এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দ্যুতি | ***:*** | ১১ মে ২০১৯ ১৭:৫৩382396
  • গল্পটা অনেক পুরানো। তেইশ বছরের। আমি হাওড়া কলকাতা দাপানো মেয়ে। বাপের বাড়িতে অনেক মেম্বার। এদিক সেদিক ঘোরা, বেড়ানো, পড়া, কাজ, দায় দরকার কিছুতেই রেস্ট্রিকশন খুব ছিল না। ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে আড্ডা আমার চিরকালের। বি ই কলেজের মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার এর সাথে সাত আট বছর লটকে বিয়ে, বিয়ের পর ধানবাদের সবথেকে বড় লং ওয়াল মাইন্সে গিয়ে পরি। এতদিন প্রেম করেছি, ঘাস ছিঁড়েছি, বাদাম খেয়েছি কিন্তু এ দিনের কোনো প্রস্তুতি ছিল না।আমি জানতাম আমি নাকি পড়বো, কেরিয়ার গড়বো আর সে ধানবাদেই থাকবে, ছুটিতে যাবো। এসব সরল হিসেব থাকে না জীবনের। আর আমি জটিল হিসেব বুঝিনা। তাই তার নানা অসুবিধে হওয়াতে, সাথে বিয়ের পর দুজনেই বুঝলাম কাছে থাকার মাহাত্ম্য, তাই ধানবাদের সেই মুনিডিহ মাইন্সে পাড়ি দিলাম। জীবন, যন্ত্রণা সব বুঝতে শিখলাম। হিন্দি বলয়, একটা আমার অসুবিধা হল,বাংলা মিডিয়াম ব্যাকগ্রাউন্ড আবার বাংলা নিয়ে পড়া তাই স্কুল টুলে পড়াতে ঢোকা চাপ। চাকরি না করলে সংসার করা বেটার এটাই মনে হয়েছিল। মানে আরেকটু গুছিয়ে, সাজিয়ে আর কি। তাই টপাটপ দুটো ছানার আগমন। বিয়ের আগে একটু নিজের টাকা ব্যাপারটা এসেছিল টিউশনি পড়িয়ে, তাই বিয়ের পরেও তেমন থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বেশ কিছু বছর সেটা হয়নি। মেয়েকে প্রথম স্কুলে দিতে গিয়ে শুনি সেই স্কুলে দ্বিতীয় ল্যাঙ্গুয়েজ বাংলা আর সে বছর থেকে থাকছে না। কারণ বাঙালির ছেলেরাই বাঙলা রাখছে না। হিন্দি জীবনে পড়িনি। সংস্কৃত চর্চা ছিল। প্রথম গোঁত্তা খেলাম স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণতে। নিজেকে শুধু বুঝিয়েছি পেরে যাবো, ইংলিশে বেশ কাঁচা জানতাম, কিন্তু ওই পেরে যাবার বিশ্বাস নিয়ে চলা শুরু করা। কোথা দিয়ে ওদের একমাত্র টিচার আমি হয়ে উঠেছিলাম জানি না। সেভেন এইট অব্ধি বা তার পরে দু একটা স্যার টিচার দিলেও প্রধান সেই আমি ই ছিলাম। ছেলে মেয়ের এসব দেখভাল বা রোজের জুতো জামা পরানোর দায়িত্বে সে কোনোদিন আসেনি। কারণ তার মারাত্মক কাজের চাপ। সে আরেক জীবন দেখলাম এ জীবনে। আট বছরে একটা দিনের জন্য বুঝিনি মাইনিং মানে কি? ধানবাদে এক বেলা এসে বুঝেছিলাম। সেখান থেকে মেয়ে সিক্সে এরকম সময় খুব স্লো নেট এলো। সেই একটু করে বাইরের জগৎ ধরা দিচ্ছে, তখন থেকে মেয়ের স্বপ্ন তৈরি হচ্ছে, সে দিল্লিতে পড়তে যাবার জন্য ডানা ঝাপটায়। গ্র‍্যাজুয়েশনে সেই মেয়ে আমার পড়তে গেল লেডি শ্রীরাম কলেজে। বিষয় জার্নালিজম। প্রথম দফায় হোস্টেল হয়নি, ওকে পিজিতে রেখে ফিরতে কি যে টেনশন হয়েছিল, টেনশন ওই নির্ভয়া নিয়ে না, ছোট ছোট টেনশন। মেয়ে আর এই বড় রাস্তা পেরোতে পারবে তো? ঠিক উঠে কলেজ যেতে পারবে তো? কদিনের মাথায় হোস্টেল লিস্ট বেরুলো, মেয়ের নাম শুরুতেই। চিন্তামুক্তি। কিন্তু তিন বছরে মেয়ে আমার দিল্লির নাড়ি ভুড়ি চচ্চড়ি করে ফেললো, সাথে এই ট্যুর, সেই এক্সকারশন, এমন কি চীন দেশ অব্ধি। তারপর এখন পুণেতে ওডিও ভিজুয়াল প্রোডাকশন নিয়ে সিম্বায়সিসে পড়ছে, এক বছর হলো। এই এপ্রিল মে তার ইন্টারশিপ চলছে মুম্বাই। সেখানে এড গ্রুপে কাজ করছে, দিন রাতের হিসেব নেই। ছেলে ধানবাদে ECE নিয়ে পড়ছে, থার্ড ইয়ার হল। এবার মে তে সেও দু মাসের ইন্টার্ন করতে এলাহাবাদ যাবে। এরকম ব্যাপারে গুরুর ফেবু গ্রুপে দুটি পোস্ট দিই আজ। সে দুটি নীচে কপি করে দিলাম। আলোচনা চলুক।

    কলকাতা বড় শহর বলেই কি অনেক বাবা মা বা ছেলেমেয়ে পড়তে বাইরে যেতে চায় না? এই রেজাল্ট বেরোনোর সময় অনেক কাল পরে বেঙ্গলে আছি, তাই দেখছি অনেককেই যে এখানেই, থাকুক, পড়ুক করছেন। পুরানো ফ্রেন্ডলিস্ট ঘাঁটলে বেশ কজনকে পাই যারা কোথাও নড়তে চান না। নিজের খুব ক্লোজ কিছু আছে তারাও এরকম। আমি বিয়ের পরে এমন জায়গায় থেকেছি, (ধানবাদের প্রত্যন্ত মাইন্স) যে আমার ওখানের সবাই মানসিকভাবে সব সময় প্রস্তুত ছিলাম যে বাচ্চাদের টেন টুয়েলভ এর পরে বাইরে দিতেই হবে। আর অপশন নেই। খুব রাগ, বকাবকি করলে বলতাম, তাহলে bss/sslnt তেই পড়িস। ওরা জানে সেগুলো কি রকম কলেজ। এই প্রসঙ্গে আরেকটা মজার ব্যাপার, ছেলে সত্যি ধানবাদেই পড়ছে, এই দুই কলেজের বাইরেও আছে ISM যে টা এখন IIT হয়েছে, খুব কম ছেলেই ধানবাদের হয়ে এই কলেজে পড়তে পায়, আমি তাই দু রকম ব্যাপার ই বুঝি। ছেলেমেয়ে বাইরে গেলে কি হয় আর ঘরের কাছে থাকলে কি হয়। এই কি হয় টার সাথে একাডেমিক কোনো কি হয় জুড়বেন না।
    কলকাতার মত সস্তার শহর নেই। কিন্তু অনেক ভালো স্টুডেন্টের উচিত একটু আরো বড় স্বপ্ন দেখার। কিছু বিষয় অন্য ইউনিভার্সিটিতে ভালো পড়ানো হয়। কিছু জায়গা থেকে পাস করলে প্যাকেজ ভালো থাকে চাকরির সময়। বা দেশের বাইরে পড়তে যাবার সুযোগ বেশি থাকে।

    তবে বাড়িতে থাকবো, বাড়ির খাবো, মা বাবা ভাই বোন সবার সাথে থাকবো এগুলো প্রাধান্য পায় অনেকের কাছে, অনেকে বুড়ো হলে বাবা মা কে কে দেখবেন ভেবে যান না। তাঁদের সত্যি ভালো লাগে। তাঁদের মা বাবারা নিশ্চয়ই একাকীত্ব অসুখে ভুগবেন না। রোজের উঠলি খেলি গেলি করে হোয়াটসঅ্যাপ ভরাবেন না আমার মত, ভিডিও কলে ছানাদের দেখতে হয় না তাঁদের। সবকিছুর ভালো খারাপ আছে হয়ত। তবে কিছু ভালো স্টুডেন্ট একটু বাইরে গেলে ভালো মনে হয়। অনেকেই বাইরে চাকরি করবো না এই গোঁ ধরে বেকার বসে, এসব দেখলে অদ্ভুত তো লাগেই।

    আরেকটি বিষয় হলো -

    আরেকটা বিষয় একটু ঘাঁটি, সেটা হল, এই ছেলে মেয়ে কে ঠিক কত বয়স অব্ধি টিউশন নিয়ে যেতে হয়? ওরা কবে বড় হবে? প্রচুর বাবা মায়ের থেকে প্রচুর কারণ শুনেছি। নিজে দুটোকে বড় করেছি। ওই ভুশণ্ডি জায়গায় বসেও আমার কোনোদিন ওদের এই হবে ওই হবে কি হবে গেলো ওমাগো এগুলো মনে হয় নি তেমন। আসলে আমি খুব ল্যাদের পাব্লিক। তাই হয় তো এমন, সাথে বাপ টাও তেমন আর কি। আর আমি হাওড়া থেকে কলকাতা স্কুল কলেজ দাপিয়ে করেছি, ভাই খুব ছোট থেকে টিটি খেলতো। সেই সূত্রে এদিক সেদিক যেতে হত। মা সেই সময় আমাদের একা ছাড়তেন।মোবাইল ছিল না। তাই এসব হয়ত আমিও বাবা মায়ের থেকে পেয়েছি। কিন্তু বেশির ভাগ বাবা মায়েরা ছাড়তে চান না আজকের দিনে। কারণ হিসেবে বলে, যুগ খুব বাজে, কানে তার গুঁজে চলে, কথা শোনে না, কেউ কেউ ওই আড্ডা প্রেম এসব নিয়ে চাপ খান, সব মিলিয়ে আমি খুব অবাক, হতবাক। কলেজে গিয়ে বাচ্চা ফট করে বড় হয়ে যায়? ব্যাপারগুলো একটু শুনি। আমার ক্ষেত্রে ধানবাদে তেমন পাব্লিক ভেইকিলে যেতে হত না, বাপের গাড়িতে যেত। সেই কন্ডিশনেও অনেক মা বাবা ড্রাইভার কে ভরসা নেই বলতেন, বলেন।

    নাহ এবার মতামত শুনি একটু।।
  • r2h | ***:*** | ১২ মে ২০১৯ ১৬:৪০382397
  • এই আলোচনাটা পড়ছিলাম ফেসবুকেও। ছেলেমেয়েদের কখন কতটা স্বাবলম্বী হওয়া ও কতটা নজরদারী ও পক্ষচ্ছায়ায় থাকা দরকার সেই প্রশ্নগুলি, স্কুল শেষে বাড়ির বাইরে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ ও তার প্রস্তুতি - এই বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।
  • Pagla Dashu | ***:*** | ১৫ মে ২০১৯ ০৪:৩৫382398
  • রইএ সইএ ছেড়ে দিতে হয় - দেয় তো সবাই। একটু আগে আর পরে। চলেও তো যাবে, আজ নয়তো কাল। তাড়া কিসের? আবার দেরী করা ও ঠিক না। সব বাপ মা র নিজের মতো সময় লাগে। ঠিক সময় বলেও কিছু হয় না। এক এক পরিবার এর এক এক রকম। চলেই তো যাবে, থাক আর একটু। তারপর খালি শুধু - খালি সব। ভালো থাকবেন।
  • দ্যুতি | ***:*** | ১৮ মে ২০১৯ ১০:৪৮382399
  • সেই সেই, ঠিক কথা। এসব লেখার পরেই বিদ্যাসাগর কলেজের কেস। ভাবতে হয় বৈ কি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন