদির পরিমাণগত পূর্বাভাষ প্রদান।
দু-একটা উদাহরণ দিই।
বোরন অ্যালুমিনিয়ামের গ্রুপে তিনি একটি ধাতুর আবির্ভাবের আভাস দেন। তার সম্পর্কে বলেন, ধাতুটি এমন হবে যে মানুষ তার এক টুকরো হাতে নিলেও সেটি গলে যাবে। সংস্কৃত একম্ শব্দটি নিয়ে তিনি তার নামকরণ করেন এক-অ্যালুমিনিয়াম (অনুগ্রহ করে উচ্চারণটা বাংলা কায়দায় অ্যাক অ্যালুমিনিয়াম করবেন না, মেন্দেলিয়েভের খাতিরে বলুন—এক(অ)-অ্যালুমিনিয়াম)। ১৮৭৫ সালে জনৈক ফরাসি রসায়নবিদ বয়বাউদ্রাঁ এরকম একটি ধাতু আবিষ্কার করে ফেলেন এবং তার নাম দেন গ্যালিয়াম। ধাতুটির ধর্ম প্রায় সবই মেন্দেলিয়েভের পূর্বঘোষণার সঙ্গে মিলে যায়, শুধু আপেক্ষিক গুরুত্ব বাদে। সেই ব্যাপারে মেন্দেলিয়েভের পূর্বাভাষ ছিল ৫.৯ আর পাওয়া গেল ৪.৭। মেন্দেলিয়েভের নিজের কাজের উপর এত আস্থা ছিল যে তিনি সেই বিজ্ঞানীকে আর একবার আরও ভালো করে পরিমাপ নিতে বললেন। এবার ভালো করে মাপজোক করে দেখা গেল, ধাতুটির আপেক্ষিক গুরুত্ব ৫.৯৫৬। আমরা বর্তমান হিসাব সমেত একটি টেবিলে এই চিত্রটি তুলে ধরলাম (গ্যালিয়ামের জন্য প্রদত্ত ছবিতে দেখুন)।
একই ধরনের পূর্বাভাষ তিনি দিয়েছিলেন সিলিকন গ্রুপের একটি অজানিত মৌল সম্পর্কে। তিনি নিজস্ব কায়দায় নাম দিয়েছিলেন এক-সিলিকন, কিন্তু এখন তার নাম জার্মেনিয়াম (জার্মেনিয়ামের জন্য প্রদত্ত ছবি দ্রষ্টব্য)।
বিজ্ঞানের আসল শক্তি এখানেই নিহিত। যা জানা আছে তাকে ক্যাটালগ করে যাওয়া নয়, তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে এমনভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা যাতে তার ভিত্তিতে এক অজানার উদ্দেশে লাফ দেওয়া যায় (এই প্রকাশভঙ্গিটা আমি দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের একটা রচনা থেকে ধার নিলাম)। বিজ্ঞানী হলেই সবাই এটা পারেন না। এর জন্য প্রতিভা মেধা জ্ঞান বুদ্ধিই যথেষ্ট নয়, চাই দুঃসাহস। সেই জাতের সাহস, যা নিউটন দেখিয়েছিলেন, দেখিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল, আইনস্টাইন, নিলস বোহ্র, প্রমুখ।
ইয়াকব ব্রনোস্কি তাঁর The Ascent of Man বইতে এই প্রসঙ্গে যে কথাটা বলেছেন স্মরণ করা দরকার: “The conception of the gaps or missing elements was scientific inspiration. It expressed in practical terms what Francis Bacon proposed in general terms long ago, the belief that new instances of a law of nature can be guessed or induced in advance from old instances. And Mendeleev’s guesses showed that induction is more subtle process in the hands of a scientist than Bacon and other philosophers supposed. In science, we do not simply march along a linear progression of known instances to unknown ones. Rather, we work as in a crossword puzzle, scanning two separate progressions for the point at which they intersect: that is where the unknown instances should lie in hiding.” [Bronowski 1974, 325-26]
কথাগুলির প্রত্যেকটাই মূল্যবান। বিজ্ঞানীদের কথা আলোচনার সময় এই ভাবেই সমস্যা ও সমাধানের বিষয়গুলিকে সাধারণ ভাবে দেখতে হবে। তথাপি ব্রনোস্কির সঙ্গে সামান্য মতভেদ ব্যক্ত করে আমি বলতে চাইব, বিজ্ঞানীকেও এখানে তাঁর বিজ্ঞানের প্রকোষ্ঠ থেকে বেরিয়ে এসে দার্শনিক প্রেক্ষাপটের উপর দাঁড়িয়ে এক বৃহত্তর সমগ্র-উপলব্ধির সাহায্য নিতে হয়। সাহসটা সেখানেই লাগে। প্রেরণাও সেখান থেকে আসে। জর্জ হ্বিলহেল্ম ফ্রিডরিশ হেগেল নাম যুক্ত জার্মানির এক মহৎ দার্শনিকের কথায়, যা কিছু বাস্তব তা যুক্তিসম্মত (অর্থাৎ, অযৌক্তিক অপ্রাকৃতিক বুদ্ধির অতীত কিছুই বাস্তব হতে পারে না), এই যদি সত্য হয়, তাহলে যা কিছু যুক্তিসম্মত, তাকেও বাস্তব হতেই হবে। ভাববাদী দার্শনিকের এক অসাধারণ বস্তুবাদী বীক্ষণ! হয়ত অজ্ঞাতসারেই মেন্দেলিয়েভও সেদিন এই বোধ নিয়ে কাজ করে চলেছিলেন।
আর তাঁর সেই বোধ ভুল প্রমাণিত হয়নি। এমনকি আজও।
অন্য দিকে জার্মান বিজ্ঞানী জুলিয়াস লোঠার মেয়ারের শুধু ছবি দিয়ে এখানে পুজো সেরে ফেললে হবে না, তাঁর কাজের কথাও এবার আমাদের একটু সবিস্তার বলতে হবে। ১৮৬০-এর দশকে তিনি শুধু যে পর্যায় সারণি নির্মাণের প্রথম প্রজন্মের অন্যতম প্রধান একজন কুশীলব তাই নয়, প্রথম আবিষ্কারের নিরিখে মেন্দেলিয়েভের সামান্য পেছনে হাঁটলেও তাঁর কাজে বেশ কিছু স্বকীয়তা ছিল, যা রসায়নশাস্ত্রকে অচিরেই গ্রহণ করতে হয়েছে। তাই এই ইতিহাসে তিনিও অমর। পর্যায় সারণির নির্মাতাদের সারণিতে দু নম্বর গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসাবে।
মেয়ার ছাত্রাবস্থায় পড়েছিলেন চিকিৎসাবিদ্যা। কিন্তু পাশ করে ডাক্তার হয়ে পরে রসায়নে পিএইচ-ডি করে তিনি জার্মানির ব্রেসলাউ বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের অধ্যাপনায় যোগ দেন। উনিশ শতকের সেই সময়টায় রসায়ন শাস্ত্র ভৌত বিজ্ঞানের এক দ্রুত বিকাশমান শাখা হয়ে গড়ে উঠছিল। একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী হিসাবে এই বিষয়টিকে ভালোবেসে তিনি সারা জীবন সেই অধ্যাপনার পেশাতেই যুক্ত ছিলেন।
মেন্দেলিয়েভ পারমাণবিক গুরুত্বের বৃদ্ধির ক্রমানুসারে বেশি জোর দিয়ে দেখেছিলেন মৌলগুলির রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন ও চক্রাবৃত্তি। পক্ষান্তরে মেয়ার লক্ষ করলেন মূলত তাদের ভৌত ধর্মের পরিবর্তন তথা চক্রাকার পুনরাবৃত্তি। তাঁর সেই সব পর্যবেক্ষণ মৌলিক পদার্থগুলিকে চেনা ও বোঝার ক্ষেত্রে অমূল্য দিক নির্দেশক। এই কাজে নেমে তিনি পরমাণুর ভরের সঙ্গে পরমাণুর আয়তনকে মিলিয়ে তার ওঠানামা পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এক চমৎকার লেখচিত্র তৈরি করেন (ছবি দ্রষ্টব্য)। আয়তন তিনি মেপেছিলেন পারমাণবিক গুরুত্বকে ঘনত্ব দিয়ে ভাগ করে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানের ব্যাপক বিকাশের পরেও সেই লেখচিত্র রসায়নের খাতায় আজ অবধি অমুঞ্চিত থেকে গেছে।
পাশাপাশি, দুজনের কাজের মধ্যে তুলনা করলে আরও কয়েকটা চিত্তাকর্ষক ঘটনা চোখের সামনে চলে আসে।
যেমন, মেন্দেলিয়েভ সন্ধি মৌলগুলি (transition elements)-কে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে দিয়েছিলেন। তাদের আলাদা করে বিশেষ ভাবে গণ্য করেননি। সেই সমস্ত মৌলকেই তিনি গ্রুপ এবং গ্রুপাণু (sub-group)-তে বন্টন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ার তা না করায় সন্ধি মৌলগুলি তাঁর সারণিতে স্বতন্ত্র স্থান লাভ করেছে। যেমন গ্রুপ-৪ ও গ্রুপ-৬-এর সারণি।
অনেক কিছু জিনিস সঠিক বলার পরেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেন্দেলিয়েভের ভুল হয়েছিল। অবশ্য ভুল হওয়াটাই বিজ্ঞানের শক্তির লক্ষণ। সম্পূর্ণ নির্ভুল, সর্ব বিষয়ে অভ্রান্ত বিজ্ঞানী আজ অবধি জগতে দেখা যায়নি। সুতরাং আমাদের এতে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই। তিনি পারদ এবং সিসাকে পর্যায় সারণিতে রূপা এবং বেরিয়ামের গ্রুপে ফেলেছিলেন। কিন্তু মেয়ার সঠিক ভাবে পারদ এবং সিসাকে ক্যাডমিয়াম আর টিনের সঙ্গে একই স্তম্ভে স্থান দিয়েছিলেন। মেন্দেলিয়েভ থ্যালিয়ামকে ভুল করে ক্ষারধর্মী গ্রুপে রেখেছিলেন, কিন্তু মেয়ার বুঝেছিলেন, একে বোরন-এর গ্রুপে ঠাঁই দিতে হবে। অন্য দিকে, মেন্দেলিয়েভ যেমন কিছু কিছু ফাঁকা জায়গায় আগামী আবিষ্কারের ভিত্তিতে অন্তত পাঁচটি সম্ভাব্য মৌলের সম্পর্কে প্রায় একশ শতাংশ সঠিক পূর্বানুমান করতে পেরেছিলেন, মেয়ার সেটা পারেননি বা করেননি। নতুন নতুন মৌল আবিষ্কার হবে ধরে নিয়ে টেবিলে কয়েকটা ফাঁকা জায়গা ছেড়ে রেখেই তিনি খুশি ছিলেন।
আবার, সমসাময়িক বড় মাপের বিজ্ঞানী হিসাবে দুজনেই পর্যায় সারণির ক্ষেত্রে পরস্পরের থেকে নানা রকম তথ্য আদান প্রদান করেছিলেন। মেয়ার তাঁর ১৮৭০-এর সারণিতে মেন্দেলিয়েভের ১৮৬৯-এর কাজ থেকে অনেক সাহায্য নিয়েছিলেন। পক্ষান্তরে মেন্দেলিয়েভ ১৮৭১ সালে যে সংশোধিত সারণি প্রকাশ করেন, তাতে মেয়ারের সেই টেবিল থেকেও কিছু জিনিস গ্রহণ করেছিলেন। উভয়েই উভয়ের ঋণ স্বীকার করে।
ইংল্যান্ডের রয়্যাল সোসাইটি ১৮৮২ সালে দুজনকেই এই মহতী কাজের জন্য মর্যাদাপূর্ণ ডেভি মেডেল প্রদান করে।
ফলে এই পর্যায় সারণি এমন একটা কাজ যা বিজ্ঞানের বিকাশের পেছনে ইতিহাসের ভূমিকাকে অত্যন্ত চমৎকার ভাবে তুলে ধরছে। বিবেচনা করে দেখলে সহজেই বোঝা যাবে কেন ল্যাভোয়াশিয় বা ডালটনের পক্ষে অত অল্প সংখ্যক মৌলিক পদার্থের তালিকা হাতে নিয়ে এই রকম একটা সারণি নির্মাণ সম্ভব ছিল না। আবার ১৮৬০-এর দশকে কেন এরকম একটা কাজ এমন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠল যে একাধিক বিজ্ঞানী বিভিন্ন দেশে প্রায় একই সময়ে এতে হাত দিয়েছিলেন এবং নানা মাত্রায় সফল হয়েছিলেন। আবার ইতিহাসে এই টেবিলের যে বিরাট জ্ঞানোৎপাদক ভূমিকা (heuristic value) দেখা গেল, যেখানে আগে থেকেই ভবিষ্যতে নতুন কী ধরনের মৌলিক পদার্থের আবিষ্কার হতে চলেছে তাও অন্তত খানিক দূর অবধি বলে ফেলা যায়, এটাও আধুনিক বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অন্তর্নিহিত শক্তিকেই প্রকট করে তুলল। এর পরবর্তী বিকাশে আমরা সেই বিষয়টা আরও ভালো ভাবে বুঝতে চেষ্টা করব।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।