এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় অ্যাক্সিলেটার

    Binary
    অন্যান্য | ১৬ জুলাই ২০০৯ | ১২৯৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Binary | 70.64.***.*** | ১৬ জুলাই ২০০৯ ০৬:২৮416018
  • রকি পাহাড় বললেই লোকে কেন যেন জন ডেনভারের, 'কলোরাডো রকি মাউনটেন হাই' -এর সুর ভাঁজে। কিন্তু রকি-র আসল সৌন্দর্য্য যে কানাডিয়ান রকি, এই সত্যিটা একটু কম জনপ্রিয়। তো, লালমুখো সহকর্মীরা এইটা কুন্তলকে বুঝিয়েছিলো। আরো বলেছিলো, রকি মাউন্টেন-এর সুরু অ্যালবার্টা সীমানা, আর শেষ সেই ভ্যাঙ্কুবার-ব্রিটিশকলোম্বিয়া-ভিক্টোরিয়া-আর্কিপেলেগো। আর আরো বলেছিলো, ভ্যাঙ্কুবার যেতেহলে, মানে মিটার-কিলোমিটার মেপে রকি পাহাড় দেকতে হলে, জুলাই মাস-ই সচ্চেয়ে ভালো।

    তো এতে কুন্তলের বাঙ্গালী রক্ত গরম খেয়ে গেল। প্ল্যান হয়ে গেল, সাস্কাটুন-ভ্যাঙ্কুবার সড়কপথে। আবার ফেরাও। যেতে আসতে ৪০০০ কিলোমিটার। এরপর আর কি ? ম্যাপ তৈরী হল, পথে কোন কোন গ্রামে বা শহরে রাত কাটানো হবে তার নক্সা তৈরী হল, এক্সপেডিয়াতে মোটেল বুকিং হল, তারপর চলল আবহওয়া খবরা খবর নেওয়া। অবশ্য আবহওয়ার সঙ্গে, প্ল্যানের কোনো পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, ছুটি, নিজের, বৌএর। কারণ, মেয়ের আবদার। জুলাইএর প্রথম শুক্কুরবারে রওনা দেওয়ার আগেরদিন শেষ সন্ধ্যায়, হুড়ুম বাক্সপ্যাঁটরা গোছানো শুরু হল, ঐ যেরকম প্রতিবার-ই হয় আরকি, র‌্যান্ডম। প্রথমেই তক্ক-বিতক্ক সুটকেশ একটা না তিনটে, বৌ বলে তিনজনের তিনটে, কুন্তল বলে -- 'পাগল নাকি ? বড়জোর দুটো'। তারপর বৌ-এর লিস্টি মত, ছাতা, জুতো, টর্চ, রেনকোট, গরমজলের ফ্লাক্স, গামছা-টাওয়েল, সানক্রিম (দেশী বাদামী চামড়ায় সানক্রিম কি কাজ দেয়, সে একমাত্র বৌ-ই জানে) ইত্যাদি প্রভ্‌তি কত্তে কত্তে রাত। শেষ সময়ে মনে হল, মাথাধরা, গা-বমিবমি, মেয়ের জ্বর-কাশি, পেট ব্যাথার ওষুধ কিনে আনতে ভুলে গেছে, কুন্তল। আরেক প্রস্থ কলহ-কাজিয়া। এত সব কোরেটরে, রাত দুটোয় ঘুমিয়ে, সকাল সাতটায় পার্কিংলট থেকে যখন গাড়ী বের করল কুন্তল, তখন, আকাশ মেঘলা, ঝিরঝিরে ব্‌ষ্টি (আগেরদিন আবহওয়া চ্যানেল বলেছে ৬০% প্রেসিপিটেশন, ব্‌ষ্টির সম্ভবনাকে প্রেসিপিটেশন শুনলে কুন্তলের কেমন যেন অসোয়াস্তি হয়)।

    সাস্কাটুন, নামেই মেট্রো, কিন্তু আসলে মফ:স্বল শহর। একটা বড় ইউনিভার্সিটি, আর কিছু ক্যামিকাল-ফার্টিলাইজার কোম্পানী। দক্ষিণ-পশ্চিমের হাইওয়ে সেভেন, ধরে দশ কিলোমিটার গেলেই ক্ষেত খামার। আবার ঢ-ংও আছে প্রচুর। সাস্কাচুয়ান প্রভিন্সের নামটা বাহারি, 'ল্যান্ড ওফ লিভিং স্কাই'। এটা অবশ্য অন্য কারণে, সাস্কাচুয়ানের প্রায় সিংহভাগ, কানাডিয়ান প্রেইরি, দিগন্ত বিস্ত্‌ত সমতল ভুমি। তো, ঝিরঝিরে ব্‌ষ্টিতে, শুক্কুরবারের সকল সাতটা-সাড়ে সাতটায়, হাইওয়ে সেভেন-এ, পশ্চিমদিক-গামী লেন-এ এর সমতল রাস্তায়, ট্রাফিক প্রায় নেই বললেই চলে। গাড়ীর স্টিরিও-তে, 'ইয়ে দোস্তি','সুহানা সফর','মাসাককালি মাসাককলি' (সব বৌয়ের পছন্দে), এর পর, একটু যেই, 'ইচ্ছে হল একধরনের গঙ্গা ফরিং...' বেজেছে, ওমনি ডিজনি-ফ্যামিলি চ্যানেলে ব্রেনওয়াশ হওয়া মেয়েটা, পেছন থেকে, 'বাবা, হ্যানা-মন্ট্যানা, হ্যানা-মন্ট্যানা', করে কাদুনি জুড়লো। হাইওয়ের দুধারে, মাইলের পর মাইল হলদে ক্যানোলা ক্ষেত। দেশী সর্ষে ক্ষেতের মত, তেল হয় ক্যানোলা বীজ থেকে। মেঘলা আকাশ, একটু ভাঙ্গা-ভাঙ্গা রোদ, ক্যানোলাক্ষেত আর ওয়াইপারের সপাত-সপাত -এর স্‌ঙ্গে তাল রাখতে রাখতে, 'আজি ক্যানোলাক্ষেতের রৌদ্রছায়ায় ....' শোনাটা-ও যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছিলো অবশ্য। কিম্বা, 'আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ .....'। ধু-ধু ফাঁকা, সমতল ক্ষেতের মাঝে মাঝে, দুর্গ-টাইপ স্ট্রাকচার, গ্রেন এলিভেটার। পুরোনো একটা, কাঠের তৈরি, নতুন একটা কংক্রিটের দইত্যাকার সিলিন্ডারের মত। পাশে পাশে গুড্‌স ট্রেনের লাইন, ঝাড়াই-বাছাই, প্যাকিং হয়, ক্ষেতের ফসল। ফসল বলতে গম, ক্যানোলা, বার্লি, ওট। গ্রেনএলিভেটার ব্যাপারটা অনেকটা বঙ্গদেশের ধানের গোলা-কাম-মাড়াই কল -এর মাস-প্রোডাক্টিভিটি ইউনিট মনে হয় কুন্তলের।

    প্রথমদিনের হিসাবে আছে, ৪৮০ কিলোমিটার। প্রথমদিনের হল্ট প্ল্যানে আছে, ড্রামহেলার। ড্রামহেলার কি ও কেন, সেই সাতকাহন -এর আগে বলতে হয়, কুন্তলের ইচ্ছে ছিলো, আরেকটু এগিয়ে ৬২৫ কিলোমিটার মত গিয়ে, ক্যালগেরিতে রাত কাটানো। কিন্তু মেয়ের আবদার আর বউ-এর, 'এত তাড়াহুড়ো করে, কি অভিষ্ট সিদ্ধ হবে ? কোনদিন যে ঘটে প্রক্টিকাল বুদ্ধি হবে ?' এর ধাতানি খেয়ে, ড্রামহেলারে-ই রাত কাটানো ঠিক হয়েছে। তো, গ্রেনএলিভেটার-এর পর, একবার, প্রক্‌তির ডাকে সারা দিতে গ্যাস স্টেশনে দাঁড়িয়ে, দুবার কমলাকোট পরা, রোড কনসট্রাক্‌শন কর্মীদের, 'গো স্লো' পতাকায় গতি ঘন্টায় ৫০ কিমিতে নামিয়ে, আর একবার, 'হান্না' বলে একটা ছোট্টো রোড-সাইড পাড়াগাঁয়ে অখাদ্য হ্যাম্বার্গার-আলুরচোখা (পরিভাষায় পোট্যাটো ওয়েজেস) দিয়ে লাঞ করে (শুক্করমাংসে বিবমিষা আসে বলে, বউ স্যালাড খেল, আর কুন্তল নির্ঘাত জানে আগামী ১০ দিন, চীনে বা ভারতীয় খাবার না পেলে, বউটা স্যালাড খেয়ে থাকা-ই প্ল্যান করেছে), ড্রামহেলার ভ্যালীতে পৌঁছোতে দুপুর দুটো।

    ড্রামহেলার। ডাইনো সিটি। অ্যালবার্টা-য় ঢোকার পর, হাইওয়ে সেভেন, হাইওয়ে নাইন হয়ে গেছে, সেই হাইওয়ে নাইনের প্রথম শহর। ঢোকার মুখে বাঁক নেওয়া পাহাড়ি রাস্তায়, গাড়ীর অ্যাক্সিলেটার আর ব্রেক-এ সামঞ্জস্য রাখাতে একটু বেগ পেতে হয়, তারপর, রাস্তা সোজা হলে, বাড়ীঘরের উপর দিয়ে দেখা যায়, বিশাল টাইরানোসোরাস। সিমেন্ট-কংক্রিটের, প্রায় ৮৫ ফুট লম্বা 'ওয়ার্ল্ডস লার্জেস্ট ডাইনো' (মানে উত্তর অ্যামেরিকার, একথা-সেকথায় ওয়ার্ল্ডস লার্জেস্ট বলার আরেকটি নমুনা)। সেই 'ওয়ার্ল্ডস লার্জেস্ট ডাইনো' -এর সামনের পার্কিং লটে গাড়ী রাখে কুন্তল। মেয়ে, মায়ের সঙ্গে লাফাতে লাফাতে, ডাইনোসরাস চড়তে গেল, মানে লিফট বেয়ে সেই প্রকান্ড ডাইনো-র মাথায় চড়বে, অবশ্য মাগনা নয়, টিকিট কেটে। চারিদিকে ক্যামেরা কাঁধে টুরিস্ট, কুচোকাচার দল। সবুজ ঘাসের লন, আর ফোয়ারা। এখানে আর ব্‌ষ্টি নেই, রোদ উঠেছে, গরম, ৩০ ডিগ্রী-র কাছাকাছি (সে:)। কয়েকটা বাচ্চা, খালি গায়ে ফোয়ারার জলে ভিজছে, কানাডায় গরমকাল, এরকম-ই ফুর্তির।

    মেয়ে আর মা'র ডাইনো-র মাথায় চড়া শেষ হলে, পরবর্তি গন্তব্য, উত্তরের, 'নর্থ ডাইনোসোরাস ট্রেল' -এ সাত কিলোমিটার গিয়ে, 'রয়াল টাইরল মিউসিয়াম'। ড্রাম্‌হেলার ভ্যালী-তে নাকি দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশী ডাইনো জীবাশ্ম পাওয়া গেছে, বা এখনো যায়। প্রক্‌তপক্ষে, সাউথ অ্যালবার্টা আর সাউথ সাস্কাচুয়ান প্যালিওন্টলজিস্ট-দের সবচেয়ে বড় কাজের যায়গা। কানাডিয়ান ব্যাডলান্ডস। ক্রেটাসিয়াস যুগের ফসিলবেড। এখনো পুরোদমে জীবাশ্ম উদ্ধারের কাজ চলে এখানে। 'রয়াল টাইরল মিউসিয়াম', ফেলুদার ভাষায়, আনপুটডাউনেবল। প্‌থিবী-র ন্‌তত্ব-জীবতত্ব বিবর্তনের ছবি এখানে জীবন্ত। প্রধান হলে, টাইরানোসোরাস এর সম্পূর্ন উদ্ধার করা জীবাশ্ম। হিম ধরিয়ে দেয়। সঙ্গে হলিউডি লাইট এফেক্ট। এরপর আরো, অসংখ্য, পের্মিয়ান, ট্রাইয়াসিক, জুরাসিক ন্‌তত্বের ইতিহাস। প্রাচীন অ্যাকোয়াটিক দানবিক জীবাশ্ম, আধুনিক যুগের, স্তন্যপায়ী ম্যামথ-এর জীবাশ্ম। অসাধারণ সব চার্ট আর ইন্টার‌্যাক্টিভ ভিডিও স্ক্রিন, বাচ্চা থেকে বুড়ো, সবার জন্য। কাঁচের ঘরে জীবাশ্ম উদ্ধারের ক্যামিকাল প্রসেসিং হাতে কলমে সেখানোর ব্যবস্থা। অসাধারণ প্রেজেন্টেশন প্রতিটা সাবজেক্টের।

    জুলাই-আগস্ট মাসে রাত নয়টা পজ্জন্ত খোলা থাকে 'রয়াল টাইরল মিউসিয়াম', তো আটটার সময়, মেয়ে আর মা-কে মোটেলে যাওয়ার জন্য তাড়া দেয় কুন্তল। মেয়ে এমন মুখ করে, যেন কোনো গরহিত শাস্তির কথা বলা হচ্ছে ওকে। আরো দুতিন বার তাড়া লাগিয়ে, মিউসিয়াম থেকে বেরিয়ে, একটা চীনে রেস্তোরায় চিলিপ্রন ইত্যাদি খেয়ে মোটেলে। মোটেলের রিসপ্‌শনের মাঝবয়সি গোম্‌ড়া মুখের মহিলা, ক্‌পা করার মত ঘরের চাবি দেয়। তারপর, 'বাথরূমে হেয়াড্রাইয়ার নেই কেন' আর আবার নিজের 'বুদ্ধিহীন ঘটের' বর্ননা শুনে, কম্বলমুড়ি দিয়ে শুতে যায় কুন্তল। পরদিন সকালে, সসেজ ভাজা আর ডিমের অমলেট-এর ব্রেকফাস্ট (বউ যথারীতি ফলের রস আর স্যালাড), তারপর আবার হাইওয়ে নাইন। ও হ্যাঁ বলা হয়নি, বউ-এর কড়া নির্দেশে কেবল রাত নটার পরে গাড়ীতে গ্যাস ভরছে, কুন্তল। তাতে নাকি, লিটারে এক পয়সাকরে বাঁচে। এক ট্যাংকিতে আশি পয়সা। টীমহর্টনের এক কাপ ফ্রেঞ্চভ্যানিলা কফি। সব বৌ-এর হিসাব।

    ছোটোবেলায় একবার, বাবা-মা-কাকু-পিসিদের সঙ্গে ডিজেলের ধোঁয়াছাড়া অ্যাম্বাস্যাডার গাড়ীতে, ডায়ামন্ডহারবার বেড়াতে গেছিলো কুন্তল। ফেরার পথে, 'বাবা, হিসু করব' বলাতে, বাবা গাড়ী থামিয়ে, রাস্তার ধারে ঝোপের পেছনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলো ওকে। ড্রামহেলার ছাড়িয়ে মিনিট তিরিশেক চলার পর, পেছনথেকে মেয়ের, 'বাবা, ওয়াশরুম', শুনে, হাইওয়ের বোর্ড দেখতে থাকে কুন্তল, পরবর্তী গ্যাসস্টেশন আর কতদুর ? 'হিসু করার' জায়াগা মিলবে সেখানে ....

    ড্রামহেলারের ছবি
    http://tinyurl.com/m5r9ph

    (চলবে)

  • dipu | 207.179.***.*** | ১৬ জুলাই ২০০৯ ০৯:১৪416029
  • চলুক চলুক
  • d | 117.195.***.*** | ১৬ জুলাই ২০০৯ ০৯:৩১416030
  • হ্যাঁ চলুক চলুক।
    শেষ হয় যেন।
  • dipu | 207.179.***.*** | ১৬ জুলাই ২০০৯ ০৯:৩৫416031
  • আগের দুখানা গল্প শেষ করেনি :X
  • Arijit | 61.95.***.*** | ১৬ জুলাই ২০০৯ ০৯:৫১416032
  • ক্যানাডিয়ান রকি-র ছবি দেখবো। আমি জৈবনকালে কলোরাডো রকি মাউন্টেন এরিয়ায় অনেক ঘুরেছি - অসাধারণ সব জায়গা।
  • d | 144.16.***.*** | ১৬ জুলাই ২০০৯ ১৪:২৬416033
  • বাইনারির অক্কুটে আছে তো। আমি দেখে শেষ করতে পারি নি এখনও।
  • Arijit | 61.95.***.*** | ১৬ জুলাই ২০০৯ ১৪:৩৭416034
  • ওক্কুটে না। ওক্কুটে ফটো সংক্রান্ত ইনফো দেয় না। আমি ওগুলো দেখি - তাই পিকাসায় চাই।
  • Blank | 170.153.***.*** | ১৬ জুলাই ২০০৯ ১৫:৫৩416035
  • কিন্তু বাইনারি দার অন্নপ্রাশন কি মাঝে মাঝেই হয় !!!
  • subrata | 117.194.***.*** | ১৬ জুলাই ২০০৯ ১৭:০৮416036
  • খুব ভ্লো
  • Binary | 198.169.***.*** | ১৬ জুলাই ২০০৯ ১৯:৫১416019
  • এইও, ব্ল্যাঙ্কি অন্নপ্রাশন নিয়ে কি কইলো ? বোঝলাম না। তবে এইটা শেষ করবই।
  • Binary | 198.169.***.*** | ১৮ জুলাই ২০০৯ ০০:৫৭416020
  • ক্যালগেরি, এখোনো পর্য্যন্ত, কানাডা-র সবচেয়ে বিত্তশালী শহর। কারণ তেলের টাকা, যা লোকে প্রায়-ই বলে থাকে মধ্য প্রাচ্য সম্বন্ধে। অ্যালবার্টা উত্তর অ্যামেরিকার অয়েল বেড। পেট্রোকানাডা, সেভ্রনকানাডা,কানাডিয়ান ন্যাচারাল, প্রায় সব ছোটোবড় তেল কম্পানীর হেডকোয়ার্টার ক্যালগেরিতে। কাজে-অকাজে ক্যালগেরি-তে আসা যাওয়া অনেকবার-ই করতে হয়েছে, কুন্তলকে। সড়ক পথে-ও। ড্রামহেলার থেকে ক্যালগেরির সোজা রাস্তা, হাইওয়ে নাইন, ক্যালগেরির কিছু আগে মিশে গেছে, ফ্রিওয়ে ওয়ান-এ। তো, গেলবার দেখেছে কুন্তল, ড্রামহেলার-এর ৭০/৭৫ কিলোমিটার পরে হাইওয়ে নাইন, সারাই হচ্ছিলো। মানে বিটুমিন-কংক্রিট থেকে পুরোকংক্রিট হচ্ছিলো, বাইলেন হচ্ছিলো, রোডশোল্ডার চওড়া হচ্ছিলো। তো সে হচ্ছিলো-তো-হচ্ছিলো, কিন্তু অর্ধতৈরী সেই গ্রাভেল-নুড়ি-পাথরের রাস্তায়, গাড়ীর গতি ৪০ কিমি -এর বেশী ওঠনো নিয়ম বিরুদ্ধ। রোডরোলার, মিক্সারমেসিন-এর ধোঁয়া আর ধুলোয়, ৪০ কিমি গতি রাখাও সম্ভব নয়। তো, একবছর পরে এইবার, কনস্ট্রাকশন এখনো শেষ হয়নি, এরকম-ই খবর ছিলো কুন্তলের কাছে। কে বলে কেবল বাঙ্গালীরা দীর্ঘসুত্রি ? অবশ্য কানাডায় রাস্তার কাজে দেরীর কারণ, কাজ হয় কেবল গরমে, ৩/৪ মাস, শীতে -৩৫ ডি:সে: তে কাজ হয় না।

    তো, হাইওয়ে নাইন পাশ কাটানোর জন্য, হাইওয়ে ৫৭৫/হাইওয়ে ২১ ধরলো কুন্তল। এটা নাইনের সমান্তরাল কিন্তু একটু লম্বায় বেশী, আর চওড়ায় কম। গ্রামের রাস্তা। দু পাশে ফার্ম হাউস। পর পর। রাস্তার ধারে ঘোড়া, চড়ার জমি। ইংরাজীতে যাকে বলে র‌্যাঞ্চ। ফার্ম হাউস থেকে কানাডার চাষাভুসোরা বিএমডাব্লিউ চড়ে রাস্তায় নামে। হাইওয়ে ৫৭৫/২১ দিয়ে ক্যালগেরি পৌঁছানোর ১৬০ কিলোমিটার অতিক্রম লাগলো প্রায় তিনঘন্টা। পথে দ্‌শ্য বলতে একদুই জায়গায়, র‌্যাঞ্চে, প্রেমালাপে আবদ্ধ, মদ্দা-মাদী ঘোড়া। কালকের পরে অবশ্য আর ব্‌ষ্টি পড়েনি। ক্যালগেরিতে ঢোকার মুখে, ৫/৬ কিলোমিটার আগে থেকেই যানযট। হ্যাঁ,ঁ ফ্রীওয়তেও। তারপর, শহরে ঢুকে, 'সেফওয়ে' (সুপারস্টোর, আলপিন থেকে ভুঁইকুমরো সব পাওয়া যায়) দেখে দাঁড়াতে হল, বৌ-এর হুকুমে। ওষুধ-টষুধ কিনতে হবে, আর মেয়ে অনেক্ষণ থেকে মায়ের সাথে পোঁ ধরেছে, 'স্ন্যাক চাই' বলে। তো, এইসব পারিবারিক কেনাকাটা-র মধ্যে, একটূ পায়েচারি করে কোমড় ব্যাথা কমিয়ে নিল কুন্তল, সামনে আরো ৪০০ কিলোমিটার, আজই, রত্রিবাস, রেভেলস্টোক। অবশ্য, পথে থামতে হবে আরো, কারণ ক্যালগেরির পরেই শুরু, রকি মাউন্টেন রেঞ্জ।

    ক্যালগেরিতে ঢোকার আগেই, 'ট্রান্স কানাডিয়ান হাইওয়ে' ওয়ানে মিসে যেতে হয়েছে। এই হাইওয়ে ওয়ান-ই চলবে পরের দুই দিন, ভ্যাঙ্কুবার পজ্জন্ত, খালি ক্যালগেরির কিছু পরে 'ব্যানফ' থেকে 'লেক লুইস' কমন রাস্তা হাইওয়ে ওয়ান আর হাইওয়ে ৯৩। হাইওয়ে ওয়ান এখোনো পজ্জন্ত দুই লেন-এর, মানে, যাওয়া-আসার দুটো পথেই দুটো করে লেন, ঘাড় নাড়াতে নাড়াতে শামুকের মত চলতে থাকা ট্রলার আর ২৪ চাকার গুড্‌স কন্টেনার -কে অবহেলায় পেছনে ফেলা যাবে। ছোটো গাড়ির গতি, ১৩০ কিমি -এর নীচে নামাতে হবে না। যদিও, ১১০ -এর উপরে উঠলেই, পাশ থেকে বৌ-এর , প্রথমে কড়া গলায়, 'হচ্ছেটা কি?', তারপর মাজায় কনুই-এর গুঁতো খেতে হচ্ছে বলে, আইনত স্পীড লিমিট ১১০ কিমি, -তার বেশী উঠছে না। তবে এই রাস্তায় ট্রাফিকের কম্‌তি নেই। গরমের ছুটিতে, সারা কানাডার লোক, বোঁচকা-বুঁচকি, কাচ্চাবাচ্চা, সাইকেল, তাঁবু, গাড়ীতে বেঁধে বেড়িয়ে পড়েছে, 'লিভিং লাইফ আউটডোর্স'। আর আছে গাড়ীর পেছনে বাঁধা নৌকা। ছোটোবেলায় গ্রামের পথে ঠেলা গাড়িতে বাঁধা ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে যেতে দেখেছিলো কুন্তল। তো, এখানে হোন্ডা সিআরভির পেছনে টো (সকেট-নাট-বল্টু দিয়ে জোড়া) করা সাদা-লাল-নীল রাঙ্গা চকচকে স্পীডবোট। পুরো কানাডাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য লেকে প্রোমোদ ভ্রমন হবে। আরো আছে, ট্রলার বা কম্পোজিট ক্যারাভ্যান। যে গাড়ীর মধ্যে আহার-নিদ্রা থেকে প্রাত:ক্‌ত্য সব-ই করা যায়। সুবিধামত থামিয়ে দিয়ে রাত কাটালেই হল।

    ক্যালগেরির, 'সেফওয়ে'র পাশে যে গ্যাসস্টেশনে দাঁড়িয়েছিলো কুন্তল, সেখানে, একটি সর্ভিস বয় (চেহারা দেখে, আর উর্দুটানে হিন্দী শুনে মনে হয় পাকিস্তানি), যেচে এসে, উইন্ড স্ক্রীন পরিস্কার করে দিয়ে কুন্তল-কে বলেছিলো, 'সালাম আলাইকুম'। এমনিতে স্টেশন থেকে গ্যাস নিলে তবেই এটা করার কথা, কুন্তল দাঁড়িয়েছিলো এমনি। তো, ছেলেটা বোধহয় আনকোরা, উইন্ডস্ক্রীন পরিস্কারের থেকে আরো ময়লা হওয়ায়, ব্যান্‌ফের আগে, 'ক্যানমোর' বলে একটা টাউনে ঢুকতে হল আবার। সঙ্গে, রাস্তায় যারতার সঙ্গে আলাপ করার জন্য, আবার বৌএর গঞ্জনা শুনতে শুনতে। তারপর, আবার দাঁড়াতে হল, ব্যান্‌ফ ন্যাশনাল পার্কের টোলপ্লাজায়। ৮ গেটের টোলপ্লাজায়, প্রতিটা গেটেই গাড়ীর লম্বা লাইন। শেষে, ছোটোগাড়ীর জন্য একটা অপেক্ষাক্‌ত ছোটো লাইন দেখে, পেছনে দাঁড়িয়ে, ৪৫মিনিট অপেক্ষা করে শেষে কাউন্টারে এসে শুনলো, যেহেতু ওরা 'ট্রান্সকানাডিয়ান ট্রিপ, টিল ভ্যাঙ্কুবার' তাই টোল লাগবে না, টোলপ্লাজার পাশের বাইলেন দিয়ে চলেযেতেই পারত ওরা। অর্থকরী লাভ হল, কিন্তু সময়ের ক্ষতি হয়ে গেল ৪৫ মিনিট।

    ব্যানফের কিছু পরে থেকেই, হাইওয়ে ওয়ান আবার একলেনের হয়ে গেছে, তবে রাস্তা পালিশ করা মস্‌ণ। আর বাঁক নেওয়া পাহাড়ী। ব্যান্‌ফে দাঁড়ায়নি কুন্তলরা। কিছুটা সময়ের অভাবে, আর কিছুটা, 'আগে দেখা হয়েছে', মনে করে। ব্যানফ, মধ্য পশ্চিম কানাডা-র সবচেয়ে জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট। চুড়ান্ত কমার্শিয়াল। অসংখ্য হোটেল। তিনগুন দাম দিয়ে সস্তা টিসার্ট ইত্যাদি কেনার সপিং মল। পকেট কাটা দক্ষিণা দিয়ে ঘোড়ায় চড়া বা পাহাড়ি নদীতে রবারের ডিংগি নৌকায় চড়ার (তার নাম নাকি রিভার র‌্যাফটিং) প্রলোভন। আগেরবার এসে, 'গ্যাসের দাম এক পয়সা বাঁচানো', বৌকে, আধা ঘন্টায় ১০০ ডলারে ঘোড়ায় চড়িয়েছিলো কুন্তল। তবে ব্যানফের কাছে, কাঁচঢাকা ছোট্টো কেবিনে, রোপওয়েতে, ৮০৪১ ফুট উঁচু সালাফার মাউন্টেন-এর চুড়ায় ওঠার ব্যাপারটা মন্দ লগেনি।

    এবার তাই ব্যানফ বাদ। তার বদলে, 'লেক লুইস'-এ দাঁড়ানো হবে ঠিক হয়েছে। রাস্তার বাঁকগুলো, অল্পউঁচু পাহাড়ের পাশে পাশে, এখোনো পজ্জন্ত। ছোটোবেলায় ভুগোল বইতে পড়া, হিমালয়ের তরাই অঞ্চলের কথা মনে হয় । পাহাড়ের গায়ে ঘন সবুজ পাইন বন। বৌ পাশ থেকে আফ্‌শোস করছে, কুন্তলের দায়ীত্বজ্ঞানহীনতার জন্য, ক্যামেরাটা গাড়ীর ডিকিতেই রয়ে গেছে, আর বাইরেটা এতই ভালো যে চুপকরে অভিযোগটা হজম করে চলেছে কুন্তল, আর বান্ধবীদের কাছথেকে আলোকপ্রাপ্ত মেয়ে, পেছেন থেকে, 'ঐ পাহাড়টর নাম, থ্রি সিস্টার্স, আর ওটার নাম প্রেগনেন্ট লেডী' করে চলেছে। মধ্যিখানে, একটা লেকের ধারের, এক্সটেন্ডেড-হাইওয়ে-শোল্ডার-রেস্টিং এরিয়া দেখে, বৌ আচমকা, 'এখানে দাঁড়াবো, এখানে দাঁড়াবো' বলাতে, প্রানপনে ব্রেক কষতে হল । পেছনের গড়ির মাঝবয়সী চলক কোনোরকমে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় আগুনে দ্‌ষ্টিতে দেখে গেল ওদের। থামা হল ডিকি থেকে ক্যামেরা বার করার জন্য, আর কিছু ফটো নেওয়ার জন্য। ফটো তোলাটোলা অবশ্য বৌ-এর ডিপাটর্মেন্ট, মাঝে মাঝে 'জো হুকুম' বলে পোজ দিতে হবে কুন্তলকে। এরপর আবার কিছুক্ষন পাহাড়ি রাস্তায়, কন্সট্রাকশন পতাকায় আটকে থেকে, দুপুর দুটো নাগাদ, 'লেক লুইস' ।

    লেক লুইস। থমকে দেওয়া নৈসর্গ্য। পাহাড়ে ঘেরা। পাহাড়ের চুড়ায়, এই জুলাই-তেও সাদা বরফ। কোনো এক অপ্রাক্‌ত কারণে জলের রং আকাশী নীল। তবে কুন্তলের মনে হল এখানে আসার আদর্শ সময় এপ্রিল-মে। কারণ, দুপুর আড়াইটে, জুলাই মাসের প্রথম শনিবার,যখন পৌঁছাল ওরা, তখন সরু অ্যাপ্রোচ রোডে গাড়ীর সারি, রাস্তায় পানামা হ্যাট, রং বেরংএর বারমুডা, রংগীন ছাতা, বাচ্চাদের স্ট্রলার, ক্যামেরা কাঁধে জাপানী, রুকস্যাক কাঁধে অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে ক্যাম্পার। লেক-এর জলে রাবার ডিঙ্গি-র ভীড়, তিন সওয়ারির ক্যানোবোট। পার্কিং লটে সারিসারি টুরিস্ট ভলভো বাস, আইসক্রীম স্টল। এরচেয়ে এপ্রিল-মে তে মনে হয় এখানকার নৈসর্গ্য অনেক ভালো উপভোগ করা যায়। প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গাড়ী পার্ক কত্তে হয় কুন্তল-কে। তারপর হাঁটাপথে লেক, বউ-এর নির্দেশ মত ফটোশেসন। এরপর লেক লুইস টাউন-এ নেমে এসে মধ্যাহ্নভোজন। কাঠের দোতালা ম্‌দু বাতি জ্বালানো রেস্তোঁরা। ছোটো ছোটো কাঠের টেবিল, চারজনের বসার মতো। পশ্চিমী আর চীনে দুরকম খাবার-ই পাওয়া যায়। চর্বি গলানো, লেটুস পাতা দেওয়া চীকেন ব্রেস্ট আসে বাবা আর মেয়ের জন্য, মায়ের জন্য চীকেন-লো-মিন-স্যুপ।

    এদিনের এরপরের রুটীন, আরো ২০০ কিলোমিটার। অপ্রাক্‌ত সৌন্দর্য্য-এর রাস্তা ছাড়া বলার মতো ঘটনা ছাড়াই। ২০০ কিলোমিটার, দু-ঘন্টায়। রেভেলস্টোক পৌঁছাতে বিকেল সাতটা। কেবল সূর্য্য পশ্চিমে যাওয়ায় রোদচশমা পরায়, বৌ-এর কাছ থেকে আওয়াজ শুনতে হল। একে চশমার ওপর রোদচশমা, তারওপর, সাইড কাভার্ড। বৌ বললো, হাতে সাদা-লাঠি নেওয়া দ্‌ষ্টিহীন-এর মত লাগছে।

    রেভেলস্টোক, ট্রান্সকানাডিয়ান হাইওয়ে ওয়ানের ধারে একটা ছোট্টোটাউন, মুলত: কুন্তলদের মত সড়কপথে যাত্রীদের রাতকাটানোর হোটেল-মোটেল নিয়ে। আর শীতে, স্কিইং- রিসর্ট। আর এখান থেকে অ্যালবার্টা সীমানা শেষ, ব্রিটিশ কলোম্বিয়া সুরু। স্যান্ডম্যান হোটেল-র রিসেপশনিস্ট মেয়েটার ব্রিটিশ টানে ইংরাজী বুঝতে একটু খাবি খেতে হল কুন্তলকে। ওয়্যারলেস আইডি ঠিক করতে দুবার রিসেপশনে ফোন করতে হল। দুদিন পরে, ল্যাপটপ খুলে, ইনবক্সে মেল-এর পাহাড়।

    স্যান্ডম্যান হোটেলের বাথরুমে, হেয়ার ড্রাইয়ার, বৌ খুশি । হোটেলের পাশে লিকার শপ, হেইনিকেন বীয়ার পাওয়া গেল সেখানে, কুন্তল-ও খুশি। আর উইন-উইন সন্ধ্যায়, হোটেলের ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভিতে মেয়ের জন্য, ডিসকাভারি কিড্‌স .........

    লেক লুইসের ছবি .... http://tinyurl.com/mfr6t6

    (চলবে)
  • Binary | 70.64.***.*** | ১৮ জুলাই ২০০৯ ১০:২৫416021
  • গুগুল ম্যাপ .....http://tinyurl.com/lf3dlx
  • d | 117.195.***.*** | ০২ আগস্ট ২০০৯ ১৮:৩৭416022
  • ও বাইনারিইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইই
    ওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওও বা আআআআআআআআআআআআআঅইনারিইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইই
  • kc | 91.14.***.*** | ০২ আগস্ট ২০০৯ ২১:৫১416023
  • এভাবেও পাতা ভচ্‌কানো যায়। :)
  • Binary | 70.64.***.*** | ০৮ আগস্ট ২০০৯ ১৩:১৬416024
  • স্যান্ডম্যান হোটেলে সকালে হাফ ব্রেকফাস্ট। পুরো ব্রেকফাস্ট নিলে এমন আলুভাজার পাহাড় দেবে যে বলার নয়। তাই বৌ আর কুন্তল ব্রেকফাস্টের আলু ভাগাভাগি করে খেল। সঙ্গে মাখন-টোস্ট আর চটকানো ডিম। মেয়ের জন্য সসেজ রোল। স্যান্ডম্যান হোটেল থেকে বেড়িয়ে হাইওয়ে ওয়ানে এসে, স্পীডোমিটার ১০০ কিমি-র উপরে তোলে কুন্তল। রাস্তা এখন হঠাৎ-হঠাৎ বাঁক নেওয়া পাহাড়ের আড়ালে হারিয়ে গেছে। বাঁকের মুখে গতি ধরে রাখা মুস্কিল। রাস্তার ধারে ঝুঁকে আসা পাহাড়ের গায়ে, ঘন সবুজ পাইন বন, রোদ ঝলমল। রাস্তা এখন এক লেন-এর। উল্টোদিক থেকে আসা ৩২ চাকার ট্রাককে দেখে, রাস্তার একেবারে কিনারায় চলে যেতে হচ্ছে। দৈত্যাকার সেই ট্রাকের, স্রেফ হাওয়ার ধাক্কায়, স্টিয়ারিং নড়বড়, বুক ধড়ফড়। এসবের মধ্যে রাস্তার সৌন্দর্য্য উপভোগ করা মুস্কিল। স্টীরিও তে সেই বৌ-এর ইচ্ছামত, 'জব উই মেট' চলছে। বৌ-এর হাতে ক্যামেরা। সামনে, পাশে, পেছনে তাক করে, খচখচ সাটার চলছে তো চলছেই। প্রযুক্তি গতভাবে রাস্তা অবশ্য খুবই ভাল। মানে বাংলায় যাকে বলে র‌্যাঁদা করা মস্‌ন। রেভেলস্টোক ছাড়িয়ে ৪০ কিমি মত যাওয়ার পর, বিশাল হোর্ডি-ংএ 'এনচ্যান্টেড ফরেস্ট' লেখা আর তার তলায়, পশ্চীমি রূপকথার, পীটারপ্যান থেকে সিন্ডরেলার রঙ্গীন ছবি দেখে, পেছনে মেয়ে যথারিতি, 'এটা কোথায়, এখানে যাবই-যাব', ইত্যাদি সুরু করাতে, আরো ৫ কিমি গিয়ে, 'এনচ্যান্টেড ফরেস্ট'-এ দাঁড়াতে হল। 'কিড্‌স ৫ ডলার, অ্যাকোম্প্যানিং অ্যাডাল্ট ১০ ডলার', ২৫ ডলার দক্ষিণা দিয়ে, জঙ্গলঘেরা পুতুলরাজ্যে ঢোকা গেল। বার্চ আর পাইন ঘেরা পাহাড়ের বনে, মাঝে মাঝে, রূপকথার থীমে সাজানো পুতুল। কোথাও স্নোহোয়াইট, কোথাও 'থ্রী লিটিল পিগ্‌স'। গাছের গায়ে গায়ে দড়ির মাচা আর জাল লাগানো অ্যাডভেঞ্চার ট্রী ক্লাইম্বিং। মাঝে, ছোট্ট একটা ডোবা-র মত, ভেতরে ফিন্‌কি দিয়ে জল বেরোনো ফোয়ারা, অনেক্‌গুলো হাঁস চরছে ডোবার জলে, হাঁস আর হাঁসের ছানা। চারানা দিয়ে হাঁসের খাদ্য কেনা হল, মেয়ের বায়নায়। হংস-হংসছানা পরিব্‌ত হয়ে মেয়ের মুখে স্বর্গীয় হাসি, হাতের তালুতে খাবারের আশায় ঠোঁট বাড়িয়েছে হাঁসের দল ।

    দুপুরের খাবারের জন্য ক্যামলুপ্স, পৌঁছাতে বেলা দুটো বাজলো। রেভেলস্টোক থেকে ২২৫ কিলোমিটার আসতে এতক্ষন লাগার কারণ, 'এনচ্যান্টেড ফরেস্ট' ছাড়াও, বৌ-এর হুকুম মতো, আরো তিন বার, তিনটে গ্রামে দাঁড়াতে হয়েছে, ফটো সেশনের জন্য। পাথরে ধাক্কা খেয়ে গর্জন করে চলা পাহাড়ি নদী-র ধারে, পালিশ করা পাইন-চেডার কাঠের কটেজ-রিসর্ট, এর ধারে এক জায়গায় গাড়ীতেই বসে ছিলো কুন্তল। মেয়ে নিদ্রায়, তাই পাহারাদার হিসাবে। বৌ গেছে, ফটো তুলতে, জলের, পাহাড়ের। জায়গাটার নাম চুমক্রিক, শুসোয়াপ লেক। এর দু কিলোমিটার দক্ষিণে, একটা রেডইন্ডিয়ান রিজার্ভ। সংরক্ষিত অঞ্চল, সরকারি, নেটিভদের জন্য। যেখানে পার্ক করেছে কুন্তল, সেটা, হাইওয়ে ছেড়ে ডানদিকে এসে, একটা পীচ বাধানো সমতল জায়গা। একটু পেছনে ঢালু, ঘাস আর জংলা ফুলে ঢাকা জমি পেরিয়ে নদীর ধার। নদী মানে, খাঁড়ি। বৌ গেছে ঐদিকে ক্যামেরা নিয়ে। হাইওয়ে দিয়ে তীব্র ছুটে যাওয়া গাড়ীর চাকার শব্দ ছাড়া, জায়াগাটা খুবই নির্জন। অনেক পরে স্বাধীনতা পেয়ে, গাড়ীর স্টীরিওতে, 'একলা হতে চাইছে আকাশ' চালিয়েছিলো কুন্তল। খুব নীচু করে। এর মধ্যে পাশে এসে দাঁড়াল, বিশাল টুরিস্ট ভলভো বাস। পেছনে, আলাদা লাগেজ-ক্যুপ লাগানো। বাস থেকে পিলপিল করে নামলো জাপানী টুরিস্ট। জোয়ান, বুড়ো, বাচ্চা, মহিলা। রংচ্‌ঙে পোশাক। পুরুষদের সট্‌র্স, মেয়েদের স্কার্ট, মাথায় পানামা হ্যাট, গলায় অদ্ভুত-ওজোনদার-জটিল সব ক্যামেরা। ওদের কিচির-মিচিরে, মেয়ে ঘুম থেকে উঠে, জড়ানো গলায় বলল, 'হোয়্যার আর উই' ?

    ক্যামলুপ্সে পৌঁছানোর আগেই, বৌ ফতোয়া দিয়েছিলো, দুপুরের খাওয়া ভারতীয় রেস্তোঁরায়। তো, ক্যামলুপ্স পৌঁছে, জিপিএস -এ, রেস্টুরেন্ট ক্যাটেগরিতে, 'ইন্ডিয়ান', খুঁজে দেখা গেলো, সবচেয়ে কাছেরটা ৮ কিমি, আর তার পরেরটা ৩০০ কিমি। তারপর, জিপিএস-এর নির্দেশমত 'রাইট টার্ন'-'লেফাট টার্ন' করে ৮ কিমি দুরেরটায় পৌঁছে, দেখা গেল সেটায় রবিবারের ছুটি। বৌ এমন ভাবে 'ধ্যত্তেরি' বলল, যে কুন্তলের মনে হল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকাটাও কুন্তলের-ই কারসাজি। অগত্যা, ট্যাকোটাইমে, 'চিকেন কুইসডিলা' আর আলুর বড়া। মেয়ে অবশ্য পরিচিত খাদ্য পেয়ে খুশি।

    ক্যামলুপ্স ছাড়িয়ে এরপর টানা পথে ভ্যাঙ্কুবার। ৩৬০ কিলিমিটার। তিন বাই তিন লেন। এত চওড়া হলেও, আগের মতই পাহাড়ের গায়ে গায়ে বাঁক নেওয়া। আশেপাশে গাড়ি, ট্রেলার, ট্রাক সব চলছে স্পীডলিমিটের তোয়াক্কা না করেই। তবে, একবার-ই পাশের লেনে-এর একটা ডজ-ডাকোটা, কুন্তলকে ওভারটেক করে হুড়ুম করে লেন চেঞ্জ করে সামনে এসে বুক ধড়াস করিয়ে দিয়েছিলো, এছাড়া পথে একবার গ্যাস ভরে, নির্বিঘ্নে-ই পেরিয়ে গেল, ৩৬০ কিমি, মোটামুটি সাড়ে চার ঘন্টায়। সন্ধ্যে আটটায় ওরা, ডাউন্টাউন ভ্যাঙ্কুবার। রামাদা হোটেলের পেছনে পার্কিং লট। রিসাইকেল বিন, ইতিউতি অপরিস্কার-অপরিসর গলি দিয়ে পার্কিং লটে ঢুকতে হয়। উঠোনের মত পার্কিং লটে, ৫০-টা গাড়ির জায়গা, রীতিমত কুস্তি-কসরত করে পার্ক করতে হল। আবার এই পার্কি-ংএর জন্য আলাদা দক্ষিনা দিতে হবে, হোটেল ভাড়ার সঙ্গে, কারণ, ঐ, ডাউনটাউন। হোটেলের সামনে ঘিঞ্জি সরু রাস্তা। গ্র্যানভিল স্ট্রীট। পরপর হোটেল আর খাবার দোকান। রিসেপশন থেকে চাবি নিয়ে, অপরিসর লিফটে তিনতলায় ৩১২ নম্বর ঘর। মালপত্র নিয়ে ঘরে ঢুকে ঘরের আয়তন দেখে, কুন্তলের-ই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, বৌ-এর তো বলাই বাহুল্য। তারপরে, বৌ অভ্যাস মত, চাদরে ময়লা কিনা, টাওয়েল পরিস্কার কিনা, সব আলো জ্বলছে কিনা, কফি মেকার চলছে কিনা এসব গোয়েন্দাগিরি করে, আরো দুতিনটে অসুবিধা অবিস্কার করে, 'হোটেল বুকি-ংএ কুন্তলের অদূরদর্শীতার' প্রমান দিতে লাগলো। শেষে, নিজেই রিশেপসনে গিয়ে কাজিয়া করাতে, রিশেপসনের সোনালী চুল, আন্তরিক দু:খ প্রকাশ করে তিনটে অন্যান্য ঘরের চাবি দিয়ে, 'সিফট-টু হুইচএভার রুম, ইউ লাইক', বলাতে, অপেক্ষাক্‌ত বড়, অপেক্ষাক্‌ত পরিস্কার, অপেক্ষাক্‌ত সুন্দর টয়লেট, ৩৪০ নম্বর ঘর পছন্দ করে, বৌ খুশি।

    স্নানটান সেরে, যখন ভারতীয় রেস্তোঁরার খোঁজে, ওরা লবিতে এল, তখন, মেয়ের প্রবল আপত্তি, হোটেলের বাইরে থাকা আর, ওর এক মুহূর্ত পছন্দ নয়। কারণ সেই হোটেলের টিভিতে, 'ডিস্কভারি কিড্‌স', আর সারাদিনের ক্লান্তি। তবে মায়ের ধমকে মেয়ে চুপ, কুন্তল-ও। দুটো ব্লক সোজা, আর তারপর তিনটে ব্লক ডাইনে হেঁটে, পাওয়া গেল, 'খানা খাজানা'। খুব সাজানো গোছানো নয়। বাইরে সাইডওয়াকে, ঘেরা জায়গায়, ফাইবারের টেবিল আর চেয়ার। চব্বিশ-পঁচিশ বছরের সুশ্রী শ্যামলা, ভারতীয় একটাই মেয়ে ছোটাছুটি করে অর্ডার নিচ্ছে, সার্ভ-ও করছে। বাসমতি রাইস, পালক-পনীর, চিকেন-টিক্কা, আর মেয়ের জন্য তন্দুরি রুটি। কোয়ালিটি মন্দ নয়। খাওয়া শেষ করে, রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ফেরার সময় ৫/৬ ব্লকের জন্য ট্যক্সি নিল ওরা। সর্দারজী ট্যক্সির পেছনে গা এলিয়ে, কুন্তলের মনে হল, এখন, ও , সোফার থেকে 'সোফার ড্রিভিন'। তারপর, আরো রাতে, মেয়ে যখন ঘুমিয়ে কাদা, সারাদিনের ক্লান্তিতে, আর বৌ-এর গালের ময়েশ্চারাইজারের সুগন্ধে, হাতের পেপার ব্যাক বই-এর লেখা গুলো ঝাপসা হয়ে এলে, বেড সুইচে হাত দিয়ে আলো নেভায় কুন্তল।

    *****
    রামাদা ইনের পাশেই সাবওয়ে স্যান্ডুইচ বার । হাফফুটলং টারিয়াকি চীকেন, ব্ল্যাক অলিভ্‌স, লেটুস, পিকল, মাস্টার্ডসস স্যান্ডুইচ নিল কুন্তল, পরদিন, সকালে, ৯টায়। প্রাত:রাস। মেয়েও তাই, কেবল ব্ল্যাক অলিভ্‌স আর মাস্টার্ড সস ছাড়া। বউ ভেজি। কাল পর্য্যন্ত, আকাশ খটখটে শুক্‌নো ছিলো, আজ সকাল থেকে গোম্‌ড়া মুখে। পাতলা ব্‌ষ্টি। তারপর ইঞ্চি-ইঞ্চি মেপে সেই কষ্টকর পার্কিংলট থেকে গাড়ী বার করে, জিপিএস-এর নির্দেশমত, দিনের প্রথম গন্তব্য, 'ভ্যাঙ্কুবার অ্যাকোরিয়াম'। মাছ, ব্যাঙ, সরীশ্‌প, স্তন্যপায়ী মিলিয়ে প্রায় ৬০০০ এক্সিবিট। প্রচুর ইন্ট্যার‌্যাক্টিভ চার্ট। ভলেন্টিয়ার মেরিন বায়োলজিস্ট রা হাস্যমুখে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। অসংখ্য দুষ্পাপ্য মাছ, সামুদ্রিক কচ্ছপ, জেলিফিস, সীউইড্‌স। ছোটোদের হাতে কলমে পরীক্ষা করে দেখার ব্যবস্থা। কিন্তু সবচেয়ে প্রচারিত বেলুগাতিমি। বা বেলুগাতিমি-র সংসার। দুটো মাদী তিমি, অরোরা আর কিলা। এরা যুবতী। আরো একটা মাদী, কাভ্‌না, একটু বয়স্কা। অরোরা আর কিলা-র একটা একটা ছানা। এদের বাবা, ইম্যাক। অরোরার ছানাটা সদ্যজাত, এর গর্ভ ধারন আর ছানা জন্মানোর দ্‌শ্য, ক্যামেরা বন্দী করা আছে, দেখানো হয় দর্শকদের। তিমি মাছের ট্যাংকের নীচে, ভুগর্ভস্থ ভিউইং গ্যালরিতে বসে দেখা যায়, সাদা বেলুগাতিমি-র সন্তরণরত সংসার। আর আছে, চারটি সাদাপেট, প্যাসিফিক ডলফিন। ট্রেনারের ইঙ্গিতে লাফায়, ডিগবাজি খায়, ঘাড় উঁচুকরে জলের উপর হেঁটে যায়। এসব দেখে-টেখে, জেলিফিস-এর গায়ে হাত বুলিয়ে, মেয়ে আপ্লুত।

    অ্যাকোরিয়াম থেকে বেড়িয়ে, চীনে দোকানে মধ্যাহ্নভোজন। বয়েল্ড রাইস স্পীংরোল, কারি-লোমিন, স্যাটাচীকেন-অন-রাইস। তারপর, ১০কিমি উত্তরে, ক্যাপিলানো সাস্পেনশন ব্রীজ। ৪৫০ ফুট লম্বা, কাঠের ঝুলন্ত ব্রীজ, নীচে আড়াইশো ফুট নীচে ক্যাপিলানো নদী। ঝুলন্ত ব্রীজে, ব্যালেন্স করে হাঁটতে হয়। ব্রীজে ওঠার মুখে, এক অল্পবয়সী চীনে দম্পতি, টুরিস্ট-ই হবে, কুন্তলদের পরিবারিক ছবি তুলে দিল জোরকরে। পরিবর্তে ওদের-ও ছবি তুলেদিতে হল, ওদের নাইকন-ডি-৯০ তে। ব্‌ষ্টি পড়েই চলেছে অবিরাম। মাথায় ছাতা। জলের ঝাপটা বাঁচাতে, কুন্তল ক্যামেরা ঢুকিয়ে রেখেছে, জ্যাকেটের তলায়, এনিয়ে বৌয়ের তড়পানি শুনতে হচ্ছে আগেপিছে। কাকভেজা হয়ে ক্যাপিলানো দ্যাখা হল, তবে দক্ষিণা লাগল প্রায়, ১০০ ডলার।

    হোটেলে ফেরার সময়,ওয়ান-ওয়ে রাস্তায়, ভুল দিকে ঢুকে পড়ায়, সাইরেন বাজানো, ফোর্ড-ভিক্টোরিয়া, পুলিশের গাড়ি, পেছনে আসে। উর্দী পড়া পুলিশ, 'এক্সিউস মি স্যার, মে আই সি ইউওর লাইসেন্স' বলে দরজার পাশে দাঁড়ায়। নার্ভাস কুন্তলের সাস্কাচুয়ান লাইসেন্স, আর গাড়ীর সাস্কাচুয়ান লাইসেন্স প্লেট দেখে, মনে হয় নতুন ভেবে, 'ফলো দ্য ট্রাফিক সাইন্স স্যার' বলে ছেড়ে দেয় কুন্তলকে।

    গাড়ী ঘুরিয়ে, লাল সিগনালে দাঁড়িয়ে, কুন্তলের মনে হয়, 'ব্যাঁকা পথ জ্যাম হর্দম, জমজমাট ভীড় কমে না ....."। ঘুরেফিরে আসে মাথার পেছনে, বারবার।

    ছবি ...http://tinyurl.com/lykyrn

    (চলবে)
  • Binary | 70.64.***.*** | ০৮ আগস্ট ২০০৯ ১৩:২০416025
  • পাতা ভচকায়নি, তবে সময় খরচ করিয়ে দেওয়ার জন্য দু:খিত :))
  • Du | 173.57.***.*** | ০৮ আগস্ট ২০০৯ ২১:৪৩416026
  • খুব ভালো লাগছে , বাইনারী। লেখা, আর ছবিতে জায়গাটাও।
    দু:খ পেলেন খামোকা। কেসি তো দমের ডাকে-এ-এ চিন্তায় পড়ে গেছিলো শুধু।
  • Binary | 70.64.***.*** | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ০৫:৩৮416027
  • রামাদা ইন-এর রিসেপশনের সোনালী চুল, ভয়ঙ্কর ডিপ্লোম্যাটিক। যা কিছু জিজ্ঞাসা করা যায়, উত্তর, 'উই উইল অ্যাটেন্ড ইওর প্রবলেম সুনেস্ট'।
    -- 'অয়্যারলেস কানেকশন ড্রপ হচ্ছে কেন ?'
    -- 'উই উইল অ্যাটেন্ড ইওর প্রবলেম সুনেস্ট'
    -- 'হাউসকিপিং থেকে টাওয়েল চেঞ্জ করেনি কেন ?'
    -- 'উই উইল অ্যাটেন্ড ইওর প্রবলেম সুনেস্ট'
    ক্যাপিলানো দেখে, কাকভেজা হয়ে হোটেলে ফিরে, স্নানটান করে, পরের দিনের ভিক্টোরিয়া যাওয়ার রাস্তা-টাস্তা গুগুল ম্যাপে দেখে নেওয়ার ইচ্ছা ছিলো কুন্তলের। কিন্তু, হোটেলের অয়্যারলেস কানেকশনের অবস্থা অথৈবচ। কফি মেকারে সোঁ সোঁ জল সেদ্ধ হচ্ছে। কফির জল চাপিয়ে, বৌ মুখে ক্রীম ঘষছে। মেয়ের চোখ যথারিতি টিভির পর্দায়। নীচে এসে রিসেপশনের পাশের একমাত্র ইন্টারনেট ওয়ার্কস্টেশনে, একজন দাড়ীওয়ালা উদাস চেহারার লোক চশমা নামিয়ে স্ক্রীনের দিকে চেয়ে তন্ময় হয়ে আছে, আর পাশের ওয়েটিং সোফায় আরেকজন স্বাস্থ্যবান লোক, ম্যাগাজিন হাতে উসখুস করছে। দেড়-দু ঘন্টার আগে এখানে সুযোগ পাওয়া অসম্ভব। অগত্যা সেই রিশেপশনের সোনালী চুলের কাছে সাহায্য চাইতে হয়। সোনালী চুল, অনেক কাগজ আর টাইম টেবিল দেখিয়ে, কুন্তলকে বোঝায়, যে, দিনে দিনে ভিক্টোরিয়া গিয়ে ফিরে আসা, ... 'উইলবি অয়া ল অ অ অং ডে', ল-এর ওপর অতিরিক্ত টান আর বাঁকা ভুরু তে পেসিমিজম। কুন্তল ভাবে, হোক গে লং ডে, কালকের প্ল্যান ভিক্টোরিয়া।

    ****
    ভ্যাঙ্কুবার ডাউনটাউন থেকে দাক্ষিণে ষাট কিলোমিটার মত গেলে, 'তাওয়াসেন ইন্ডিয়ান রিজর্ভ', গায়ে লাগানো ফেরিঘাট, 'তাওয়াসেন বে'। এখান থেকে বার্জ ছাড়ে প্রতি ঘন্টায়। বার্জে, 'স্ট্রেট ওফ জর্জিয়া' পেরোতে লাগে দুঘন্টা, তারপর ব্রিটিশ কলোম্বিয়া আর্কিপেলেগো, ভ্যাঙ্কুবার আইল্যান্ড। সেখানে ফেরিঘাটের নাম 'সোয়ার্জ বে' । এখানথেকে ভিক্টোরিয়া ডাউনটাউন আরো পঁচিশ মিনিট মত। সকালে উঠে, মেয়েকে কাতুকুতু দিয়ে ঘুম থেকে তুলে, নিজেরা চানটান করে, ক্যামেরা-জলেরবোতোল-খুচরো ওষুধ-রেনজ্যাকেট হ্যানাত্যানা গুছিয়ে, আবার সেই কফি মেকারে চা আর নরম হয়ে যাওয়া ক্রীম বিস্কুট খেয়ে হোটেল থেকে বেরোতে বেরোতে সকল আটটা হল। ক্রিম বিস্কুটের প্যাকেটটা দুদিন আগে কেনা। অর্ধেক খাওয়ার পর কেন আবার সীল করে ব্যাগে রাখা হয় নি, আরেক প্রস্থ নিজের গুন কীর্তন শুনতে হল বৌএর কাছে। 'তাওয়াসেন' থেকে নয়টার বার্জ ধরতে গেলে, প্রাত:রাসের আর সময় নেই। জিপিএস-এর কল্যানে, রাস্তা ভুল-টুল না করে, চল্লিশমিনিটে তাওয়াসেন-বে ফেরি ঘাটে পৌঁছে যায় কুন্তল। গাড়ী আর পরিবার সহ, বার্জের টিকিট লাগল পঁয়ষট্টি ডলার। তারপর লোহার পাটাতন পাতা, ঘড়াং ঘড়াং আওয়াজ করা জেটি দিয়ে সোজা বার্জের পেটের মধ্যে সেঁধোতে হল গাড়ী নিয়ে। গাড়ী বন্ধ করে, লিফট দিয়ে ওপরের প্যাসেঞ্জার ডেক। ডেলিপ্যাসেঞ্জার-টুরিস্ট-বাচ্চা-বুড়ো গিজগিজ করছে। বৌ-এর কথা মত আবার ফটো সেসন, কাঁচের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে, খোলা ডেকে দাঁড়িয়ে, সোফায় বসে ইত্যাদি ইত্যাদি। বার্জের দুনম্বর প্যাসেঞ্জার ডেকে গিফটশপ, আর রেস্টুরেন্ট। লোকে হুমড়ি খেয়ে লাইন দিয়েছে ব্রেকফাস্টের জন্য। আলু-ডিম-সসেজ-পর্কফিলেট ভাজা হচ্ছে। ফ্রিজারে ইয়োগার্ট-ফ্রুট স্যালাড। বৌ আর মেয়েকে টেবিলে বসিয়ে, ব্রেকফাস্টের জন্য লাইন লাগায় কুন্তল। আধঘন্টা কাউন্টারে ধস্তাধস্তি করে, পছন্দমত খাবার নিয়ে, দাম চুকিয়ে, খাবার ট্রে একহাতে আর কফির ট্রে আর একহাতে নিয়ে ফিরতে ফিরতে মনে হয়, 'হরিণ মেরে আসছে ফিরে স্কন্ধে ধনুক-তীর'।

    'সোয়ার্জ বে' থেকে, বে-হাইওয়ে ১৭ তে গেলে, ডাউনটাউন ভিক্টোরিয়া। কুন্তলরা অবশ্য, বে-হাইওয়ে ১৭এ ধরে। গন্তব্য, 'বুচার্ট গার্ডেন'। নামে হাইওয়ে হলেও, প্রস্থে গলির মত। দুপাশে র‌্যাঞ্চ, মাঝে মাঝে দুপাশের গাছ ঝুঁকে এসেছে, মানে অনেকটা 'এই যে হেথায়, কুঞ্জ ছাওয়ায়' -এই আর কি। ভেজা ভেজা রাস্তা। গাড়ী-টারী খুব কম। এই রাস্তায় তিরিশ মিনিট চলে, কুন্তলরা যখন টিকিট কেটে, বুচার্ট গার্ডেন -এর পার্কিং লটে, সবুজ ওভারয়ল পড়া ভলেন্টিয়ার পুলিশের আঙ্গুলি নির্দেশে একত্রিশ নম্বর লটে পার্ক করে, ঘড়িতে তখন সাড়ে এগারোটা। সকাল থেকে আকাশ গোম্‌ড়া মুখে থেকে এখন ঝিরঝিরে ব্‌ষ্টি সুরু হয়েছে। গার্ডেনে ঢোকার মুখে একটা ফোয়ারার পাশে একটা কাঠের গামলায় জড়ো করা সাদা রঙের প্লাস্টিকের ছাতা রাখা আছে জনসেবায় কাজে লাগানোর জন্য। ব্‌ষ্টি এখানে নৈমিত্তিক ব্যাপার। ছাতাও তাই। এই ব্‌ষ্টিতেও প্রচন্ড ভীড়। আর গাড়ীর নম্বর প্লেট খেয়াল করে কুন্তল। ব্রিটিশ কলোম্বিয়া নম্বর প্লেটের সঙ্গে প্রচুর ওয়াশিংটন নম্বরপ্লেট। ভিক্টোরিয়া থেকে আরো কাছে সিয়াটেল, ওয়াসিংটন।

    ফুলের ব্যাপারে কুন্তলের বোঝাবুঝি বরাবর-ই একটু বোদা আর অসচ্ছ। ফুলের ব্যাপারে এই অ-রোম্যান্টিকতার জন্য-ও বৌ এর বিশেষণ শুনতে হয়েছে আগেও। কিন্তু, বুচার্ট গার্ডেন-এ ঢুকে বাঁদিকে সিমেন্টের সিঁড়িতে সামান্য উঠে, 'রোজ গার্ডেন' দেখে কুন্তলের-ই ঘাবড়ে যাওয়ার অবস্থা। এত রকম সাইজের আর এত রকম রঙের গোলাপ। বৌ-এর হাতের ক্লোজ আপ আর ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সে ঝপাঝপ সাটার পড়ছে। কোনো ছবিতে জোড়া গোলাপ আসতে হবে, কোনো ছবিতে গোলাপের ওপর এক ফোঁটা জল আসা চাই। বৌ-এর এই প্রিসিশন ফটোগ্রাফির ঠ্যালায়, মেয়ে অধৈর্য্য হয়ে পড়ায়, মেয়েকে নিয়ে, কফি শপে আসে কুন্তল। মেয়ের জন্য ফ্র্যাপচিনো-ক্যারামেল, আর নিজে একটা চায়ে-ল্যাটে নেয়। বাইরে ব্‌ষ্টি আর জুলাইতে-ও হাল্কা ঠান্ডা, দোকানের ভেতর আরামদায়ক গরম। বৌ ঘুরছে, নিজের ধান্দায়, একহাতে ক্যামেরা অন্য হাতে ছাতা নিয়ে।

    বুচার্ট গার্ডেন, মুলত: অবিশ্বাস্য সুন্দর ফুলের বাগান। শীত-গ্রীষ্ম-বসন্ত সারা বছর ফুল হয়, ঋ্‌তু অনুযায়ী। ফুলের প্রকার ভেদে, গ্রীষ্মে আলাদা আলাদা বিভাগ আছে। স্যান্‌কেন গার্ডেন, রোজ গার্ডেন, জ্যাপানীজ গার্ডেন, ইটালিয়ান গার্ডেন। ডালিয়ার আলাদা বাগান। অজস্র অদ্ভুত সুন্দর অর্কিড। বেগোনিয়া, স্ন্যাপড্রাগন, ক্যালন্ডুলা, কসমস। পিটুনিয়া, সল্‌ভিয়া। প্রাচীন গাছ কিছু। আর, কানাডিয়ান বাগানের রীতি অনুযায়ী, কাঠের গায়ে খোদাই করা স্ট্যাচু, টোটেম। টুরিস্টদের গা ঘেঁষাঘেঁষি ভীড় । ভীড়ে অবশ্য, বয়স্কদের-ই নজর পড়ে বেশি। ব্‌ষ্টি উপক্ষা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে সবাই। সবার মাথায় বাগানের সেই প্লস্টিকের সাদা ছাতা।

    গার্ডেনের ভেতরে যে রেস্তোঁরা আছে, সেখানে দুপুরের খাওয়া সারতে হল, ইচ্ছা না থাকলেও। কারণ ব্‌ষ্টি, আর কারণ, এখান থেকে ভিক্টোরিয়া কুড়ি কিলোমিটার মত, আর পথে কোথায় মোটামুটি খাবারের দোকান আছে, জানা নেই। খাবার পাওয়া গেল, ম্যাসড পট্যাটো (চীজ দিয়ে মাখা আলুসেদ্ধ), পর্কস্টু আর পাঁউরুটি। পর্ক দেখে আঁত্‌কে উঠা বৌ, ফ্রিজারে রাখা, ঠান্ডা চিকেন র‌্যাপ । ব্‌ষ্টিতে ফটো তুলতে গিয়ে, ভেজা উলোঝুলো চুলে, ঠাণ্ডা চিকেন র‌্যাপে কামড় দিয়ে, বৌ বলল, 'দুর্ভোগের আর সীমা নেই'। তাও ভাল, এই দুর্ভোগের দ্বায়ীত্বটাও কুন্তলের দুর্বল কাঁধের উপর চাপানো হয়নি। এরপর ভিক্টোরিয়া যাওয়ার পথে, ডমিয়ন অ্যাস্ট্রনমিকাল অবজারভেটরি। বে-হাইওয়ে ১৭এ থেকে বাঁদিকে ঘুরে ওক ড্রাইভ। ৫০০ মিটার মত গিয়ে হঠাৎ একটা সাইনবোর্ড, আবার বাঁদিকে ঘুরে, অবজের্ভেটরি রোড, দু-কিলোমিটার মত খাড়াই রাস্তা। হাওয়ায় আর ব্‌ষ্টি জলের ঝাপাটায়, পুরো রাস্তাটা ঝরা পাতার কার্পেট। উপরে উঠে দেখাগেল, অবজারভেটরি রেনোভেশন হচ্ছে। টুরিস্টদের জন্য আপাতত বন্ধ। তবে অবজারভেটরির পার্কিং থেকে দেখা যায়, নীচে, উত্তরের, এলক সংরক্ষিত ফরেস্ট, আর এলক লেক -এর বাঁধিয়ে রাখার মত সিল্যুয়েট। গহন সবুজ, ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘে ঢাকা।

    ***
    ভিক্টোরিয়া, ডাউনটাউনে, বে-সেন্টার মল-এ, দুবার কিনে দুবার পাল্টিয়ে, জামাটামা কিছু কেনা হল, বৌ-এর নির্দেশে, মেয়ের জন্য। এরপর আর কোন জায়গয় যাওয়ার সময় থাকেনা। তাই ফিরতি রাস্তা ধরতে হল। আবার সোয়ার্জ-বে থেকে বার্জ। ঘন্টাখানেক চলার পর, হঠাৎ ভোঁ বাজিয়ে বার্জ থেমে যায়। পাবলিক অ্যাড্রেসে, গ্যাঙোর-গ্যাঙোর করে কিছু একটা অ্যানাউন্সমেন্ট হয়। আর ছেলে-মেয়ে বুড়ো-বুড়ি সক্কলে দৌড়াদৌড়ি করে, বাঁদিকের খোলা ডেকে জড়ো হয়। সক্কলের ক্যামেরা জলের দিকে তাক করা। প্রথমে কোনো অ্যালার্ম ভেবে ঘাবড়ে গেছিলো কুন্তল, পরে, হাসিহাসি তোবলা মুখে চশমা পড়া একটা লোককে জিজ্ঞাসা করে বোঝে, তিমি মাছের ঝাঁক চলেছে বার্জের বা-ঁদিক দিয়ে, তাই সকলে ছুটছে ছবি তুলতে। কুন্তলরাও ছোটে, মেয়েকে বগলদাবা করে, বৌ টানাটানি করে ক্যামেরা বার করতে থাকে।

    ছোটোবেলায়, ছইওয়ালা ডিঙ্গি নৌকায় বেলুড়মঠ যাওয়ার পথে গঙ্গায় শুশক দেখেছিলো কুন্তল, বা কলেজে থাকতে, কোলাঘাটে পিকনিকে গিয়ে, রুপনারায়নে ডলফিন। এখানে কিলার হোয়েল। সাদা কালো, অন্তত কুড়িটা একসঙ্গে। মেয়ের মুখে, কান পজ্জন্ত হাসি। এটাই ওর আজকের 'আল্টিমেট ফান' ।

    টানাটানি করে, টেলিফটো লেন্স আর লাগানো যায়নি ক্যামেরাতে, তবুও ছবি ওঠে কিছু। 'হাতিমির দশা দেখে .......'।

    ভিক্টোরিয়া আর বুচার্ট গার্ডেন -এর ছবি।

    http://tinyurl.com/m8sa9e

    (পরবর্তী পর্বে শেষ)
  • d | 117.195.***.*** | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ২৩:১৬416028
  • তারপর?

    সবকটা অ্যালবামের ছবি দেখে নিলাম। :)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন