উৎসব সংখ্যা ১৪৩২ -র সমস্ত লেখার হদিশ পাবেন এই পাতায় ... ...
হঠাৎ বাসটা ডান দিকে ঘুরে গেল! কি হল ব্যাপারটা? যাত্রীদের মধ্যে একটা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ল। তমাল এতক্ষণ খেয়ালই করেনি যে গাড়ি পুরো ঠাসা, ঘাড়ের ওপর লোক ঝুঁকে পড়ছে। কিন্তু আনোয়ার শাহ রোডে বাসটা ঘুরে গেলো কেন? এরকমটা তো মহরমের দিন হয়। তমালের মাথায় চিন্তাটা আসতেই একজন বলে উঠলো, নিশ্চয়ই মুসলমানদের কোনও পরব! ... ...
বিরজু এখন আর তর্ক করে না। তর্ক করে লাভ নেই। সিদ্ধান্ত মানেই সিদ্ধান্ত। পাগলটাকে মারতেই হবে। তবুও তো তার ভাগ্য ভালো একটা পাগলকে মারবে সে। চাঁদুর ভাগ্য তার চাইতেও খারাপ ছিল। তাকে মারতে হয়েছিল ক্লাস টেনে পড়া ফুলকুমার মান্ডিকে। যখন মাওবাদীদের ভয়ে গ্রামের পর গ্রাম ভয়ে সিঁটিয়ে থাকত তখন সে ব্যাটা সাইকেল চালিয়ে একা একা জঙ্গল পথে স্কুলে আসত। কমান্ডার বলেছিল। ও ব্যাটা নির্ঘাৎ পুলিশের চর। স্কুলে আসার নাম করে বেলপাহাড়ী আসে আমাদের গতিবিধির খবর দিতে। শালার কী ভয় ডর নাই? একজন সাহস দেখালেই অন্যরা সাহস পাবে। মাধ্যমিক সামনেই ছিল কিন্তু তার আগেই চাঁদু তাকে শুইয়ে দিল জঙ্গল ঘেরা পিচ ঢালা রাস্তায়। তারপর চাঁদু তিনদিন ঘুমায়নি। এক রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে বিরজু দেখল, চাঁদু চাটাইয়ে উঠে বসে রয়েছে। সে ফিসফিস করে বলেছিল, কী হয়েছে চাঁদু? চাঁদু উদভ্রান্তের মত তার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, আমি রাস্তার মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে ছিলাম। ছেলেটা আমাকে দেখে সাইকেল থামিয়ে নামল। তারপর জিজ্ঞেস করল, বাবা! চাঁদু কাকা কত্তদিন পরে দেখলাম গো। গাঁয়ে যাবে বুঝি। লও লও সাইকেলটো তুমহি চালাও। আমি তুমাকে বইতে পারব লাই। ... ...
বাসব স্যার তখন সখা মাতলির সঙ্গে একহাত পাশা খেলবেন বলে মনে মনে ভাবছেন। গুটিগুলোকে শচীর তৈরি রেশমী পুঁটুলি থেকে বের করে সবে গোছাতে শুরু করেছেন,এমন সময় পাশে রাখা বাক্ যন্ত্রখানি সরব হয়ে ওঠে। যন্ত্রখানির দিকে নিতান্তই বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই দেখে পজ্জন্যর তলব। “ কী ব্যাপার? হঠাৎ ফোন করেছো কেন?” “ফোন কি আর সাধে করেছি? চতুর্দিক তোলপাড় হয়ে গেল ভোলুরামের হাঁচির শব্দে, আর আপনি শুধোচ্ছেন কী ব্যাপার!” – পজ্জন্যর কথায় খানিকটা উষ্মা ঝরে পড়ে। ... ...
সন্ধ্যে মেখে কুড়িয়ে নেওয়া চাঁদের আলো, ভরদুপুরে ধার করে নাও ছায়ার আড়াল, ... ...
পুজো এখন এখানে ফুরিয়ে গিয়েছে তবু ব্যাকইয়ার্ডের সকাল বাতাসে হঠাৎ শরতে শিউলির ঘ্রাণ ... ...
হ্যাজাক একটা আলো নয়, অনুভূতি। উত্তাপ পেলে তীব্র হয়। কেউ কি বলেছিলো আগে? নাঃ কেউ বলেনি। এখানে, এই বারান্দায় হ্যাজকের অনুভূতির উত্তাপ যতদূর, ঠিক ততদূর চোখ যায়। তার ওপারে কিছু নেই। নাঃ সত্যি কিছু নেই। আছে বারান্দার বাসিন্দারা, হ্যাজকের কাছেপাছে। কীর্তন, রামপ্রসাদী, সব চলছে একের পর এক। গেলুমামা মানে শম্ভুদার বাবা গলা খেলিয়ে সন্ধ্যেটাকে বড় করছে। সুপ্রিয় ওর মায়ের পেছনে অল্প ছায়ায় লুকিয়ে সাথীদিকে দেখছে। সাথীদির এখন বিনুনি, খুলে রাখেনি। অন্ধকারকে শাসনে রাখার অভিপ্রায়। ... ...
আলো ছিল, আবার যেন ছিল না—হালকা, প্রায় অদৃশ্য ... ...
এক বন্ধু এই পুজো সম্পর্কে খবর দিলেন যে পুজো কমিটির মধ্যে মিলে মিশে আছেন বাঙালি অবাঙালি সমস্ত ধরনের মানুষ। সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এইবার ভাবনা হবে লীলা মজুমদার। তারপরেও শোনা গেছে একজন অবাঙালি দর্শক বলছেন, “ক্যায়া সব লিখা হ্যায় সব বাংলামে, হিন্দিমে কিউ নেহি হ্যায়?” তখনই মনে হলো আমরা জিতে গেছি। বাংলায় লেখা, বাংলার লীলা মজুমদার, উপেন্দ্রকিশোর, সত্যজিৎ রায়দের একটা ইতিহাস আছে, সেই ইতিহাস সেই ঐতিহ্য না জেনে, না বুঝে এই বাংলায় হিন্দি যাঁরাই চাপাতে যাবে, তাঁরা ধাক্কা খাবে। কোনও সঙ্ঘ পরিবারই এই ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতে পারবে না। মনে পড়ে যাচ্ছে কলকাতার একটি পুজো একবার একটি মণ্ডপ তৈরী করেছিল, নাম দিয়েছিল ‘হলদি কা প্যান্ডাল’। সেই পুজো যে বাঙালির আত্মাকে ছুঁতে পারেনি, তা বলাবাহুল্য। সেই জন্যেই এবারের কাশী বোস লেনের পুজো অনন্য হয়ে উঠেছে। প্রতিটি পুজো মণ্ডপই যেন এক একটা আলাদা লড়াই। হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কাশী বোস একটা প্রতিবাদ। ... ...
চা নিয়ে প্রথমটা আমরা বসতাম রান্নাঘরের সামনের চাতালটিতে। পরে সেখানটা ঘিরে একটা স্টোর রুম বানানো হল। তখন আমরা বসতাম মায়ের ঘরে। পরে মা অসুস্থ হতে তিনি সারাদিন ঘরেই থাকতেন। তাই সন্ধ্যেবেলায় চা খেতে তাঁকে একটু জোর করেই নিয়ে আসতাম বাড়ির পিছনের দিকের সিঁড়ির চাতালে। শেষ বিকেলের মিঠে রোদ, পেয়ারা গাছের সবজে হলুদ রঙের মাঝে লঙ্কা ঠোঁটের টিয়াপাখির খেলা দেখে যদি এই মরজগতের আঁকিবুকিতে মা’র মন ফেরে। কিন্তু মা’র চোখে হয়তো এসব পড়লনা। মা ইহজগতের মায়া ভুলেছেন। ... ...
অনুরূপা এবং তার গার্লস কলেজ দলটা ওনাকে দেখে বড়ো ভরসা পেয়েছে, এসব রাস্তায় পুজোর দিন হলেও কেমন গা ছমছম করে কিনা, স্পেশালি কয়েকটা হোস্টেল কাটিং ছেলে পদ্মপুকুরের লাইন থেকেই যে ভাবে অ্যাটেম্পট নিচ্ছিলো। আপাতত বোধিস্বত্ত্ব এইখান দিয়ে হনহনিয়ে, রাদার বলা ভালো দৌড়েই যাচ্ছে, ম্যাডক্সে লোকজন গোল হয়ে বসবে, অলরেডি একঘন্টা লেট, সুদীপ্তা কার সঙ্গে গল্পো জুড়ে দিলো কে জানে, আর উলটো দিক থেকে তুমুল ঝগড়া করতে করতে সৌমিতা-রাণা হেঁটে আসছে; সৌমিতা হয় এই শেষ কথা বললাম বলে তুমুল চেঁচাচ্ছে (হোমগার্ড সাহেব বেশ আমোদ পাচ্ছেন এতে) অথবা জাস্ট কোনও কথাই বলছে না, রাণা-কে তো বলেই দিয়েছে, আমি আলাদা আর তুই আলাদা ঘুরছি, এর পর আর কথা বলারও কিছু নেই। ... ...
থার্ড ইয়ারে থেকে আমার কেমন করে একটা নতুন নাম হল। "সভাপতি'। তবে তখন থেকে মাল-পার্টিগুলোকে একটা স্ট্রাকচার দেওয়ার চেষ্টা করতাম। প্রথমে একটা উদ্বোধনী স্পিচ । তারপর এনাউন্সমেন্ট হত আধঘণ্টা অন্তর। "এবারে পানু পাঠ করে শোনাবেন' এই রকম আর কি। বাইরে সিকিউরিটি বসার পর আমার রুমে ভেন্যু শিফট হল, সিগগি ফেলার জন্য আলাদা ট্রাশের দরকার হত না, কারন গোটা রুমটাই ছিল মোটামুটি তাই। আর ছিল আমার একখান স্পেশাল লাল ব্যাগ। কাঁধে ঝোলানো। এই ব্যাগটা করে নোংরা জামা কাপড় নিয়ে শনিবার বাড়ি ফিরতাম আর বাড়ি থেকে কাচা জামা নিয়ে আসতাম। ঐ ব্যাগ নিয়েই বেরোতাম মাল কিনতে। ঐ ব্যাগটাও কেমন করে জানি লেজেও, একরকমের প্রতীক হয়ে গেল। ... ...
এবারও হয়তো পুরোপুরি সফল হবেন না। কিন্তু থামবেন না গ্রেটা থুনবার্গ ও তাঁর সহযোদ্ধারা। তবে বেদনার কথা মুসলিম ভ্রাতৃত্বের ধ্বজাধারী সৌদি আরবের একজন প্রতিনিধিও নেই। একটা পয়সাও দেননি। গ্রেটা থুনবার্গ রা গেছেন মানবতার জন্য। মনুষ্যত্বের জন্য। ধর্মের অপধর্ম বন্ধ করার জন্য। ... ...
নব চুপ করে থাকল। বন্ধুদের নাম করতে নেই। নাম লিখতে নেই বন্ধুদের তবু নবর নাম লিখে ফেলেছিলাম। ভুল করলাম কি? বিজয়দার নামও লিখেছি, দেখছি ও পড়ে আছে। কুয়াশা ঘন হলে দেখা যাচ্ছে না। ঘন কুয়াশার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। সূর্যের অভাব অনুভব করলেই দৃষ্টি আরো তীক্ষ্ণ হচ্ছে তখনই সব দেখতে পাচ্ছি। কুয়াশা ভেদ করে সিংকোনার বাকল মাথায় বেঁধে নিয়ে একজন চলে গেল। সে যেন কুয়াশাকে সঙ্গে নিয়ে গেল আর আমি দেখছি বিজয়দার মাথায় টুপি। সে পড়ে আছে, অদ্ভুত একটা টুপি পরেছে। সেই ঝোপের মধ্যে দিয়ে কুয়াশার আগে পড়ে রয়েছে। তারপর থেকে কুয়াশার অঞ্চল শুরু হয়েছে। সেখানে সব আবছা। কিছু দেখা যায় না। ... ...
এরপরেই আসে পঙ্গপাল আর তার সঙ্গেই আসে ১৯৪৩ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষের কথা। বাংলার মাটি এতো উর্বর এতো শষ্যশ্যামলা হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে ঔপনিবেশিক শাসক এবং কিছু মুনাফাখোর কতিপয় মানুষ এবং অবহেলার কারণে বাংলার মানুষের এত দুর্দশা হয়েছিল, সেটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে মন্ডপের তৃতীয় অংশে। ... ...
আজ সোনম ওয়াংচুক কারাগারে। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন, তাঁর দর্শন, তাঁর আন্দোলন—এসবকে কারাগারের দেওয়ালে আটকে রাখা যাবে কি?একজন ব্যক্তি যখন গোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক প্রতীক হয়ে ওঠেন, তখন তিনি আর শুধুই ব্যক্তি থাকেন না। হয়ে ওঠেন সমষ্টির একজন। তাই একজনকে বন্দি করার অর্থ আন্দোলনকে আরও অনেক বেশি উস্কে দেওয়া। ... ...
রাজনৈতিক পরিচিতি নির্মাণ আসলে একটি জোট বা কোয়ালিশন নির্মাণ – কখনও সেখানে বাঙালি হিন্দু, বাঙালি মুসলমানের সঙ্গে জোট গঠন করবে আবার কখনও বাঙালি ব্রাহ্মণ, উত্তরপ্রদেশ বা মহারাষ্ট্রের ব্রাহ্মণদের সঙ্গে জোট তৈরি করবে। সমস্যা হল, পরিস্থিতি ভেদে পুরনো কোয়ালিশন ভেঙ্গে নতুন কোয়ালিশনের জন্ম হয়, তার ফলে মানুষ তার প্রধান পরিচিতিকেও পালটে ফেলতে পারে। ... ...
‘বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই নবী'- তাঁর 'আমার কৈফিয়ত' পড়ে মনে হল নজরুল ইসলাম তাচ্ছিল্যের হাসিতে ফেটে পড়েছেন। উত্তরসূরিরা তাঁর মূল্যায়নে যে রকম লাজনম্র নববধূর মতো দ্বিধাকম্পিত বাক্যরাশি নিবেদন করে চলেছেন, এতটা তাঁর দূর প্রত্যাশায়ও ছিল না। নজরুলকে নিয়ে বাঙালি শিল্পীসমাজের, বিশেষত কবিদের, অস্বস্তির শেষ নেই। তাঁকে বাতিল করা যায় না স্বভাব-কবি বলে, কিন্তু গ্রহণ করায় সমস্যার ব্যাপ্তি প্রচুর। আমাদের সান্ধ্য লিরিক-বিতানে নজরুল প্রায় এক সাংস্কৃতিক উপদ্রব। ... ...
রণরক্তে স্নাত বাংলাদেশ নির্বাসনে আছি, বেঁচে আছি স্বর্ণপ্রসূ আমার অভ্যেস লেজারের খোপে ফেলি মাছি- আমি জানি সমস্ত ব্যথাই একদিন সহনীয় হয় অঙ্ক কষে দূর করি তাই অতিরিক্ত বেদনার ভয়! ... ...