এলোমেলো আঁকিবুকি / চাপাচুপি ঢাকাঢুকি / হিজিবিজি জোখালেখা / মিল্মিশ্? একা একা? ... ...
কবির গোপন ডায়েরি থেকে উঠে এল জীবনের প্রতিটি ধাপে যাপনের অসহ্য বেদনার গোপন ও গম্ভীর শিলালিপি। গম্ভীর, কারণ নিষিদ্ধ কামনা ও প্রত্যাখ্যানের উপাখ্যান ব্যতিক্রমহীনভাবেই সিরিয়াস। গোপন, কারণ, কবি লিখেছেন, 'প্রণয় প্রকাশ হলে হয় লোকনিন্দা / রাধার প্রণয় আছে প্রকাশের বৃন্দা'। ... ...
এইখানে ধূসর পাঠে মগ্ন ছিল নষ্ট দেবতা / সন্তানের হাত ধরেছে সে পিচ্ছিল পৃথিবীতে / মায়াময় প্রতিবিম্বটি ফেরে তার পিছন পিছন / প্রাকৃত সংলাপ লিখে গেছে অস্থির বালকে - ... ...
সন্ধ্যার ভিতর শুনি তার গল্প , বাতাসের গায়ে / অষ্টাদশ শতকের ঘাট, তার পুরাতনী কথা / ধূসর ক্রেনের ছায়া পড়ে / মন, যেন লক্ষকোটি বছরের দীর্ঘশ্বাস, নিজেকে বাজায় ... ...
চা যখন খেয়েই-ছি, থ্যাংক ইউ বলাই দস্তুর / এভাবেই পরম্পরা মেনে নিয়ে ক্রিয়া ও বস্তু-র / ভাঁড় ভেঙে হেঁটে গেছি, ঝাঁঝরির ফাঁকে পোড়া মাটি ... ...
ফার্নান্ডো পেসোয়ার নির্বাচিত কবিতা থেকে অনুবাদ করেছেন মিঠুন ভৌমিক ... ...
কথা ছিলো সব নেওয়া যাবে একটাই বাক্সতে / ধার দেনা আলোচাল যার যেটুক আছে এই যাত্রা / মাটির রাত্রি ধরে তেষ্টা চুমুক দেয় আলগোছে ... ...
১৯৯৬ য়ের জুন মাস। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরের দূর্গাবাড়ি রোডের রাস্তায় একটি টয়োটা গাড়ি। ভর-দুপুরে গাড়িটি ঢিমে লয়ে চলছে, এদিক-ওদিক, দোকানের সামনে থেমে জানতে চাইছে - সূর্যসিঁড়ি নামের বাড়িটি কি করে যাব? বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামে তারা দু'জন। কমবয়েসি ছেলেটি রজ্জাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগের ছাত্র। এক বন্ধুর দাদার দেওয়া যোগাযোগে কদিন ধরে কাজকম্ম ছেড়ে ঘুরছে কোলকাতা থেকে আসা একটি বাংলা দৈনিকের সাংবাদিকের সঙ্গে। ঘুরছে চরকিবাজির মত। ... ...
না যান, না যান, না যান মাহুত রে, / মাহুত বাড়িতে বহেন রে হাল। / ভালে না হয় হাতীর চাকিরি, সাথে সাথে কাল।। ... ...
যদিও শুরু করেছিলাম এই বলে যে, ধারাবাহিকভাবে কিছু লিখব না, তবুও শুরু থেকে এতখানি পর্য্যন্ত প্রচন্ডভাবেই ধারাবাহিক হয়ে গেল, খাওয়ার পর শোওয়া, শোওয়া হলে ঘুম থেকে ওঠার মত। আসলে এক ধরণের জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে আসার পর নতুন জীবনে যাবার ট্র্যানজিশনটা এত বেশি ঘটনাবহুল মনে হয় নিজের কাছে, যে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণের দিকে মন চলে যায়। জলপাইগুড়িতে চার বছর কাটানোর প্রতিটা দিন আর আলাদা করে মনে নেই, কিন্তু ঐ শুরুর দিনকটা ভীষণভাবে মনে আছে। ... ...
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লড়াইটা ছিল সাগরে ও মাটিতে। এবং মূলত: সেটি ছিল জমিরই লড়াই। লক্ষ লক্ষ ইনফ্যান্ট্রি। আর তাদের পিছনে ভারী কামান। আর সাগরযুদ্ধেও কামান। কেননা নৌ যুদ্ধ ব্যাট্ল্শিপ নির্ভর। মুখোমুখি জাহাজে জাহাজে লড়াই। কামানের পাল্লার উপর যুদ্ধের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করত। আর যুদ্ধবিমান? তারা নেহাৎই অকিঞ্চিৎকর। যুদ্ধের ফলাফলে হেলদোল করতে পারত না সেই পুঁচকে আকাশচারীরা। ... ...
মরা সাহেবের টেবিল দিয়েই সেদিন শুরু হয়েছিলো - আসলে কি, অফিসে পরপর দুজন বড়সাহেব একই ঘরে মরে যাওয়ার পর প্রাণে ধরে এমনিতেই ওখানে আর কেউ ঢুকতে চাইছিলো না। প্রথম জন টিকলো একটি গোটা মাস, মরলো শনিবার, অফিস ছুটি হলো মঙ্গলবার। দ্বিতীয়জন বড়দিনের ঠিক আগে জিমখানায় দৌড়তে গিয়ে হাঁসফাঁস করে মাটিতে ঘামতে ঘামতে মরে গেলো, সে ছিলো হপ্তাখানেক। দুর্ঘটনার এখানেই শেষ নয়, এক ভরদুপুরে উড়ো খবর এলো যে ওপরের তলায় ডানদিকের ঘরের সাহেব নাকি ছুটিতে ছিলো,বউবাচ্চা সমেত গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে সেও নাকি মারা গেছে। খবরটা সত্যি। ... ...
আব্বার সাথে রাশেদের আজ আশ্চর্য শত্রুতা। আজ সারাদিন, দিনমান। ছোট্ট চায়ের টেবলের দু'পাশে ওরা দু'জন ঠিক দুই যুযুধানের মতন দাবার গুটি নিয়ে বসে আছে সকাল থেকে। কখনও গালে হাত, কখনও বাঁকানো ভ্রূ, কখনও চুপচাপ। আব্বার অফিস ছুটি আজ, রাশেদের ইশকুলও তাই। ওদের সারা ঘরে ছুটির আমেজ এলিয়ে আছে, বসার ঘর থেকে রান্নাঘর, সেখান থেকে বারান্দায়, সবখানে। আপাতত শুধু ছুটি নেই দুজনের মাথার ভেতর, তুমুল তান্ডব তাতে, যুদ্ধ পরিকল্পনায় ব্যস্ত, আর বাইরে তবু বেশ নিরাবেগ, অথবা ভঙ্গিটা সেরকমই, খাঁজ কাটা সুন্দর কাঠের সাদা কালো সৈন্যদের ওরা লেলিয়ে দেয় একে অপরের দিকে। ... ...
অতসী দাঁড়িয়ে আছে এক্সাইড হাউসের মোড়ে। যেখানে হলদিরামের দোকান, তার সামনে। নীলরঙা শিফন শাড়ীতে। অফিস কেটেছে অতসী। অতসী দেখতে মোটামুটি। শ্যামলা, সামান্য স্থূলকায়া। এখন সকাল এগারোটা। বাসে অফিসযাত্রীর ভীড় এখনো পুরো মাত্রায়। সরকারী চাকুরেদের বাজার,ছেলে-মেয়েদের স্কুল, পাড়ার গলির মুখে প্রাত:কালীন গুলতানি, রুটি-ভাত-চচ্চড়ির আহার সেরে এটাই অফিস যাওয়ার আসল সময়। ... ...
আজ অনেকদিন পরে এমনটা হল। এই মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া। অন্ধকারে কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাকে চোখ বন্ধ করে। ঘুমের আমেজ যেন চোখের পাতা ছেড়ে পালিয়ে না যেতে পারে! চোখ খোলা যাবেনা কোনোমতেই, তাহলেই ঘুমের দফারফা। রাত এখন কটা কে জানে? ইস, কমপক্ষে ছ ঘন্টা না ঘুমোলে কাল সারাদিন টানতে পারা যাবে না। অফিসে সীটে বসলেই ঘন ঘন হাই উঠবে, কাজে বিরক্তি আসবে। ... ...
সন্ধ্যার অন্ধকার ক্রমে গাঢ় হইয়া আসিতেছে। তাঁহার ক্ষুদ্র কামরাটির এক কোণে একটি সেজবাতি জ্বালাইয়া জ্যাঠামশায় পড়িতেছিলেন। এমন সময় দরজার সম্মুখে একটি ছায়ার অনুভব হইল। মুখ তুলিয়া দেখেন শ্রীবিলাস দাঁড়াইয়া আছে। জ্যাঠামশায়ের মুখ স্মিতহাস্যে ভরিয়া উঠিল। হাসিয়া বলিলেন, 'দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে'। ... ...